Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ড্রেসিংরুমে মাশরাফীকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছিল

বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের আলোচিত আন্দোলনের সময় ড্রেসিংরুমে মাশরাফীকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। সম্প্রতি একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফী এই দাবি জানান। গত বছর অক্টোবরে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটাররা। পরে আরো দুই দফা বাড়িয়ে ১৩ দফা করা হয়। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ডাকা সেই আন্দোলনে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ছিলেন দৃশ্যপটের একেবারেই বাইরে। সে সময় অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, মাশরাফী কেন নেই?

সেই সময় অবশ্যই নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন ফেইসবুকে বিবৃতি দিয়ে। এতদিন পর সেই আন্দোলন নিয়ে আরেকবার খোলাখুলি কথা বললেন মাশরাফী। বলেছেন, ড্রেসিংরুমে সেই আন্দোলনের সময় তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছিল। ছোট করা হয়েছিল জুনিয়র খেলোয়াড়দের সামনে। ওই ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক।

সম্পর্কিত

প্রশ্ন ছিল এমন- এত বড় একটা আন্দোলনে ক্রিকেটাররা আপনাকে ডাকেনি। এটা আপনার কত বড় কষ্টের জায়গা ছিল?

মাশরাফীর পুরো উত্তর তুলে ধরা হলো-

‘এটা যার সাথে হবে, সে হয়তো বা আরো ভালো বুঝতে পারবে। মানুষ অনেক সময় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে দুর্বল জায়গাগুলো দেখাতে চায় না। তবে আমি অস্বীকার করব না, এটা আমার অত্যন্ত কষ্টকর একটা জিনিস ছিল।’

‘ওরা যে ১১ দফা দাবি করে, আমার দেখার পরে মনে হয়েছে এখানে ১২ দফা হওয়া উচিত ছিল। সেটা এই জন্য- ১২তম লাইনটা হওয়া উচিত ছিল, আমরা এর ভেতরে মাশরাফীকে ডাকিনি। হয়তো বা যারা এই আয়োজনটা করেছে তারা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিত। কারণ আমি তখনও অবসরে যাইনি, তখন আমি অধিনায়কও।’

‘স্বাভাবিকভাবে সবাই প্রশ্ন করবে, তাহলে মাশরাফী কই গেল? আপনি একটা বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে, এতগুলো ছেলেরা এক হলো, আপনারা এটা চিন্তা করবেন না, এটা কেমন জিনিস। আমার কাছে এটা তাৎক্ষণিক মনে হয়েছিল।’

‘পর দিন তামিমের সঙ্গে আমার রাত্রে কথা হয়েছিল। তখন তামিমকে আমি এই কথাটা বলেছিলাম, তোদের দাবি হওয়া উচিত ছিল ১২টা। আমাকে ডাকিসনি এটা ভিন্ন মতামত। তোদের মনে হয়েছে, ডাকিসনি এটা আমার কাছে কোনো ইস্যু না। কিন্তু মানুষজনের জন্য তোরা কী রেখে গেলি? মানুষজন যখন বলবে, মাশরাফী কোথায়? তোরা যে আমাকে এতগুলো কথা শোনালি, কেন?’

‘আরেকটা জিনিস, ড্রেসিংরুমে মিথ্যাচার হয়েছিল। সেটা হচ্ছে অনেক খেলোয়াড়ই বলতে পারবে…। কেউ বলেছে মাশরাফী এমপি তাই আসবে না। আরেকজন জুনিয়র প্লেয়ার যখন বলেছে মাশরাফী কই, তখন বলেছে মাশরাফী ক্ষমতাসীন দলে সে জন্য আসবে না। তাহলে এটা কি সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিল? তা তো না…।’

‘তৃতীয় জিনিস ছিল, কেউ বলেছে উনি কই। উত্তরে বলা হয়েছে উনি নড়াইলে গেছেন, উনি নাই। এটা কেন। পরিষ্কারভাবে বলে দিলেই হতো আমরা মাশরাফীকে রাখতে চাচ্ছি না। জুনিয়রদের কাছে আমাকে ছোট করার তো কোনো দরকার ছিল না।’

‘এরপর যেটা হয়েছে, আমি কিন্তু ওদের কারো সাথে না বলেই আমার ফ্যানপেজে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, যে খেলোয়াড়দের ১১ দফার দাবির সাথে আমি একমত…।’

‘আমাকে কোনোভাবে ওরা অ্যাভয়েড করতে চেয়েছিল। সেটা ঠিক আছে…। আমি অধিনায়ক হয়েও কখনো জাহির করতে চাইনি। চাবও না। আমাকে না ডাকলে ড্রেসিংরুমেও হয়তো কখনো যাব না, এটাও সত্যি। কিন্তু সমস্ত মানুষের সামনে একটা অদ্ভুত অবস্থায় কিন্তু আমিই পড়েছি।’

‘কারণ দাবিটা যেহেতু যৌক্তিক, সেই যৌক্তিক দাবিতে যেহেতু আমি নাই, তার মানে আমি অযৌক্তিক। এই পরিস্থিতিতে কিন্তু একমাত্র ক্রিকেটার আমিই পড়ে গিয়েছিলাম।’

‘ওরা যদি ক্লিয়ার করে আসত শুরু থেকে, যে আমরা মাশরাফীকে চাইনি, বা উনাকে পাওয়া যায়নি, তাহলে আমি কিছুটা সেইফ সাইডে থাকতে পারতাম।’

‘তবে এটা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই…। আফসোস যদি থেকেও থাকে সেটা আমি কোনো একটা মিটিংয়ে তাদেরকে বলেছিলাম পরিষ্কারভাবে।’

‘এখনো আমরা একসাথে আড্ডা দিই। আমার ভেতরে এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নিয়ে আমি বসবাস করিনা। প্রশ্ন আসছে তাই সত্যিটা বললাম, এটাই কথা। আমার পরিবার যেমন আমার একপাশে, আমার সতীর্থেরা আমার অন্য পাশে আছে। কারণ ওরা আমার পরিবার।’

‘বছরের পর বছর ঈদের আনন্দ, রোজার আনন্দ, সবকিছু তাদের সাথে ভাগাভাগি করেছি। ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে দুঃখগুলোকে এক করে রাখার মানে হয় না। ওরাই আমার সবচেয়ে আনন্দের জায়গা ছিল, খেলাটাকেই তো ভালোবাসি। এটা নিয়েই আনন্দ বেশি। ওরাই আমার সবচেয়ে আনন্দের জায়গা, শান্তির জায়গা। পরিবারের অংশ তারা।’