Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমার প্রতিটা দিন যুদ্ধের- নুসরাত ফারিয়া

মামুনুর রহমান

ছিলেন উপস্থাপনায়, এলেন গানে তারপর অভিনয়ে। তাও আবার পার্শ্ব চরিত্রে নয়। সরাসরি কেন্দ্রীয় চরিত্রে। হয়ে উঠলেন রুপালী পর্দার একজন। এবং একই সাথে দুই বাংলার মানুষের প্রিয় অভিনয় তারকা হয়ে উঠলেন। প্রিয় পাঠক নিশ্চিত বুঝে গেছেন কার কথা বলছি? হ্যা, নুসরাত ফারিয়ার কথাই বলছি।
দুই বাংলায় তুমুল প্রশংসিত এই নায়িকার অভিনয়। পুরো নাম নুসরাত ফারিয়া মাজহার। ১৯৯৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জন্ম হয় তাঁর। ঢাকার আর্মি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বড় হয়েছেন। ডিজে হিসেবে গণমাধ্যমে আগমন ঘটেছিল ফারিয়ার। আরটিভির ‘ঠিক বলছেন তো’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্ক্রীনে আসেন নুসরাত। ২০১২ সালে এনটিভির থার্টি ফাস্ট ধামাকা কক্সবাজার অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তাক লাগিয়ে দেন নির্মাতা কলাকুশলী সহ টিভি অনুষ্ঠান বোদ্ধাদের। নজরে চলে আসেন নুসরাত। ২০১৩ সালে বলিউড প্লেব্যাক সিঙ্গার শিল্পী সুনিধি চৌহানের-সুনিধি লাইভ কর্নসার্ট উপস্থাপনা করার সুযোগটাও আসে কক্সবাজারে ভালো পারফরম্যান্সের জন্যই। অডিটরিয়ামের উপস্থাপনা ও খোলা স্থানের উপস্থাপনায় যে আলাদা তা প্রমান করে দিয়েছিলেন তিনি। সুযোগ আসে বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করার। খুব অল্প সময়ে তার এতো অর্জন বিষয়টি ভাবতেই যেন কেমন লাগছে তাই না। আসলেই কি এতোটাই সহজ রুপালী পর্দার জার্নি! ঢালিউড মানে দেশের সিনেমায় এখন সব থেকে স্মার্ট, সুন্দর, নায়িকার তালিকায় নুসরাত পৌঁছে গেছেন। সব ধরনের চরিত্রের শতভাগ পারফর্ম নুসরাতকে দিনে দিনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠিয়ে নিচ্ছে।


নুসরাতের নায়িকা হয়ে ওঠার পথটা কেমন ছিলো চলুন জেনে আসি। জাজ মাল্টিমিডিয়ার সাথে মাহিয়া মাহির সম্পর্কের অবনতি হলে জাজ মাল্টিমিডিয়া নুসরাত ফারিয়াকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সবার সামনে নিয়ে আসে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি প্রেমি ও প্রেমির নায়িকা হিসেবে ঘোষনা করা হয় নুসরাতের নাম। তবে প্রেমি ও প্রেমি নুসরাতের প্রথম চলচ্চিত্র নয়। ২০১৪ সালে রেদোয়ান রনি পরিচালিত ‘মরিচিকা’ সিনেমার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ফারিয়া। তবে অজ্ঞাত কারনে ‘মরিচিকা’য় আর অভিনয় করা হয়নি ফারিয়ার। এদিকে রেদোয়ান রনি ‘মরিচিকা’র নাম বদলে কাস্টিং বদলে ফেলেন। ফারিয়া এরই মধ্যে দুইবার অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
নুসরাতের জীবনটাই একটা যুদ্ধ। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অসম্ভব রকমের নেতিবাচক অনুষজ্ঞ নিয়ে এগিয়ে চলেছে এই তারকার দিনলিপি। অনেকেরই ধারণা কেবল সুন্দর হওয়া, সুন্দর করে কথা বলাতেই তাঁর জীবনটা আজ এখানে এসে পৌঁছেছে। তাদের মুখে ফুল চন্দন ছোঁয়া দিতে চান তিনি। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে উপস্থাপনায় আসা এই তারকার সে সময়টাতেই শুরু হয় অসম্ভব সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে চলা। বাড়িতে ভিষন কড়াকড়ি থাকা সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময়ে প্রতিদিন একটা ব্যাগে আট দশটা পোশাক রাখতেন তিনি। এআইইউবি’র ক্লাশ, এনটিভি, মোহনা টেলিভিশনে শুরুর দিকে মাত্র ৫০০ টাকায় উপস্থাপনা করার কাজটি শুরু করেন। প্রতিদিন কারওয়ান বাজারের চ্যানেল গুলোর কাজ শেষ করে মোহনা তারপর বাংলা মোটরের মাই টিভি, ইটিভি সেখানে যেতে হতো। ভীষন ব্যস্ততা নিয়ে প্রতিটি দিন পেরিয়ে যেত তার।
মানুষজন সেভাবে চেনে না, মামা চাচার যোগসূত্র নেই। সব মিলিয়ে এই কাজ গুলো পেতেও বেশ সময় লেগেছিল তাঁর। নুসরাত বলেন, চেহারা আর কথা বলা দেখে কজনই বা কাজ দিবে! অনেক কষ্ট অনেক অপমান সহ্য করেই আজকে নুসরাত হয়েছি। কোন এক বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান একদিন অফার করলো চিকনি চামেলী গানের সাথে নাচতে হবে। আমি তাও করলাম। কিন্তু যা হয় তাই হলো। কোন এক বিউটি সুন্দরীর কাছে আমি পরাজিত হলাম। আর সেই বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান আমাকে ব্রেক না দিয়ে সেই সুন্দরীকে নিয়ে এগিয়ে চলল। আমার সাথে মেকআপ আর্টিস্টরাও বাজে ব্যবহার করেছে। তারা জেনে বুঝেই আমার মেকআপ খারাপ করে দিতো। যাতে আমাকে অনস্ক্রীন দেখতে বাজে লাগে। উপস্থাপনার ১টা বছর দাঁত খামচি মেরে উত্তর দক্ষিণ না তাকিয়ে নিজেকে প্রমান করার জন্য নুসরাত এতোসবের সাথে নিরুত্তর থেকেছিলেন। আজ তিনি তার যোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।