Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সিনেমায় নামলে ছোট পর্দা ছেড়ে দেয়া উচিৎ-জ্যোতিকা জ্যোতি

মেয়েটির বেড়ে ওঠা দেশের এমন একটি অঞ্চলে যেখানে মাত্র এক বছর হয় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ঠিক সেখান থেকে উঠে আসা মেয়েটি এক সময় শোবিজে কাজ করবে এটা কখনোই ভাবেনি। আজ শুধু যে দেশের শোবিজে সে কাজ করছে তা নয়। পাশের দেশের কলকাতায়ও সে আজ আলোচিত একজন অভিনেত্রী। মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা তীব্র ইচ্ছা কিংবা কিছু একটা হওয়ার বাসনায় সে আজকের এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি কলকাতায় ‘রাজল²ী শ্রীকান্ত’ ছবিটি করে দুই বাংলায় আলোচিত তিনি। হ্যাঁ, পাঠক বলছি জ্যোতিকা জ্যোতির কথা। দূর্গা পুজায় মুক্তির পর ছবিটি নিয়ে রীতিমতো ওপার বাংলায় হৈচৈ পড়ে যায়। মহালয়ার ঠিক একদিন আগে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি লুফে নিয়েছে ওপার বাংলার দর্শকরা। এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় গিয়ে দর্শকের মন জয় করতে পেরে উচ্ছ¡সিত জ্যোতিকা জ্যোতিও। ২০০৫ সালে সারাহ্ বেগম কবরীর আয়না চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন জ্যোতি। তার পর থেকে অভিনয়ই তার ধ্যান-জ্ঞান। আয়না চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর বেলাল আহমেদের নন্দিত নরকে এবং তানভীর মোকাম্মেলের রাবেয়া ও জীবনঢুলি, আজাদ আবুল কালামের বেদেনী এবং অনিল বাগচীর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। এ ছাড়া নূরুল আলম আতিক, অনিমেষ আইচ, সালাউদ্দিন লাভলুর মতো গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে ছোট পর্দায় অসংখ্য কাজ করেছেন এ অভিনেত্রী। আনন্দ আলোর কার্যালয়ে বসে জ্যোতি জানালেন তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক কথা। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল
আনন্দ আলো: রাজল²ী ছবিটি মুক্তির পর কেমন সাড়া পেয়েছেন?
জ্যোতিকা জ্যোতি: এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ। আমি অভিভূত। আমাদের দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অভিনয়শিল্পী ছবিটি দেখে বেশ প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি কলকাতারও বিশিষ্টজন ছবিটির অনেক প্রশংসা করেছেন। আমার অভিনয়েরও প্রশংসা করেছেন সবাই। আমাদের দেশের কিংবদন্তি নায়িকা সারাহ বেগম কবরী ছবিটি দেখেছেন। এটা আমার সৌভাগ্যই। ঘটনাচক্রে তিনিও দেখে ফেলেন ‘রাজল²ী ও শ্রীকান্ত’। বাংলাদেশে যার হাত ধরে আমার পর্দায় অভিষেক, ভারতের অভিষেকেও তাকে পাশে পেলাম। এটা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। ছবিটি দেখার পর তিনি বলেছিলেন, ‘জ্যোতি অনেক ভালো অভিনয় করেছে। ছবিটি দেখার পর জ্যোতির অভিনয় দেখে মনে হয়েছে- চরিত্রটি একেবারেই পারফেক্ট’। এমন কথায় আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। অন্যদিকে প্রিয় ‘জয়া আপু’র সঙ্গে বসে নিজের ছবি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। তিনিও দেখেছিলেন ছবিটি। জয়া আপু নিজে ছবির টিকিট কেটে আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন আমাদের জনপ্রিয় নির্মাতা নুরুল আলম আতিক ভাই। ছবিটি দেখার পর জয়া আহসান বলেন, ‘এমন একটা ছবির জন্য আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। আমার সৌভাগ্য হলো আমাদের রাজল²ীর পাশে বসে একসঙ্গে ছবিটা দেখার। ছবির শেষটা এত জাদুকরি, এত নাটকীয় একটা গল্প কী করে এত বিশ্বাসযোগ্য করে বলা যায়, সেটা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। বাকি যা আছে ক্যামেরা, অভিনয়সহ কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। যাঁরা বাংলা ছবি ভালোবাসেন, বাংলা ছবির রস আস্বাদন করতে চান, বাংলা ছবির একটি নতুন গতি হিসেবে অবশ্যই এ ছবিটি দেখার অনুরোধ করছি। চোখ জুড়িয়ে যাবে, মনটা ভরে যাবে।’ আমি সিনেমা হলগুলো ঘুরেছি। মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেছি। সিনেমা দেখে বেরোনোর সময় মানুষ প্রশংসা করেছেন। অনেক বোদ্ধারাও ছবিটির প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
আনন্দ আলো: এই ছবিতে সম্পৃক্ত হলেন কিভাবে?
