Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছোট থাকাই ভালো!-মুস্তাফা মনোয়ার

মনের বয়সটাই আসল, এমনটাই মনে করেন চিত্রশিল্পী ও নির্মাতা মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি বলেন, ‘বয়সটা দুই রকম। একটা অঙ্কের ব্যাপার, আরেকটা মনের তৃপ্তির ব্যাপার। পৃথিবীকে দেখার ব্যাপার, পৃথিবীকে ভালোবাসার ব্যাপার। সেইখানে বয়স বাড়ে না।’
সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের বিশেষ ‘তারকা কথন’-এর লাইভ অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মদিন পালন উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সবার সঙ্গে জন্মদিনের মুহূর্তটুকু উদযাপন করেছেন। এঁকেছেন কাশবনের ছবি। টেলিফোনে কথা বলেছেন বন্ধু, ভক্ত আর স্বজনদের সঙ্গে। ‘তারকা কথন’-এ জন্মদিন প্রসঙ্গে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘জন্মদিন মানেই একটা বছর বেড়ে যাওয়া। ছোটবেলায় খুব ভালো লাগত। একসময়ে দেখলাম বড় হওয়া তো ভালো না, ছোট থাকাই ভালো।’
১ সেপ্টেম্বর ৮৫ বছরে পা রেখেছেন কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে। জন্মদিন প্রসঙ্গে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, অবশ্যই মানুষের নিজস্ব একটি উৎসবের দিন থাকতেই পারে। ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দিনের আলোতে যা কিছু দেখি তার চাইতেও বেশি দেখতে পাই রাতের অন্ধকারে। আমাদের তরুণদের জীবনে অনেক স্বপ্ন আছে, তাদের সেই স্বপ্নই দেশকে বাঁচিয়ে রাখবে, উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে তিনি টেলিভিশনকে দেখার নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতের এ দিকপাল প্রথম টেলিভিশন দেখেন কলকাতায়। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে অনেক দিন কাজ করেছেন। একজন চিত্রশিল্পীর মনের ভাষা তিনি ফুটিয়ে তুলতেন টেলিভিশনের পর্দায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করা নিয়ে তাঁর নানা অভিজ্ঞতার কথাও বলেছেন তারকা কথন অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠান চলছিল। একপর্যায়ে সেখানে মুস্তাফা মনোয়ারকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। মুস্তাফা মনোয়ার এই অনুষ্ঠানেই ফরিদুর রেজা সাগরের টেলিভিশন জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সেই ছোটবেলায় ফরিদুর রেজা সাগর টেলিভিশনে অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করার মধ্য দিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অন্যতম কর্ণধার হয়ে ওঠার গল্পটিও ছিল তাঁর মুখে। অনুষ্ঠানে ফরিদুর রেজা সাগরকে সঙ্গে নিয়ে মুস্তাফা মনোয়ার তাঁর জন্মদিনের কেক কাটেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক দিলরুবা সাথী ও অনুষ্ঠানটির পরিচালক অনন্যা রুমা।
মুস্তাফা মনোয়ার জলরঙে ভালো ছবি আঁকতেন। আর্ট কলেজে পড়ার সময় কলকাতায় যখন ছিলেন, খুব নাম হয়েছিল তাঁর। নির্মাতা সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, তাঁর আঁকা ছবি খুব অল্পতে কথা বলতে পারে। কথা প্রসঙ্গেই জানা হয়ে যায়, সামনের বছর জলরঙের একটা প্রদর্শনী করবেন। এ জন্য আঁকছেন তিনি।
একসময় কলকাতার বিভিন্ন নাটকের দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। ওস্তাদ ফাইয়াজ খাঁর ছাত্র সন্তোষ রায়ের কাছে আলাদা করে গানও শিখতে শুরু করেছিলেন। সে সময় শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর দলে তিন বছর গান করেছেন। পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের উদ্যোগে যে সাংস্কৃতিক দল গড়ে উঠেছিল, সেখানে যোগ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে দেশাত্মবোধক গানও গেয়েছেন।
স্কুলে থাকতে বাবা কবি গোলাম মোস্তফার ক্যামেরা দিয়ে ফটোগ্রাফি করতেন। ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে পড়তেন। তখন ভাষা আন্দোলনের জন্য কার্টুন এঁকে এক মাসের জন্য জেলে গিয়েছিলেন। এসব ঘটনা তাঁর মনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি করে। বাড়ি থেকে স্কুলে প্রথম হওয়ার চাপ ছিল না।
আর্ট কলেজে পড়া শেষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অনুরোধে মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৬০ সালে ঢাকায় এসে চারুকলায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। ১৯৬৫ সালে ডিআইটি ভবনে পাকিস্তান টেলিভিশনের (পিটিভি) ঢাকা কেন্দ্র চালু হলো। চারুকলার চাকরি ছেড়ে মুস্তাফা মনোয়ার সেখানে যোগ দিলেন। পাকিস্তানে তখন বাংলা সংস্কৃতির যাবতীয় শ্রেষ্ঠ জিনিসকে ‘ভিন্ন সংস্কৃতি’ তকমা জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা ছিল। টেলিভিশনে যোগ দেওয়ার পেছনের কারণ ছিল এটাই। বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সুযোগটা তিনি নিতে চেয়েছিলেন।
অ্যানিমেশনের কাজেও উৎসাহ ছিল। বাংলাদেশে পাপেট শো ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে তাঁর একক অবদানই বেশি। হুগলি, বাঁকুড়া, কলকাতায় পাপেট দেখে এ ব্যাপারে আগ্রহ জন্মে। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি পাপেট চরিত্র ‘পারুল’। পারুলকে দেখেই ইউনিসেফের র‌্যাচেল কার্নেগি উৎসাহিত হন। তৈরি হয় ‘মীনা’ চরিত্রটি।
টেলিভিশনে করেছেন রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ ও শেকসপিয়ারের ‘টেমিং অব দ্য শ্রæ’ অবলম্বনে মুনীর চৌধুরীর অনুবাদ করা ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ এর মতো নাটক। যুক্তরাজ্যের গ্রানাডা টিভির ‘ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি অব টিভি ড্রামা’র জন্য এই নাটক দুটি মনোনীত হয়েছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘নতুন কুঁড়ি’র মতো অনুষ্ঠানেরও রূপকার তিনি।