Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শফিউল বারী : স্থাপনা শিল্পে খ্যাতিমান একজন স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বিশেষজ্ঞ

অধ্যাপক ড. মো: শফিউল বারী। বাংলাদেশের খ্যাতিমান একজন শিক্ষাবিদ ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘ তিন দশক এর বেশি সময় ধরে শিক্ষাবিদ হিসেবে পাঠদান ও গবেষনার পাশাপাশি ভৌত স্থাপনার নকশা, নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষানবেক্ষণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। ১৯৮২ সালে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংএ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পাস করার পর তিনি লেকচারার হিসেবে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে বুয়েট থেকে তিনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর গবেষনা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের তিনি আজীবন ফেলো। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

অধ্যাপক ড. মো: শফিউল বারীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি গ্রামে। তার বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহ জেলায়। বাবার নাম মরহুম ডা: আব্দুল বারী ফকির। তিনি একজন চিকিৎসক ছিলেন। মা মরহুম হোসনে আরা গৃহিনী। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে শফিউল বারী সেঝ। বড় ভাই সাইফুল বারী একজন ডাক্তার। বড় বোন নাজমা আক্তার তিনিও একজন ডাক্তার। আর ছোট ভাই মাসফিউল বারী জনতা ব্যাংকের জিএম। ছোটবেলা থেকেই শফিউল ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখতেন। হয়েছেনও সফল। বাবা-মার ইচ্ছা আর নিজের আগ্রহ থেকেই প্রকৌশলী হওয়া তার।
ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৬ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ১৯৮২ সালে তিনি বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পাস করে বের হওয়ার পর লেকচারার হিসেবে যোগ দেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ১৯৮৪ সালে বুয়েট থেকেই মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি আবার শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি কর্মজীবনে অধ্যাপক শফিউল বারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে বেশ কিছুর মতো বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

অধ্যাপক ড. মো: শফিউল বারী দীর্ঘ তিন দশক ধরে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাজ করে যাচ্ছেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ গবেষণা, পরীক্ষা ও পরামর্শ ব্যুরো (বিআরটিসি) এর সদস্য হিসেবে হালকা স্টিল, কংক্রিট, ইট, বালু, সিমেন্টের নিয়মিত পরীক্ষার সাথে জড়িত। রাবার প্লাস্টিকের জন্য অপ্রচলিত পরীক্ষাগার পরীক্ষায়ও জড়িত তিনি। এছাড়াও বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ও পরামর্শক হিসেবে ছোট-বড় বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করেছেন। যেমনÑ বৈদ্যুতিক সরবরাহ কর্তৃপক্ষের জন্য চর বাউসিয়ার পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের রিভার ক্রসিং টাওয়ারের বিশ্লেষণ এবং ভিত্তি নকশা, টাঙ্গাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ১৬০ ফুট উচ্চ টেলিকম টাওয়ারের ভিত্তি স্থাপনের নকশা, চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের শীর্ষে ওভার হেড ওয়াটার ট্যাঙ্কের কাঠামোগত নকশা, তেজগাঁও এ কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানী লিমিটেড এর বিদ্যমান কারখানা বিল্ডিংয়ের সম্ভাব্য উল্লম্ব বর্ধনের উপর বিশ্লেষণ, চেকিং এবং প্রতিবেদন প্রস্তুত করন, চট্টগ্রামের কাপ্তাই হাইড্রোলিক প্ল্যান্টে নতুন ইনস্টল করা কার্গো ট্রান্সফার সিস্টেমের ভিত্তি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে গ্রামীণ আবাসন মডেল বিকল্প-২, সিরাজগঞ্জে গ্রামীণ টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেডের কাঠামোগত নকশা, সিলেটের মৌলভীবাজারে ওভারহেড ওয়াটার ট্যাঙ্কের কাঠামোগত নকশা, কাওরানবাজারে যমুনা তেল কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের কাঠামোগত বিশ্লেষণ, ২৬ তলা গ্রামীন ব্যাংক প্রধান কার্যালয় ভবনের নকশা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কাশেম টেক্সটাইলস মিলের কাঠামোগত নকশা তদন্ত,পূর্বাচলে ৮ তলা স্টোরিড বিল্ডিং, নাভানার ১৬ তলা স্টোরিড বিল্ডিং, এমবিএইচএল এর ১০ তলা বিল্ডিং বসুন্ধরা, রেস্টুরেন্ট পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট, ঢাকায় একোয়া পরামর্শদাতা ও অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ১৬ তলা বানিজ্যিক ভবনের নকশা সহ অসংখ্য ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু প্রজেক্টের স্ট্রাকচালার ডিজাইনের অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।

১৯৮৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম শাহানা বেগম। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এই দম্পতি তিন কন্যা সন্তানের জনক-জননী। বড় মেয়ে সায়মা তাহসিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্টার্স করেছেন। দ্বিতীয় মেয়ে নায়মা তাসনিম। তিনি একজন ডাক্তার। ইংল্যান্ডে এমআরসিপিতে পড়াশোনা করছেন। তৃতীয় মেয়ে উমামা আফরিন কানাডায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স করছেন।
এই শিক্ষাবিদ ও প্রকৌশলী তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশায় দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।