Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সবুজ স্থাপত্যের ধারণার পক্ষে আর্কিটেক্ট দিদার

গ্রীণ আর্কিটেকচার নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে আর্কিটেক্ট মো: নাছির উদ্দিন দিদার অন্যতম। ২০০১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারি স্থপতি হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারি প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট আর্কিটেক্ট মো: নাছির উদ্দিন দিদার। তার জন্ম কুমিল্লা জেলায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। আর্কিটেক্ট দিদারের বাবার নাম মরহুম আব্দুল লতিফ। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা খোরশেদা খানম গৃহিণী। স্কুল জীবন থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আর্কিটেক্ট দিদার। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাধারন জ্ঞান এসব অনুষ্ঠান করতেন নিয়মিত। ছবি আঁকা ছিল তার পছন্দের বিষয়। ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল আর্কিটেক্ট হওয়া। আজকে তিনি হয়েছেন একজন সফল আর্কিটেক্ট ।
কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। নাছির উদ্দিন দিদার ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০১ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর তিনি বেশ কিছু দিন নিজে কাজ করেন। বৃহৎ পরিসরে দেশের জন্য কাজ করার তাগিদে ২০০৫ সালে যোগ দেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারি স্থপতি হিসেবে। বর্তমানে তিনি স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারি প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থপতি নাছির উদ্দিন দিদার দেশের নামকরা গবেষনা ইনস্টিটিউট, অফিসার্স ও স্টাফ কোয়াটার, সার্ভার স্টেশন, হাইটেক পার্ক, অফিস বিল্ডিং, স্কুল সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ আগারগাঁও-এ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিস ভবন, ঢাকায় বিটিআরসি হেড অফিস, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এর প্রধান কার্যালয়, কক্সবাজারে সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৬৪টি জেলায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সার্ভার স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প, মুগদায় আইডিয়াল স্কুল, বিএসটিআই চট্টগ্রাম ও খুলনা আঞ্চলিক অফিস, যশোর ও নাটোরে হাইটেক পার্ক, বিসিএসআইআর এর মাস্টার প্ল্যান, গোপালগঞ্জ এ বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন তিনি। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন। ২০০৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম রওশন আরা তানিয়া। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। ছেলের নাম দাইয়ান। আর মেয়ের নাম দিয়ানা।

স্থপতি মো: নাছির উদ্দিন দিদার বলেন, বিদ্যুৎ জালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে সরকারি কাজ গুলোর নকশা প্রণয়নে অংশ গ্রহণ করি। নকশা প্রনয়নের ক্ষেত্রে বিধিমালা, পরিবেশ সম্পদের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবস্থাপনা, অগ্নি নিরাপত্তা, আলো বাতাস প্রভৃতি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বর্তমানে পরিবেশ বান্ধব গ্রীন বিল্ডিং (গ্রীন আর্কিটেকচার) প্রণয়নে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। এতে করে জমির ব্যবহার, ভ‚স্তরের জলাধার, আর্থসামাজিক অবস্থা, পরিবেশ, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মেটেরিয়ালের সহজলভ্যতা প্রভৃতি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধরনের ভবনের খরচ কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে এই ভবন আর্থসামাজিক ও পরিবেশের জন্য লাভজনক হিসেবে গণ্য হয়। যেহেতু আমার ডিজাইনকৃত ভবনগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে তাই ভবন গুলোতে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে ডিজাইন করা হয়। কারণ আমাদের ডিজাইনকৃত ভবনের প্রতিফলন বেসরকারি পর্যায়ে প্রাকটিসরত স্থপতিদের কাজে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। তিনি আরও বলেন, একটি সাসটেইনেবল আর্কিটেকচারের ধারা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ (ঢাকা ও চট্টগ্রামে) এবং দেশের অন্যান্য স্থানে ১৯৯৬ বিধিমালা অনুসারে নকশা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন খুবই কম দেখা যায়। নির্মাণের সময় বিধিমালার ব্যত্যয় করে ভবন নির্মাণ করলে পরিবেশ ও টোটাল সার্ভিসের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
ভবিষ্যতে আমার স্বপ্ন সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিটি বিল্ডিং যেন বিধিমালা মেনে গ্রীণ বিল্ডিংয়ের আদলে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি মো: নাছির উদ্দিন দিদার। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।