Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

৫-১০ বছরও নিষিদ্ধ হতে পারতাম : সাকিব

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা। এ দেশের সেরা বৈশ্বিক সুপারস্টার। সব ঠিক কাজ করতে করতে কখনো কখনো অজান্তে ভুলও করে ফেলেন এমন মানুষ। সাকিবের বেলায় ঘটেছিল তেমনটাই। তবে সাকিব এটাও বলতে ভুলছেন না যে, ওই অপরাধে ১ বছরের জায়গায় ৫/১০ বছরও নিষিদ্ধ হতে পারতেন। তাতে তো বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের গৌরবোজ্জ্বল ক্যারিয়ার অগৌরব নিয়ে গেল অক্টোবরেই শেষ হয়ে যেতে পারত!
সাকিব এসব বলেছেন ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলাপে। সেখানে জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য গোপন করায় এক বছরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উঠে আসে। ওটা বোকার মতো ভুল ছিল জানিয়ে সাকিব বলেছেন, তার মতো ভুল যেন কেউ না করে। ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব সমর্থকদের সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে খেলতে চান। এমন কাণ্ডে কষ্ট দেওয়ার বিনিময়ে সমর্থকদের দিতে চান গর্ব করার মতো পারফরম্যান্স।
‘এই সময় এবং পরিস্থিতি আমাকে একেবারে ভিন্নভাবে ভাবাচ্ছে। আগে হয়তো আমি কেবল আমার দেশ, নিজের ও পরিবারের জন্য খেলতাম। এখন আমি ভাবি যারা গেল ১২/১৫ বছর ধরে আমাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে তাদের প্রতিদান দিতে পারি। আমার কাজে তারা হতাশ। কীভাবে সেটা ঘুচিয়ে দিতে পারি, আরও বেশি কিছু ফেরত দিতে পারি।’
দীর্ঘ কথোপকথনে হার্শা ভোগলে অনেক প্রসঙ্গ এনেছেন। কিন্তু জুয়াড়ির ফোন-বার্তা, পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা এবং ওই প্রসঙ্গে সাকিবের অনুতাপের বিষয়টা নিশ্চয়ই দর্শককে আরেকবার ভাবাবে।
‘আমার মনে হয় বিষয়টাকে একটু বেশি হালকাভাবে নিয়ে নিয়েছিলাম। এখানে আমি বিস্তারিত বলব না। দুর্নীতি দমন কমিশনের ওদের সঙ্গে কথা বললে সবই বলি আমি। ওরাও সব জানত। প্রমাণও দিয়েছি সব। কী ঘটেছে না ঘটেছে তার আদ্যোপান্ত জানা তাদের। সত্যি বলতে এই কারণেই আমি মাত্র এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে হয়তো ৫/১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।’
সাকিব বলেন ‘আমি বোকার মতো এক ভুল করে ফেলেছিলাম। কারণ, আমার অভিজ্ঞতা ও যত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি, যে পরিমাণ আইসিসি অ্যান্টি করাপশন ক্লাস আমি নিয়েছি, সেই বিবেচনায় সত্যি বলতে এমন ভুল করা ঠিক হয়নি।’ এই পর্যায়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সবার জন্য সাকিবের পরামর্শÑ ‘কাউকেই এমন অপরিচিত মানুষের কল বা খুদেবার্তা হালকাভাবে নেওয়া উচিত হবে না।’
সাকিবের মতো তারকার সঙ্গে অসংখ্য মানুষের যোগাযোগ। সেই প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলছিলেন, ‘হাজারো কল কিংবা ম্যাসেজ পাই। এর কতটাই বা মনে থাকে? শুধু এটা মনে করতে পারি, …শেষবার যখন ওই লোকের (জুয়াড়ি) খুদেবার্তা পাই তখন আমার জবাব ছিলÑ স্যরি, আমি কার সঙ্গে কথা বলছি? কার সঙ্গে কথা বলছি জানতামই না। তারই সঙ্গে হয়তো কথা হয়েছে ২/৩ বছর আগে। আসলে জানতামই না ওই লোকটা কে এবং তার নম্বরও আমার কাছে ছিল না।’
সবাই নিরাপদ থাকুক এই ভাবনা থেকে সাকিব বলেন, ‘এমন বিষয়কে কেউ যেন হালকাভাবে না নেয়। ওকে, বাদ দিই না কেনÑ এমন না ভাবে। নিরাপদ জায়গায় থাকতে সবাই যেন এসিইউ’র কাছে রিপোর্ট করে। এই শিক্ষাই আমি পেয়েছি। বিরাট শিক্ষা আমার জন্য।’
হার্শা বলছিলেন, সুপারস্টাররা তো একটা ঘোরের মধ্যেও থাকে সবসময়। কখনো তাদের মনে হয়, ভুল কিছু তাদের দিয়ে ঘটবে না। এমন কিছুর মধ্যে বিশ্ব ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন সাকিবেরও যে কখনো কখনো বসবাস তাও জানা যায় তার মুখ থেকে, ‘একটা ভুল ধারণার মধ্যে তো আমিও বসবাস করি কখনো। বেশিরভাগ সময় ভালো মানুষের সঙ্গে আমার চলাফেরা। এটা আমার কাজেও আসে খুব। তারপরও যখন সবকিছু আপনার পক্ষে থাকে তখন ওরকম ভুল ধারণার মধ্যে পড়ে যেতে পারেন।’ জীবন থেকে নেওয়া কষ্টের উপাখ্যান ব্যাখ্যা করে সাকিব বলছিলেন, ‘কোনো বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে না নিলে কী হতে পারে বা না পারে তাও ভুলে বসতে পারেন। ভুলটা যখন ধরা পড়ে তখন আপনার বোধের উদয় হয়। ভাবেনÑ ওহ, আমার এটা করা উচিত ছিল, ওটা করা উচিত ছিল। আমিও এমন স্বপ্নের, ভুল ধারণার মধ্যেই ছিলাম। সব উপভোগ করছিলাম। এবং কিছু ব্যাপার গুরুত্বের সঙ্গে নিইনি। নিয়েছি হালকাভাবে।’
সবকিছুর পর সাকিব একজন মানুষ। এবং মানুষেরই ভুল হয়। ‘জীবনে বেশিরভাগ জিনিস যেহেতু ঠিকঠাক করেন তাই কিছু সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কখনো আপনার মধ্যে ঔদ্ধত্যও এসে যেতে পারে। কিন্তু নৈতিকতার দিক দিয়ে না হলেও কেতাবি ভুল করে ফেলছেন।’ তাই কোড অব কন্ডাক্টের মধ্যে থাকলে তা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পালন করার কথা বলেছেন সাকিব আল হাসান।