জ্যোতিকা জ্যোতি: ২০১৫ সালের কথা। আমি প্রথমবার একটি শর্টফিল্মে কাজ করার জন্য কলকাতা গিয়েছিলাম। এর আগে যদিও কলকাতায় ফেস্টিভালে আমার অভিনীত দুটি ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল। যাই হোক কাজটি করার জন্য আমরা সে সময় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর গেস্ট হাউজে ছিলাম। সেখানে থাকার সময় এক রাতে আমাদেরকে যে ধরনের খাবার দেয়া হয়েছিল, যা ছিল হুবহু পুরান ঢাকার খাবারের মত। খাবারের প্যাকেটে লেখা ‘পুরান ঢাকা’। এটা আমাকে বেশ রোমাঞ্চিত করেছিল। খাবারগুলো সত্যিই মজাদারও ছিল। আমি তখন ইউনিটকে জানাই- এই দোকানে যেতে চাই। পরের দিনই সেই খাবারের দোকানে যাই এবং দোকানের মালিকের সাথে পরিচিত হই। মালিকের নাম ছিল সুজয় নাগ। যিনি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সঞ্জয় নাগের ভাই। তার সাথে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কথা প্রসঙ্গে তাকে বলেছিলাম আমি কলকাতার ছবিতে কাজ করতে চাই। তখন তিনি আমাকে জানান প্রদীপ্ত দাদার (রাজল²ী-শ্রীকান্ত’র নির্মাতা) কথা। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ পরেই বাংলাদেশি ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদীপ্ত দাদার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমাকে ‘রাজল²ী-শ্রীকান্ত’ এর চিত্রনাট্যের কথা জানান এবং রাজলক্ষী চরিত্রটির জন্য প্রস্তাব দেন। এভাবেই মূলত আমার টলিউডের যাত্রা শুরু। প্রদীপ্ত দা এর আগে ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন। যা কলকাতায় বেশ আলোচিত হয়।
আনন্দ আলো: এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল?
