Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

অনেকেই বলেছিল আমি পারবো না- আফরান নিশো

মামুনুর রহমান



বর্তমান সময়ে টিভি অভিনেতাদের মধ্যে বহুল আলোচিত তিনি। সব সময় বলেন, যত দিন দর্শক চাইবে ততদিন অভিনয় করবো। যেদিন দর্শক চাইবে না সেদিনও চেয়ে চেয়ে অভিনয় করবো। টিভি নাটকে নিজের অভিনয় গুণে দেশের কোটি হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বলছি আফরান নিশোর কথা। অ্যাকশন, রোমান্টিক, কমেডি, থ্রিলার কিংবা পুরোপুরি খল চরিত্রে অসাধারন অভিনয়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে সেরাদের তালিকাতেও পৌঁছে গেছেন তিনি। আফরানের পরিচয় তাঁর নাটকের চরিত্র গুলো। যা দেখার পর সহজেই অনুমান করা যায় তাঁর অভিনয় দক্ষতা কতখানি প্রখর। আফরান নিশোর আসল নাম আহমেদ ফজলে রাব্বী নিশো। ১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরে তার জন্ম। জনপ্রিয় এই অভিনেতার যাত্রা শুরু হয়েছিল মডেলিং দিয়ে। আফরান নিশোর বাবা মো: আব্দুর হামিদ মিয়া। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ভূয়াপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। নিশোরা দুই ভাই এক বোন। মায়ের নাম আঞ্জুমান আরা। আফরানের প্রেমের সফল পরিণতি এসেছে ২০১১ সালে। শত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় কাটানো আফরানের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছোট বেলায় তাঁর বাবা স্বপ্ন দেখতেন আফরান আর্মড ফোর্সের কমান্ডার হবেন। আর মায়ের স্বপ্ন ছিলো ছেলে বড় হয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করবে। সে কারনেই আফরানকে ভর্তি করানো হয় ধানমন্ডি সরকারি বয়েজ স্কুলে। সেখান থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন আফরান। গ্রাজুয়েশনের পাঠ চুকিয়ে নেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। আফরানের স্বপ্ন ছিলো হবেন পাইলট। সারা বিশ্বটাকে দু’চোখ ভরে দেখবেন। পাইলট হলে যা হয়। আকাশ থেকে পাখির চোখে পৃথিবী দেখা। আবার মাটিতে নেমে মানুষের চোখে সভ্যতা দেখা। ভীষন মজার বিষয় বলেই আফরানের এমন স্বপ্ন। কিন্তু আফরান নিশো এখন একজন ব্যাপক জনপ্রিয় অভিনেতা। বলা যায় মডেলিং ও অভিনয়ে আসা আফরানের জন্য এটা কাকতালিয় ঘটনা। যে মানুষটি কখনোই করেননি কোন থিয়েটারে যাতায়াত। ছোট বেলাতেও স্কুল বা কলেজেও নেই অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন পুর্ব অভিজ্ঞতা। ছিলো না কোন সাংস্কৃতিক যোগসূত্র। তাহলে কিভাবে আফরান জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে এখন কোটি হৃদয়ে বসবাস করেন নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে… আসুন শোনাই আফরান নিশোর সংগ্রামের গল্প।
বন্ধুদের সাথে মজা করেই মডেলিং পা বাড়ান আফরান। দু একটা বুটিকস এর জন্য মডেল হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। র‌্যাম্প এও হেঁটেছেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। যদিও র‌্যাম্প এ হাঁটাকে খুব একটা ভালো লাগতো না। মডেলিং করতে করতেই নিশো ঢুকে যান বিজ্ঞাপন জগতে। পরের পথটা খুব সহজ ছিলোনা। অনেকটা জেদ আর অভিনয়ের প্রতি তীব্র আকাঙ্খায় অভিনয়ে যুক্ত হওয়া। অনেকেই বলেছে মডেলিংটা যতটা সহজ অভিনয় করা ততোটাই কঠিন। নিশোকে ইঙ্গিত করেই এই কথা বলা। শুরু হয় অভিনয়ের জন্য দৌড় ঝাঁপ। নিশো চেয়েছেন আর অভিনেতা হয়ে গেছেন বিষয়টি তা নয়। এ জন্য লম্বা একটি পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাঁকে। ২০০০ সালে গুণী পরিচালক অমিতাভ রেজার সাথে পরিচয় হয় তাঁর। বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়ে যায়। এরপর ২০০৫ সালে ‘ঘর ছাড়া’ নাটকের মধ্যে দিয়ে অভিনয় জগতে হাঁটা শুরু করেন আফরান নিশো। এরপরে আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। থাইল্যান্ডে গিয়ে জিঞ্জার ফ্লেবারের বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ার সুযোগটাও চলে আসে। এরপর গাজীশুভ্র, গোলাম হায়দার কিসলু, কিরণ মেহেদী সহ আরো অসংথ্য খ্যাতিমান পরিচালকের সাথে কাজ শুরু করেন। টিভি সিরিয়ালেও কাজ করে চলেছেন সমান তালে। মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করা বাদ রাখেননি নিশো। ২০১২ সালের ইমরান ও পূজার ডুয়েট গানে উর্মিলা কর্মকারের বিপরীতে চমৎকার অভিনয় করেন নিশো। এ গানের মাধ্যমে নিশো হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয়। ভিডিও যেদিন রিলিজ হয় সেদিনই ইউটিউব ভিউ হয়েছিল ১ মিলিয়নের বেশি। আফরানকে আর পায় কে! আসতে থাকে অভিনয়ের সিডিউল নিয়ে ফোন কল। নিশো এগিয়ে চলতে থাকেন সাথে সাথে। ২০১৬ সালে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটিও ধরা দেয় মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের মঞ্চে। ‘যোগ বিয়োগ’ নাটকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার প্রাপ্তি আফরানকে আরও প্রত্যয়ী করে তোলে। এ পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি নাটক, টেলিছবি, ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন নিশো। কখনো উচ্চবিত্ত, কখনো একেবারে নিম্নশ্রেণি, কখনো পাগল, কখন তৃতীয় লিঙ্গের একজন হিসেবে অভিনয় করেছেন এই গুণি অভিনেতা। অভিনয় জগতে আফরান এখন বহুল জনপ্রিয় তারকার নাম। অসংখ্য নাটক, টেলিছবির মাঝখানে ২০২১ সালের ‘শিল্পী’ নাটকটি বুকের বাঁ পাশের পর আরেকটি অন্যবদ্য সৃষ্টি কর্ম দর্শক হৃদয়ে গেথে যায়। আশেপাশের মানুষের তাচ্ছিল্যই আজ দক্ষ এক অভিনেতা হিসেবে নিশোকে সৃষ্টি করেছে। আফরানের আজকের অবস্থান তাঁর নিজের তৈরি। কোন বাবা, চাচা, মামা আফরানকে তৈরি করেননি। হুমায়ূন ফরিদী আফরান নিশোর প্রিয় অভিনেতা। হুমায়ূন ফরিদীকে মনে প্রাণে ধারন করেন, বিশ্বাস করেন। ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন হুমায়ূন চরিত্র গুলোকে।