Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

টিউলিপের দেশে

মাজহারুল ইসলাম
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা শেষ। জার্মানি ছেড়ে এবার যাচ্ছি আমস্টারডাম। নেদারল্যান্ডের রাজধানী। এক রাত সেখানে থেকে আমরা যাব শিল্পের শহর প্যারিসে। আমরা মানে আমি, কামরুল হাসান শায়ক আর সিরাজুল কবির চৌধুরী।
রাইন নদীকে সঙ্গী করে আমাদের ট্রেন দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
আমস্টারডাম আমি আগেও একবার গিয়েছিলাম। সে যাত্রায় কোনো সঙ্গী ছিল না আমার। ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসের কথা। প্রথমবারের মতো ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় এসেছি। প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্যপ্রকাশের কর্ণধার ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মফিদুল হক আমাকে স্টেশনে এসে টিকিট করে আমস্টারডামের ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় অংশগ্রহণের সব ব্যবস্থাও তিনিই করেছিলেন। বইমেলায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র থেকে শুরু করে ফ্রাঙ্কফুর্টে থাকার ব্যাবস্থা সবকিছু। সেবার মফিদুল হক বইমেলা আয়োজকদের অতিথি হয়ে এসেছিলেন। মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন তিনি আমাকে বললেন, প্রথমবার ইউরোপে এসেছেন। দুই-একটা দেশ ঘুরে যাবেন না ?
আমি বললাম, একা কীভাবে যাব ? কোথায় থাকব ?
তিনি বললেন, ট্রেনে যাবেন। ইউরোপের ট্রেন জার্নি খুবই আরামদায়ক। অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে আপনার।
আমার ভিসা ছিল নয় দিনের। মফিদুল ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক করলাম পরদিন বিকেল পাঁচটার ট্রেনে আমস্টারডাম যাব। রাতের আমস্টারডাম দেখে পরের দিন সকাল থেকে ঘোরাঘুরি করে আবার বিকেল পাঁচটার ট্রেনে ফ্রাঙ্কফুর্ট ফিরে আসব। তারপর দুদিনের জন্য যাব প্যারিস। আমস্টারডামে সবমিলে ২৮ ঘন্টার ভ্রমণ। এর মধ্যে ৮ ঘণ্টা ট্রেনে আর বাকি ২০ ঘণ্টায় পাখির চোখে শহরটাকে যতটুকু দেখা যায়।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, থাকব কোথায় ?
মফিদুল ভাই বললেন, স্টেশনে নেমে সোজা হাঁটা দিবেন। অনেক লম্বা একটা রাস্তা স্টেশন থেকে শহরে চলে গেছে, যার দুই ধারে অসংখ্য ছোট-বড় হোটেল। যে-কোনো একটায় ঢুকে পড়বেন।
রাত নয়টায় আমি আমস্টারডাম পৌঁছলাম। ট্রেন থেকে নেমে রাস্তায় বের হতেই মনে হলো, এ এক অন্য জগতে পা দিলাম। আলোঝলমল শহর। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় হাঁটছে। হইচই করছে। রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট ক্যাফে, বার, নাইট ক্লাব। আমি একটা ছোট্ট ব্যাগ হাতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। কিছু আফ্রিকান ছেলে-মেয়ে অতিরিক্ত উল্লাসে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। এই প্রথম মনে হলো অচেনা এক শহরে আমি একা। ভীষণ একা।

