Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

হেরিটেজ বিল্ডিং সংরক্ষণে আন্তরিক মাহফুজ আলম

হেরিটেজ বিল্ডিং সংরক্ষণে স্থাপত্যশিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন খন্দকার মাহফুজ আলম। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগদেন ‘ডিজাইন ইন’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। ২০১২ সালে তিনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে সহকারি স্থপতি হিসেবে যোগ দেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশনের কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের টিম এগারো শিব মন্দিরের আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশনের জন্য বার্জার অ্যাওয়ার্ড পান। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট আর্কিটেক্ট খন্দকার মাহফুজ আলম। তার বাবার নাম খন্দকার শাহ্ আলম। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। মা মাকসুদা পারভীন গৃহিনী। স্কুল জীবন থেকেই বই পড়ার প্রতি ছিল তার প্রচন্ড নেশা। সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দা সিরিজ, কিশোর ক্লাসিক আর অনুবাদের বই গুলো পড়তেন। ছোট বেলা থেকেই আর্কিটেকচারের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। ধানমন্ডি গর্ভমেন্ট বয়েজ স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে।
২০০৭ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই খন্দকার মাহফুজ আলম যোগ দেন ‘ডিজাইন ইন’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। সেখানে তিনি দুই বছর কাজ করেন। এরপর কনকর্ড ও নাভানা রিয়েল এস্টেট এ কিছু দিন কাজ করেন। ২০১২ সালে তিনি একই সাথে স্থাপত্য অধিদপ্তর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে সহকারী স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
কিন্তু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি তার ভালোবাসা ও আগ্রহ থাকার কারণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে যোগ দেন। শুরুতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও ধীরে ধীরে এই ধারার স্থাপত্য কর্মের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি অনেক গুলো হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশনের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

যেমনÑ নবাবগঞ্জে খেলারাম দাতার মন্দির, টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেন, মোহাম্মদপুরে সাত গম্বুজ মসজিদ, নরসিংদীতে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাসভবন, যশোর অভয়নগরে এগার শিবমন্দির ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বেশকিছু জাদুঘরের নকশা প্রণয়ন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দিনাজপুরের কাহারোলে কান্তজীর মিউজিয়াম, নীলফামারীতে বিন্নার দিঘী নীলফামারী জাদুঘর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক কার্যালয়ের নকশা প্রনয়ন ইত্যাদি।
ইউনেসকো ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রকল্প। বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্ভাব্য তালিকা হালনাগাদকরণ চলমান শুরু থেকে তিনি জড়িত আছেন। এছাড়া উপকূলবর্তী অঞ্চলে হেরিটেজ বিল্ডিং সংরক্ষণ করার জন্য গ্রীণ ক্লাইমেট ফান্ড প্রকল্পের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। স্থপতি খন্দকার মাহফুজ আলমের নেতৃত্বে প্রত্নতত্ত্বের টিম এগারো শিব মন্দিরের আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন কাজের জন্য ২০১৭ সালে বার্জার আর্কিটেক্টস অ্যাওয়ার্ড জিতে অধিদপ্তরের সুনাম বৃদ্ধি করে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে খন্ডকালীন এমফিল এ অধ্যয়নরত আছেন। কনজারভেশন ও আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশনের উপর খন্দকার মাহফুজ আলম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, এআইইউবি, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেজেনটেশন ও সেমিনার করছেন স্থাপত্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐতিহ্যের বিষয় বোঝানোর জন্য। ২০০৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মেহেরুজ জাহান জেমি। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী।

স্থপতি খন্দকার মাহফুজ আলম বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ স্থাপত্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হেরিটেজ বিল্ডিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হেরিটেজ বিল্ডিং গুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের আিধদপ্তরে যে কনজারভেশন কাজ করে থাকে তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি অংশ হচ্ছে হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের জন্য আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন। নানা কারণে হেরিটেজ বিল্ডিং রক্ষা করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ভগ্নদশা হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের আকির্টৈকচারাল ডকুমেন্টেশন করে রাখলে ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং গবেষক তাদের গবেষনার জন্য অথেনটিক ডকুমেন্টস পাবেন। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অধিদপ্তর থেকে অধিদপ্তর কর্তৃক ৫০৯টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তির আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন করার জন্য পর্যায়ক্রমে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে হেরিটেজ লাইনে কাজ করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জিং।

বর্তমানে আমরা যে ম্যানুয়াল ড্রইং করে আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন করি, সেই কাজকে ডিজিটাইলাইজেশনের মাধ্যমে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফটোগ্র্যামেটিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়। হেরিটেজ লাইনে বেসরকারি ভাবে স্থপতিরা এগিয়ে আসলে দেশের হেরিটেজ বিল্ডিং গুলোর আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন করা সম্ভব হবে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্য বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশে যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও আইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে খন্দকার মাহফুজ আলম নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। এই স্থপতির কাছে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ হেরিটেজ বিল্ডিংগুলোকে সংরক্ষণ করা। এ নিয়েই কাজ করে যেতে চান তিনি।