Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

যার সাথে আছি ভালোই তো আছি… মম

আনন্দ আলো: সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে আপনি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন। অনুভূতি জানতে চাই-
মম: অনভুতি অনেক ভালো। আমার সকল সহকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা জানাচ্ছি। সবার সাপোর্ট না থাকলে এই জয় সম্ভব হতো না। এবার আমাদের ¯েøাগান ছিল ‘জিতবে ২১, হারবে না কেউ’। এই প্রত্যয়েই কাজ করতে চাই। গতবারের কর্মসূচীর মধ্যে যে কাজগুলো শেষ করতে পারিনি সেগুলো নিয়ে আবার কাজ করবো। এছাড়াও নতুন আরো পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে চাই। সময় স্বল্পতার কারণে গতবার অনেক কিছু করা হয়নি, কিছু কিছু কাজে অনেক বেশি সময় লেগেছিল। যার কারণে আমরা সব কাজ করতে পারি নি। এবার আমাদের প্রথম আলোচনা সভায় সেই বিষয় গুলোই উপস্থাপন করি। সামনে ভালো ভালো কিছু কাজ করার জন্য সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।
আনন্দ আলো: গেলো ঈদে প্রচার হওয়া নাটকের ব্যাপারে কেমন সাড়া পেয়েছেন?
মম: অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে কয়েকটি নাটকের কথা না বললেই নয়। ‘বাইশে এপ্রিল’, ‘বাউন্ডুলে’, ‘ছেলেটা একটু অন্যরকম’, ‘ওপারে আকাশ’, ‘জলছবি’ সহ আরো কিছু নাটক দর্শক বেশ গ্রহণ করেছেন। প্রত্যেকটা নাটকে আমার চরিত্রের ভিন্নতা ছিল।
আনন্দ আলো: আপনার অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘কাঁচের পুতুল’- এর চরিত্রটি বেশ উপভোগ্য ছিল…
মম: সত্যিই তাই। একদম সাদামাটা একটা চরিত্র ছিল নাটকটিতে। মফস্বল শহরে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে যে কিনা তার পরিবাটিকে আগলে রাখতে চায়। সে যেখানেই যায়- তার পরিবার নিয়েই সকল চিন্তা। অসুস্থ বাবা আর ছোট বোনকে নিয়েও চিন্তার কমতি নেই। গল্পের বাঁকে বাঁকে আমাকে সামাল দিতে হয় নানান ধরনের জটিল পরিস্থিতি। তবুও আমি যেনো ভেঙ্গে পরিনা। আসলে আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের মেয়ে বা ছেলেদের তো এভাবেই সবকিছু মোকাবেলা করতে হয়।
আনন্দ আলো: চরিত্রটিতে কাজ করার আগে নিজের প্রস্তুতি কেমন ছিল?
মম: এই নাটকটির স্ক্রিপ্ট যখন আমাকে পরিচালক হিমেল আশরাফ পাঠায়, তখন আমি তাকে বলেছিলাম- ধারাবাহিক নাটক যেমন গতানুগতিক হয়ে থাকে তেমন, নাকি কিছুটা ভিন্নতা আছে? তখন হিমেল আমাকে বলেছিল- আপনি আগে পড়েন। আমি স্ক্রিপ্ট পড়ে আসলেই মুগ্ধ হয়েছি। মেজবাহ উদ্দিন সুমন খুব সুন্দরভাবে লিখেছেন গল্পটা। আর হিমেলও দারুণভাবে নাটকটি নির্মাণ করেছিল। প্রথম বেশ কয়েকটি পর্ব হিমেল আশরাফ পরিচালনা করেছিল এবং পরবর্তীতে হাবিব শাকিল পরিচালনা করেন। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে- নাটকটি খুব তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেয়া হয়। এর কারন আমার জানা নেই। তবে নাটকটি দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল। এখনো আমাকে অনেকে ফেসবুক কিংবা কোথাও দেখা হলে প্রশ্ন করে- ‘কাঁচের পুতুল’ বন্ধ কেনো? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- নাটকটিতে আমরা যারাই অভিনয় করেছি- সবাই খুব আন্তরিকভাবে অভিনয় করেছিলাম। আমরা সবাই একটা পরিবার হয়েই কাজ করেছি।
আনন্দ আলো: অনেকেই বলে থাকেন এখন নাকি দর্শক নাটক কম দেখছেন। আপনার অভিমত কি?
মম: আমি এই কথার সাথে একেবারেই একমত নই। এখন দর্শক কি পরিমান নাটক দেখে ইউটিউবে ঢুকলেই বোঝা যায়। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব অ্যাকটিভ। তাই আমি জানি আমাকে কতোজন যে বিভিন্ন নাটকের নাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন- ‘আপু অমুক নাটক ইউটিউবে কখন আসবে, ঐ নাটকটা অনেক ভালো হয়েছে… ইত্যাদি ইত্যাদি। এর থেকে বোঝা যায় আমাদের নাটক নিয়ে দর্শকের আগ্রহ আছে।
আনন্দ আলো: আপনি নিজের অভিনীত নাটক দেখেন?

