Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গুলতেকিনের নতুন জীবন

হুমায়ূন আহমেদ যখন শাওনকে বিয়ে করেন তখন তাঁর অর্থাৎ হুমায়ূন আহমেদের বয়স ছিল ৫৬ বছর। শাওনকে বিয়ে করার কারণে গুলতেকিনের সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আশ্চার্য্যজনক হলো, গুলতেকিন আবার যখন বিয়ে করলেন তখনও তার বয়স ৫৬ বছর। পৃথিবীতে কত অবাক করা ঘটনাই না ঘটে।
বিবাহ কী? শুধুই কী সামাজিক বন্ধন? আর কিছুনা? অনেকে বলেন, বিবাহের একটি বয়স আছে। ২০ থেকে ৪০/৪৫ বছর বিয়ের উপযুক্ত সময়। কিন্তু এর বাইরে বিবাহ করলে ক্ষতি কী? আবার দ্বিতীয় বিবাহ অনেকের পছন্দ নয়। কারও হয়তো স্ত্রী মারা গেছে। এই ভদ্রলোক যখন দ্বিতীয় বিবাহ করেন তখন তা নিয়ে তেমন একটা কথা হয় না। একই কাজ যখন কোনো মহিলা করেন তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। সমাজে হই চই পড়ে যায়। বিশেষ করে তিনি যদি হন সেলিব্রিটি তাহলে তো তাকে নিয়ে মুখরোচক গল্পের ডালপালা বাড়তেই থাকে। গুলতেকিন। এই নামটি দেশের মানুষের কাছে অনেক পরিচিত। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী হিসেবেই মূলত তিনি পরিচিতি পান। কিন্তু প্রথম স্ত্রী থাকা সত্বেও হুমায়ূন আহমেদ দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ফলে প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
হুমায়ূন আহমেদ নেই। হুমায়ূন আহমেদের দুটি পরিবার দুটি শাখায় বিভক্ত। একটি হলো তাঁর প্রথম স্ত্রী ও তাদের সন্তানেরা। অন্যটি হলো দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার দুই সন্তান। অতি সম্প্রতি হুমায়ূন আহমেদের পরিবারে নতুন একজন মানুষ যুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ গুলতেকিন দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। তাঁর স্বামী একজন কবি। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। গুলতেকিনের নতুন সিদ্ধান্তের প্রশংসাই বেশী হচ্ছে। কেউ কেউ আবার এই ঘটনাকে ‘শোধবোধ’ শিরোনাম দিয়ে কৌতুকও করছেন। হুমায়ূন আহমেদ দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারলে গুলতেকিন কেন একই কাজ করতে পারবেন না। অনেক আগেই গুলতেকিনের উচিৎ ছিল দ্বিতীয় বিবাহ করা। এমন মন্তব্যও করছেন কেউ কেউ।

গুলতেকিন একজন কবি। দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছেন একজন কবিকে। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বন্ধুত্ব চলছিল। হঠাৎ তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেন গুলতেকিন। ‘এবার বাতাস উঠুক তুফান ছুটুক’ গুলতেকিনের কবিতার একটি লাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর-পরই তার কবি বন্ধু ফেসবুকের টাইম লাইনে লেখেন, “তিনি আমাকে তার সামনে বসালেন এবং আমার হাতে হাত রেখে বললেন, প্রত্যেকেরই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিঃশ্বাস নিতে চাই। তবে নিশ্চিত নই ভবিষ্যৎ কোন নিয়তিতে গাঁথা। আমি তার কথার উত্তরে বললাম, ‘আমি চেষ্টা করবো তোমাকে বাঁচাতে। কিন্তু তোমাকে বিয়ে করা ছাড়া এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” আমার কথা শুনে বিরতি নিয়ে গুলতেকিন বললেন, “তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? তখনই আমি অনুমান করতে পারি আমরা দু’জনই কোনো কারণ ছাড়া এক সঙ্গে হতে পারব না।”
গুলতেকিনের দ্বিতীয় বিয়ের পর হঠাৎ করেই যেন একটা সামাজিক অচলায়তন ভেঙ্গে গেছে। দ্বিতীয় বিয়ে অথবা একাধিক বিয়ে এক সময় আলোচনার ক্ষেত্রে ‘নিষিদ্ধ’ ছিল। এখন তা প্রকাশ্যে আলোচনা হচ্ছে। যে কারও সাথে যে কোনো কারনেই হয়তো বিয়ে বিচ্ছেদ হতেই পারে। তাই বলে সে কি আজীবন একা থাকবে? বিয়ে বিচ্ছেদের পর পুরুষ সহজেই তার নতুন সঙ্গী খুঁজে নেয়। তাহলে মহিলারা পারবে না কেন? গুলতেকিনের দ্বিতীয় বিয়ের খবর শুনে বিশিষ্টজনদেরও অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে চলছে ব্যাপক তোলপাড়। তারই কয়েকটি লেখা প্রকাশ করা হলো।

ক্ষমতা থাকলে আম্মাকে বিয়ে দিতাম!
