Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এমন কিছু নাই যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়

ড. হাছান মাহমুদ এমপি, তথ্যমন্ত্রী

রাজু আলীম
ড. হাছান মাহমুদ এমপি চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম ৭ আসন থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ড. হাছান মাহমুদ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এনভায়রনেমন্টাল সায়েন্স বিষয়ে লিম্বুর্গ ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাম বেলজিয়াম থেকে ২০০১ সালে। হিউম্যান ইকোলজি বিষয়ে ব্রিজ ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস বেলজিয়াম থেকে ১৯৯৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. হাছান মাহমুদ স্কুল জীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার মৌলবাদী অপশক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি কয়েকবার তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোন রক্তচক্ষু হাছান মাহমুদকে তার সংগ্রামের পথ থেকে পিছু হটাতে পারেনি। চট্টগ্রামের সরকারী মুসলীম উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি স্কাউটের দলনেতা ছিলেন। জুনিয়র রেডক্রস টিমেরও সদস্য ছিলেন। আন্ত:বিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগতায়ও তিনি স্কুলের বিতর্ক দলের দলনেতা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক দলের দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হন। ১৯৭৮ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে সরকারি হাজী মহসিন কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হন। পরে ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে নব্বই এর দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য বিপুল বিজয় লাভ করে।
১৯৯২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার কার্যকরী সংসদের সবচেয়ে নবীনতম সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯২ সালে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে যান। সেখানে তিনি ১৯৯৩ সালে ব্রাসেলস এর বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ড. মাহমুদ ১৯৯৩ সালে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে এবং ১৯৯৫ সাল থেকে মার্চ ২০০০ পর্যন্ত বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. হাছান মাহমুদ ২০০১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন। একযোগে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবেশ ও বন বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য। ২০০৭ সালে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সামরিক সমর্থিত সরকার কর্তৃক গ্রেফতার করা হয় তখন ড. হাছান মাহমুদ দলীয় সভাপতির মুখপাত্র হিসেবে অকুতোভয়ে কাজ করেন। যা দলের সকল কর্মী ও সমর্থকদের দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। ২০০৮ সালে বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯-২০১৩ সময়কালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. হাছান মাহমুদ ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে সবচেয়ে কনিষ্ট সদস্য হিসেবে পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মনোনিত হন। ২০১৫ সালের ৫ই অক্টোবর গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল তাদের সাধারণ অধিবেশনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শক্ত ও জোরালো ভূমিকার জন্য তাকে সার্টিফিকেট অব অনারেবল মেনশনে ভূষিত করে। এটি গ্রিন স্টার পুরস্কারেরই একটি অংশ। ড. হাছান মাহমুদ দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একজন খ্যাতিমান পরিবেশবিদ হিসেবে সুপরিচিত। সম্প্রতি জাহিদ নেওয়াজ খান এর পরিকল্পনা এবং রাজু আলীম এর প্রযোজনায় চ্যানেল আই এর টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানে তার সাক্ষাতকার নেন ফাবলিহা বুশরা। তারই চুম্বক অংশ আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য।
আনন্দ আলো: দূরদর্শন ছিল উপমহাদেশের প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল। কিন্তু নিয়মিত সম্প্রচারের দিক দিয়ে প্রথম টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশন। গেলো ২ রা সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে বিটিভি’র সম্প্রচার শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই প্রত্যাশা কিভাবে পূরণ হলো জানতে চাই?
