Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

হাবিব রেজা স্থপতি গড়ার কারিগর

ড. মোহাম্মদ হাবিব রেজা। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। ২০০১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডের নটিংহাম ট্রেন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্যের ইতিহাস ও থিওরী নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। বর্তমানে এই স্থপতি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন।
লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
স্থপতি ড. মোহাম্মদ হাবিব রেজার বাড়ি বরিশাল জেলায়। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঝালকাঠিতে। হাবিব রেজার বাবার নাম সাদেক আহম্মেদ। তিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন। মা আসমা সাদেক গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে হাবিব রেজা বড়। স্কুলে পড়াকালীন বির্তক প্রতিযোগিতার প্রতি হাবিব রেজার ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। কবিতা আবৃত্তি, বইপড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। কবিতা ভালো লিখতেন। ছোটবেলায় তার ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। তিনি হয়েছেন সফল একজন আর্কিটেক্ট। ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৫ সালে বিএম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০১ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি বিভিন্ন কনসালটেন্সি ফার্মে কাজ করেন। ২০০৪ সালে হাবিব রেজা স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে যোগ দেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে। পরবর্তীতে প্লানিং সেল এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে।
২০১৩ সালে হাবিব রেজা ইংল্যান্ডের নটিংহাম ট্রেন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্যের ইতিহাস ও থিওরীর ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তারপর দেশে ফিরে এসে স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। ২০১৩ সালে তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি মার্কেট, কমার্শিয়াল বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি, মসজিদ সহ বেশ কিছু আবাসিক ভবনের ডিজাইন ও পরিকল্পনা করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ বরিশালের সিটি মার্কেট, বিবিপুকুরের আরবান ডিজাইন, ইংল্যান্ডের লিভারপুলে আব্দুল্লাহ কুইলিয়াম সোসাইটি মসজিদ, কমটেক্সাস বিল্ডিং এর পূর্ণঃ নির্মাণ, বরিশালে সান্ধ্যকালিন বাজার, নথুল্লাবাদ জামে মসজিদ, মিসেস মুর্শেদা আবাসিক ভবন, মি: আইয়ুবের ডুপলেক্স বিল্ডিং, ওমানের বাহ্লা, ইজকি, বিটবিট, ইবরি, সাইবানি অঞ্চলে ওমান কালচারাল মিনিস্ট্রির অর্থায়নে ৫টি হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ারস এন্ড আর্কিটেক্টস, আবাসন উপদেষ্টা এবং নিরবানা আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠানে থাকা কালীন সময়ে ইন্ডাস্ট্রি এবং আবাসিক ভবনের বেশ কিছু ডিজাইন ও পরিকল্পনা করেন। দেশের বাইরেও তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ইংল্যান্ডের আর্কিয়াম সেন্টারে থাকাকালীন তার ও তার টিমের করা হ্যারিটেজ ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট ২০১৪ সালে প্রিন্স সুলতান বিন সালমান অ্যাওয়ার্ড পান।
২০০৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মাহজাবিন লিজা। এই দম্পতি এক ছেলে সন্তানের জনক-জননী। ছেলের নাম আরিয়াভ আবশান হাবিব। স্থপতি ড. মোহাম্মদ হাবিব রেজা বলেন, উত্তর আধুনিকতাবাদের ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাসঙ্গিকতাবাদের প্রভাব স্থাপত্যচর্চায় প্রবল। বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে আমি যখন স্থাপত্যের শিক্ষার্থী তখন আমাদের দেশে স্থাপত্য শিক্ষায় এই ধারণার বহুল প্রচলন ছিল। যার প্রভাবের মধ্যেই আমার স্থাপত্যচর্চা শুরু। কিন্তু শুরু থেকেই এই ধারার অনেক সমালোচনা আছে। আর সময়ের সাথে এর সীমাবদ্ধতাও অনেকটাই প্রকাশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই ধারার চর্চা বিশ্বময় স্থাপত্য এখন অনেক সীমিত। কিন্তু প্রাসঙ্গিক বিষয়ের, হোক সে সংস্কৃতি বা অর্থনীতির সাথে স্থাপত্যের সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। আমি স্থাপত্য শিক্ষায় যোগদানের পর থেকেই প্রাসঙ্গিক স্থাপত্য ধারণার সীমাবদ্ধতা নিয়ে ভেবেছি। প্রতিটি স্টুডিওতে শিক্ষার্থীদের প্রকল্পগুলোতে এর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করি। প্রাসঙ্গিকতাবাদকে ভিত্তি করে পরিশুদ্ধ নতুন এই ধারাকেই আমি বলছি নবপ্রাসঙ্গিকতাবাদ। নতুন এই ধারা গভীরতা ও বিস্তারে পূর্বের ধারণাকে অনেকটাই ছাড়িয়ে যায়।

আপনি এই ধরনের প্রজেক্ট বাস্তবে করেছেন কী না? এ প্রশ্নের জবাবে হাবিব রেজা বলেন, এই ধারনার অনেক স্থাপত্য নির্মানের চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি ব্রাক তাদের বাংলাদেশময় বিস্তৃত ব্র্যাক সেন্টার গুলোকে নতুন করে নির্মান করছে। সেই প্রজেক্ট গুলোতে আমরা যে টিমটা কাজ করেছি, সেখানে আমরা এই আইডিয়াটা এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে একটা হচ্ছে ঝিকর গাছা যশোর-এ আরেকটা হচ্ছে কাজীর হাটের সাতক্ষিরাতে। এই দুইটা প্রজেক্টের মধ্যে আমার এই দর্শন এর কিছুটা দেখা যাবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন হাবিব রেজা। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি হাবিব রেজা বলেন, আমি এই আইডিয়াকে আরেকটু সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। দর্শনটাকে আমি আরো উন্নত করার চেষ্টা করছি। সেটা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমার যারা শিক্ষার্থী আছে যারা আমার কাছ থেকে আর্কিটেকচার চর্চা শিখেছে তাদের মধ্যে এটাকে বিস্তৃত করার চেষ্টা করছি। তাদের বিভিন্ন একটিভেটিস হচ্ছে আসলে আমার এই আইডিয়াটার কন্টিনিউটি। আমি আসলে ভালো প্রজেক্ট খুজছি যেখানে এই আইডিয়াটাকে একশ ভাগ সফল করতে পারব। সেরকমের ক্লায়েন্টও দরকার। এটা যে শুধু মাত্র আমি করতে চাই, তাতে হবে না। আমাদের এখনো বাংলাদেশে যারা স্থাপত্য তৈরি করতে চায় তাদের মধ্যে এই ধরনের অনুভূতি এখনো তৈরি হয়নি অত ভালো ভাবে। এটা যতক্ষণ তৈরি না হবে, ততক্ষণ আসলে এটাকে আমরা ভালো ভাবে প্রয়োগ করতে পারব না। আমি সেটার দিকেই কাজ করছি।