Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা সাদ-এর সিনেমায় ব্যাপক আলোচিত লাক্স-চ্যানেল আই তারকা বাঁধন

রেজানুর রহমান

যে কোনো লেখা সেটা গল্প, কবিতা, ছড়া অথবা উপন্যাসই হোক না কেন তার শুরুটাই হল আসল। দৈনিক পত্রিকায় প্রতিদিন আমরা যে সব রিপোর্ট পড়ি তার সবটাই কিন্তু আকর্ষণ ছড়ায় না। কোনোটা শিরোনামের চমৎকারিত্বে আবার কোনোটা শুরুর দুই তিন লাইনের আকর্ষনেই পাঠককে টেনে নিয়ে যায় আরও গভীরে। সে কারণে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের যুৎসই শিরোনাম ও ইন্ট্রোই হল আসল!
ছড়া, কবিতা, ছোট গল্প অথবা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। শুরুটা এমন হওয়া উচিৎ যাতে পাঠক সামনে এগুবেই। ‘তোমাকে’ নামে হুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাস আছে। শুরুটা এরকম “নীলু বয়সে আমার চেয়ে এগারো মিনিটের বড়। তার জন্মের এগার মিনিট পর আমার জন্ম হয় এবং দারুণ একটা হৈ চৈ শুরু হয়। ডাক্তার শমসের আলী অবাক হয়ে চেচিয়ে ওঠেন, আরে যমজ বাচ্চা দেখি। ঠিক তখনই ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। আমরা দুই বোন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকি। ডাক্তার শমসের আলী হ্যারিকেনের জন্য চেচাতে থাকেন। আমার নানীজান ছুটে ঘর থেকে বেরুতে গিয়ে পানির একটা গামলা উল্টে ফেলেন!” হুমায়ূন ভক্ত একজন পাঠকের মন্তব্য ভাই উপন্যাসের শুরুটাই আমাকে পাগল করে দেয়। তারপর আমি বলতে গেলে বিরতিহীন উপন্যাসটা পড়ে ফেলি।
‘নিষিদ্ধ রমনী’ নামে রাবেয়া খাতুনের একটি ছোট গল্প আছে। শুরুটা এরকম “সামনে চমৎকার সাজানো মঞ্চ। কিন্তু ওঠার সিঁড়ি বড্ড বেকায়দার। মইয়ের মতো খাড়া। মিমোসা আক্তার দাঁড়িয়ে গেল! সুন্দরম গোষ্টী থেকে যে প্রবীণ শিল্পী পুরস্কৃত হবেনÑ দু’দিক থেকে দু’তরুণ তাকে তুলে নিয়েছে ডায়াসে”। একজন পাঠক বললেন, লেখার শুরুটাই হল আসল। সামনে চমৎকার মঞ্চ। কিন্তু ওঠার সিঁড়ি বড্ড বেকায়দার… এই দুই লাইন পড়েই আমি লেখাটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি…
‘অপরাজিত’ নামে বিভুতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাসের শুরু এরকম “দুপুর প্রায় গড়াইয়া গিয়াছে। রায় চৌধুরীদের বাড়ির বড় ফটকে রবিবাসরীর ভিকারিদের ভিড় এখনও ভাঙে নাই। বীরু মুহূরীর ওপর ভিখারীর চাউল দিবার ভার আছে। কিন্তু ভিকারীদের মধ্যে অনেকে সন্দেহ করে যে, জমাদার শম্ভুনাথের সঙ্গে যোগ সাজশের ফলে তাহারা ন্যায্য প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত হইতেছে…” একজন পাঠক বললেন, বিভূতি বাবুর যে কোনো লেখার শুরুটাই চমৎকার। পাঠককে অনায়াসে ভিতরে দিকে নিয়ে যায়।
প্রিয় পাঠক, এই যে এতক্ষণ এতো কথা লিখলাম তার কারণ সম্পর্কে আপনারা কি কিছু বুঝতে পেরেছেন? লিখব কান চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যালে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এর নতুন সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে। অথচ বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কয়েকজন লেখকের উপন্যাসের শুরু নিয়ে লিখছি! কিন্তু কেন? উত্তরটা একটু গোলমেলে হবে। তবুও বলি, রেহানা মরিয়ম নূর নিয়ে এই লেখার একটা চমৎকার ‘ইন্ট্রো’ লিখতে চেয়েছিলাম। যা পড়ে পাঠক যারপর নাই লেখাটির প্রতি আকৃষ্ট হবেন! কিন্তু শুরুটা কেমন হওয়া উচিৎ? রেহানা মরিয়ন নূর নিয়ে ইতিমধ্যে সিনেমা দুনিয়ায় এক ধরনের তোলপাড় শুরু হয়েছে। যা লিখব ভাবছি তাই পুরনো মনে হচ্ছে।