ড. হাছান মাহমুদ: এটি একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের জন্যে। কারণ যাত্রা শুরু হওয়ার পরে বিটিভি প্রথমবারের মত অফিসিয়ালি ভারতে চালু হয়েছে। আগে আমাদের দেশের সাথে লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় তা দেখা যেতো। কিন্তু তা অফিসিয়াল সম্প্রচার ছিল না। তাই ২০১৫ সালে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে আসেন তখন দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক হয় যে, এই দেশে দূরদর্শন আর ভারতে বিটিভি দেখানো হবে। কিন্তু এটি নানা কারণে কার্যে পরিণত হয়নি। এই ধরণের অনেক এমওইউ হয়। কিন্তু তাকে কার্যে পরিণত করা অতো সহজ কাজ নয়। সব এমওইউ কার্যে পরিণত হয় না। এই ক্ষেত্রে আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দেওয়ার পরে কাজ শুরু করি। এর আগেও কিছুটা কাজ হয়েছিল। কিন্তু তা আটকে ছিল। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পরে আমি প্রায়োরিটি দিয়ে এই কাজটি হাতে নেই। আমরা জানুয়ারী মাসে তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করি আর আমাকে জানুয়ারী মাসেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারী মাসে আমি কলকাতা সফরে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের জন্যে। সেখানে ভারতের এখনকার যে রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলির সাথে আমার দেখা হয়। কথা প্রসঙ্গে ভারতে যাতে বিটিভির অনুষ্ঠান দেখা যায় সেটা বলি। এব্যাপারে তার সহযোগিতা চাই। তিনি বাংলাদেশে আসার আগেও যিনি ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তার সাথে এব্যাপারে ফার্স্ট ড্রাইফ তৈরী করি। সেই ড্রাফট আবার রি-ড্রাফট করতে হয়েছে। এরপরে রিভা গাঙ্গুলী আসার পরে দ্রুততার সাথে ওই কাজ আমরা সম্পন্ন করি। ড্রাফট আমরা ফাইনাল করি। ওই ড্রাফট এরপরে ভারতের দিল্লীতে পাঠানো হয়। কিন্তু তখন আবার ভারতের নির্বাচন। ওই সময়েই আমাদের সমঝোতা হয়ে যায় যে, ভারতে বিটিভি দেখানো হবে। কিন্তু ভারত সরকার ওই সময়ে বলে- যেহেতু এখন ভারতের নির্বাচন তাই দয়া করে এটি তোমরা এখন ঘোষণা করবে না। তাই আমরা ঘোষণা করিনি নির্বাচনের জন্যে। এরপরে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে আবার ওয়ার্কিং এগ্রিমেন্ট নতুন মন্ত্রীর অনুমোদনের ব্যাপার ছিল। নতুন মন্ত্রীকে আমি নানাভাবে খবর পাঠিয়েছি অনুরোধ জানিয়েছি এবং একই সাথে ভারতের হাইকমিশন অফিস সেটিকে এক্সপিডাইট করেছে। সব মিলিয়ে নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরেই অনুমোদন দিয়ে দেয়। এরপরে বিটিভি’র ডিজি সেখানে যান। আমরা চাইলে জুলাই মাসেই চালু করতে পারতাম। যেহেতু এটি একটি বড় অর্জন তাই আমরা চাচ্ছিলাম আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তা করতে। কিন্তু তা ব্যাটে বলে হচ্ছিল না। এর মধ্যে আগস্ট মাস চলে আসে। আমরা সিদ্ধান্ত নেই আগস্ট মাসে না করতে। কারণ আগস্ট শোকের মাস আমাদের জন্যে। তাই ২ রা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়।
আনন্দ আলো: প্রথম চ্যালেঞ্জ উতরে এখন দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ। ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা। সেই ক্ষেত্রে বিটিভি’র কনটেন্টের মান উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ আপনারা নিচ্ছেন কি?
ড. হাছান মাহমুদ: এখানে আমরা কারও সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিনি। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় চ্যানেল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো বাংলাদেশের অনুষ্ঠান ও সংবাদ ওই দেশে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে পুরো ভারতবর্ষ জানতে পারছে। আগেও এটি কেবলের মাধ্যমে সারা বিশ্বে দেখা যেতো। ভারতে এটি এখন ফ্রি ডিশের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কেবলের মাধ্যমে নয়। টেরিস্টরিয়েল চ্যানেল যেভাবে দেখা যায়, বিটিভি’ও ঠিক একইভাবে সেখানে দেখা যাচ্ছে। ভারতের দূরদর্শন যেভাবে টেরিস্টরিয়াল সম্প্রচার হচ্ছে ভারতে বিটিভি ওর্য়াল্ডও ঠিক সেভাবে টেরিস্টরিয়াল সম্প্রচার হচ্ছে। অবশ্যই আমাদের কনটেন্ট এর উন্নয়ন প্রয়োজন। তবে আমি মনে করি ভারতের অনেক টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ে আমাদের বিটিভি ওয়ার্ল্ড এর মান ভাল। তবে আরও ভাল করা প্রয়োজন এবং তা ধীরে ধীরে ভাল হচ্ছে।
আনন্দ আলো: একটা অভিযোগ আছে বিটিভি’র বিরুদ্ধে যে, তারা শুধু সরকারের খবরই প্রচার করে থাকে?
