Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্বামী-স্ত্রীর আর্কিটাইপ লিমিটেড

আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে রায়হান আলমগীর অন্যতম। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্র্যাট ইন্সটিটিউট এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে বাবা-মার গড়া আর্কিটাইপ লিমিটেড এর দায়িত্ব বুঝে নেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ডিজাইন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্ত্রী নাদিয়া মেহজাবিনও একই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর, এইচ আর এডমিন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের প্রচেষ্টায় আজকের আর্কিটাইপ লিমিটেড স্বগৌরবে এগিয়ে চলছে। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাদেরকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
পৃথিবীর যা কিছু মহান তার অর্ধেক করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। এই কথাটি আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছি। কখনো কাজে কখনো চিন্তায় মিলিয়ে দেখলেই তার বাস্তবতা খুঁজে পাই। একজন সফল ব্যক্তির পিছনে তার স্ত্রীর অবদানের উদাহরণ হিসেবে এমনই এক দম্পতির কথা বলছি। যদি ফার্মের মস্তিস্ক হয় স্থপতি রায়হান তবে নাদিয়া হচ্ছে মেরুদন্ড। দুজনের প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে একের পর এক নির্মাণ। আর্কিটাইপ এর পথ চলা শুরু হয় ১৯৮৮ সাল থেকে মরহুম স্থপতি এজেএম আলমগীরের হাত ধরে। ২০১১ সাল থেকে বাবার অসুস্থতার কারণে ছেলে স্থপতি রায়হান আলমগীরের পথ চলা শুরু। বর্তমান সময়ের অতি জরুরি গ্রীন আর্কিটেকচার নিয়ে করা প্রথম সারির একটি কোম্পানী হল আর্কিটাইপ। যদিও স্থাপত্য শিল্পের কাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরটিই প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের কাজের মাধ্যমে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রীন প্লাটিনাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরে কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট, জেনেসিস ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং ইটিপি, পিএন কম্পোজিট ইত্যাদি।
বর্তমানে কাজ চলছে বিভিন্ন প্রজেক্টের। তার মধ্যে রয়েছে আশুলিয়ায় বেক্সিমকোর আর আর ওয়াশিং, টেক্সটাউন নিটিং ফ্যাক্টরী, গাজীপুরে কোটস (পড়ধঃং) বাংলাদেশ ইটিপি ইত্যাদি। এছাড়াও তার প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ বসুন্ধরায় প্রগতি স্মরণিতে যমুনা ফিউচার পার্ক, আইএসডি স্কুল, উত্তরায় ডিপিএস স্কুল, খিলক্ষেতে লোটাস কামাল টাওয়ার, মতিঝিলে ইউনুস ট্রেড সেন্টার সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন।
স্থপতি রায়হান আলমগীর লুকান বলেন, একদম অমসৃণতার সাথে সুপার ফিনিসিং কাজের মৃসৃণ। এটাই আমার কাজের বৈশিষ্ট্য। যেমন প্লাস্টার ছাড়া ওয়ালের সাথে হাইলি ফিনিশড স্টেইনলেইস স্টিল আর মিরর বা আয়নার কাজ একটি সিগনেচার স্টাইলও। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি তার গ্রীণ থিউরী এবং কনসেপ্ট দিয়ে তুলে ধরেছেন। একটি হচ্ছে বেটা ওয়ান আর দ্বিতীয়টি শেলটেক কুঞ্জ কুঠির লবি এরিয়া সিদ্বেশ্বরী। যে কোনো সাধারন প্রজেক্টের তুলনায় এই দুটি প্রজেক্টই ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের। প্রজেক্ট দুটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বেটা ওয়ান এর আমার ডিজাইনের কনসেপ্ট হচ্ছে একটা স্পেস ইলুশন তৈরী করা যেটা কিনা স্পেসটা যা ছিলো তার ৪ গুণ বড় দেখা যায়। এই কনসেপ্ট সাকসেস হওয়ার পরে আরও বেশ কয়েকটি প্রজেক্টে ব্যবহার করা হয়েছে আরও ইনোভেটিভ ওয়েতে এবং দিনে দিনে আরও এনার্জি ইফিসিয়েন্ট হয়ে উঠছে।
আমরা আজ এনার্জি ব্যবহারের জন্য অনেক ধরনের ইউটিলিটি বিল দিয়ে থাকি এবং সাম্প্রতিক সময়ে এই বিল গুলো কমিয়ে আনার প্রাকটিস করছি ডিজাইনের মাধ্যমে। প্রথম এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যে একটি ৩৫০০ স্কয়ার ফিট অফিসকে ২০০০ স্কয়ার ফিট এ গুছিয়ে আনতে হবে। এমনটি করার জন্য ইলিউশন সৃষ্টি করাই ছিল যেন একমাত্র উপায়। উচ্চতা এবং খোলামেলা পরিবেশ তৈরী করা আর সময়ের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে আমাকে।

