Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

যাকে বিয়ে করবো তাকে আমার চেয়ে মেধাবী হতে হবে-মেহজাবিন চৌধুরী

সময়ের আলোচিত এবং জনপ্রিয় দুটো শব্দই তার সাথে যায় যুক্ত করা অনায়াসে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তাকে দর্শক আবিস্কার করছেন প্রতিনিয়ত। কখনো তিনি রাগী মেয়ে, কখনো তিনি রোমান্সে ভরপুর প্রেমের কন্যা, আবার কখনোবা তিনি জীবন ঘনিষ্ঠ চরিত্রে মিশে একাকার হয়ে যান। যখন যে চরিত্রে তাকে দেখা যায়- তখন সেই চরিত্রের জন্য তিনি যেনো একেবারেই প্রস্তুত হয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হন। গুণী এই অভিনেত্রীর নাম মেহজাবিন চৌধুরী। এই যে চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়া এবং সেটাতে অভিনয় করা- সবমিলিয়ে একজন অভিনেত্রীর জায়গা থেকে প্রস্তুতিটা কেমন থাকে কিংবা চরিত্র বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন কোন জিনিসগুলোকে তিনি প্রাধান্য দেন- এমন সব আলোচনা তিনি আনন্দ আলোর সাথে করেছেন। তার সাথে কথা বলে লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।
আনন্দ আলো: ঈদের পর কাজ শুরু করেছেন?
মেহজাবিন: এখনো শুরু করিনি। তবে খুব শিগগিরই শুরু করবো। এবার ঈদের পর লম্বা একটা ছুটি নিয়েছি। সামনে দূর্গা পূজা উপলক্ষে কাজ শুরু করবো।
আনন্দ আলো: আপনাকে এখন টেলিভিশন নাটকে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বলা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
মেহজাবিন: দেখুন, আমি যা হয়েছি তার সবটুকুই হয়েছি দর্শকের কৃতিত্ব। দর্শকরাই আসলে আমাদের কাজের সব সফলতার প্রাপ্য। তারা যদি আমাদের কাজ না দেখতেন তাহলে কখনোই আমরা আজকের এই জায়গায় আসতে পারতাম না। তাই, আমি সবকিছুর জন্য আগে দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। দর্শকরা আছেন বলেই আমরা কাজ করতে পারছি। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবা সবার উপরে এসব কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি কাজটা ঠিকমতো করতে পারছি কিনা। একটা চরিত্র নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারছি কিনা। আমি আসলে ঠিকমতো কাজটাই করে যেতে চাচ্ছি। বাকিটা দর্শকই বিচার করবেন।
আনন্দ আলো: এই যে চরিত্র প্লে করার কথা বললেন। এই প্রসঙ্গেই যদি আসি তাহলে প্রশ্নÑ আপনি নিজের চরিত্রগুলো বাছাই করেন কিভাবে?
মেহজাবিন: আসলে অনেক ধরনের কাজের প্রস্তাবই পাই। তাই বলে সব ধরনের চরিত্র যে করি তা নয়। আমার কাছে একটা স্ক্রিপ্ট বা গল্প এলে সবকিছুর আগে আমি চিন্তা করি চরিত্রটা আমার সাথে যায় কিনা, গল্পটা কেমন, এই গল্পের সাথে আমাদের সামাজিক অবস্থা সহ নানান বিষয় চিন্তা করেই কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর চিন্তা করি পরিচালক বা টিমটা কেমন কিংবা শুটিং লোকেশনের বিষয়ে। সবকিছু যখন মিলে যায় তখুনি আসলে কাজটা করি। এখন চরিত্রের সাথে নিজেকে যখন খাপ খাওয়াই, কস্টিউম নিয়ে চিন্তা করি এবং শুটিংয়ের আগে যখন নিজের প্রস্তুতিটা নেই- তখুনি দেখা গেছে কাজটা অটোমেটিকলি ভালো হয়ে যায়। একজন অভিনয়শিল্পীর শুটিংয়ে যাওয়ার আগে অনেক ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। একটি চরিত্রে ছোট্ট একটা কানের দুলও কিন্তু চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলায় কাজ করে। এমনকি মেকআপটা কেমন হবে- সেটা নিয়েও আমাকে চিন্তা করতে হয়। সত্যি কথা বলতে কী- অন্যান্য দেশে যেরকম কস্টিউম, মেকআপ দেখার আলাদা আলাদা মানুষ থাকে, এমনকি চরিত্র অনুযায়ী সবকিছু দেখার লোকজন থাকে- আমাদের এখানে কিন্তু সেটা নেই। সবকিছুই আটিস্টকে ভাবতে হয়।
আনন্দ আলো: এরইমধ্যে আপনি অনেকগুলো চরিত্রে এবং অনেক ধরনের নাটকের গল্পে কাজ করেছেন…
মেহজাবিন: আমি আসলে সংখ্যা গুণে অভিনয় করি না। তবুও দেখতে দেখতে অনেকগুলো নাটক প্রচার হলো। নির্মাতারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কাজের সংখ্যা বেশি হলেও মানের দিকে কখনো কোনও আপোস করিনি। প্রতিটি নাটকের গল্প ও চরিত্রে বৈচিত্র্য রয়েছে। আমি আসলে কাজের মধ্যে ভিন্নতা চাই। একই ধরনের কাজে বারবার নিজেকে দেখতে চাই না। দর্শকের সামনে প্রতিবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হতে চাই।
আনন্দ আলো: গত ঈদে আপনার নিজের গল্পেও নাটক নির্মিত হয়েছে। গল্প লেখায় কী নিয়মিত হবেন?

