Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এমনও হতে পারে আমি নাটক ছেড়ে দিয়েছি!

মেহজাবিন চৌধুরী

লাক্স চ্যানেল আই-এর জার্নির শুরুতে অভিনয়ের জন্যই এগিয়ে যাবেন এমন ভাবনা ছিলো না তার। দেশের বাইরে কেটেছে তার শৈশবের বড় সময়। তাই বন্ধুদের তালিকায় স্কুল জীবনের সহপাঠির সংখ্যাই বেশী। প্রবাস থেকে দেশে এসে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় নিজেকে যাচাই করার জন্য একাই নিবন্ধন করেন। সে সময় প্রতিটি স্তর পার করতে করতে চূড়ান্ত পর্বে আসার আগ পর্যন্তও স্থির ছিলেনা না অভিনয়কেই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নেবেন প্রতিযোগিতায়। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার খেতাব জয় করার পর কেটে গেছে দশটি বছর। নাটকের সংখ্যা প্রায় তিনশত ছুঁই ছুঁই করছে। এখন তিনি প্রতিষ্ঠিত, প্রশংসিত। বলছি শোবিজের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীর কথা। আনন্দ আলো ঈদ সংখ্যার জন্য তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন আমাদের সাথে। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকারের বিশেষ অংশ প্রকাশিত হলো আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন মামুনুর রহমান

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেমন গেল শোবিজের দশটি বছর। টেলিফোনের ওপারে কয়েক সেকেন্ড বিরতি নেন তিনি। তারপর সামান্য হাসেন। বলেন, কাজ করতে করতে কেটে গেল সময়টি। সংখ্যার হিসেবে দেখতে গেলে লম্বা মনে হয়। কিন্তু মনে হয় এই তো সেদিনের কথা।
আনন্দ আলো: আপনার নাটকের সংখ্যা তিনশত ছুঁই ছুঁই করছে। কেমন লাগে ভাবতে?
মেহজাবিন চৌধুরী: নিঃসন্দেহে খুব ভালো লাগছে। ভালো লাগে। দর্শকদের ভালোবাসায় আজকের আমি। লাক্সের সুন্দরী হতে পারাটাও দর্শকদের জন্যই। পথ চলার শুরুর সময়টিতে আমি তখন বয়সে ছোট। কোন কিছু না বুঝেই ঢুকে যাই শোবিজে। প্রথম দুই বছর শুধুই শিখেছি। বুঝতে চেয়েছি। বুঝতে পেরেছি। আমার সহযোগী শিল্পী যাঁরাই আমার সাথে ছিলেন সবাই বেশ সহযোগিতা করতেন। বুঝিয়ে দিতেন। একটি সময় ছিলো যখন নারী প্রধান গল্প হতো না। নারী চরিত্রে যারা অভিনয় করতেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যেতো স্ক্রীনে সময় তেমন দেয়া হতো না। খেয়াল করে দেখবেন, আগের দিনের নাটকে নারী প্রধান গল্প তেমন থাকতোই না। স্ক্রীনে নারীদের দেখা গেলেও তা ছিলো অল্প সময়ের জন্য। তবে আমি বেশ সৌভাগ্যবান। এখন নারী প্রধান গল্পের নাটক নির্মাণ হচ্ছে। নারী প্রধান অর্থে আমি নারীই নাটকে থাকবে তা বুঝাইনি। আমি বুঝিয়েছি স্ক্রীন শেয়ারের জায়গাটি। একজন পুরুষ শিল্পীর সমান সময় একজন নারী শিল্পী পাবে। এটিই বোঝাতে চেয়েছি। এখন সে রকমটিই হচ্ছে। এজন্য স্ক্রিপ্ট রাইটার, পরিচালক সকলের প্রতি আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। আরও কৃতজ্ঞ আমার বিভিন্ন নাটকের সহশিল্পীদের প্রতি। যারা নিজেরাও আমার মতো করেই ভাবেন। তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা, পেতে পেতে হয়তোবা আমারও কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে এতো বছরে। আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এখন অভিনয় করছি। বাকি সবটুকুই সম্মানিত দর্শকদের ভালোবাসা।