সম্পর্কিত

এবারের যাত্রা অন্যরকম। আমরা তিনজন। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে আগের সেই একাকী ভ্রমণের কথা মনে পড়ছিল। শায়ককে বলছিলাম সেই ভ্রমণের গল্প। আমি আর শায়ক পাশাপাশি বসেছি। ও খুব আগ্রহ নিয়ে আমার গল্প শুনছে। উল্টাদিকে কমল বসা এবং যথারীতি সে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আশপাশে অন্য যাত্রীরা বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। আমি ইতিমধ্যে কয়েকবার তাকে সতর্ক করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এসব ট্রেনে কেউ একটু জোরে কথাও বলে না। ১৯৯৮ সালে দেখেছি সবার হাতে বই অথবা ল্যাপটপ। এখন বইয়ের জায়গা দখল করেছে স্মার্ট ফোন আর ল্যাপটপের বদলে ট্যাব। একপর্যায়ে কমল বলল, তুমি তো জানো আমার ¯িøপ অ্যাপনিয়া।
আমি বললাম, আমি জানলে তো চলবে না। অন্যেরা বিরক্ত হচ্ছে। তুমি বরং কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করে আসো।
সে বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল।
শায়ক বলল, তুমি খামাখা ওরে উঠাইলা। ¯িøপ অ্যাপনিয়া থাকলে তো সে ঘুমাবেই।
আমি বললাম, দেখছ না আশপাশে সবাই বিরক্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গ বাদ দাও। আমাদের হোটেল বুক করা হয় নি। আসো হোটেল বুক করি। এটা ১৯৯৮ সাল না যে স্টেশনে নেমে ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিয়ে হোটেল খুঁজে বেড়াব।
হোটেল এখনো বুক করা হয় নি শুনে শায়ক খুবই বিস্মিত হলো। আর আড়াই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে যাব। আসলে আমার দায়িত্ব ছিল অন-লাইনে হোটেল বুক করা। গতকাল রাতে হোটেলের ওয়াইফাই ঠিকমতো কাজ করছিল না। তা ছাড়া সারা দিন মেলায় ঘোরাঘুরি করে অসম্ভব টায়ার্ডও ছিলাম। তাই হোটেল বুকিং করতে পারি নি। আমি বললাম, এত টেনশনের কিছু নাই। আসো এখনই করে ফেলি।
মোবাইলে হোটেল দেখা শুরু করলাম। ট্রেনের ওয়াইফাইও ঠিকমতো কাজ করছে না।
শায়ক বলল, সেবার তুমি যে হোটেলে ছিলে সেটা ঠিক করো। তোমার জন্য নস্টালজিক একটা ব্যাপার হবে।
আমি বললাম, তুমি কি পাগল হইছো! সেই হোটেলের নামও মনে নাই। তা ছাড়া ওই স্ট্যান্ডার্ডের হোটেলে এখন থাকতে পারবা না। তখন বয়স ছিল কম। কয়েকটা হোটেল ঘুরে একটায় গিয়ে উঠেছিলাম। এখন কি আর সেই বয়স আছে যে লাগেজ নিয়ে ঘুরে ঘুরে হোটেল ঠিক করব! এরমধ্যে আঠারো বছর পার হয়ে গেছে।
যাইহোক অনেক দেখে শুনে শহরের মাঝখানে একটা হোটেল বুক করে ফেললাম। এবার খাবার খেতে হবে। দুপুরে ঠিকমতো লাঞ্চ করা হয় নি। আমাদের প্ল্যান ছিল দুপুর তিনটা বিশের ট্রেনে আমস্টারডাম যাব। স্টেশনে এসে দেখি দুটো বিশ মিনিটেও একটা ট্রেন আছে। এগুলো সবই ইউরোস্টার। স্টেশনে বসে না থেকে এক ঘণ্টা আগে যাওয়াই উত্তম। তাড়াহুড়া করে টিকিট কেটে এক ¯øাইস পিজা হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠেছি।
কমলকে ফোনে পাচ্ছি না। আমরা একটার পর একটা বগিতে খুঁজতে শুরু করলাম। অবশেষে শেষ বগিতে তাকে পাওয়া গেল। আরাম করে ঘুমাচ্ছে সে। আশপাশে অনেকগুলো সিট খালি। কাজেই কেউ আর বিরক্ত হচ্ছে না। ওকে ডেকে নিয়ে গেলাম বুফে কার-এ। লাঞ্চের সময় অনেক আগে শেষ হওয়ায় হালকা খাবার ছাড়া কিছু নাই। আমার মনে পড়ল সেবারের কথা। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে আমস্টারডাম যাচ্ছিলাম। বুফে কার দেখে এতই ভালো লেগেছিল যে আমি আর নিজের সিটে ফিরে যাই নি। সেযাত্রায় বুফে কারে একটা সালাদ খেয়েছিলাম যার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। ওই সালাদটা আজ আবার খেতে মন চাইছে। কিন্তু এদের মেন্যুতে সালাদের কোনো আইটেমই নেই।
সন্ধ্যা ছয়টা বিশ মিনিটে আমরা আমস্টারডাম রেলস্টেশনে পৌঁছে গেলাম। দূর থেকে রেলস্টেশনটিকে মধ্যযুগীয় কোনো প্রাসাদ বলে মনে হবে। অথচ ভেতরে আছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। স্টেশনে নেমে প্রথমেই আমরা পরের দিনের প্যারিস যাওয়ার টিকিট কেটে নিলাম। তারপর একটা ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলের উদ্দেশে রওনা হলাম। এই রাস্তা দিয়েই আঠারো বছর আগে একটা ব্যাগ হাতে হোটেল খুঁজে বেড়িয়েছি। এখনো দিনের আলো নিভে যায় নি বলে শহর জেগে ওঠে নি। রাতের আমস্টারডাম অনেক বেশি প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। আলোঝলমলে এই শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নাইট লাইফ, যা উপভোগ করতে দুনিয়ার প্রায় সব দেশ থেকেই পর্যটকেরা এখানে আসেন। সব ধরনের নেশাজাতীয় জিনিস এখানে বৈধভাবে বিক্রি হয় এবং কফিশপ, পাব থেকে শুরু করে এমনকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা হাঁটতে হাঁটতে মানুষ সেসব সেবন করছে। এসব নিয়ে এখানে কারও কোনো মাথা ব্যথা নাই।

