Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভূমিকম্প সহনীয় স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে

ভূমিকম্প আতঙ্ক দূরে ঠেলে মানুষকে সচেতন করে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি বাংলাদেশের খ্যাতিমান একজন শিক্ষাবিদ এবং ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ। একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে দীর্ঘ তিন দশক ধরে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি ভৌত স্থাপনার নকশা, নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। ১৯৯৩ সালে বুয়েট থেকে তিনি জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অফিস ফর আরবান সেফটি প্রকল্পের পরিচালনাসহ বিভিন্ন সংগঠনে দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এবার ‘শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে’ ভূমিকম্প সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
করোনা মহামারির মধ্যেও ভূমিকম্প মাঝে মধ্যে ভ‚পৃষ্ঠকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের সাম্প্রতিক কয়েকটি দেশি-বিদেশি ভূমিকম্পের কথা উল্লেখ করতে চাই। মে, এপ্রিল মাসেই বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে গেছে। ২৯ মে সিলেট অঞ্চলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার একদিনে স্বল্পমাত্রার চারটি ভূমিকম্প অনুভ‚ত হয়। রিখটার স্কেল ৩ থেকে ৪.১ মাত্রার। ২৮ এপ্রিল ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বেশ কিছু এলাকা। ১৮ এপ্রিল মিয়ানমারে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশের রাঙামাটি ও বান্দরবান কেঁপে ওঠে। এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভুটানের পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে উৎপত্তিস্থলে ৮.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা গুলোতে ৫.৬ মাত্রা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ করেই স্বাভাবিক ভাবে ভবন হেলে পড়ার সংবাদ পাওয়া যায়। বোঝাই যায়, সঠিক নিয়ম-কানুন ও উপাদান দিয়ে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়নি। যেনতেন ভাবে ভবন নির্মাণ করলে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হওয়ার ঝ‚ঁকি থেকে যায়।

পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, তার মধ্যে ভূমিকম্প সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের দুর্যোগ। ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব নয়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে এটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে আনতে পারে। অনেক বড় বড় ভূমিকম্পের ইতিহাসও ভারতীয় উপমাহদেশে রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে মাঝারি বা বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী ঢাকায় বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনেও জলাভূমি ভরাট করে নির্মিত এমন হাজার হাজার ভবন ভূমিকম্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমিকম্পে মহার্ঘ্য একটি প্রবাদ আছে ‘ভূমিকম্প কিন্তু মানুষকে মারে না, দূর্বল দালান কোঠাই মানুষকে ভূমিকম্পের সময় মারে’। তাই আমরা যে বাসস্থানে আছি সেই বিল্ডিংটা কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ তা জানা প্রয়োজন। যদি আমরা ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামোতে বসবাস করি, তাহলে আমাদের ভূমিকম্পে ঝুঁকির পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়।
ভূমিকম্প তথা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখন হবে তা সঠিক করে বলা যায় না। আবার এটা আমরা বন্ধও করতে পারব না। কিন্তু দুর্যোগের ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পেতে প্রস্তুতি তো নিতে পারি। সেই প্রস্তুতি এখনই নেওয়া উচিত। বেশি মাত্রারভূমিকম্প হলে আমাদের অবস্থা কী হবে?
