Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নাটকের জগত : ভালোর পথে আলোর পথে

কামাল আহমেদ
ঈদের টেলিভিশন ধারাবাহিক নিয়ে যদি কথা ওঠে তাহলে প্রথমেই বলতে হবে ছোটকাকুর কথা। বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে প্রতি বছরই দুই ঈদে ছোটকাকুকে পর্দায় হাজির করছেন সুনির্মাতা আফজাল হোসেন। তিনি ছোটকাকু চরিত্রে অভিনয়ও করছেন। ছোটকাকু এই গোয়েন্দা সিরিজটি শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতের কলকাতাতেও পাঠকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। এই সিরিজের চরিত্র গুলো ছাপার অক্ষর থেকে বেরিয়ে যখন টিভি পর্দায় হাজির হয় তখনই টিভি নাটকের জগতে তোলপাড় শুরু হয়। এতদিন ধরে যা ছিল পড়ার বিষয় তা উঠে আসে টিভি পর্দায়। পাঠক হয়ে যান দর্শক। কল্পনার চরিত্রগুলো যেন বাস্তবে উঠে আসে। টিভি পর্দায় চলাফেরা করে। ছোটকাকুকে ঘিরে শুধু ছোটদেরই নয় বড়দেরও ব্যাপক আগ্রহ দেখা দেয়। গুরুত্বের কারণে ছোটকাকু এখন ঈদের অনুষ্ঠানমালায় দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু ছুঁয়েছে।
ছোটকাকু এবার কী নিয়ে আসছেন? এমন ভাবনা এবং আগ্রহ প্রতিটি ঈদেই বাড়ছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাতেই হয় নাটকটির রচিয়িতা ফরিদুর রেজা সাগর ও নির্মাতা আফজাল হোসেনকে। তারা পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। দু’জনই শিশুদের অনেক প্রিয়। আর তাই শিশুরা প্রতি ঈদে ছোটকাকুর নতুন সিরিজ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে।
ছোটকাকু সিরিজটিতে অভিনয়ও করেন বিশিষ্ট অভিনেতা আফজাল হোসেন। পরিচালনার ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সামলিয়ে ছোটকাকু পরিচয়েও এখন ব্যাপক আলোচিত ও সমাদৃত তিনি। বিটিভি যুগে অসংখ্য ভালোবাসার নাটকে অভিনয় করে অগনিত প্রেমিকার হৃদয় ছুঁয়েছেন। এক সময়ের টিভি নাটকের ব্যাপক জনপ্রিয় প্রেমিক পুরুষ হয়ে গেলেন গোয়েন্দা সিরিজের ছোটকাকু। এখন তো তার ভক্তরা ‘ছোটকাকু’ নামেই তাকে বেশী চিনে। কোনো অনুষ্ঠান
অথবা আড্ডায় হাজির হলেই শুরু হয় আনন্দের ফিসফাস-ঐ যে ছোটকাকু এসেছেন। সবার প্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন জনপ্রিয়তার এই আনন্দ উপভোগও করেন। তাঁর সহজ সরল মন্তব্য এমনÑ অনেক যতœ নিয়ে আমরা ছোটকাকুকে টিভি পর্দায় হাজির করি। দর্শক আনন্দ পেলে আমরা খুশি হই। নতুন করে ভালো কাজের প্রেরণা খুঁজে পাই। পাঠক ও দর্শকের ভালোবাসায় ছোটকাকু আরও অনেক দূর যাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে।
টিভিকে অনেকে আদর করে বলেন ছোটপর্দা। আবার কেউ বলেন বোকা বাক্স। তবে আমাদের ধারনা এই বোকা বাক্সই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। টিভি অনুষ্ঠান দেখেই আমরা খাই, ঘুমাই, অফিস করি এবং আড্ডাও দেই। আর তাই টিভি অনুষ্ঠান বিশেষ করে টিভি নাটক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিনোদনের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলেন, আমাদের টিভি নাটক ও অনুষ্ঠান যেন আগের মতো নাই। যারা একথা বলেন তারা ভুল বলেন। না দেখে মন্তব্য করেন। আমরা যে সময়ের কথা বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি সেই সময়ে টিভি চ্যানেল ছিল মাত্র একটাÑ বিটিভি। আর এখন আমাদের দেশেই রয়েছে ৩০টিরও বেশী টিভি চ্যানেল। পাশাপাশি পাশের দেশের ৫/৬টি বাংলা ভাষার টিভি চ্যানেলের দৌরাত্ম তো রয়েছেই। ফলে অতীতকালের মতো ভালো কোনো অনুষ্ঠান প্রচারের সাথে সাথেই আলোচনার শীর্ষে ওঠে না। যারা বলেন আমাদের টিভি নাটক ভালো না তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো টিভি চ্যানেলে একাধিক ভালো নাটক প্রচার হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই সে খবর রাখি না।
টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দর্শক সাধারনত চমক আশা করে। তারা নাটকেও চমক চায়। চমক দেখানো নাটকের কথা বললে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের ‘জমজ’ ধারাবাহিকের প্রসঙ্গ গুরুত্বের সাথে আলোচনার দাবী রাখে। আবুল কালাম আজাদ পরিচালিত ‘জমজ’ ধারাবাহিক ১৩টি সিজন পার করেছে। এই নাটকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিশিষ্ট অভিনেতা মোশাররফ করিম একাই তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেন। একই ফ্রেমে বাবা এবং দুই ভাইয়ের চরিত্রে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়। বাবা দারুন কিপটে। দুই ছেলের বড়জন টাউট প্রকৃতির। ছোটজন খুবই সাদাসিদে মাটির মানুষ। শুরুর দিকে নাটকটির কনসেপ্ট ছিল অনিমেশ আইচ এর। পরবর্তিতে পরিচালক নিজেই নাটকটির কাহিনী টেনে নিয়েছেন। এই নাটকের মূল বৈশিষ্ট্য হল কাহিনীর ঔজ্জ্বল্য এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সুঅভিনয়। বিশেষ করে একই অভিনেতার ৩টি বিপরীত মুখি চরিত্রে অভিনয় করার বিষয়টি দর্শকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ছড়িয়েছে। নাটকের কাহিনীতে কখনও কখনও ভাড়ামিপুর্ণ ঘটনার আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু সুঅভিনেতা মোশাররফ করিম সর্বদাই ঘটনার বিশ্বস্ততা প্রমাণে সচেষ্ট থাকেন। নাটকটি দেখেই বোঝা যায় এটি বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। একজন অভিনেতাকে ৩টি পৃথক চরিত্রে দাঁড় করানোর জন্য পৃথক ভাবে মেকআপ নিতে হয়। পাশাপাশি একই ফ্রেমে বাবা দুই ছেলেকে দাঁড় করিয়ে অভিনয় করানোর ক্ষেত্রে ক্যামেরার কারিগরী দিকটিও বেশ গুরুত্বপুর্ণ। ক্যামেরার ব্যাকরণ মেনেই তবে শুটিং করতে হয়। এই নাটকে মোশাররফ করিমের ভ‚মিকা বেশ প্রশংসনীয়। ৩টি পৃথক চরিত্রে অভিনয় করার সময় তাকে কখনও বাবা, কখনও ছেলের ভ‚মিকা পালন করতে হয়। যা বেশ কষ্টসাধ্য, কিন্তু গুণী অভিনেতা মোশাররফ করিম এই কঠিন কাজটি সহজেই করে দেখাচ্ছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বললেন, শত ব্যস্ততার মধ্যেও ব্যতিক্রমধর্মী নাটকের অফার পেলে আমি খুব খুশি হই। জমজ সত্যি সত্যি একটি ব্যতিক্রমধর্মী নাটক। একই অভিনেতাকে একই ফ্রেমে বাবা ও তার ছেলের ভ‚মিকায় অভিনয় করতে হয়। বাবাটা হাড় কিপটা। দুই ছেলের এক ছেলে ব্যাপক ধরনের টাউট। অন্যটা একেবারেই তার বিপরীত। সহজ সরল, আলাভোলা টাইপের। অভিনয় করার আগে ক্যারেকটার ৩টি নিয়ে অনেক ভাবতে হয়। তবে এই নাটকে অভিনয় করে বেশ মজা পাচ্ছি…

জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা সাগর জাহানের ‘সেকান্দর বক্স’ নামে একটি নাটকে ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন মোশাররফ করিম। সাগর জাহানেরই আরেকটি নাটকে ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছেন গুণী অভিনেতা জাহিদ হাসান। ‘আরমান ভাই’ নামের এই নাটকে জাহিদ হাসান পুরানো ঢাকার এক তরুণ আড়তদার চরিত্রে অভিনয় করেন। গুণী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও এই নাটকে অভিনয় করেছেন। কাহিনীর সারল্যতায় নাটকটি দর্শকের মাঝে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করে।
ধারাবাহিকের কথা উঠলেই মীর সাব্বিরের ‘নোয়াশাল’ নাটকের কথা সহজেই উঠে আসে। দীর্ঘ বছর ধরে নাটকটি চলছে সমান তালে। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান এই নাটকের একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন। পরিচালক মীর সাব্বিরের মন্তব্য, এটিএম ভাই হলেন আমাদের ‘নোয়াশাল’ ধারাবাহিকের প্রাণ ভোমরা। তার মতো দেশ সেরা একজন অভিনেতা নোয়াশালে যুক্ত হওয়ায় আমরা কাজটি করার ক্ষেত্রে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা পাচ্ছি। সাব্বিরের মতে, কাহিনীর বিশ্বস্থতা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আন্তরিক সহযোগিতাই নোয়াশালকে এতদূর নিয়ে এসেছে।
একথা কে না জানে যে, আমাদের মিডিয়া জগত অনেক বড় হয়েছে। নিজের দেশেই ৩০টিরও বেশি টেলিভিশন চ্যানেল। ঈদ এলেই প্রতিটি টিভি চ্যানেল ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানমালা প্রচারের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। বছরের অন্যান্য সময় এই চিত্র দেখা যায় না। অভিজ্ঞ মহলের মতে, প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলের উচিৎ বছর জুড়ে প্রতিযোগিতা মূলক ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান নির্মাণ ও তা প্রচারের ব্যবস্থা করা। কেউ কেউ পাশ্ববর্তী দেশের একটি টিভি চ্যানেলের রিয়েলিটি শো’র উল্লেখ করে বলেছেন, ওখানে আমাদের নোবেল অনেক নাম করলো। তারপর আমরা তাকে নিয়ে এখন ব্যাপক হই চই করছি। আমার জানা মতে, এই নোবেলই দেশের একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে নিজের মেধার স্ফুরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছিল, পারেনি। কেন পারেনি তাকি আমরা খুঁজে দেখেছি কেউ? এই প্রসঙ্গটি আসলেই আলোচনার দাবী রাখে।