জ্যোতিকা জ্যোতি: আমার চরিত্রটি সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পর প্রথমে বেশ চিন্তায় ছিলাম। আসলে কিভাবে কি হবে- সেটা নিয়েও একটা চিন্তা ছিল। সব মিলিয়ে ইউনিটের সাথে মিটিং-সিটিং হওয়ার পর আস্তে আস্তে অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়ে যায়। এই ছবির জন্য উচ্চারণে মনোযোগ এবং ক্লাসিক্যাল নাচের তালিমও নিয়েছি। লোকজনের আচার-ব্যবহার, চলাফেরা খুঁটিয়ে লক্ষ করেছি রবীন্দ্র সরোবর লেকে হাঁটতে হাঁটতে। পরিচালকের নির্দেশ মতো বাসে-ট্রামে যাতায়াত করেছি। আমার মামার বাড়ি কলকাতায়। সেখান থেকেও অনেক কিছু সম্পর্কে জেনেছিলাম। সবমিলিয়ে নিজের মধ্যে চরিত্রটা ধারণ করতে থাকি।

আনন্দ আলো: ছবিটিতে প্রথম দিন শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
জ্যোতিকা জ্যোতি: প্রথম দিন শুটিংয়ে যাওয়ার আগে অনেক কাজ ছিল। ইউনিটের সাথে অনেকবার বসতে হয়েছিল। ওরা আসলে বেশ প্ল্যানিং করে কাজ করে। লুকের বিষয়ে, মেকআপের বিষয়ে, সিন বাই সিন কিরকম লুক হবে, কস্টিউমটা কেমন হবে- এরকম নানান আলোচনা আগে থেকেই করা হয়। তাই কাজটা করে আনন্দ পেয়েছি। সবকিছু বেশ সিস্টেমেটিক। এরকম কাজের চর্চা আমাদের এখানে একমদই হয় না। জীবন ঢুলি ও অনীল বাগচীর একদিন করার সময় কিছুটা সিস্টেমেটিক ভাবে কাজ করা হয়েছিল। যাইহোক প্রথম দিন আমরা কলকাতার বাইরের কিছু দৃশ্যের শুটিং করি। সেটা কলকাতা শহর থেকে অনেক দূরে। যেতে যেতে কিছু শুটিং হয়। আসলে গল্পে কিছু গ্রামের অংশ থাকে যা দিয়ে প্রথম শুটিং শুরু হয়। তবে শুটিংয়ের আগের দিন রাতে আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। ঠিক পরীক্ষার আগের যেমন অস্থিরতা থাকে তেমনই অস্থির ছিলাম। তবে প্রদীপ্ত দা বেশ সহায়তা করেছেন। তিনি নানানভাবে আমাকে বুঝিয়েছেন।
আনন্দ আলো: ঋত্বিক চক্রবর্তীর সাথে কাজের অভিজ্ঞতাটা কেমন?
জ্যোতিকা জ্যোতি: বেশ মজার অভিজ্ঞতা পেয়েছি। বর্তমানে কলকাতায় ঋত্বিক চক্রবর্তীর অবস্থান বেশ ভালো। প্রথমে মনে হয়েছিল উনি হয়তো বেশ ভাব নিবেন, অথবা কথাবার্তা খুব কম বলবেন। কিন্তু না। তিনি নিজে থেকেই আমার সাথে ফোনে কথা বলেন। আমি তো অবাক। উনি আমাকে এতো আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন, যেটা আসলেই আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। কোনো অহংকার নেই, কোনো রকম ভাব নেই। ভালো লেগেছে উনার সাথে কাজ করে। উনি প্রতিটা শটে যাওয়ার আগে সিক্যুয়েন্স নিয়ে আলোচনা করতেন, পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিতেন সবমিলিয়ে উনার সাথে কাজ করে মনেই হয়নি আমি কোনো কো আর্টিস্টের সাথে কাজ করেছি। মনে হয়েছে- আমার কোনো বন্ধুর সাথে কাজটা করেছি। ঋত্বিকদা এত সাধারণভাবে থাকেন যে তার অসাধারণত্ব টের পাওয়া যায়। এত বড় মাপের অভিনেতা হওয়ার পরেও খুব ভাল কো-আর্টিস্ট। মনেই হয়নি প্রথম কাজ করেছি।
আনন্দ আলো: দুই জায়গার কাজের পার্থক্যটা কেমন চোখে পড়লো?