মেহজাবিন: আসলে বিষয়টি এমন না। আমার মাথায় একটা গল্প এসেছিল। ঠিক ঐ সময়ে একটি শুটিং স্পটের সেটে নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমি আসে। তার কাছে গল্পটা শেয়ার করি এবং সে ঐ গল্পটিই বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবেই গল্পটি নিয়ে ‘আবারো স্বপ্ন দেখি’ শিরোনামের নাটকটি নির্মিত হয়। স্বপ্ন ও স্বপ্নপূরণের গল্প নিয়ে নাটকটি নির্মিত হয়। এখানে আমাকে দেখা গেছে কাজের বুয়ার চরিত্রে। এতে নিজেকে গøামারার্স চরিত্রের বাইরে একেবারেই ভিন্নভাবে তুলে ধরেছি। আমাদের জীবনটা অনেক চ্যালেঞ্জের। সেই জীবনে অনেক পরিকল্পনা ও স্বপ্ন থাকে; কিন্তু সেই স্বপ্ন যদি পূরণ না হয়, তাহলে হতাশ হলে চলবে না। মানুষ স্বপ্ন ও আশা নিয়েই বাঁচে- এই গল্পটিই বলতে চেয়েছি নাটকে। আসলে নানান ধরনের চরিত্রে কাজ করতে করতে নানান ধরনের গল্প মাথায় চলে আসে। বিষয়টা এমন না আমি এখুনি গল্প লিখবো। হয়তো নির্মাতাদের সাথে শেয়ার করা যেতে পারে। সেটা সামনে কখনো হলেও হয়তো হবে। এটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।
আনন্দ আলো: আপনাকে খন্ড নাটকেই বেশি অভিনয় করতে দেখা যায়…
মেহজাবিন: হ্যাঁ। খন্ড নাটকের অভিনয় নিয়ে আমি খুবই ব্যস্ত থাকি। সত্যি বলতে ধারাবাহিক নাটকগুলোর প্রতি আমার নিজের কোন আগ্রহ নেই। কারন ধারাবাহিক নাটকের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটা সময়ে গিয়ে গল্পটা ঝুলে যায়। অন্যদিকে সময় মিলানো নিয়ে আমার একটি সম্যস্যা হয়ে থাকে। কারন নাটকে অভিনয় করার পাশাপাশি আমি বিজ্ঞাপনেও মডেলিং ও বিভিন্ন টেলিভিশনে নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকি। মূলত সবকিছু মিলিয়ে সময় হয়ে ওঠে না বলেই খন্ড নাটকে নিয়মিত কাজ করি।
আনন্দ আলো: ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে শুরুর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?
মেহজাবিন: অবশ্যই। তবে আমার শৈশব-শৈশর এর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে বেশি। আমার পৈতৃক নিবাস চট্ট্রগাম হলেও ছোটবেলা কেটেছে মরুর দেশে অর্থাৎ আরব-আমিরাতেই আমার জীবনের অনেকগুলো বছর কেটেছে। সেখান থেকে আমি ২০০৭ সালে দেশে আসি। পড়াশুনা শুরু করি। একসময় শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়তে শুরু করলাম। আমি আরব আমিরাতে থাকা অবস্থাতেই ব্যালে ড্যান্স শিখেছিলাম। পড়াশুনার পাশাপাশি টুকটাক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকতাম। কিন্তু সেটা আসলে উল্লেখ করার মতো না। তবে ২০০৯ সালে দেশে এসে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়ার পর আমার জীবন পুরোই বদলে গেল। যে পরিবারের কেউ-ই কখনো শোবিজ মিডিয়ায় ছিলেন না, সেখানে আমি আজ এতো এতো কাজ করছি। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নাটক, বিজ্ঞাপনে কাজ করি। আমার অভিনীত প্রথম নাটক ছিল ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত ‘তুমি থাকো সিন্ধু পাড়ে’। মনে আছে এ নাটকে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন মাহফুজ আহমেদ ভাইয়া।
আনন্দ আলো: সিনেমায় অভিনয়ের কী খবর?
মেহজাবিন: সিনেমায় অভিনয়ের জন্য যেসব চিত্রনাট্য আমার কাছে এসেছে তা থেকে মনে হয়নি যে, ওইসব গল্পের চরিত্রে আমি খুব ভালো মতো অভিনয় করতে পারবো। আমার কাছে মনে হয়েছে কোথায় যেন একটা সিংক্রোনাইজেশনের কমতি রয়েছে। তাছাড়া প্রথমত আমার সিনেমায় অভিনয়ের কোন অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছি। সেখান থেকে সিনেমায় গিয়ে অভিনয় করে নিজেকে কতটুকু খাপ খাওয়াতে পারবো সেটাও বেশ গুরুত্বর্পূণ। সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ব্যাপার রয়েছে। যেগুলো নিয়ে আগে কখনোই আমার গবেষণা করা হয়নি। তাই আমার কাছে মনে হয় আমি এখুনি সিনেমার জন্য প্রস্তুত নই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- কাজের ক্ষেত্রে আমার ভিতরে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি চাই না সিনেমা করতে গিয়ে সেগুলোকে অতিক্রম করতে। সিনেমা করতে গিয়েও আমি সেইগুলো মেনে চলবো। সিনেমার জন্য আমি নিজেকে হঠাৎ করে বদলে ফেলতে পারবো না। কারন সিনেমা আমার চূড়ান্ত গন্তব্য নয়।

