সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর মাশরাফি কি দলের নেতৃত্বে থাকছেন? এই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মাশরাফি বলেছেন, এই বিশ্বকাপই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ তবে এখনই ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন না। খেলা চালিয়ে যাবার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর যে বিশ্বকাপে আর খেলবেন না, সে ঘোষণা আগেই দিয়েছেন। পরের বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে, মাশরাফির পক্ষে ওই পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়াও হয়তো সম্ভব হবে না। শেষ বিশ্বকাপ বলেই অনেকটা জোর করে স্ত্রী সুমনা হক, মেয়ে হুমায়রা ও ছেলে সাহিলকে ইংল্যান্ডে নিয়ে এসেছেন মাশরাফি। সুমনার এমনিতে ক্রিকেট দেখায় তেমন আগ্রহ নেই। এবার তবু গোটা চারেক ম্যাচ তিনি মাঠে বসে দেখেছেন। ভাই মোরসালিন বিন মুর্তজা মাশরাফির সঙ্গে আছেন বিশ্বকাপের শুরু থেকে। বিশ্বকাপের মধ্যে মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজাও চলে আসেন ইংল্যান্ডে। সবার আসার একটিই উদ্দেশ্য—মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপের সাক্ষী থাকা। ‘বিশ্বকাপ আর খেলব না, এটা তো বলেই দিয়েছি। সে জন্যই চেয়েছি পরিবারের সবাই আসুক, খেলা দেখুক’ বলছিলেন মাশরাফি।
শেষ বিশ্বকাপের ঘোষণা দেশে থাকতে দিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি, সে ব্যাপারে সবারই কৌতূহল আছে। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর প্রায় ১৮ বছর হয়ে গেছে তাঁর ক্যারিয়ারের বয়স। চোট-আঘাত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। দুই হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। মাশরাফি তবু থমকে যাননি। প্রতিবার ফিরেছেন দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। চোটের সঙ্গে লড়াই জেতার এমন উদাহরণ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই আর আছে কি না সন্দেহ।
আবার এসব কারণে ওই প্রশ্নও ওঠে। বয়স প্রায় ৩৬ হয়ে গেছে। পেস বোলার হিসেবে শরীরটাকে আর কত টানতে পারবেন তিনি! পালন করতে হচ্ছে ওয়ানডে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও। এবার তো সাংসদও নির্বাচিত হয়েছেন। বয়স এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি দায়িত্বের ভার সামলে খেলায় কতটা মনোযোগী থাকতে পারবেন মাশরাফি, সে প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অবসরের ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত মাশরাফিই এত দিন রহস্যাবৃত করে রেখেছিলেন। যখনই জানতে চাওয়া হয়েছে, বলেছেন, খেলা ছাড়বেন নাকি চালিয়ে যাবেন, সে সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু সম্প্রতি প্রসঙ্গটা আবার উঠলে মাশরাফি জানিয়ে দিলেন, এখনই অবসর নিচ্ছেন না। তিনি আরও খেলবেন। আর যেহেতু বিশ্বকাপ চলছে, এই মুহূর্তে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিতও মনে হয় তাঁর কাছে, ‘আমি আরও খেলব, এটা ঠিক। আর বিশ্বকাপের মধ্যে ও রকম কিছু করতেও চাই না। তাতে পুরো দলের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। খেলোয়াড়েরা যা-ই করবে, বলবে, ওরা এটা আমার জন্য করছে বা করতে চায়। এটা চাচ্ছি না। আমি চাই বিশ্বকাপটা সবাই নিজের মতো করে খেলুক। এখানে অন্য কিছু না আসুক।’
তবে নিজের একটা মনোভাব দলের মধ্যে গোপন রাখেননি মাশরাফি। ওয়ানডের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকেই দেখেন তিনি। সেদিন কী একটা প্রসঙ্গে ড্রেসিংরুমে মাশরাফি দলের ক্রিকেটারদের বলেছেন, ‘সামনে সাকিব অধিনায়ক হচ্ছে। তখন ওর সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করিস।’
বিসিবির শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে যতটুকু জানা গেছে, বিশ্বকাপের পর মাশরাফি খেলা চালিয়ে যেতে চাইলে বোর্ড তাঁর ইচ্ছাকে সম্মান দেখাবে। মাশরাফির নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সা¤প্রতিক উত্থান। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘মাশরাফি’ একটা আবেগেরও নাম। বিসিবির যদিও ধারণা, বিশ্বকাপের পর হয়তো মাশরাফি নিজেই অবসরের ঘোষণা দেবেন, তবে না দিলেও তারা সেটিতে আপত্তি করবে না।
মিডিয়া কমিটির প্রধান ও বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুস প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মাশরাফির অবসরের ব্যাপারে বোর্ড কিছু বলবে না। সে এখনো আমাদের নেতা। ও যদি মনে করে খেলা চালিয়ে যাবে, তো খেলতে পারে। আবার ও যদি অবসর নিতে চায়, সেটাতেও বোর্ড বাধা দেবে না।’