Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমার বন্ধু রিজিয়া রহমান-রাবেয়া খাতুন

বন্ধু সেতো আত্মার আত্মীয়। জীবনের অনেক কিছুই মা-বাবা না জানলেও প্রিয় বন্ধু জানে। আর তাই প্রতিটি মানুষের জীবনে একজন ভালো বন্ধুর ভ‚মিকা অনেকখানি। রিজিয়া রহমান ও রাবেয়া খাতুন ছিলেন পরস্পরের অনেক ভালো বন্ধু। লেখালেখির পাশাপাশি নিজেদের জীবন সংগ্রামেও একে অপরকে সাহস দিয়েছেন, প্রেরণা যুগিয়েছেন। এমন বন্ধুর প্রয়াণে কিছু বলা মোটেই সহজ নয়। তবুও সবার প্রিয় কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রিয়বন্ধু রিজিয়া রহমান সম্পর্কে কিছু বলবেন বলে সম্মতি দিলেন। রাবেয়া খাতুন নিজেও শারিরীক ভাবে অসুস্থ দীর্ঘ দিন ধরে। ঘর থেকে বেরই হন না। লেখালেখি করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে তাও পারেন না। বন্ধু রিজিয়া রহমানের কথা বলতে গিয়ে একটু যেন স্মৃতি কাতর হয়ে উঠলেন। মানসিক ভাবে শক্ত মানুষ রাবেয়া খাতুনকে এর আগে এতটা স্মৃতি কাতর হতে দেখিনি। বোঝাই যাচ্ছে বন্ধু হিসেবে রিজিয়া রহমান তাঁর কাছে কতটা প্রিয়, কতটা আপন ছিলেন। বন্ধু রিজিয়া রহমান সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন তিনিÑ
কী দিয়ে, কোথা থেকে শুরু করবো তাই ভাবছি। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন বেগম ক্লাবে পত্রিকার উৎসব উপলক্ষে এক সন্ধ্যায় ওর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। এর আগে পরিচয় ছিল ওর লেখালেখির মাধ্যমে। ওর লেখার বিষয় বস্তু ও চিন্তা ভাবনাই ওকে আমার কাছে প্রিয় করে তুলেছিল। প্রথম পরিচয়ের দিন আমাদের আরেক বন্ধুও সাথে ছিল। সে ছিল মাঝখানে আর আমরা দু’জন দু’দিকে… সেই প্রথম পরিচয়। ওকে কাছে পেয়ে আমি বেশ আনন্দিত ও পুলকিত বোধ করছিলাম। সে কথা বলেছিলাম তাকেÑ তোমাকে তো অনেক দিন ধরে মনে মনে খুঁজছি। জবাবে মুখে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে বলেছিল আমিও তো তোমাকেই খুঁজছি… বহুদিন ধরে…
সেই প্রথম রিজিয়া রহমানের সাথে মুখোমুখি দেখা। মুখোমুখি আলাপ। কী বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। কথা বলাটাও বেশ আকর্ষনীয়। এভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু। আমার তাকে ছাড়া চলে না। তারও আমাকে ছাড়া চলে না। আমাদের দু’জনের কারও গাড়ি ছিল না। ফোনও ছিল না। তবুও কি করে যেন রোজ কথা হতো ফোনে। পাশের বাড়ির ফোনে কথা বলতাম। সেও তার পাশের বাড়ির ফোন থেকেই আমার সাথে কথা বলতো। কিন্তু এভাবে ক’দিনই বা অন্যের বাসা থেকে ফোন করা যায়? রিজিয়ার মগবাজারের বাসায় ফোন এলো। কিছুদিন পর আমাদের বাসায়ও ফোন এলো। তারপর দিনে যে কতবার ফোনে কথা হতো তার ইয়ত্তা নেই। কত যে কথা! বিশ্বসাহিত্য থেকে শুরু করে একথা, সে কথা… কত যে কথা বলতাম আমরা দু’জন। দুনিয়ার নানান গল্প শেয়ার করতাম। রিজিয়া হুট করেই আমাদের বাসায় চলে আসতো। আমিও হুট করে তার বাসায় চলে যেতাম।
রিজিয়া রহমান চাকরি করতো। কলেজের অধ্যাপক। সেই সময় ১৫ই আগস্টের সেই মর্মস্তুদ ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে কলেজের চাকরি ছেড়ে দেয় রিজিয়া। তারপর বেকার জীবন। কোনো কাজ নাই। স্বামী আর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ছোট্ট সংসার চালাতে নতুন সংগ্রাম শুরু হয় রিজিয়ার। লেখালেখিতেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এখন ভেবে অবাক হই, এত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের রোজই দেখা হত। কথা হতো। অনেক বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলেও কয়েক ঘণ্টার বেশী তা থাকতো না…
এই পর্যন্ত বলে একটু যেন হাঁফিয়ে উঠলেন রাবেয়া খাতুন। হাঁফাতেই হাঁফাতেই আবার বললেন, রিজিয়াকে ঘিরে কত কথা যে জমা হয়ে আছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আজ এই পর্যণÍ থাক… পরে না হয় আরেকদিন কথা বলা যাবে…
বলতে বলতে হঠাৎ উদাস হয়ে উঠলেন রাবেয়া খাতুন। তাঁর দু’চোখের কোনে জল দেখতে পাচ্ছি। বেদনার্ত জল…
অনুলিখন: রেজানুর রহমান