শাহনেওয়াজ কাকলী

আমার ক্ষমতা থাকলে আমি আম্মাকে বিয়ে দিয়ে দিতাম। এমন কথা বলার সাহস আমি জীবনেও করিনি। ২০০৪ সালে এস,টি,ডি তে ডকুমেন্টারি কোর্স করি নারী নির্মাতা হওয়ার জন্য, সেখানে একটি ফিল্মের বিষয় ছিল; এক মায়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে সে কাটা স্তন নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে, এমনকি অন্য মহিলাদের সাথে সুইমিং, স্টিম বাথ নিতেও লজ্জা করতো। মহিলাটির মেয়ে একদিন রেস্টুরেন্ট এ খেয়াল করে তার মা একজন পুরুষের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল তখন সে বুঝতে পারে লোকটি দেখতে তার বাবার মত ছিল। মেয়েটি আরেকদিন সেই লোকটিকে তার মায়ের বন্ধু হবার জন্য রিকুয়েস্ট করে। তাদের সাক্ষাৎ করে দেন এবং একান্ত সময় কাটানোর ব্যবস্থাও। They both enjoyed time with love & passion together.
এই ছবি দেখার পর আমার নিওরোনের একটি দিক উন্মোচিত হয়ে যায় সেদিন থেকেই, আমি আম্মাকে অনুভব করলাম। সংসার, ছেলেমেয়ের জন্য আম্মা সারাটা জীবন বিসর্জন দিলো কিন্ত ফলাফল শূন্য।
আম্মার মনের অগোচরে রংগিন শাড়িতে হাত দিত,খুব খেয়াল করতাম।
সবার এক ধমকে আবার সাদা শাড়িতে ফিরে যেতো যদিও ঢাকা শহরে এখন আর এসব দেখা যায়না। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে আম্মা বিধবা নামের শব্দের সাথে জড়িত হওয়ায় তাকে বস্তাপচা সমাজের অনেক সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়ে হাঁটতে হয়েছে বাকী জীবন। প্রায় দুষ্টুমী করে আমিই বললাম, “আম্মা আপনার বিয়ে করা দরকার ছিল। চলেন, আমি আপনাকে বিয়ে দিয়ে দেই।” ঠোঁটে কোণে আম্মা সেই মিষ্টি হাসিটা চোখে জ্বলজ্বল করছে।
এই হলো সমাজ, সন্তান আর ছেলেমেয়ে নিয়ে মানুষের জীবন। যেখানে নিজের ইচ্ছে,স্বাধীনতা, স্বাদ,আহলাদ,সুখ শান্তি বলে কিছু থাকেনা। অপরের জন্য সব দিয়ে দাও, উজাড় করে দাও, দাসীর মত জীবন কাটাও কারণ তুমি বিধবা।
একজন মানুষের সংগীর প্রয়োজন হয় ঠিক পঞ্চাশ পেরোলেই, মানুষটি তখন নিঃসংগ,একা, অভিজ্ঞতা তখন অনেক শেখায়। তাঁর বলার মত কাছের মানুষ থাকেনা। চারপাশের সবাই ব্যস্ত,কারো ফিরে তাকানোর সময় হয়না। কিন্ত সে একজন মানুষ। সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে সেও তৈরি।
