Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কবি প্রকৌশলী হাবীবুল্লাহ সিরাজী

হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বাংলাদেশের স্বনামধন্য একজন প্রকৌশলী ও কবি। তবে কবি হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘ চার দশক এর বেশি সময় ধরে দেশে-বিদেশে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে চাকরি করেন। ১৯৮০ সালে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। ২০০০ সাল থেকে তিনি বেক্সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেডে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগ দানের আগের দিন পর্যন্ত কাজ করেছেন। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। তবে এর আগে ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৭-২০১৫ মেয়াদে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি এবং উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলা একাডেমি এবং ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে মৃত্যু অবধি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রকৌশল পেশা, বাংলা ভাষা, সাহিত্যের সব কিছুতেই দেশকে বহু কিছু দিয়েছেন। ২৪ মে তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এই গুণী মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবার শাহ সিমেন্ট তাকে ‘নির্মাণে আমি’তে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

‘আমার অনেক কমতি আছে। তবে একটি জিনিস বলতে পারি আমি কখনো ফাঁকি দেইনি। না ব্যক্তিগত জীবনে, না বন্ধুত্বে, না সম্পর্কে, না কবিতায়। আমি কখনো আমার দেশ ও জন্মভূমির সঙ্গে অসৎ আচরণ করি নাই, ফলে কখনো আমি বঙ্গবন্ধু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারিনি। আমার যা কিছু সব জন্মভূমির জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন। যদি আপনারা ধরে নেন এটা আমার বেশি আবেগ উচ্ছ্বাস, তবে তাই।’ এ কথা গুলোর বলেছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তিনি পেশায় ছিলেন স্বনামধন্য একজন প্রকৌশলী। তবে কবি হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। যিনি স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতেন। বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদান অবস্মিরনীয়। তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন গুণী মানুষ ছিলেন।
প্রকৌশলী ও কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুরের রসুলপুর গ্রামে। বাবার নাম আবুল হোসেন। তিনি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। মা জাহানারা বেগম গৃহিনী। সিরাজীরা ছিলেন দুই ভাই ছয় বোন। বাবা-মা চাইতেন তাদের সন্তান যেন ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হোক। হয়েছেনও একজন প্রকৌশলী।
ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় এসে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ। থাকতেন লিয়াকত হলের ৪০৩ নম্বর রুমে। সে হলটির নাম হয় সোহরাওয়ার্দী হল। লিয়াকত হলের নাম তারা নিজেরাই বদল করেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রী জীবন শুরু করেছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতি দিয়ে। এরপর তিনি ছাত্রলীগে চলে আসেন এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। বুয়েট কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সম্পাদক, পরে সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রথম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেকনিক্যাল বিষয়ে বাংলা পত্রিকা বের করেন। পত্রিকায় টেকনিক্যাল ও কারিগরি বিষয় এবং সাহিত্যও ছিল। সেখানে তার কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ ছাপা হতো। ছাত্র জীবন থেকেই হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাহিত্যচর্চা করতেন।