আনন্দ আলো: লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হওয়ার আগের মেহজাবিন চৌধুরীর জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার বড় হওয়া দেশের বাইরে। সে জীবনের কথা মনে করতে গেলে আমার স্কুলের কথাই মনে পড়ে। আমার বেশির ভাগ বন্ধুরাই ভারতীয়, কজন রয়েছে অন্য দেশের। যেহেতু ভারতীয় বন্ধুর সংখ্যা বেশি আমার। সে কারনেই হিন্দি ভাষা অনেক ভালো ভাবে রপ্ত আমার। তাদের সংস্কৃতি, তাদের আচার অনুষ্ঠান অনেকটুকুই আমার জানা। বাংলা ভালো বলতে পারতাম না। বিদেশে থাকায় আমাদের বাঙালী সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক, পরিবেশ সব কিছু মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে প্রথম দিকে। টেলিভিশনে লাক্স-চ্যানেল আইয়ের সুন্দরী প্রতিযোগিতার আগের বেশ কয়েকটি রাউন্ডের খোঁজ খবর আগে থেকেই রাখতাম আমি। যখন নিজের ভেতর থেকে আওয়াজ পেলাম প্রতিযোগিতাটি স্বচ্ছ। পরিবেশ খুব ভালো। তারপরই নিবন্ধন করি। নিবন্ধনের সময় আমার একবারও মনে হয় নাই আমিই সেরা হবো। আমি নিজেকে যাচাই করতে চেয়েছিলাম মাত্র। নিবন্ধন করার পর বাবা মাকে জানালাম তারাও উৎসাহ দিয়েছিলেন। তারা খুশি হয়েছিলেন আমি চেষ্টা করছি কিছু একটা করার জন্য এই ভেবে। লাক্স-চ্যানেল আইয়ের সেই প্রতিযোগিতা আমাকে সামনে নিয়ে এসেছে। সেরাদের সেরা করেছে। এই প্রাপ্তিতে আমার চেয়ে আমার বাবা মা বেশি খুশি হয়েছিলেন।

আনন্দ আলো: ছোটবেলায় অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন, নাকি অন্য কিছু?
মেহজাবিন চৌধুরী: ছোটবেলায় মানে যখন মানুষ কিছু হবার স্বপ্ন দেখে তখনকার সময়ে অভিনেত্রী হবো এমন কোন ধারনাই আমার ছিলো না। বিদেশে বড় হওয়া। পরিবেশ আলাদা। এমন ভাবার অবকাশ ছিলো না। দেশে আসার পর হঠাৎ করেই অভিনয়ের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করতে শুরু করে। দেশের অভিনেত্রীদের অভিনয় দেখে আমার মনে হলো আমিও পারবো। হয়তো তাদের মতো অতোটা ভালো পারবো না। তবে কিছুটা হলেও পারবো। চেষ্টাটা মন দিয়ে করি এমন একটা চিন্তা ভাবনা নিয়ে পা বাড়িয়েছিলাম। তবে আবারও বলি আমি অভিনেত্রী হবো বলেই যে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলাম তা কিন্তু নয়। আমি চেয়েছিলাম লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হতে। তা হবার পর আমি কিন্তু, ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়নে চলে গিয়েছিলাম। আমার লেখাপড়া শেষ করা। ফিউচার নিয়ে ভাবা এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু বার বার বিভিন্ন কাজের অফার। নতুন নতুন এক্সপেরিন্টাল কাজের অফার আসতে শুরু করে। অনেক কাজই বাদ দিয়েছিলাম। অভিনয়ে আসতে চাইনি বলে একটা অনীহা ছিল। কারণ আমি এই জগতে না বুঝেই পা রাখি। সে জায়গাটি বুঝতেই সরে সরে থাকতাম। সময় যেতে যেতে যখন বুঝতে পারলাম জায়গাটা ভালো, আমি পারব… তখন পা রাখি অভিনয়ে। তাছাড়া আমি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হবার পর যদি এখন মিডিয়ায় না থাকি তাহলে তো নিজেকে প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে সময় বেশ কিছু প্রতিভাধর মানুষকে পাশে পাই আমি। যারা কাজের জন্যই প্রতিভাধর। বিশ্বাস স্থাপন করা যায় মনে হলো। বিশ্বাস করলাম। তারপর শুরু হলো অভিনয়। আমি নারী বান্ধব পরিবেশ পেলাম। ধীরে ধীরে আমরা একটি পরিবার হয়ে উঠলাম। সত্যিকারের পরিবার পেয়ে আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম।

আনন্দ আলো: সিনেমায় মেহজাবিনকে কবে দেখা যাবে?