আনন্দ আলো: আচ্ছা, অনলাইন কি টিভির দর্শক কমাচ্ছে?
মেহজাবিন: একদমই না। যারা টিভির দর্শক তারা টিভি দেখবেনই। মুরুব্বি ও বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকে মোবাইলে, ল্যাপটপে বা ইউটিউবে নাটক দেখতে পছন্দ করেন না। তারা ঠিকই টিভি দেখেন। আমাদেরকে তো তাদের জন্যও কাজ করতে হবে। আমি শুধু নেট বেইজড দর্শকের জন্যই কাজ করবো সেটাও কিন্তু নয়। বয়োজ্যেষ্ঠ দর্শকের কথাও ভাবতে হবে। আর আমি সবসময় বিশ্বাস করি সঠিক সমালোচনা ও প্রশংসা তারাই করতে পারেন, যাদের বয়স একটু বেশি। তরুণদের কিছু সমস্যা রয়েছে। তারা যেদিকে যেটা দেখছেন বা শুনছেন তারা সেদিকেই ছুটে যান। কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠরা বুঝে শুনেই নির্দিষ্ট কাজটিই দেখেন।
আনন্দ আলো: বিয়েটা কবে করবেন?
মেহজাবিন: আরেকটু সময় নিতে চাই। তবে আমি যাকে বিয়ে করবো, তাকে অবশ্যই আমার চেয়ে বেশি মেধাবী ও সৃজনশীল হতে হবে। যার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখবো। আর তিনি যে সেক্টরে কাজ করুন না কেনো, সে সেক্টরে যেন অনেক ভালো অবস্থানে থাকেন।
আনন্দ আলো: নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলবেন-
মেহজাবিন: শোবিজে কাজ করার সুবাদে আমার অনেক ভক্ত তৈরি হয়েছে, যারা আমার অভিনয় ভালোবাসেন। বাকিটা জীবন তাদের জন্যই অভিনয় করে যেতে চাই। মাসে যদি একটি নাটকও করি সেই নাটকটিতে মানসম্মত অভিনয় করতে চাই। ঠিক তেমনি বড় পর্দায়ও যদি কাজ করি, সে ক্ষেত্রেও মানটাকে গুরুত্ব দিতে চাই।

মেহজাবিন: একদমই না। যারা টিভির দর্শক তারা টিভি দেখবেনই। মুরুব্বি ও বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকে মোবাইলে, ল্যাপটপে বা ইউটিউবে নাটক দেখতে পছন্দ করেন না। তারা ঠিকই টিভি দেখেন। আমাদেরকে তো তাদের জন্যও কাজ করতে হবে। আমি শুধু নেট বেইজড দর্শকের জন্যই কাজ করবো সেটাও কিন্তু নয়। বয়োজ্যেষ্ঠ দর্শকের কথাও ভাবতে হবে। আর আমি সবসময় বিশ্বাস করি সঠিক সমালোচনা ও প্রশংসা তারাই করতে পারেন, যাদের বয়স একটু বেশি। তরুণদের কিছু সমস্যা রয়েছে। তারা যেদিকে যেটা দেখছেন বা শুনছেন তারা সেদিকেই ছুটে যান। কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠরা বুঝে শুনেই নির্দিষ্ট কাজটিই দেখেন।
আনন্দ আলো: বিয়েটা কবে করবেন?
মেহজাবিন: আরেকটু সময় নিতে চাই। তবে আমি যাকে বিয়ে করবো, তাকে অবশ্যই আমার চেয়ে বেশি মেধাবী ও সৃজনশীল হতে হবে। যার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখবো। আর তিনি যে সেক্টরে কাজ করুন না কেনো, সে সেক্টরে যেন অনেক ভালো অবস্থানে থাকেন।
আনন্দ আলো: নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলবেন-
মেহজাবিন: শোবিজে কাজ করার সুবাদে আমার অনেক ভক্ত তৈরি হয়েছে, যারা আমার অভিনয় ভালোবাসেন। বাকিটা জীবন তাদের জন্যই অভিনয় করে যেতে চাই। মাসে যদি একটি নাটকও করি সেই নাটকটিতে মানসম্মত অভিনয় করতে চাই। ঠিক তেমনি বড় পর্দায়ও যদি কাজ করি, সে ক্ষেত্রেও মানটাকে গুরুত্ব দিতে চাই।