১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন। এরপর মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দেশ গড়ার কাজে অংশ নেন। সেখান থেকে স্বেচ্ছায় তিনি অবসর নিয়েছিলেন আশির দশকে। এরপর বেসরকারি চাকরি করেন। পাড়ি জমান দেশের বাইরে। পেশাগত কাজে ১৯৮৫-৮৬ সাল কাটে তার কুয়েত ও ইরাকে। ১৯৯৩-৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি চাকরি করেন মালয়েশিয়ায়। ২০০০ সালে বেক্সসিমকো হোল্ডিংস লিমিটেডে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগদানের আগের দিন পর্যন্ত কাজ করেছেন। কিন্তু মেধাবী প্রকৌশলী হিসেবে অবদান রাখার পরও তার মূল পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কবি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য কলায় স্নাতক হয়েও রবিউল হুসাইন যেমন কবি, প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক হয়ে আনিসুল হক যেমন কবি-কথাসাহিত্যিক, স্থাপত্যকলায় স্নাতক হয়ে খসরু চৌধুরী ও শাকুর মজিদও তেমনি সাহিত্যিক। তারা প্রত্যেকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রযুক্তিগত শিক্ষার চেয়ে সৃজনশীল সাহিত্যেই বেশি নিবেদিত।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী ছিলেন একেবারে নিয়মতান্ত্রিক, কবি। যেমন প্রকৌশল বিদ্যার জটিল সূত্রের সরল সমাধান। কবি জীবন বলতে যেমনটা বোঝায় সেটা তিনি যাপন করেননি। অথচ তার প্রধান ও একমাত্র পরিচয় তিনি কবি। কবিতাই তার প্রধানক্ষেত্র। বাংলা ভাষার বিশাল কাব্য ভান্ডারে ঔজ্জল্যে দ্যুতি ছড়ান তিনি। বাংলা ভাষার প্রতিটি পাঠক জানেন, কত কুশলী ছিলেন এই কবি। কাব্যভাষায় তিনি বারবার কৌশল পরিবর্তন করেছেন। তার কবিতার বুনন, ভাষা শৈলী, উপস্থাপনকলা, এমন কী বিষয় নির্বাচনে তার মুন্সিয়ানা চোখে পড়ার মতো। কবিতার ভাষা শৈলির পরিবর্তন পাঠককে শুধু বিমোহিত করে না, চিন্তার খোরাকও জোগায়। পাঠককে চমকে দেয়ার মতো কাব্য মেধা যে তার আছে, একথা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজের কবিতাকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌছে দেওয়ার সামর্থ্যও তার মধ্যে অপরিসীম।
এদেশের সংগ্রামশীল ইতিহাস ও মানুষ, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতির অভিযাত্রা রেখা ভাস্বর তার প্রায় অর্ধশত কবিতা বই এ। শুধু কবিতা নয়, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর গদ্য যেন তার কবিতারই সহোদরা, আবার তা স্বতন্ত্রও বটে। বিবরণমূলক গদ্য ধারার বিপরীতে হৃদয়ী সংবেদনে বিচিত্র বর্নিল-ব্যতিক্রম তার প্রাবন্ধিক গদ্য গুচ্ছ। যা ধারণ করেছে বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ। তার আখ্যানমূলক ও আত্মজৈবনিক রচনাও অন্যন্যতার দাবিদার। এ ছাড়া অনুবাদ তার আর এক প্রিয় ভুবন যেখানে রুমী কিংবা রসুল হামজাতভাবে আমরা বাংলায় পাই তার কারু বাংলা। শিশু কিশোর সাহিত্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। আধুনিক মনস্ক নতুন প্রজন্মের বোধে বিশেষ প্রিয়তায় ধরা দেয় তার ছড়া, কবিতা এবং এ জাতীয় শিশুতোষ কৈশোরক রচনা। সব মিলিয়ে কলামে সাহিত্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী এক বিশিষ্ট নাম যার বিবিধ রচনা অনূদিত হয়েছে বহু বিদেশি ভাষায়। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছেÑ দাও বৃক্ষ দাও দিন, মোম শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি, মধ্যরাতে দুলে ওঠেগ্লাস, নোনা জলে বুনো সংসার, স্বপ্নহীনতার পক্ষে, আমার একজনই বন্ধু, পোশাক বদলের পালা, কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা, সিংহ দরজা, বিপ্লব বসত করে ঘরে, কতো কাছে জলছত্র ইত্যাদি।
শিক্ষা জীবন থেকেই সাহিত্যচর্চায় মনোযোগী হওয়া হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা রাখেন। সংগঠনটির সভাপতি ও উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি সব সময় সাহিত্য সংস্কৃতির স্বাথে কথা বলেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য হাবীবুল্লাহ সিরাজী পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, বিষ্ণু দে পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পুরস্কার, ফজল শাহাবুদ্দিন কবিতা পুরস্কার, সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পদক সহ দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। তিনি বাংলা একাডেমি এবং ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো ছিলেন। সর্বশেষ কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে মৃত্যু অবধি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে একশোটি নতুন বইয়ের সম্পাদনা করে বাংলা একাডেমি। সেই উদ্যোগের অন্যতম প্রাণ পুরুষ ছিলেন কবি হাবীবুল্লঅহ সিরাজী। গত এপ্রিল মাসেই শেষ হয় অমর একুশে বইমেলা। তার মাস দেড়েকের মধ্যেই যে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবেন, কেইবা অনুমান করতে পেরেছিল। এক অশান্ত সময়েই বাংলার সাহিত্য জগতে অভিষেক হয়েছিল তার। আরও এক অস্থিরতার মধ্যেই প্রস্থান করলেন তিনি। শুধু জিইয়ে রাখলেন দিন বদলের স্বপ্ন।