মেহজাবিন চৌধুরী: ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কতটুকুই বা বলতে পারি বলুন। জীবনের ধারা নিয়ে ভাবা যায়। তবে সে অনুযায়ী কতটুকু কাজ হয় তা আসল। সিনেমার আসার ক্ষেত্রে আমার এখনও পর্যন্ত তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। আবার আসব এমন প্রশ্নে হ্যা কিংবা না বলতেও পারবো না। আসলে এর উত্তর আমার জানা নেই। আরেকটি বিষয় বলি, এই মুহুর্তে মাধ্যমটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন না। আমি একটি বিষয় মানি, ভালো কাজ করবো, আরও অভিনয় করার চেষ্টা করবো, আর সেই কাজটি যাতে দর্শক পছন্দ করে। আমার অভিনয় দর্শকদের কাছে পৌঁছালেই আমি সুখী। কোন মাধ্যমে আমার অভিনয় তাদের কাছে পৌঁছুলো এটি নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমার মূল কথা আমি দর্শকদের ভালো অভিনয় উপহার দেবো। বছর শেষে আমি তুলনামূলক ভালো কাজ করেছি তা বলতে পারলেই আমি খুশি। দশটি বছর পেরিয়ে গেছে। আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করি নাই। তবে গেল দশটি বছরে আমি নাটকে কাজ করেছি। তাই বলে কিন্তু আমি দর্শকদের ভালোবাসা পাই নাই তা কিন্তু নয়। আমি তো মনে করি আমার যতটুকু ভালোবাসা পাওনা ছিলো তার থেকে বেশি আমি পেয়েছি। চলচ্চিত্রে যদি অভিনয় নাও করতে পারি তা নিয়ে আমার কোন আফসোস নাই। আমি আগেও বলেছি আবার বলি, আমি শুধু চাই ভালো কাজ করতে। দর্শক আমার আমার অভিনয়কে বিচার করবে। আমার লক্ষ হলো গত বছর যদি আমার পাঁচটি ভালো কাজ হয় এবছর যেন ছয়টি ভালো কাজ হয়। করোনাকালীন এই সময়টিতে কোনভাবেই আমি ভাবতে পারি না চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা। তবে ভবিষ্যৎ বলে যেহেতু একটি অংশ রয়েছে সেখানে তো আমার হাত নেই অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে। এমনও হতে পারে আমি নাটক ছেড়ে দিয়েছি। শুধু চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি। আবার হতে পারে কোন কিছুই করছি না। কে জানে কার ভবিষ্যৎ কি!

আনন্দ আলো: ইদানিং নাটকে ভিউ সংক্রান্ত একটি বিষয় চলছে। আপনি যেসব নাটকে অভিনয় করেন সে গুলোর মিলিয়ন ভিউ হতে বড় জোর মাস খানেক লাগছে। আবার অন্য অনেকের নাটকে ‘ভিউ’ বাড়ে না। তাদের কি করা উচিৎ?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার ভাবনাটা এমনÑ যা হয় নাই, তা হয় নাই। আগামীকাল যা করবো তা নিয়ে ভেবে চিন্তে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ বলে মনে করি। শুধু আমি না সবারই এই ভাবনা থাকা উচিৎ আগামীকাল ভালো কিছু করতে পারছি কি না। ভিউ মানেই কিন্তু দর্শক। দর্শক যত বাড়বে আমাদের কাজের ক্ষেত্র তত বড় হবে। যতো ভালো কাজ হবে ততো ভালো বাজেট হবে। সে দৃষ্টিকোন থেকে দর্শকদের রুচির কথা চিন্তা করে কাজ করা উচিৎ। আজকে যে জায়গাটি তৈরি হচ্ছে তা কিন্তু দেশের এই শিল্পের জন্য টিকে থাকার নতুন মাধ্যম। ওটিটি প্ল্যাটফরমে একটি কাজ যাওয়অ মানে বিশ্বের জন্য উন্মোচিত হওয়া। আমাদের জেনারেশন তো বটেই ভবিষ্যতে যারা অভিনয়ে আসবে সকলের জন্য একটি বিশাল সুযোগ এটি। আগের দিন গুলোতে নাটকের দর্শক ছিলো কিনা তা বিচার করার নির্ধারক যেহেতু ছিলো না, তখন বলা মুশকিল ছিলো নাটক মানুষ দেখছে কি না। তবে এখন কিন্তু কোন ভাবেই বলার উপায় নেই যে নাটক মানুষ দেখছেনা। কারণ এখন নির্ধারক রয়েছে। যে কারনেই ভিউ সংক্রান্ত বিষয়টি উঠে এসেছে। আমি বা আমরা এ শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারাই যে বিষয়টি বলছি তা কিন্তু নয়। এর প্রমাণ রয়েছে। এই যে তৈরি হওয়া নতুন দর্শক তারা কিন্তু অনেক সচেতন। সে কারনেই বলছি বাংলাদেশের নাটকের চমৎকার একটি সময় চলে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি এ সময়কালে দীর্ঘ স্থায়ী হবে।