ড. হাছান মাহমুদ: পুরোটাই সরকারের খবর প্রচার করে শুধু তা নয়। অন্য খবরও প্রচার করে। আমরা চেষ্টা করছি। বিটিভি’তে বিতর্ক বন্ধ ছিল বহু বছর। জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা যেটি আগে হতো বিটিভি’তে। সেটি বন্ধ ছিল আমরা আবার তা চালু করেছি। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দুই জায়গায়ই আলাদাভাবে চালু করেছি। আপনি জানেন, বিটিভি’র একটি ভাল অনুষ্ঠান ছিল নতুন কুঁড়ি। বাংলাদেশের এখন অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এই নতুন কুঁড়ি’র মাধ্যমে উঠে এসেছেন। কিন্তু এটি বন্ধ ছিল বহু বছর ধরে। আমরা আবার এটি চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। বিতর্ক বন্ধ করার পেছনে যুক্তি ছিল যে, এখানে সরকারের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হয়। সমালোচনা তো থাকতেই পারে? সমালোচনা ছাড়া তো গণতান্ত্রিক সমাজ হতে পারে না। আমি বললাম, সমালোচনা হোক। তাই সেটি চালু হয়েছে।
আনন্দ আলো: বিটিভি’র পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্য প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো ভারতে সম্প্রচারের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ আপনারা নিচ্ছেন কি?
ড. হাছান মাহমুদ: সেগুলো অফিসিয়ালি প্রচার করার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। কিন্তু যে প্রতিবন্ধকতা দাঁড়িয়েছে- সেখানকার কেবল নেটওয়ার্কের যারা মালিক তারা খুব উচ্চ ফি দাবি করছে। প্রতিবছর তারা ৫ কোটি টাকা ফি দাবি করছে। কিন্তু আমাদের টেলিভিশনগুলোর ৫ কোটি টাকা দিয়ে সেখানে চালু করলে ব্যবসায়িকভাবে তারা কোনভাবেই সফল হবেন না। সে কারণে তারা করতে পারছে না।
আনন্দ আলো: এই ফি কমানোর কোন উদ্যোগ?
ড. হাছান মাহমুদ: এ নিয়ে তাদের সরকারের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা বলছে যে, এটা তো প্রাইভেটে ওরা করছে। এ নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। বিটিভি’র মাধ্যমে যে দুয়ার খুললো- আশা করি সবার জন্যেই দুয়ারটা খুলে যাবে।
আনন্দ আলো: গণমাধ্যম বান্ধব তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
ড. হাছান মাহমুদ: আমাদের গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা ভোগ করে, তা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও এতো স্বাধীনতা ভোগ করে না। যেমন, আমি বলি- অনেকেই তা জানে না। বিবিসি’তে একজন এমপি’র বিরুদ্ধে একটি ভুল সংবাদ পরিবেশিত হয়েছিল। এই কারণে সেই বিবিসি’র পুরো টীমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আমাদের দেশে কোন মিথ্যা বা ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে এইরকম ঘটনা কোন ক্ষেত্রেই ঘটেনি। ইংল্যান্ডে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা। সেই পত্রিকা একসময়ে ইউকে’র হাইয়েস্ট সার্কুলেটেড পত্রিকা ছিল। সেই পত্রিকাতে একটি ভুল সংবাদের কারণে তাদের উচ্চ ফাইন দিতে হয়েছিলো। সেই ফাইন গুণতে না পেরে ওই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেশে ভুল সংবাদের কারণে কোন পত্রিকা বন্ধ হয়নি। আমাদের দেশকে নিয়ে উন্নত দেশ অনেক সমালোচনা করে কিন্তু অনেকক্ষেত্রে তাদের চেয়েও বেশি স্বাধীনতা এই দেশের গণমাধ্যম ভোগ করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিকাশ এই দুই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করেছে এবং করবে।
প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে। আজকে প্রায় ৩৩টি টেলিভিশন চ্যানেল সবগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে হয়েছে। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশে পত্রিকার সংখ্যা ছিলো ৭৫০ টি আর এখন সেটির সংখ্যা ১২৫০টি। অনলাইন হাতে গোনা কয়েকটি ছিল। এখন তা কয়েক হাজার। আর ইদানীং আমরা আইপি টিভি’রও রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি। সেটিও হবে। গণমাধ্যমের এক্সপারেনশিয়াল গ্রোথ হয়েছে গেলো সাড়ে দশ বছরে। গণমাধ্যমের বিকাশের সাথে সাথে স্বাধীনতা যেমন দরকার ঠিক তেমনি তাদের দায়িত্বশীলতারও প্রয়োজন রয়েছে। দুটোই প্রয়োজন। আমার স্বাধীনতা যেমন দরকার তেমনি আমার স্বাধীনতা যাতে অপরের স্বাধীনতা হরণ না করে সেদিকেও খেলায় রাখতে হবে।
আনন্দ আলো: গণমাধ্যমে অনেক ভুয়া খবর ছড়ায় যা গুজবের তৈরী করে- এই ব্যাপারে কি করছেন আপনারা?