সম্পর্কিত

প্রজেক্টের ক্লায়েন্ট দিয়েছিল ২৩ দিন সময়। কাজটি সমাপ্ত করতে যা ছিল প্রায় অসম্ভব। এই ২৩ দিনকে ৪৬ দিনে রূপান্তর করা হয়েছিল শিফট ওয়াইজ কাজ করে। এই সময়টা ছিল ব্যস্ততার তুঙ্গে। আর্কিটাইপ পরিবারের সকল সদস্যই প্রশংসা পাবার যোগ্য। আয়না, আলোর মসৃন ও অমসৃনের সম্মিলিত ডিজাইন যেন যাদুর মত কাজ করল। ছোট হয়ে যাওয়া পরিসর যেন ৪ গুণ বেড়ে গেল। সব বিদ্যমান গøাস, ফার্নিচার, ইলেকট্রিক্যাল তার গুলোই ব্যবহার করা হলো, সাথে যোগ হলো নতুনের। কালো, সাদা, লাল ও রূপার রঙের মতন খেলা হয়ে গেল যেন নৈসর্গিক প্রয়োজন। আগে দর্শনধারী পরে গুন বিচারী এমন ধারনা নিয়েই বেটা ওয়ান এর লবীর অংশটা করা। অফিসের এই জায়গাটায় সম্ভ্রান্তভাব ফুটিয়ে তোলা হলো মিরর ইলুশনের মাধ্যমে। আয়না দিয়ে পুরো জায়টাকে মুড়ে দেয়া হলো আর তার সাথে আলোর কারসাজি। ব্যস হয়ে গেল ছোট্ট জায়গাটি আকর্ষনীয় অভ্যর্থনা কক্ষ। যা শুধু জাতীয় বা শহরের নয়, আন্তর্জাতিক ভাবেও প্রশংসীত ডিজাইন।
হ্যাঁ, ঠিক এমনই আরেকটা লবী বা অভ্যর্থনার পরিসরে প্রজেক্ট শেলটেক কুঞ্জ কুঠির লবী এরিয়া সিদ্বেশ্বরীতে। এখানেও চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। যেমন ছোট জায়গা। ইতিমধ্যে মানুষের বসবাস শুরু হয়েছে বিল্ডিংটিতে ও বাজেটও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এই তিনটি প্রতিবন্ধকতাই প্রজেক্টটিকে জটিল করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিছুটা পুরানো ধাচের ডিজাইনকে মডার্ণ আরো বড় পরিসরের ইলুশন তৈরি করার জন্য সেই যাদুরই প্রয়োজন ছিল।
স্থপতি রায়হান আলমগীর আবারও আয়না, আলোর ও রঙের খেলায় মেতে গেলেন আর তৈরী হলো এক আকর্ষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন লবীর যা এলাকার মধ্যে একটি প্রেরণা তৈরী করে। কথা হচ্ছিল রায়হান আলমগীর লুকানের সাথে তার কাজগুলো নিয়ে। তিনি বলেন, আমার প্রতিটি ডিজাইনের অনুপ্রেরণা দেয় আমার স্ত্রী। একই সাথে সে সাথে আমার ফ্যামিলি ও অফিসের পরিচালনাও করে দক্ষতার সাথে। তার কারণে আমি আমার সৃজনশীল কাজে পুরোপুরি মন দিতে পারি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দুজনের চেষ্টাতেই এগিয়ে যাচ্ছে আর্কিটাইপ লিমিটেড।
এই সফল স্থপতি আর তার কাজের পেছনে আছে তাদের সফল দাম্পত্য জীবন। সফলতাই সফলতাকে নিয়ে যায় শিখরে। তাদের অবিচ্ছেদ্য সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টাই তৈরী করছে নতুন নতুন মহান সৃষ্টি।