আনন্দ আলো: ঈদুল আযহায় আপনার কেমন ব্যস্ততা গেল, তা নিয়ে জানতে চাই।
মেহজাবিন চৌধুরী: কঠোর লক ডাউনের আগেই গেল ২৮ জুন আমি নাটকে অভিনয় থেকে সরে এসেছি। যদি লকডাউন না থাকতো, দেশের করোনা পরিস্থিতি যদি ভালো থাকতো তাহলে আরও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করতাম। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি এই ঈদে এগারোটির মতো নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে অনএয়ারে যেতে পারে। বলা যায় প্রতিটি নাটক রোমান্টিক। কোনটাতে কিছুটা কমেডি রয়েছে। আবার কোনটি সহজ সাবলিল ঘরোয়া নাটক।
আনন্দ আলো: যদি প্রশ্ন করি অভিনেত্রী মেহজাবিনকে নিয়ে সমালোচনা করতে তাহলে ব্যক্তি মেহজাবিন কি বলবেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার অভিনয় বিষয়ে সমলোচনার বিষয়টি যদি আমার কাছের মানুষদের জিজ্ঞেস করা হতো তাহলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারতো। নিজের ব্যাপারে যখন বলতে হয় আমরা তো সেরা হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধকরি। আমি আমার জায়গা থেকে যে বিষয় গুলো নিয়ে সমালোচনা করা উচিৎ সেগুলো হয়তো বুঝবোই না। বা কিছু চোখে পড়লেও সেটি না দেখার মতো করেই রাখবো। তারপরও যদি সমালোচনার কথা বলেনÑ খুব কঠিন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় আমার জন্য। তারপরও বলি মানুষ হিসেবে আমি খুবই আবেগপ্রবণ। অল্পতেই ভেঙে পরি। খুব অল্প কথাতেই ভীষন কষ্ট পাই। আমার মনে হয় এখনকার দিনে অনেক শক্ত হওয়া জরুরি। কারো সামান্য কথাতেই নিজের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাবে এই ধরনের দূর্বলতা থাকা উচিৎ নয়। আমার উচিৎ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা। আবেগ থাকা ভালো তবে অতি মাত্রায় আবেগ থাকা ভালো না। আমার মনে হয় আমার সমালোচনার ক্ষেত্রে বেশি আবেগ থাকা আমার জন্য একটি নেতিবাচক দিক। আরও নেতিবাচক দিক যেমন আমি গান গাইতে পারি না। ছবি আঁকতে পারি না। আমি যদি আমার নামটিকে একটু সরিয়ে রাখি। দেশের অন্য স্বাভাবিক মানুষদের মতো করে ভাবি। তাহলে দেখা যাবে আমি অনেক কাজই করতে পারি না। আমার সামনে কারো বিপদ দেখলে আমি সেখানে ছুটে যেতে চাই। তার পাশে দাঁড়াতে চাই। যেমন কেউ একেবারে সামনে থেকে কাজ করে আবার কেউ হয়তো ভূমিকায় না থেকে পেছনে পেছনে চুপ থেকে কাজ করে যায়। আমি সেই দলের আমি পারি না সামাজিক কোন কাজের পর তা সবাইকে জানিয়ে বাহ বাহ কুড়াতে। আপনি কারো জন্য কিছু করে সেখান থেকে কিছু অর্জন করতে চাওয়া কিন্তু সঠিক নয়। আমি অন্তত এভাবেই বিশ্বাস করি। আমি আরও বিশ্বাস করি একজন মানুষের ভালো সময়ের চেয়ে খারাপ সময়ে তার পাশে দাঁড়ালে সে পুনরায় ঠিক জায়গায় দাঁড়াতে পারে। আমার গন্ডি অনেক ছোট। ছোট করেই রেখেছি। তবে সে গন্ডিতে যতগুলো বন্ধু আছে তারা সবাই খুউব কাছের। সেই ছেলে বেলা থেকে তারা আছে। আমার ব্যস্ততা বেড়েছে আমি তাদের সময় দিতে পারি না। তারপরও তারা আমার পাশে আছে। সেক্ষেত্রে আমিও চেষ্টা করি যদি ফিজিক্যালি তাদের কাছে যেতে না পারি তবে মানসিক ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। কারো মন খারাপ থাকলে তাকে আমি এড়িয়ে চলতে পারি না।
আনন্দ আলো: রঙিন এই ভুবনে অবজ্ঞা সহ্য করতে হয়েছে কি?
