Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছোট পর্দাতেও একক আধিপত্য

আরিফ খান
ঈদ উৎসবে ছোট পর্দায় চলে ব্যাপক আয়োজন। এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। তবে আয়োজনের ব্যাপকতা বাড়ছে দিন দিন। অতীতকালে এক চ্যানেলের একটি নাটক থেকে এখন সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০। অর্থাৎ আগে ঈদ অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র বিটিভিতে প্রচার হতো একটি মাত্র নাটক। এখন ৩০টি টিভি চ্যানেলে প্রতি ঈদে কম করে হলেও ৩০০ নাটক প্রচার হয়। ভালো মন্দের বিচারে না গেলে এই ব্যাপকতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ঈদের এক মাস আগে থেকেই টিভি চ্যানেল গুলো ব্যাস্ত হয়ে পরে তাদের ঈদ আয়োজন নিয়ে। নানা রকম অনুষ্ঠান দিয়ে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তবে এই আয়োজনে প্রাধান্য পায় নাটক। সিংহভাগ অনুষ্ঠানেই থাকে নাটকের আধিক্য। তাই ব্যাস্ত হয়ে পরেন নাট্যকার, নির্মাতারা আর চাহিদা সম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
নাটকের পরপরই গুরুত্ব পায় সিনেমা। সবকটি চ্যানেলই একের অধিক সিনেমা প্রচারের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তারকার জনপ্রিয় ছবিগুলোই এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ এক যুগ ধরে শাকিব খানের যে আধিপত্য চলছে তার রেশ কিন্তু আছে টিভি মিডিয়ামেও। টিভি চ্যানেল সমূহেও ঈদের ছবি নির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছেন শাকিব খান-এর ছবি। প্রতিটি টিভি চ্যানেলে ১০টি ছবির মধ্যে হয়তো ৬/৭টি ছবিই থাকে শাকিব খানের। কোন কোন চ্যানেল তো শাকিব খান-এর ছবির একক প্রদশর্নীরও আয়োজন করে থাকেন।
কয়েকটি টিভি চ্যানেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে একটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে যে দর্শক চাহিদার কারনে টিভিতেও শাকিব খান-এর সিনেমা গুরুত্ব পাচ্ছে। এনটিভির এজিএম (প্রোগ্রাম) আলফ্রেড খোকন বলেন, আমাদের মার্কেটিং পলিসিতে ছবির ক্ষেত্রে শাকিব খান-এর ছবির টিআরপি বেশি সব সময়ের জন্যই। আর ঈদের সময়তো আরো বেশি।
একুশে টিভির অনুষ্ঠান প্রধান জাহিদ হোসেন শোভন বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলের টিআরপিতে এখন শাকিব খানের ছবির চাহিদা সর্বার শীষে। কাজেই স্বাভাবিক ভাবেই এটা আমাদের আমলে নিতে হয়।
বাংলা ভিশন-এর অনুষ্ঠান প্রধান তারেক আখন্দ বলেন, আমরা যদি গত এক দশকের ছবি গুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখবেন যতগুলো ছবি ব্যাবসা সফল হয়েছে তার আশি শতাংশই শাকিব খান এর। সেক্ষেত্রে সিনেমা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শাকিব খানেরই প্রায়োরিটি চলে আসে। ব্যাবসা সফল ছবি অন্যান্য নায়কেরও আছে। তবে তা সংখ্যায় কম।
তবে এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম চ্যানেল আই। চ্যানেল আইতে নতুন ছবির প্রিমিয়ারের গুরুত্ব থাকে বরাবরই। আর থাকে সাহিত্য নির্ভর ছবি। এপ্রসঙ্গে চ্যানেল আইয়ের বিপণন প্রধান ইবনে হাসান খান বলেন, অ্যাকশন বা প্রেম ভিত্তিক ছবির চেয়ে আমরা গল্প প্রধান বা সাহিত্য নির্ভর ছবিকে প্রায়োরিটি দেই বেশি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বা কাজী নজরুল ইসলামের কাহিনী নিয়ে বানান ছবির পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের ছবির প্রতিও আমাদের আলাদা নজর থাকে। কেননা, আমি মনে করি চ্যানেল আইয়ের দর্শক সেরকম ছবিই দেখতে বেশি আগ্রহী। তার মানে আমি বলছি না চ্যানেল আইতে শাকিব খান-এর কোন চাহিদা নেই। চাহিদা অবশ্যই আছে এতে কোন সন্দেহ নেই। শাকিব খান এই সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। কাজেই তার দুই একটি ছবিও আমাদের রাখতে হয়।
এপ্রসঙ্গে শাকিব খান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রথমেই বলেন, ব্যাপারটা ভালো লাগার মত এতে কোন সন্দেই নেই। তবে এখানে আমার একটা কথা আছে। সেটা হলো টিভিতে যে সব ছবি দেখানো হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি পুরোনো। পাঁচ, সাত বছরের আগের ছবিই বেশির ভাগ। এটা আমার পছন্দ নয়। ছবি যদি দেখাতেই হয় সেখানে নতুন ছবি থাকা উচিত। আপনি যদি সারা বিশ্বের টিভি মাধ্যম গুলোর দিকে খেয়াল করেন দেখবেন প্রায় সব দেশের সব টিভিতেই নতুন ছবির প্রচার গুরুত্ব পায়। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। পাশের দেশেই দেখেন, স্টার জলসা, জি বাংলাও স্টার প্লাস-এ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নতুন ছবি দেখানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে নতুন ছবির প্রিমিয়ারও হয় টিভিতে। অনেক ব্যাবসা সফল ছবির ক্ষেত্রেও দেখেছি ছবি রিলিজের অল্প সময়ের মধ্যেই তা টিভিতে দেখাচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে তা হয় না। আমি যদি আমার ছবির কথাই বলি… আমাদের চ্যানেল গুলোতে দেখানো হচ্ছে আমার ৫/৭ বছরের আগের ছবি। পাশের দেশের টিভি চ্যানেলে আমারই নতুন ছবি গুলো দেখাচ্ছে। তখন বিষয়টা ভালো লাগার মত থাকে না।
শাকিব বলেন, আমি মনেকরি টেলিভিশন এবং সিনেমা অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। এটা মাথায় রেখে ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন ছবিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে বিষয়টা আরো ভালো হবে। একই দর্শক জি বাংলায় বা স্টার জলসায় দেখছে আমার নতুন ছবি। তারাই আবার আমাদের টিভি চ্যানেল গুলোতে দেখছে ৫/৭ বছরের পুরনো ছবি। তখন তো টিআরপিতেই ব্যাপক তারতম্য তৈরি হবে। কাজেই বলবো এই বিষয়টি আমাদের দেশে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষদের ভেবে দেখা উচিত।