আনন্দ আলো: আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানেও কিছুদিন আগে মৃদু ভূমিকম্প অনুভ‚তি হয়। আমরা আসলে ভূমিকম্পের কতটা ঝুঁকিতে আছি?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: অতীতেরভূমিকম্প গুলো দিয়েই প্রমাণ করতে হবে আমরা আসলেই ঝুঁকির মধ্যে আছি কী না। আমাদের এখানে ১৮৬৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ছয়টি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। সে গুলোর রেখটার স্কেল ছিল ৭ থেকে ৮.৭ মাত্রার। হাইতিতে হয়েছিল ৭.১ মাত্রা। সেখানে তিন লাখ লোক মারা গিয়েছিল। একই সময়ে আবার চিলিতে হয়েছিল ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। সেখানে প্রাণহানী হয়েছিল ৫০০ জন আমরা আসলে হাইতি এবং চিলির মাঝামাঝি একটা অবস্থানে আছি। আমাদের এখানে এ ধরনের মাত্রার ভূমিকম্প হলে এ লাখ থেকে দুই লাখ মানুষ হতাহত হবেন। তাহলে আমাদের এখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে। কিন্তু আমাদের এখানে ৯০ বছরে এ ধরনের ভূমিকম্প গুলো হয়নি। একশো, দুইশো বছর পর পর এই ধরনের ভূমিকম্প গুলো হয়ে থাকে। ১৯৬২ সালে আমাদের এখানে একটা ভূমিকম্প হয়েছিল। সেটা আড়াইশো বছর পার হয়ে গেছে। আবার ১৯৪৮ সালে আরেকটা ভূমিকম্প হয়েছিল। সেটাও অনেক দিন হয়ে গেছে। আমরা ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছি।
আনন্দ আলো: কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: প্রস্তুতি হবে তিন স্তরে। সাধারন মানুষের প্রস্তুতি, জাতীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- রাজউক, পিডাবিøউডি সহ নজরদারি প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রস্তুতি, সেই সঙ্গে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা। অতীতে আমরা দেখেছি ভয়ে লাফিয়ে পড়েও আমাদের এখানে আহত হওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। মানুষ ভবন থেকে দৌড়ে নেমে এসেছে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, যেখান্ইে থাকি না কেন। আগে থেকেই জায়গা চিহ্নিত করে রাখা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। যেমন- টেবিলের তলায় ঢুকে পড়া, দেয়াল ঘেঁষে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। এরপর ভবন ভেঙে পড়লেও সেখানটায় একটা ট্রায়াঙ্গল অব লাইফ পাওয়া যাবে। এ হচ্ছে ন্যূনতম পূর্ব সতর্কতা। নেপালে ভবন চাপা পড়েই কিন্তু বেশি লোক মারা গিয়েছিল। বলা হয়, ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করা গেলে ৯০ শতাংশ মানুষের প্রাণহানি কমানো যায়। ১০ শতাংশ মানুষ হয়তো পূর্ব সতর্কতা নিয়ে বাঁচতে পারে। তাই ভবন নিরাপদ করে নির্মাণ বা পুরনো ভবন হলে রেট্রোফিট করে নিতে হবে। যদিও শেষেরটি ব্যয়বহুল। একটা উদাহরণ দেই, ২০১০ সালে বিশ্বে দুটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল চিলি ও হাইতিতে। হাইতিরটি ছিল ৭.৩ এবং চিলিরটি ৮.৮। শক্তির বিচারে পরেরটি যদিও আটশ গুণ বেশি এনার্জি রিলিজ করেছিল। চিলিতে মারা যায় মাত্র ৫০০ জন। আর হাইতিতে প্রাণহানি ছিল তিন লাখের মতো। কারণ চিলি ১৯৬০ সালের ভূমিকম্প থেকে শিক্ষানিয়ে ২০১০ পর্যন্ত ৫০ বছরে অনেক কিছু করেছে। তাই বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলেই হাইতির থেকে চিলির বাস্তবতায় উত্তরণ সম্ভব। এছাড়া জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি আমাদের প্রকৌশলী কমিউনিটি, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি খাত, সরকারি স্তর যেটাই হোক সবাইকে সচেতন করতে হবে বিল্ডিং কোড মানার বিষয়ে। সেই সঙ্গে সরকারের কো-অর্ডিনেশনও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এজন্যই আমি মনে করি, আমাদের মেট্রেপিলিটন গর্ভনেন্সের দিকে যাওয়া উচিত। পৃথিবীর সর্বত্রই মেটো গর্ভমেন্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজটি করে থাকে।

