সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্যশিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে স্থপতি সৌমেন হাজরা অন্যতম। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘প্রাচী স্থপতি’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই ফার্মের প্রধান আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৌমেন হাজরা। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন তৈরি করে অনেকের নজর কেড়েছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় আর্কিটেক্ট সৌমেন হাজরা। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলায় লোহাগড়া উপজেলার ইতনায়। জন্মস্থল খুলনা হলেও তার শৈশব কেটেছে ইতনা গ্রামের মধুমতি নদীর পাড়ে। সেখানে শতবর্ষ পুরানো একটি আদি বসত ভিটা ‘হাজরা বাড়ি’তে। চর্তুদিকে বারান্দা বেষ্টিত উম্মুক্ত উঠান, সুউচ্চ খিলান, প্রশস্ত সিঁড়ি, চুন-সুরকীর সরকারী দালানে কেটেছে তার শৈশব কাল। সৌমেনের বাবার নাম সমরেন্দু শেখর হাজরা। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। মা মায়া রানী হাজরা গৃহিনী। অনুজ সব্যসাচী হাজরা বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান শিল্পী।
ছোটবেলা থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং বিজ্ঞান আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বই পড়া, বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের অনুবাদ করা তার পছন্দের বিষয়। আবৃত্তি ভালো করতেন। স্কুল জীবন থেকে তিনিস্বপ্ন দেখতেন ক্রিয়েটিভ কিছু করার। ঢাকায় আসার পর দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো দেখে স্থাপত্য শিল্পের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি।
সেন্ট জোসেফ্স হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯০ সালে। কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০১ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস কর বের হওয়ার পর পরই তিনি ‘সাইফ উল হক স্থপতি’ নামক কনসালটেন্সি ফার্মে কিছু দিন কাজ করেন। স্বনামধন্য স্থপতি সাইফ উল হকের অধীনে কাজ করে সৌমেন স্থাপত্যের সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত হন এবং খ্যাতিমান এই স্থপতির স্থাপত্য চর্চা তাকে প্রভাবিত করে। এখনো করছে। ভবিষ্যতেও করবে।

২০০৫ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘প্রাচী স্থপতি’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে তিনি দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, কমার্শিয়াল বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, বাংলো, শহীদ মিনার, মসজিদ, মন্দির সহ অনেক আবাসিক ভবনের ডিজাইন করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের এমএসটি ফার্মা, ময়মনসিংহের ভালুকায় পিডিলাইট ফ্যাক্টরি কমপ্লেক্স, শ্রীমঙ্গলে নাহার টি স্টেটের শতাধিক শ্রমিকের বাসভবন ও বাংলো, উত্তরায় বাণিজ্যিক ভবন ক্যাসেল, গাজীপুরের ইটা এন্ড টাইলস নামক অটোমেটিক ব্রিক ফ্যাক্টরি, ফার্মগেটে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের রেনোভেশনের কাজ, আগারগাঁও-এ পিপিডি এর ল্যান্ডস্কেপ, চট্টগ্রামের আমবিয়া গ্রুপের আবাসিক ভবন গুলো, টঙ্গীতে পিয়ারেজ প্রপার্টিজের বাণিজ্যিক ভবন, গাজীপুরে ডুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, গুলশান-২ এ সিটি রেসিডেন্স, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আফতাব রেসিডেন্স, ঢাকার প্রেস ক্লাবের সম্মুখে ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংহতি স্মারক’, নড়াইলে নওশের উল ইসলামের আবাসিক ভবন, ঢাকায় সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ এবং অন্যান্য ডেভলপারের অ্যাপার্টমেন্ট এবং বাণিজ্যিক ভবনের ডিজাইন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন। এছাড়াও নোয়াখালির বজরায় শাখেরপুর জামে মসজিদ, ঢাকার স্বামীবাগে লোকনাথ মন্দির সহ আরও বেশ কিছু ধর্মী স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। ২০০৫ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম পৃথ্বা রায়। এই দম্পতি এক সন্তানের জনক-জননী। ছেলের নাম সৌর।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি সৌমেন হাজরা। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি সৌমেন হাজরা বলেন, এই স্থাপত্য শিল্পচর্চাকে আপামর জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছি। এখনো অধিকাংশ মানুষই স্থাপত্য সচেতন না। এই সচেতনতা তৈরীর অঙ্গীকারই আমার স্থাপত্য চর্চার মূল অনুপ্রেরণা। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর মমতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই আগামীর পথে।
স্থপতি সৌমেন হাজরা বলেন, আমার স্থাপত্য চেতনার শিকড় মূলত বাংলাদেশী সংস্কৃতি এবং দেশীয় ঐতিহ্যের নিবিড় বুননে রচিত। আমি মূলত কনটেম্পোরারি ভার্নাকুলার স্টাইলে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আমার স্থাপত্যশৈলী সরল এবং সাধারণ। যা মৌলিক এবং একই সাথে পরিমিতিবোধ সম্পন্ন। আমি মনে করি মানুষ-স্থাপত্য এবং প্রতিবেশ এই তিনের সকল সম্মিলনে সভ্যতার পথচলা। যেখানে স্থাপত্য প্রাকৃতিক এবং সামাজিক পরিমন্ডলে মানুষের যাপিত জীবনের উদযাপন।