তিনি ছিলেন আমার প্রিয় সহকর্মী!

সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এ দেশের একজন প্রথিতযশা কবি। নিজের কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। বাংলা একাডেমি ও ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সম্মানিত ফেলো, জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি ও উপদেষ্টার পদও তিনি অলঙ্কৃত করেছেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, প্রগতিশীল চিন্তা ও চেতনায় সিরাজী অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। পেশাগত ভাবে সিরাজী দীর্ঘ দিন আমার সহকর্মী ছিলেন। একজন প্রকৌশলী ও নির্বাহী হিসেবে দীর্ঘ দিন তার মেধা ও দক্ষতায় বেক্সিমকো সমৃদ্ধি হয়েছে। তার চলে যাওয়াটা এই দেশ সত্যিকার অর্থেই একজন উঁচু দরের সাহিত্যিক ও দক্ষ একজন প্রকৌশলীকে হারালো। হারালো অসাম্প্রদায়িকতা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির একজন অগ্রপথিককে। আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন।

আমার অনেক শ্রদ্ধার মানুষ!

আকতারুজ্জামান, উপচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তিনি শুধুমাত্র একজন কবি এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন তাই নয়, তিনি একজন ভালো সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকারকও বটে। তাঁর দুটি বিষয় স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। তাঁর অসাধারন একটি উক্তি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। তিনি বলতেন, বঙ্গবন্ধুকে অনুভিূততে ধারণ করার জন্য অথবা স্মৃতিতে আনায়নের জন্য তাকে প্রত্যক্ষভাবে প্রাপ্তির কোনো কারণ নেই। যে মানুষ বাংলায় মাটি মানুষকে ভালোবাসবে, যে বঙ্গবন্ধুর লেখনি পাঠ করবে, বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ ব্যক্ত করবে, যার মধ্যে মানব প্রেম এবং দেশপ্রেম আছে তারাই তাদের স্মৃতিতে, অনুভূতিতে বঙ্গবন্ধুকে রাখতে পারে। এটি একটি অসাধারণ উক্তি। বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও বঙ্গবন্ধুর প্রেমে উদ্বদ্ধ করতে, বঙ্গবন্ধুর আর্দশে অনুপ্রাণিত হতে গভীর ভাবে সাহায্য করবে।
আরেকটি হলো কবিতা বিষয়ক। সেটিও খুব স্মরনীয়। যে বক্তব্যটি আমার শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন কবিতার নিঃসন্দেহে একটি দর্শন থাকবে। কবিতা শুধুমাত্র একটি কথামালা নয়, শান্তিক সুর নয়। তার মধ্যে বড় একটি বার্তা থাকবে, একটি দর্শন থাকবে এবং সেই নিরীক্ষেতে পরিচালিত হয়েছেন। আমি এই মানুষটির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি সব সময় শক্ত কথাগুলোকে সুস্পষ্ট ভাষায় সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। যেদি সব মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যেত। এই সকল কারনেই তিনি অমর হয়ে থাকবেন তার মানবিক গুণাবলী, তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা, তার মূল্যবোধ সব কিছুই আমাদেরকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

আমার প্রিয় বন্ধু!

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা

১৯৬৫ সালে আমি যখন ঢাকায় আসি তখন সিরাজীও ঢাকায় আসে। ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে পড়াশুনা করি। আমি থাকতাম মহসীন হলে। কী করে যেন দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও বুয়েট থেকে পত্রিকা বের করত। সেখানে আমার কবিতা ছাপা হতো। আমার পত্রিকা বের হলে সেখানে সিরাজীর কবিতাও ছাপা হতো। কবিতা এবং প্রকৌশল এই দুইটা জিনিসকে সে জীবনের শুরু থেকে এক সঙ্গে কাজ করাকে বেঁধে দিয়েছেন। তার কবিতা গুলো কিন্তু সহজ হতো না। প্রকৌশলের কিছু নিয়ম কানুন আছে।
তার একটি কবিতাও পাওয়া যাবে না যেটিতে ছন্দের সামান্য ত্রুটি আছে। অথচ ছন্দ। তিনি কিন্তু বাংলা বিভাগে, ইংরেজি বিভাগে পড়ালেখা করেননি। ফলে একটি সন্নিবেশিত মানুষ তিনি। এজন্য বলব কবিতা তার জন্য নতুন বিষয় ছিল না। ধীমান কবি এবং স্বদাচারী মানুষ।

অনেক কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি

শাকুর মজিদ, স্থপতি ও সাহিত্যিক

আমার দেখা সবচেয়ে ভালো বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। তার কারণ হচ্ছে আমরা দুজনই বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। একজন প্রকৌশলী হয়ে তিনি বাংলা একাডেমির সর্বোচ্চ প্রশাসকের পদে এলেন। এটা তার জন্য যেমন সম্মানের ছিল, আমাদের জন্যেও অনেক আনন্দের ছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দুই একবার উনার কাছে গিয়েছিলাম। কত গুলো যৌক্তিক কারণ উপস্থাপিত করেছিলাম। তিনি আমার সব গুলো কাজ করে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটা ছিল হাছনরাজার নাম বাংলা একাডেমি ভূল ভাবে ‘স’ দিয়ে লিখতো। এর প্রমানাদি তার কাছে উপস্থাপন করি। তিনি তখনকার বাংলা একাডেমির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান স্যারের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন বাংলা একাডেমি এর নাম পরিবর্তন করবে ‘ছ’ দিয়ে হাছন রাজা। তার কাছ থেকে এই কাজটা আমি করেছিলাম। এর আগে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সম্পর্কে আমার খুব খারাপ ধারনা ছিল। তারা অনেক স্বজনপ্রীতি করতেন, দলীয়ন করতেন। কিন্তু এই পরিবর্তনটা বেশি দিন চালাতে পারলেন। তার আগেই উনি মারা গেলেন।