মেহজাবিন চৌধুরী: প্রতিটি মানুষের জীবনে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। তবে সেদিক থেকে আমি এতোটাই সৌভাগ্যবান যতটুকু আশা করিনি তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। আর অবজ্ঞার উত্তরে বলি এমন কিছুই আমার গেল দশ বছরের জীবনে কখনোই ঘটে নাই। আমি অনেক আদর পেয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে। বলা যায় আমার জন্য চমৎকার এই পরিবেশটি আমার সহকর্মী-সহশিল্পীরা নিজেরাই তৈরি করে দিয়েছেন। আমি অসম্ভব কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। একটা সময় ছিলো যখন মেয়েরা বাসা থেকে বের হতে গেলে ঘরে-বাইরে ব্যাপক প্রশ্নের মুখোমুখি হতো। আমার ক্ষেত্রে এমন কিছুই হয় নাই। আমরা কাজ করছি। বাড়ি থেকে বের হচ্ছি। একাই একটি ইউনিটের মানুষদের ভালোবেসে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। পাশাপাশি এটি আপনার নিজেরও দায়িত্ব আপনি নিজেকে কতোটা উপস্থাপন করছেন, কিভাবে উপস্থাপন করছেন তার উপর। কতোটুকু সুযোগ দিচ্ছি-নিচ্ছি। কতটুকু পেশাগত দৃষ্টি ভঙ্গিতে কাজ গুলো করছি সেটিও কিন্তু আপনাকে অন্যের সামনে তুলে ধরে। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। এটি সম্ভব হয়েছে নাট্য জগতের অন্যসব মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। আমার বাবা মা আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রশ্নের মুখে পড়ে না যে বলবেÑ না বাইরে যেও না। আমি যেমন নিরাপত্তা পেয়েছি আমার কাজ করার ক্ষেত্র তেমন স্নেহ পেয়েছি। আমার এই পথ চলাতে আমি শুধুই পেয়েছি। লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্যায়ে জয়ী হবার পর আমার নামের পাশে যুক্ত হয়েছে সুপারস্টার। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত নিজেকে সে জায়গায় নিতে পারিনি বলে আমার ধারনা। সে জায়গা থেকে আমি যে ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি যে ধরনের চরিত্র পেয়েছি, যে ধরনের সহশিল্পীদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি তা এক কথায় অসাধারন।
আনন্দ আলো: প্রিয় চরিত্র সম্পর্কে বলুন?
মেহজাবিন চৌধুরী: প্রিয় চরিত্রের উত্তর সেদিনই দিতে পারবো যেদিন অভিনয় ছেড়ে দেবো। অসংখ্য চরিত্র আছে যে গুলো করা হয় নাই। আইনজীবি, সাংবাদিক সহ অসংখ্য চরিত্র রয়েছে যে চরিত্র গুলোতে অভিনয় করা হয় নাই। আমার বিশ্বাস যেসব চরিত্রে আমি কাজ করি নাই সেসব চরিত্র নিয়ে আমাকে ভাবা হবে। স্বপ্ন দেখি মহাকাশচারী হিসেবে অভিনয় করছি। অনেক অনেক চরিত্র বাকি রয়েছে। প্রিয় চরিত্রের প্রশ্নে সে জন্যই বলবো আমার অভিজ্ঞতা আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ। আমার দেখার, শেখার, বোঝার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। আমি আরও কিছুদিন খুব ভালো ভাবে অভিনয় করে যেতে চাই।
আনন্দ আলো: আপনার ক্রাশ সম্পর্কে বলুন?