আনন্দ আলো: কীভাবে ভবনের ডিজাইন থেকে শুরু ভূমিকম্প সহনীয় করা যায়?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: এ প্রশ্নটা নতুন বিল্ডিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত। নতুন ভবনের ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদেরকে চেক করে দেখতে হবে যে জায়গায় ভবনটি নির্মিত হচ্ছে সেই জায়গার মাটিটা কেমন। নরম বা শক্ত কিনা। শক্ত হলে কতটা শক্ত। কারণ হচ্ছে ভূমিকম্পের মাত্রা কিন্তু নরম মাটিতেই হয়। ভবনের মধ্যে ঝুাঁকুনিটা বেশি দেখা দেয়। আর যদি ভবনটি শক্ত মাটিতে নির্মিত হয় তাহলে ঝাঁকুনি কম দিবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে ভবনের বিভিন্ন স্তরে যেমনÑ ভবনের ফিটিং, ভবনের কলাম, ভবনের বিম গুলো ভূমিকম্প সহনীয় করা। গাইড লাইন হিসেবে আমাদের বিল্ডিং কোড আছে, সে গুলোকে মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। ভবনের কলামে, বিমে যে চুড়ি পরাই সেটা ১৩৫ ডিগ্রি হুক থাকতে হবে। সাধারণ বিম, কলামের যে জংশন আছে সেখানে চুড়ি গুলো ঘন ঘন দিতে হবে। এই জংশন গুলোতে ৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি থাকতে হবে। আমরা ১৩৫ ডিগ্রির জায়গায় ৯০ ডিগ্রি হুক করি। সেটা ভূমিকম্প সহনীয় না। আর দ্বিতীয় জিনিস হচ্ছে পুরো জায়গায় আমরা ৬ ইঞ্চি সেন্টার টু সেন্টার করি। আমি বার বার বলছি, সব গুলো চুড়িকে ১৩৫ ডিগ্রি হুক করতে হবে ভূমিকম্প সহনীয় করতে গেলে। অন্য জায়গায় ৬ ইঞ্চি দিলে অসুবিধা নেই। কিন্তু তিন কলামের জংশন অথবা একটা নতুন রড আরেকটা রডের সাথে মিট করছে সেই জায়গা ৪ ইঞ্চ সেন্টার টু সেন্টার দিতে হবে চুড়ি গুলোতে। আমাদের নতুন বিল্ডিং কোডে বলা আছে ফ্লাটমেট অর্থাৎ ড্রীমলেস বিল্ডিং নির্মাণ করা যাবে না বাংলাদেশে। আমরা ফ্লাটমেট বলি যেখানে বিম নেই, খালি কলাম আছে। সাথে সেলাভ আছে। ফ্লাটমেট এধরনের ভবন গুলোকে আমাদের নতুন কোড ২০২০ সালের গ্যাজেটে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা আছে। এগুলো মেনে করলে আমাদের ভবন গুলো ভূমিকম্প সহনীয় হবে।
আনন্দ আলো: আমাদের তো বিল্ডিং কোড আছে। মানা হচ্ছে কী?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে। আসলে আমাদের দেশে ৭৬টি বিধিমালা রয়েছে। আমরা কয়টা মেনে কাজ করছি। আমরা ট্রাফিক আইন কী মানছি? ঠিক একই ভাবে আমরা বলতে পারি ভবন নির্মাণের যে বিধিমালা বা বিল্ডিং কোড আছে তা আমরা মানছি না। ২০০৬ সালে প্রথম বিল্ডিং কোড গ্র্যজেট হয়। কিন্তু প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ২৮ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবায়নের বেলায় আমরা বড়ই দুর্বল। আমাদের রাজউক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন গুলোর আছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবায়নের হাতটা খুবই দুর্বল। নিজেরা করা সম্ভব না। এটাকে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করাতে হবে। বিদেশে সব জায়গাতে সরকারি অফিসার নিয়োগ দেন না। উনারা যেটা করেন প্রাইভেট সেক্টরের কিছু কিছু অফিসকে সনদ দিয়ে দেন। তারাই ভবন গুলোকে চেক করে সনদ দেন। ভবনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে যাদের মাধ্যমে সনদ দেওয়া হয়েছে তারাই কিন্তু শাস্তি ভোগ করেন। আমাদেরকে ঐভাবেই করতে হবে।
আনন্দ আলো: আমাদের প্রকৌশলীদের সক্ষমতার মান কেমন?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: আমাদের প্রকৌশলীদের সক্ষমতার মান আমি মনে করি খুবই ভালো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে জ্ঞানটা থাকা দরকার সেটা আমাদের প্রকৌশলীদের আছে। আমাদের দেশে কিন্তু বহু হাইরাইজ বিল্ডিং হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রায় তিন হাজারের মতো হাইরাইজ বিল্ডিং আছে। যেটা ১০ তলার অধিক। এই হাইরাইজ বিল্ডিং গুলো তো আমাদের প্রকৌশলীরাই করে যাচ্ছেন। হাইরাইজ বিল্ডিং বাতাসের চাপকে প্রতিহত করতে পারে, সেটা ভূমিকম্পের চাপ করতে পারে। ভবন নির্মাণের যে কলাকৌশল সেটা আমাদের প্রকৌশলীদের জানা আছে। একটা ভবন ভূমিকম্প সহনীয় কি না তা বলার মতো দক্ষ প্রকৌশলী আগে হয়তো ৫০ থেকে ১০০ জন ছিলেন এখন সংখ্যাটির ৫০০’র অধিক হবে। ঢাকা শহরে যদি চার লাখ আবাসিক ভবন তৈরি হয় তার মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ ৬ তলা বিল্ডিং। কিন্তু ৬ তলা বিল্ডিং করার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের ব্যবহার করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনাভিজ্ঞ প্রকৌশলী দিয়ে কাজটা করা হচ্ছে অথবা দেখা যায় রাজমিস্ত্রি নিজেরাই বিল্ডিং নির্মাণ করে থাকে। এখানে আইন করে আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী বা কোনো কোম্পানীর মাধ্যমে কাজটা করতে হবে।
একটা কোম্পানীর মাধ্যমে কাজটা করলে দায়বদ্ধতা থাকবে কোম্পানীর। ২০১৪ সালে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ে। তার পরের বছর জামিলুর রেজা স্যার সহ আমরা একটা কমিটির মাধ্যমে বার বার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু কোনো কারণে এটাকে রাজউক থামিয়ে দেয়। ২০১৬ সালে এপ্রিল মাসে জামিল স্যার সই করে দিয়েছিলেন। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ঢাকায় আটটি জোন আছে। প্রত্যেকটি জোনে চার-পাঁচটি করে কোম্পানী নিয়োগ দেয়া। তারাই ভবন গুলোর তদারকি করবে। তাহলে হবে কি দায়বদ্ধতা থাকবে। এখন কিন্তু দায়বদ্ধতা নেই। কোনো ভবন যদি ভেঙে গেলে, পড়ে গেলে আমরা কিন্তু ধরতে পারি না কে ডিজাইন করেছে।

আনন্দ আলো: নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের দিক নির্দেশনা কী থাকা উচিত?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: প্রথম বিষয়টি হলো বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা কঠোর ভাবে তদারক করা। আরেকটি বিষয় হলো ঢাকায় অনেক জায়গাতেই মাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু ভরাট করার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনেক ডেভেলপার আছেন যারা আর্থিক ব্যয়ের অজুহাতে ও কাজটা করতেই চান না। কিন্তু বন্যা প্রবণ, ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা সব এলাকা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় রিস্ক সেনসেটিভ ল্যান্ডইউজ প্ল্যানিং। এ পরিকল্পনা অনুসারে নরম জায়গায় ভবন তৈরিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেটার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। মাটি ভরাটের সময় নিচ শক্ত মাটি যেখানটায় আছে সে পযর্ন্ত দুরমুজ করে যেতে হবে। স্যান্ড কমপেকশন, জেট গ্রাউটিং, ডাইনামিক কমপেকশন, ভাইব্রোকমপেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে মাটির উন্নয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষকে জানানো। কোন এলাকাটিরিস্ক সেনসেটিভ সেটা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। এ সব জায়গায় ভবন নির্মাণের মাটি ঠিকমতো ভরাট হচ্ছে কিনা, যথাযথভাবে পাইলিং করা হচ্ছে কি না, সেটার ওপর নজর রাখতে হবে।
আনন্দ আলো: সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে আপনাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আর্থকোয়াক সোসাইটি বা সিভিল সোসাইটি কী ভূমিকা রাখতে পারে না?
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী: অবশ্যই পারে। যেমন বাপা বা সুশীল সমাজের নেতৃস্থানীয় যারা আছেন তারা এই নিয়ে কাজ করতে পারেন। এখন থেকে ১০ বছর আগে আমরা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে এক গোল টেবিল বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে একমত বিনিময় সভা করেছিলাম। সেখানে আমরা ভূমিকম্প সংক্রান্ত অনেক কথাই বলেছিলাম। আমরা যতই কথা বলি না কেন লাভ নেই যদি সাংবাদিকরা এগিয়ে না আসে। আমি মনে করি সাংবাদিকদের একটা বড় ভূমিকা আছে। ভূমিকম্প সংক্রান্ত নানা তথ্য সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু সাংবাদিকদের। হঠাৎ করে একদিন করলে হবে না। এটা নিয়মিত করতে হবে। আমরা যদি সর্তক না হই কোনো বড় দুর্যোগ এলে তা কিছুতেই সামাল দিতে পারব না।