মম: সময় পেলেই দেখি। নিজের নাটক নিজে যদি না দেখি, তাহলে তো ভুল খুঁজে বের করতে পারবো না। আমার নিজের প্রতিটি কাজই দেখে মনে হয়- ইস! এটা তো ঠিক হয়নি। আরো ভালো করা যেতো। এমন অনেক হয়েছে শুটিংয়ের সময় আমার মনে হয়েছে শট-টি ভালো হয়নি। আরেকবার দিলে ভালো হবে। কিন্তু পরিচালক তার সময়ের জন্য নেয়নি। এমন অনেক লিমিটেশন নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।
আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের খবর বলুন-
মম: ‘ছুঁয়ে দিলো মন’ ও ‘আলতাবানু’ ছবিগুলোর পর আমার কাছে অনেক ছবির প্রস্তাব আসে। কিন্তু গল্প এবং চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় অভিনয় করিনি। এরপর ‘স্বপ্নের ঘর’ ছবিটির গল্প এবং চরিত্র বেশ পছন্দ হয়। এটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। এই ছবিটিও মুক্তি পাওয়ার পর বেশ আলোচিত হয়। ভৌতিক সিনেমা ছিল। আমার চরিত্রটি বেশ মজার ছিল। নতুন কয়েকটি ছবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চূড়ান্ত হলেই জানাবো। এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই তা হলো- আমি আবারও ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির মতো ভালো ছবিতে অভিনয় করতে চাই।
আনন্দ আলো: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার আর শিহাব শাহীনের মাঝে সম্পর্কের বিষয়টা এখনো পরিস্কার করেননি…
মম: কিছু মানুষ আছে যারা আসলে সার্বক্ষণিক অন্যের বিষয় নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করেন। অন্যদের মুখরোচক বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা-সমালোচনা করে আনন্দও পায়। আসলে সবকিছুরই একটা সময় আছে। আমার বেলায়ও তাই। তবে হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, আমি যার সাথে আছি ভালোই আছি। কাজ করছি। প্রতিনিয়ত ব্যস্ত আছি। সবকিছুই আসলে আমাদের গন্তব্যের দিকেই নিয়ে যায়। বাকিটা সময়ই বলে দেবে সব।
আনন্দ আলো: বন্ধুত্ব আপনার কাছে কী?
মম: বন্ধুত্ব মানে আমার কাছে ওপেন রিলেশনশীপ। এটা অনেকটা বই পড়ার মতো। যখন ইচ্ছে তা পড়া যাবে আবার যখন ইচ্ছে বই বন্ধ করে দেয়া যাবে। এটাই হচ্ছে বন্ধুত্ব। আর হচ্ছে বিশ্বাস। বন্ধুত্বে অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে। পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতার উপর বন্ধুত্ব টিকে থাকে।
আনন্দ আলো: আপনার নিজস্ব জগৎটা কেমন?
মম: বৃষ্টি আমাকে খুব কাছে টানে। ভালো লাগে প্রকৃতি। আকাশের বিশালতা, পাহাড়ের উচ্চতা কিংবা সমুদ্র এগুলো আমাকে বেশ টানে। বাস্তবতার পাশাপাশি এই একটা ঘোর লাগা জগৎ আছে আমার। সেটা আসলে কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না। আমি আমার প্রফেশনটাকে খুব ভালোবাসি। অভিনয় আমার অসম্ভব ভালো লাগার একটি বিষয়। অভিনয়ের মধ্যে আমি আমার অস্তিত্ব অনুভব করি। আমি আসলে অভিনয়ের এই ঘোরের মধ্যেই থাকতে চাই।
আনন্দ আলো: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
মম: আমি অভিনয়টাই করতে চাই। এই অভিনয় করতে করতে একদিন এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবো। দর্শকদের এমনকিছু কাজ উপহার দিতে চাই- যেনো তারা সারাজীবন আমাকে মনে রাখেন। এখনো আমার অভিনয়ের ক্ষুধা মিটেনি। ঘুমের ঘোরে কতো যে চরিত্রের স্বপ্ন দেখি…। হাটতে- চলতে ফিরতে অনেক চরিত্র নিয়ে ভাবি- কবে যে এসব চরিত্রে অভিনয় করবো? এই ভাবতে ভাবতেই হয়তো আমার এক জীবন চলে যাবে…।