আমি প্রাণকে একজীবন দিয়ে যতটুকু ভালোবাসা যায় তাই বাসি, সর্বদা মংগল কামনা করি। ওর কোন প্রকার অনুপুস্থিতি মাইক্রো সেকেন্ডেও ভাবতে পারিনা। কিন্তু এও সত্য প্রাণকে বলি, আমি মরে গেলে বা তুমি মরে গেলে কারোই একা থাকার দরকার নেই। জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত এটাই। মানুষের বন্ধু প্রয়োজন আছে। আমি বিয়ে করবো কিনা জানিনা। একা থাকতে পারবো না, ইম্পসিবল! স্মৃতিগত অসুখে ভুগবো, আর কেউ দেখার নেই।
আরেকটা কথাও বলি, পঞ্চাশ বছর হলে একটা চুটিয়ে প্রেম করবো যদি পাই। তখন আর আটকাবে না। পুরো যৌবনকালটাই তোমাকে দিলাম। অন্তত, বুড়িকিয়াটার মূল্যহ্রাস দিও। সোসাইটি তখন আরো আধুনিক হবে আশাকরি। তোমারও বিশাল ছাড় থাকবে।
মানুষ যত পুরানো হয়, তখন তাঁর বন্ধু লাগে। তাঁর ইচ্ছের পরিবর্তন হয়। সারাজীবনটা সে এক নিমিষে দেখতে পারে। চাওয়া পাওয়া, পাপ,পূর্ণ, ভুল, সঠিক, হারানো, প্রাপ্তি সব সব সে দেখে জানে। কাজেই বিবাহের যে বয়স এদেশে নির্ধারণ করা হয় তাতে শরীরের কোষই শুধু বৃদ্ধি পায়, মাথার নয়। একজন মানুষের নিওরোনের বৃদ্ধির বয়স পঁয়ত্রিশ বয়সে ঘটে, তখন সে সব অনুধাবন করতে শিখে কিন্তু এই সমাজ তা অস্বীকার করে। নারীকে শিশুকে, বয়সকে উপেক্ষা করে, অভিজ্ঞতাকে তিরষ্কার করে। মানুষ মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে, জীবন নাশ করে, অপমান করে, রম্য করে, কারোই কোন ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছুই নেই। সবাই সবার তোষামোদি করতে হবে, দাসত্ব মেনে নিতে হবে, অন্যায়কেও প্রশংসা করতে হবে, খারাপকে ভালো বলতে হবে, ভালোকে কোণঠাসা করতে হবে… অদ্ভুত এক চক্র! একেই বলে দুর্গন্ধ ময়, বস্তাপচা,অশিক্ষার আখড়া আমাদের বাংগালী সমাজ।
এতগুলো লিখা যাকে ভেবে লিখলাম, তিনি গুলতেকিন। এই সমাজের একজন বিশেষ ব্যক্তি। নব্বই দশকের পাঠকের এই নামটির সাথে বেশ পরিচয় আছে। তিনি নিজেও একজন লেখিকা। আমাদের বিখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদ’র প্রথম স্ত্রী যিনি সদ্য দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনকে সুন্দর করে তুলবার সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে অভিনন্দন। মননে তিনি আধুনিক যিনি জরাজীর্ণ প্রথা ভেংগে নতুনভাবে পথ চলতে পারেন। লুকিয়ে নয়, পালিয়ে বিদেশ গিয়ে নয়, পরকীয়া করে নয় পুরো সমাজকে জানিয়ে তিনি নতুন জীবনে প্রবেশ করলেন তাকে স্যালুট!
গধহ পধহ’ঃ ষরাব ধষড়হব ্ রিঃযড়ঁঃ ড়িৎশ.
এই দুটো নিয়েই মানুষের সমগ্র জীবন।