জ্যোতিকা জ্যোতি: অনেক পার্থক্য চোখে পড়েছে। ওদের ওখানে প্রফেশনালিজমটা আগে। ওদের ওখানে ৯টা মানে ৯ টাই। পুরো ইউনিট টাইম মেনটেইন করে। আপনি কে, কতো বড় স্টার সেটা বিষয় না। কারন ওদের ওখানে টাইম ওভার হয়ে গেলে কোনো কাজ হবে না। এটাই সিস্টেম। সময় হলে যে যার মতো সব গুছিয়ে নিবেন। ডিরেক্টর কি বললো- সেটার জন্য কেউ অপেক্ষা করবেন না। কিন্তু আমাদের এখানে তো এমন হচ্ছে না। যারা টাইম মেনটেইন করছেন, তারা দেখা গেছে আরেকজনের জন্য বসে আছেন। এটা কোনো সিস্টেম না। আমাদের এখানে মেইন হিরো, হিরোইন দেরি করে আসবেন- এটা নিয়ম হয়ে গেছে। আর ওরা প্রত্যেকটা সিক্যুয়েন্সের আলাদা নোট নিয়ে কাজ করেন। কোন সিক্যুয়েন্সে কেমন লুক হবে, কোন কস্টিউম হবে, কতো মিনিটের সিক্যুয়েন্স হবে- সব নোট করা থাকে। সেভাবেই কাজ করে। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি ও কলকাতার ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছেÑ প্রফেশনালিজম। টালিউড একদম প্রফেশনাল, আর ঢালিউড ইমোশনাল।
আনন্দ আলো: আপনি তো লাক্স আনন্দধারা ফটোজেনিক হয়েছিলেন, জার্নিটা মনে পড়ে?
জ্যোতিকা জ্যোতি: ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলায় ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষকরা বলতেন, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ একদিন স্টার হবে।’ আমাকে বলতেন- তোমার কণ্ঠ ভালো। এবং তোমার যে আগ্রহ তুমি একদিন ভালো কিছু করবে। এ সময় লাক্স ফটোজেনিকে ছবি পাঠনোর বিজ্ঞপ্তি আসে। প্রথমে আমার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আমার বন্ধুরা বলল, ‘ছবি পাঠাও।’ তবে ছবি পাঠানো নিয়ে তখনো আমি দ্বিধায় ছিলাম। তারপর পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে ছবি পাঠাই। এভাবেই হয়ে গেলাম লাক্স ফটোজেনিক।
আনন্দ আলো: অভিনেত্রী হওয়ার কেনো পরিকল্পনা ছিল?
জ্যোতিকা জ্যোতি: না, অভিনেত্রী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আগে থেকে ছিল না। আমার পরিবার ও চারপাশের যে পরিবেশ ছিল, সেখানে মেয়েদের মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার আগেই বিয়ে দেয়া হতো। তবে ইচ্ছে ছিল, রাজনীতি করব। সারা দুনিয়ার মানুষ আমাকে চিনবে। ইচ্ছে হতো সাংবাদিক হব। কখনো ইচ্ছে হতো আইনজীবী হওয়ার। স্কুলের গÐি পার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল এমন এলোমেলো। তা ছাড়া আমার মাথায় এমন ভাবনা কাজ করত যে আমি এমন কিছু করব, যা আর দশজনে করে না। যা অনেক বেশি আলাদা। তবে ছোটবেলা থেকে আমার মধ্যে এমনকিছু কাজ করতো তা হলো- আমি কিছু না কিছু হবোই। এই ধারণাটা আমার মধ্যে ছিল। সেটা কি হবো আমি জানতাম না, কিন্তু হবো… সেটা জানতাম।
আনন্দ আলো: আপনি তো ময়মনসিংহ বহুরূপী থিয়েটারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন…
জ্যোতিকা জ্যোতি: ময়মনসিংহ শিল্পকলা একাডেমীতে আবৃত্তি ও অভিনয়ের ওপর চার বছর মেয়াদি কোর্সে ভর্তি হই। সেখানে যখন ক্লাস করতাম তখন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছি। মাঝে মাঝে আবৃত্তিও করতাম। তখন বহুরূপী থিয়েটারের অনেকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। বহুরূপী থিয়েটারই তখন ওখানকার সবচেয়ে বড় দল ছিল। সেসব দেখে দলটিতে কাজ করার ভূত মাথায় চাপে। এরপরই থিয়েটারে কাজ শুরু করি। রিহার্সেল করতে থাকি। তবে কোনো মঞ্চ নাটক করা হয়নি। মাস ছয়েকের মতো কাজ করেছিলাম। এর মধ্যে লাক্স ফটোজেনিক হয়ে গেছি। এদিকে আমার পড়াশোনারও চাপ ছিল। তারপর আমি ঢাকায় চলে আসি। তাই আর থিয়েটার করা হয়নি।
আনন্দ আলো: গৌরীপুরের মতো একটা গ্রাম থেকে কীভাবে আজকের এই পর্যায়ে এলেন?

