Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চলুন রাম সাগর ও কান্তজীর মন্দির দেখে আসি…

সুবর্না হক
আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা সাধারনত বেড়ানোর ক্ষেত্রে হয় কক্সবাজার অথবা সিলেট, সেন্টমার্টিনকেই গুরুত্ব দেই। দেশের উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহ দেখান না। অথচ উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে বগুড়া, রংপুর এবং দিনাজপুর জেলায় রয়েছে দর্শনীয় অনেক জায়গা। যার মধ্যে দিনাজপুরে রামসাগর দিঘী ও কান্তজীর মন্দির উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে রেল, বাস এমনকি আকাশপথেও দুটি দর্শনীয় এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। আসুন জেনে নেই ভ্রমণ যাত্রার খুটিনাটি তথ্য।
কান্তজীর মন্দির বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। এই মন্দিরটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, কেউ কেউ একে কান্তজীউ মন্দির বা কান্তনগর মন্দির নামে চিনেন আবার অনেকের কাছে কান্তজীর মন্দিরটি নবরত্ন মন্দির নামেও সুপরিচিত। ১৮ শতকে নির্মিত মন্দিরটি দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর-তেতুলিয়া সড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত।
কান্তজীর মন্দিরের শিলালিপি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তৎকালীন মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৭২২ সালে প্রাণনাথ রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে মন্দিরের নির্মাণ শেষ করেন। তখন কান্তজীর মন্দিরটি ৭০ ফুট উঁচু ছিলো কিন্তু ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, বর্তমানে এর উচ্চতা ৫০ ফুট। বর্গাকার এই মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে প্রায় ১৫,০০০ টেরাকোটা টালি বা পোড়ামাটির ফলকে লিপিবদ্ধ আছে মহাভারত, রামায়ণ এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। তিন ধাপ বিশিষ্ট এই মন্দিরের চারদিক থেকে ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। ১ম তলার সকল প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান দেখতে পাওয়া যায়, আবার দুটো ইটের স্তম্ভ পর পর স্থাপন করে খিলানগুলোকে পৃথক করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো দেখতে চমৎকার এবং অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের ১ম তলায় ২১ টি, ২য় তলায় ২৭ টি এবং ৩য় তলায় ৩ টি দরজা-খিলান রয়েছে। কান্তজীর মন্দিরের পশ্চিম দিকে বারান্দা থেকে উপরে যাবার সিঁড়ি রয়েছে।
রামসাগর দীঘি মানুষের খনন করা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘী যা দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত। রামসাগর দীঘির আয়তন প্রায় ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার এবং গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি ঘাট রয়েছে। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রামসাগর দীঘি অবস্থিত। রামসাগর দীঘিকে কেন্দ্র করে একটি মনোরম রামসাগর জাতীয় উদ্যান গড়ে উঠেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পলাশী যুদ্ধের কিছুকাল পূর্বে রাজা রামনাথ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর পানির চাহিদা পূরণের জন্য এই দীঘিটি খনন করান। রাজা রামনাথের নাম থেকেই দীঘিটি রামসাগর দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। চারপাশে সবুজ বৃক্ষময় রামসাগর দীঘিটি বর্তমানে পর্যটন বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। রামসাগর দীঘির সৌন্দর্যবর্ধন এবং পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করার লক্ষ্যে একটি আধুনিক রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।
যা দেখবেন রাম সাগরে: রামসাগর জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে অজগর, বানর এবং কিছু হরিণ সহ বিভিন্ন প্রাণী স্থান পেয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে একটি আকর্ষনীয় শিশুপার্ক। পিকনিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে রামসাগরে রয়েছে ৭ টি পিকনিক কর্নার। এছাড়া ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে সম্পূর্ন ব্যক্তি উদ্যোগে রামসাগর গ্রন্থাগার নামে একটি পাঠাগার গড়ে তোলা হয়েছে।

সম্পর্কিত

যাবার পথ: ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে দিনাজপুর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। এঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে করে দিনাজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলি ছেড়ে যায়। বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস (০২-৮০১৩৭৯৩, ৮০১৯৩১২), এস এ পরিবহন (৯৩৩২০৫২), হানিফ এন্টারপ্রাইজ (৮০১৩৭১৪, ৮০১৫৩৬৮), কেয়া পরিবহন (৯০০০৮১২), শ্যামলী পরিবহন (৯০০৩৩১) ইত্যাদি। নন-এসি এবং এসি বাস ভাড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা। এছাড়া রাজধানীর উত্তরা থেকে বেশকিছু বাস দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রাত ৮ টায় ছেড়ে যায়। আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ১০ টায় ছাড়ে। আর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বেলা ১২ টা ১০ মিনিটে। শ্রেনীভেদে এইসব ট্রেনের টিকেট কাটতে ১৮৫ থেকে ৯০০ টাকা লাগে।
ঢাকা থেকে আকাশ পথেও সৈয়দপুর হয়ে কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দিঘী দেখতে যেতে পারেন। এজন্য ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুরে নেমে পৃথকভাবে মাইক্রোবাস অথবা কার যোগে রামসাগর ও কান্তজীর মন্দিরে যেতে পারবেন।
দিনাজপুর থেকে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। দিনাজপুর শহর থেকে কান্তজীর মন্দিরে যেতেও প্রায় একই সময় লাগে। সব চেয়ে ভালো হয় ঢাকা থেকে দিনাজপুরে যাবার পথে কান্তজীর মন্দির দেখে নেওয়া। পরে দিনাজপুরে গিয়ে নির্ধারিত হোটেলে উঠার পর রামসাগর দেখতে যেতে পারেন। আবার এটাও করতে পারেন ঢাকা থেকে সরাসরি দিনাজপুরে গিয়ে প্রথমে রামসাগর ঘুরে এলেন। পরে ঢাকায় ফেরার পথে কান্তজীর মন্দির দেখার সুযোগ নিতে পারেন।
থাকার জায়গা: রামসাগরে অবস্থিত স্থানীয় বন বিভাগের বাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। এই বাংলোর সাধারণ কক্ষ এবং এসি কক্ষে প্রতি রাত থাকতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হবে।
দিনাজপুর শহরে ভাল মানের হোটেলে থাকতে চাইলে পর্যটন মোটেলে (০৫৩১-৬৪৭১৮) যোগাযোগ করতে পারেন। পর্যটনের হোটেলে ঢাকা থেকে বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন ৯৮৯৯২৮৮-৯১নাম্বারে। পর্যটন মোটেলে ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন। কিংবা প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন দিনাজপুরের সাধারণ মানের হোটেলগুলিতে। সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল ডায়মন্ড (০৫৩১-৬৪৬২৯), নিউ হোটেল (০৫৩১-৬৮১২২), হোটেল আল রশিদ (০৫৩১-৬৪২৫১), হোটেল রেহানা (০৫৩১-৬৪৪১৪), হোটেল নবীন (০৫৩১-৬৪১৭৮), ইত্যাদিতে ২০০ থেকে ১০০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
খাওয়া-দাওয়া: দিনাজপুরে রুস্তম, ফাইভ স্টার, দিলশাদ হোটেলে গরুর ভুনা মাংস, কাঠি কাবাব ইত্যাদি খেয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া দিলশাদ রেস্তোরাঁর পাটিসাপটার বেশ সুনাম রয়েছে। এছাড়া পুলাহাট বিসিক এলাকায় আবুল হোটেলে ভাত, গরু কিংবা মুরগির মাংস, ডাল আর সবজি দিয়ে আহার সেরে নিতে পারেন।
ছবি : আবীর বাবু