Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রাজনীতিতে যেমন নীতি থাকে তেমনি ষড়যন্ত্রও থাকে

জি এম কাদের, সভাপতি জাতীয় পার্টি

সহজ কথা যায় না বলা সহজে। আবার কম সময়েও প্রয়োজনীয় কথা বলা সহজ হয় না। এসো আড্ডা দেই, পাঁচ মিনিট… এ ধরনের কথা শুনলে প্রথমেই অনেকে না-না করে উঠবেন। বলবেন, আরে ভাই মাত্র পাঁচ মিনিটের আড্ডায় কি বলব? শুরু করতে করতেই তো শেষ হয়ে যাবে। এতো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ের আড্ডা। কিন্তু আড্ডাটা যদি হয় কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য। সময় মাত্র পাঁচ মিনিট অর্থাৎ ৩০০ সেকেন্ড। উপস্থাপক প্রশ্ন করবেন। অতিথি উত্তর দিবেন। বাস্তবেও তাই হয়েছে। চ্যানেল আইতে শাহরিয়ার নাজিম জয়-এর উপস্থাপনায় ৩০০ সেকেন্ড নামের একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান বেশ জমে উঠেছে। এই অনুষ্ঠানেরই বাছাই করা ১০০জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ৩০০ সেকেন্ড অর্থাৎ  পাঁচ মিনিটের সাক্ষাৎকার নিয়ে আনন্দ আলোর ঈদ সংখ্যার একটি বিশেষ আয়োজন এখন বাজারে। আজ থেকে অনলাইনে শুরু হলো এই সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত একশজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার…

জয়: স্যার আপনার জাতীয় পাটি কিছুটা বিতর্কিত। বিতর্কিত একটি দলের শীর্ষ পদে থেকে আপনি কি কি বিতর্ক ফেস করেন?
জি এম কাদের: জাতীয় পার্টির জন্ম থেকে বিতর্ক ছিল। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ সাধারন ভাবে রাজনৈতিক দল গুলি তৈরী হয় বা ক্ষমতায় যায় তার থেকে বাইরে ক্ষমতায় আসা ও রাজনীতি শুরু করা…. এটা হয়েছে। যারা সমালোচনা করেন তারা এটাকেই বেশী গুরুত্ব দেন।
জয়: আপনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হবার পর জাতীয় পার্টি কতটা এগুলো? আপনার মাস্টার প্লানটা কি?
জি এম জাদের: আমার এবং আমার সাথে যারা কাজ করছেন তারা স্বাভাবিক ভাবে রাজনীতির ইতিবাচক দিকটাকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমার ধারনা জাতীয় পার্টি সম্পর্কে এখন মানুষের ধারনা অনেক পজিটিভি। জাতীয় পার্টির যে অতীত কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন ভালো জিনিস গুলো মানুষের চোখে বেশী ধরা পড়ছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি যে গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে মানুষের কাছে এই ধারনা এখন স্পষ্ট। জাতীয় পার্টি যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে হয়তো এই ভালো বিষয় গুলো আর গুরুত্ব পাবে। অথবা সুশাসন কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। দুর্নীতি ও অনিয়ম কমতে পারে। সামনের দিকে যাতে জাতীয় পার্টি এই পর্যায়ে যেতে পারে, মানুষের আশা-ভরসার স্থল হয়ে উঠতে পারে সেটাই সাধারন মানুষের প্রত্যাশা আমার মনে হয়।
জয়: আপনার দলের ভিতরে অনেক অন্তঃদ্বন্দ আছে। এই ব্যাপার গুলো কি আপনাকে পিছিয়ে দিচ্ছে?
জি এম কাদের: রাজনীতির সাথে যেমন নীতি থাকে, তেমনি নীতির সাথে ষড়যন্ত্রও থাকে। রাজনীতির সাথে যেমন সুনীতি থাকে তেমনি দুর্নীতিও থাকে। সব মিলিয়েই রাজনীতি। এগুলোতে পিছিয়ে দেওয়া বলব না। এগুলোকে আমার চলার সাথী। এটাকে সঙ্গে নিয়েই সামনে যাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে আমার মনে হয় এগুলো কমতে থাকবে। হয়তো নতুন ভাবে আবার সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমি মনে করি এজন্য রাজনীতি পিছিয়ে যায় না।
জয়: আপনি তো মহাজোটের মন্ত্রীও ছিলেন। মন্ত্রীত্ব বেশী উপভোগ করেছেন নাকি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান….
জি এম কাদের: মন্ত্রীত্ব থাকাকালে একটা কতৃত্ব ছিল। দায়িত্ব ছিল। কতৃত্ব দিয়ে দায়িত্বটা পালন করে জনগণের সরাসরি সেবা করার সুযোগ ছিল। সেখানে এক ধরনের আনন্দ ছিল। এখন আবার নতুন দায়িত্ব…. নতুন প্রেক্ষিতে এসে একটা দলের হাল ধরেছি। দলটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আরও বড় প্রেক্ষিতে দেশের সেবা করার জন্য সুযোগের চেষ্টা করছি। এটা আরেক ধরনের আনন্দ।
জয়: গণতান্ত্রিক একটি দেশে বিরোধী দলের সংজ্ঞা কি?
জি এম কাদের: বিরোধী দলের কাজ হলো সরকারের যে কাজ গুলো জনগণের পক্ষে যাচ্ছে না মনে করা হচ্ছে অথবা জনগন মনে করছে তারা কিছু কথা সরকারকে বলতে চায়Ñ এই বিষয়গুলোকে তুলে ধরা, জনগনের পক্ষ হয়ে কথা বলা। সরকারকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া এটাই হলো বিরোধী দলের দায়িত্ব।
জয়: অন্যান্য বিরোধী দল যারা এদেশে আছে যারা অনেকে সংসদে নেই তাদের কাছ থেকে অভিযোগ শোনা যায় যে, জাতীয় পার্টি প্রকৃত বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে পারছে না। সরকারের বিরুদ্ধে যে ভয়েজ দরকার সেটা তাদের নাই।
জি এম কাদের: আমাদের এখানে যে সিস্টেম, যেভাবে দেশ পরিচালিত হচ্ছে, আমাদের সংবিধান যে ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে যদিও আমরা এটিকে সংসদীয় পদ্ধতি বলছি… বাস্তবতা কিন্তু পুরোটাই ভিন্ন। সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হবে সংসদ। সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হবে সংসদ। অথচ সাংবিধানিক ভাবে আমরা কিন্তু সেটাকে কার্যকর করতে পারি নাই। কাঠামো আছে। চেহারাও আছে। কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না। কথা হলো, যে দল সংসদে থাকবে দলের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবে না। তাতে হয়েছে কি যারা মেজোরিটি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে তারা যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই সংসদে পাশ হয়। এই মেজরিটি ব্রেক করার মতো কোনো পদ্ধতি নাই। সরকারের কোনো বিল অথবা প্রস্তাবকে আমরা বাতিল করতে পারি না। আমরা শুধু বলতে পারি….
প্রচার: ১৯ নভেম্বর ২০১৯