তরুণ যে সিনেমা পরিচালককে দেশের মানুষই ভালো করে চিনতো না, জানতো না। সে কিনা এখন বিশ্ব সিনেমায় আলোচিত নাম। একই সাথে উচ্চারিত হচ্ছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের নামও। প্রায় প্রতিদিনই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে নতুন নতুন খবর বের হচ্ছে দেশ-বিদেশের প্রচার মাধ্যমে। এমতবস্থায় আনন্দ আলোর এই শীর্ষ কাহিনীতে নতুন কী তথ্য থাকতে পারে যা পড়ে পাঠক আপ্লুত হবে। পুরো প্রতিবেদন পড়ার আগ্রহ পাবে। কিন্তু তেমন ভাবে প্রতিবেদনটি সাজানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এখন চলছে অবাধ তথ্য প্রবাহের কাল। তাবৎ দুনিয়ার খবর নিমিষেই সাধারন বস্তি ঘরেও চলে যায়। বাঁধন নামে দেশের একজন গুণী অভিনেত্রী সিনেমার বিশাল দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে এই তথ্য সাধারন গৃহিনীও জানে। শুধু অনেকের একটু আফসোস আলোচিত এই সিনেমার পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে ভালো করে কেউ চেনে না। বিশ্ব আসরে কোনো সিনেমার খ্যাতি দেখা দিলে সাধারনত খ্যাতি পাওয়া মানুষটিকে নিয়ে হই চই পড়ে যায়। তার সাক্ষাৎকার পড়ার জন্য, তাকে দেখার জন্য অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে। যিনি এই খ্যাতি পান তিনি দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিতে আগ্রহী হন। কিন্তু ‘রেহানা মরিয়ন নূর’ এর তরুণ পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এতটাই প্রচার বিমুখ মানুষ যে তার সাক্ষাৎকার পাওয়া বিদেশী প্রচার মাধ্যমের জন্যও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই পরিচালকের নতুন কোনো তথ্য যে এই প্রতিবেদনে জুড়ে দেব সে সুযোগও নাই। তবে একটা কাজ করা যেতে পারে কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সাত্রে রিগা বিভাগে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর অন্তর্ভূক্তি বিষয় নিয়েই প্রতিবেদনটির গতি বাড়ানো যেতে পারে।

এর আগে বাংলাদেশের সিনেমা কান ফেস্টিভ্যালের মূল আয়োজনে অন্তভূক্তির সুযোগ পায়নি। কাজেই আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল। এই একটি চলচ্চিত্রই বিশ্বের সিনেমা অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে তুলল। রেহানা মরিয়ম নূর এর প্রধান চরিত্র রেহানা রুপী লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার তারকা আজমেরী হক বাঁধন বললেন, কান ফেস্টিভ্যালের ‘আ সাত্রে রিগা বিভাগের উদ্বোধনী ছবি ছিল আমাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। হল ভর্তি দর্শক ছবিটি দেখার পর এতটাই অভিভূত হয়েছেন যে আনন্দে তারা তালি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এখন উৎসবের যেখানেই যাই উৎসুক দর্শক এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে তুমি বাধন? তোমার ‘রহিমা নূর’ দেখেছি। খুব ভালো সিনেমা।
তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে কান চলচ্চিত্র উৎসবে রেহানা মরিয়ম নূর প্রদর্শনের পর দর্শক প্রতিক্রিয়ার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিডিও চিত্রে দেখা যায় রেহানার প্রদর্শনী শেষে হাউমাউ করে কাঁদছেন আজমেরি হক বাঁধন। দর্শক সারীর কয়েকশ লোক অনবরত হাততালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেই চলেছেন। তালি যেন থামেই না। অনেক দর্শক এগিয়ে এসে অভিনেত্রী বাঁধন ও পরিচালক সাদকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। একজন বয়স্ক মহিলা বাঁধনকে জড়িয়ে ধরে এতটাই আবেগ প্রবণ হয়ে উঠলেন যে পাশেই দাঁড়ানো সম্ভবত তার স্বামী অথবা বন্ধু তাকে তাড়া দিচ্ছে। কিন্তু তিনি তার কথায় আমল না দিয়ে বাঁধনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছেন। বাংলাদেশের কোনো সিনেমা দেখে বিদেশীরাও কাঁদে এ ঘটনা যেন নতুন।
রেহানা মরিয়ম নূর’ এ ধরনের আরও নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব মিডিয়ায় ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে ‘সাদ এর সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর’ পুরস্কারের তালিকায় স্থান পেতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে বাংলাদেশের নাম বিশ্ব সিনেমার আসরে ইতিহাসের পাতা খোলার অনন্য সুযোগ পাবে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’কে নিয়ে ব্যাপক আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে রহিমা নূর। পরিচালকের প্রশংসার পাশাপাশি অভিনেত্রী বাঁধনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। দেশের প্রচার মাধ্যম অপেক্ষা আছে দেশে কখন ফিরবে রহিমা নূর এর টিম। আমাদের প্রিয় অভিনেত্রী বাঁধন জানিয়েছেন “১৬ জুলাই এর পর একটা সুবিধানজনক সময়ে দ্রুত দেশে ফিরব আমরা। অপেক্ষায় আছি একটা ভালো সংবাদের জন্য। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”