মেহজাবিন চৌধুরী: এ প্রশ্নের উত্তর আমার বিয়ের দিন পর্যন্ত তোলা থাকুক। সেদিন আপনারা সবাই জানবেন। যেহেতু এই প্রশ্নটি আমার ব্যক্তিগত জীবনের তাই এই জায়গাটুকু শেয়ার করতে চাই না।
আনন্দ আলো: বুকের বাঁ পাশে এবং বড় ছেলে এই দুটো অনবদ্য নাটকের মধ্যে কোনটিকে আপনি এগিয়ে রাখবেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: এ দুটি নাটক পাশাপাশি বছরের বড় ছেলে ২০১৭ সালের আরেকটি বুকের বাঁ পাশে ২০১৮ সালের। বড় ছেলে যখন সম্প্রচার হলো তখন নাটক থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। বলা যায় মানুষ নাটক দেখছিলো না তখন। বড় ছেলে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল সে সময়। আমি এমনও শুনেছি অসংখ্য তরুণ তরুণী বলেছেন বড় ছেলে দেখার পর নাটক দেখতে শুরু করেছি আমরা। আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বড় ছেলে। আমাকে অনেক মানুষ চিনতে পারার কাজটি সম্ভব হয়েছে বড় ছেলে নাটকটির কারনে। যদি কোন দিন এক নামে কোন নাটকের নাম বলতে বলা হয় আমি বড় ছেলের নামটি বলবো। বুকের বাঁ পাশে একটি রোমান্টিক নাটক। বেশ সাড়া ফেলে ছিল নাটকটি। দুইজন প্রিয় সহশিল্পীর সঙ্গে দুই নাটক। বড় ছেলে নাটকে অপূর্ব ভাই, বুকের বাঁ পাশে নাটকে আফরান ভাই। দুই নাটকের দুই গুরুত্বপুর্ন পিলার। এগিয়ে রাখার উত্তরে যেহেতু বড় ছেলে নাটকটির বহুল জনপ্রিয়তা, ব্যাপক আলোচিত নাটক, তার থেকেও বড় নাটকটি বুকের বাঁ পাশের আগে রিলিজ হয়। সেদিক থেকে বড় ছেলে এগিয়ে থাকবে। তবে বুকের বাঁ পাশে, বড় ছেলের পাশেই থাকবে।
আনন্দ আলো: মেহজাবিন-অপূর্ব নাকি মেহজাবি-আফরান মধুর জুটি কোনটি?
মেহজাবিন চৌধুরী: এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে দর্শকরা। দুজনেই আমার প্রিয় দুই অভিনেতা। তাদের দুজনের সাথে আমার যতো কাজ সব গুলোর ফলাফল ভালো। জুঁটি হিসেবে কোনটি মধুর বা সফল এটা প্রিয় দর্শক যারা রয়েছেন তাদের উপরই থাক। আমি চাই ভালো নাটক হোক। আমি ভালো চরিত্রে অভিনয় করি। সবার স্নেহ আমার জন্য থাকুক। দুই জন্যই অভিজ্ঞ, দুইজনই মানুষ হিসেবে অসাধারণ। দুজনই আমার খুবই কাছের, খুবই প্রিয়। আমরা খুব ভালো বন্ধু। বলতে পারেন পরিবারের বাইরে তারা আমার আরেকটি পরিবার। তাদের পরিবারেও আমি একজন সদস্য।
আনন্দ আলো: ঈদের ছুটিতে কি করবেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: করোনাকালীন ঈদ নিয়ে কতটুকুই বা পরিকল্পনা থাকে বলুন। আমরা কেউই তো ভালো নেই। নতুন জামার কথা বলবো না। কারণ স্যুটিংয়ের জন্য অনেক নতুন জামা তৈরিই থাকে। খুব বেড়াতে মন চায়। তা তো আর হবে না। বাসায় থাকবো। ঈদে যে কয়টি নাটকে অভিনয় করেছি সেগুলো দেখবো। অন্যদের কাজ গুলোও দেখবো। ওটিটি প্লাটফরমে যে কাজ গুলো থাকবে সেগুলোও দেখবো। যেহেতু টেকনোলজি এখন হাতের মুঠোয় মন চাইলে যে কাউকে ভিডিও কলে যুক্ত করে নেয়া যায়। সেটিকে কাজে লাগিয়ে প্রিয়জনের সাথে কথা বলবো। কিন্তু এর আগে এমন ছিলো না। আমি যেতাম সবার বাসায়। সামনা সামনি দেখা আর স্ক্রিনে দেখা কখনোই এক নয়।
ঈদ সংখ্যার জন্য এই চমৎকার আলাপচারিতার জন্য আনন্দ আলোকে ধন্যবাদ জানান জনপ্রিয় এই তারকা। ভালো, মন্দ সকল সময়ে সকলকে পাশে থাকার আহ্বান জানানোর সাথে সাথে পাঠকদের উদ্দেশ্যে আগে ভাগেই ঈদ মোবারক জানালেন তিনি।