ড. হাছান মাহমুদ: গণমাধ্যমে গুজব খুব একটা বেশি ছড়ায় না। অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে এই সব নিউজ বেশি দেখা যায়। এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব ছড়ায়। এই জন্যেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে এতো কথা? আমি বলি- ডিজিটাল এই নিরাপত্তার বিষয়টা আগে ছিল না। দশ বছর আগেও আজকের পরিস্থিতি ছিল না। ছিল না তাই আইনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। কেউ দেখা গেলো আপনার বিরুদ্ধে এমন জিনিস ছড়ালো যা আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করে কিংবা একজন গৃহিনীর কিংবা একজন কৃষকের বা একজন সরকারী কর্মচারীর অথবা একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি ডিজিটালি অর্থ্যাৎ অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যদি কুৎসা রটায়। সমালোচনা করতেই পারে। সমালোচনা করতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সমালোচনার কথা বলে এমন কিছু করে যা আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ করে, আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার উপরে হস্তক্ষেপ করা হয় বা আপনার চরিত্র হরণ বা অন্য কারো চরিত্র হরণ করা হয়। তাহলে সে কোন আইনের বলে নিজেকে সুরক্ষা করবে? এর জন্যে তো কোন আইন ছিল না। সেই কারণেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সারাদেশের সব মানুষের নিরাপত্তার জন্যে। এই ধরণের সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিভিন্ন নামে পৃথিবীর অন্য দেশেও হচ্ছে। ইটস এ বিগ চ্যালেঞ্জ। আমি দুই মাস আগে ইউকে এবং ইইউ’তে গিয়েছিলাম। সেখানেও একই নিয়ম করা হচ্ছে। তারা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ফাইন করার জন্যে রুলস করেছে।
আনন্দ আলো: গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা এটি উদ্বেগের বিষয়। এই ব্যাপারে আপনাদের পদক্ষেপ কি আছে?
ড. হাছান মাহমুদ: গণমাধ্যমকর্মী আইন আমরা ইতিমধ্যেই প্রণয়ন করেছি। এটি ভেটিং হয়েছে কিন্তু তা আমরা এখনো পাইনি। এটি খুব শিগগিরই মন্ত্রীসভার মাধ্যমে সংসদে নিয়ে যাব। গণমাধ্যমকর্মী আইন যখন হবে তখন গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হবে আইনি কাঠামোর মাধ্যমে।
আনন্দ আলো: গণমাধ্যমের উন্নয়নে আপনার বা সরকারের পরিকল্পনা কি?
ড. হাছান মাহমুদ: শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যমের বিকাশের জন্যে অনেক কাজ করেছে এবং এই জন্যে এই দেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। আমরা চাই-প্রকৃতপক্ষে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীন মুক্ত এবং স্বাবলম্বী গলমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ যে কোন সমাজকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, রাষ্ট্রকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তাহলে তর্ক, বিতর্ক ও সমালোচনা থাকতে হয়। আমরা এইগুলোতে বিশ্বাস করি। এই জন্যে কয়েকটি কাজ করা প্রয়োজন। একটি হলো-হেলদি গণমাধ্যম। যদি কোন টেলিভিশন তার চাকরিজীবীদের বেতন দিতে না পারে তাহলে সেতো হেলদি নয়। আরেকটি হলো- গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করা। আরেকটি হলো-গণমাধ্যমের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদেরকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া। এই সব বিষয় নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমরা বিদেশী চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছি। তা আইন দ্বারা বাধিত কিন্তু তা মানা হচ্ছিল না। আবার বিদেশী চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়াও আইন দ্বারা নিষিদ্ধ কিন্তু কিছু টেকনিক্যাল কারণে তা মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়টিও নিশ্চিত করবো। তারপরে কেবল অপারেটরদের কাছে নতুন টিভি চ্যানেলগুলোকে নানা ধরণের তদবির করতে হতো। আমাকে অমুক সিরিয়াল দেন, আমাকে একটু উপরে তুলে দেন। আরেকজন গিয়ে বললো আমাকে আরেকটু উপরে তুলে দেন এবং এই সব নিয়ে সেখানে আন হেলদি নানা অ্যালায়েন্স হতো। আমরা সেগুলো বন্ধ করেছি। আপনারা জানেন, আমরা নবম ওয়েজ বোর্ড করেছি সংবাদপত্রের জন্যে এটি ইতিমধ্যেই আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে সেটি সাইন করেছেন। তাই অনকে কাজ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কাজ হবে।