জ্যোতিকা জ্যোতি: আমি এমন একটা গ্রামের মেয়ে, যেখান থেকে উঠে আসা মোটেও সহজ ছিল না। মাত্র এক-দেড় বছর হয় আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ গিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে আমি কতো প্রত্যন্ত অঞ্জলের মেয়ে। আমি নিজেও জানি না, এটা ঠিক কীভাবে সম্ভব হয়েছে। কারণ আমিই বোধহয় আমার গ্রামে প্রথম মাস্টার্স পাস করেছি। সেখান থেকে এই মিডিয়াতে আসা অসম্ভব ব্যাপার। তবে আমার প্রচÐ জেদ। আমার যেটা চাওয়ার আমি সেটা করবই। আমি জানি, আমার চাওয়াটা ভালো। জীবনে আমি অন্যায় কিছু চাইনি। তাই কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি এবং পারবেও না।
আনন্দ আলো: বড় পর্দায় কাজ করতে গিয়ে ছোট পর্দাকে ভুলে গেছেন- কথাটি কী সত্যি?
জ্যোতিকা জ্যোতি: বড় পর্দায় নিয়মিত কেউ কাজ করলে কেন সে ছোট পর্দায় কাজ করবে? অবশ্যই তার ছোট পর্দা ছেড়ে দেয়া উচিত। যদিও আজকের জ্যোতিকে সবাই ছোট পর্দা দিয়েই চেনে। তবে আমার অভিনয়ের শুরু বড় পর্দা দিয়ে। আমার সমস্ত ভালো লাগা আগ্রহের জায়গা হলো সিনেমা। তা ছাড়া এখন নাটকের মান যে পর্যায়ে গেছে, তাতে আমি নাটকে অভিনয়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। নাটকে কাজের পরিবেশ যে জায়ঘায় গিয়েছে সেখানে কাজ না করাই ভালো। সব মিলিয়ে আমার আসলে টার্গেটটা বড় পর্দাকে ঘিরেই। আমি এখন কলকাতায় কাজ করেছি। খুব শিগগিরই কলকাতায় আরো ভালো কিছু কাজ হতে যাচ্ছে। নিজে কিছু কাজের পরিকল্পনা করছি। ভিন্ন ধারার কিছু করার পরিকল্পনা চলছে। সময় হলে সবাই দেখতে পাবেন।
আনন্দ আলো: বিয়ে-শাদী কবে করবেন?
জ্যোতিকা জ্যোতি: এটা আসলে অনেক বড় দায়িত্বের বিষয়। এতো বড় দায়িত্ব আমি মনে হয় না এখুনি নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। আসলে মানুষের জীবনে কখন কী হয় সেটা তো বলা যায় না। তাই এই বিষয়টি নিয়ে এখুনি কিছু বলতে পারছি না।
আনন্দ আলো: নিজের কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলবেন-
জ্যোতিকা জ্যোতি: আমি আসলে অভিনয়টা নিয়েই থাকতে চাই। অভিনয় করে মানুষের হৃদয়ে সারাজীবন থাকার ইচ্ছা। সেজন্য এমন সব চরিত্রে কাজ করতে চাই- যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে আজীবন। আর নিজের মতো করে কিছু কাজ করতে চাই- যা আমার একান্ত ভালো লাগার বিষয় হবে। সে দিকেই এগুনোর চেষ্টা করছি।