আমস্টারডাম শহরটা যেন খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। শহরজুড়ে আছে ১৬৫টি খাল। মাঝে মাঝে খালের উপর ভাসমান বাড়ি দেখা যায়। ছোটবড় প্রায় ৯০টি দ্বীপ রয়েছে এই শহরে। আর এগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রায় বারো শ’ সেতুর মাধ্যমে। খালের শহর আমস্টারডাম যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো সুন্দর। শহরের প্রাচীন ইউরোপিয়ান মধ্যযুগীয় স্থাপনাগুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়।
এই শহরের মানুষের যাতায়াত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে বাইসাইকেল। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়োবুড়ি সবাই এখানে সাইকেল চালায়। শহরজুড়ে সাইকেলের জন্য মূল রাস্তার পাশ দিয়ে আলাদা লেন তৈরি করা আছে এবং সেই লেন ধরে সব মানুষ সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব পরিবারে ছোট্ট শিশু আছে তাদের সাইকেলের সামনে একটি বেসিনেট বসানো। শিশুটিকে বেসিনেটে শুইয়ে দিয়ে তার বাবা অথবা মা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ দৃশ্য! পর্যটকদের জন্য সাইকেল ভাড়া নেওয়ার ব্যাবস্থা আছে। অনেকেই সাইকেল ভাড়া করে শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আট লাখ অধিবাসীর শহরে সাইকেলের সংখ্যা প্রায় সাত লাখ! পশ্চিম ইউরোপের শিল্পোন্নত একটি দেশে এত লোক সাইকেল ব্যবহার করে যা ভাবা যায় না। শুনেছি দেশের প্রধানমন্ত্রীও নাকি মাঝে মাঝে সাইকেল চালিয়ে অফিসে যান।
শহর, রাস্তাঘাট আর মানুষ দেখতে দেখতে কখন হোটেলে পৌঁছে গেছি লক্ষ করি নি। রিসেপশন দেখেই মনে হলো হোটেল খুব সুবিধার হবে না। অনলাইনে হোটেল বুক করার এই এক অসুবিধা। অনেক ক্ষেত্রেই ছবির সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল থাকে না। বাস্তব অবস্থার চেয়ে ফটোগ্রাফারের ক্রেডিট থাকে বেশি। স্টার রেটিংয়ের কোনো ঠিকঠিকানা নাই। হোটেলের নামের সঙ্গে যে যার মতো স্টার বসিয়ে দেয়।
চেক ইন করার সময় বললাম, আমাদের রিকোয়েস্ট ছিল হাই ফ্লোর।
রিসেপশনের তরুণ ছেলেটি বলল, তোমাদের রুম বেজমেন্টে।
আমার তো আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। এই ছোকরা বলে কী ? কোনো হোটেলে বেজমেন্টে রুম থাকতে পারে এটাই তো আমার জানা ছিল না। বেজমেন্টে তো থাকবে পার্কিং। তাও আবার তিন তারকা হোটেল বলে কথা! এরচেয়ে বিস্মিত জীবনে আর কখনো হই নি।
আমি বললাম, বেজমেন্টে আমরা থাকতে পারব না।
ছেলেটি বলল, হোটেল ঋঁষষু নড়ড়শবফ। কোনো রুম খালি নাই।
আমি বললাম, দেখো, বুকিংয়ের সময় আমার রিকোয়েস্ট ছিল দুইটা রুমই হাই ফ্লোরে হবে। বেজমেন্টে থাকতে পারব না। তোমার ম্যানেজারকে ডাকো। আমি তার সঙ্গে কথা বলব।
এদিকে আমার পেছনে চার-পাঁচজন লাইনে দাঁড়ানো, চেক ইন করার জন্য। সবাই শ্বেতাঙ্গ। কেউ কেউ বিরক্ত হচ্ছে, কিন্তু আমার কিছু করার নাই। এরমধ্যে একজন এল, ম্যানেজার কি না জানি না, এসে কম্পিউটারের বাটন টেপাটেপি করে একই কথা বলল, বেজমেন্ট ছাড়া অন্য কোনো রুম খালি নাই।
আমি আবারও বললাম, আমরা কোনোভাবেই বেজমেন্টে থাকতে পারব না।
সে বলল, আমি দুঃখিত। আমার কিছুই করার নাই।
আমি বললাম, রুম নাই তাহলে চেক ইন-এর জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়ানো কেন ?
এরা সবাই চেক আউট করবে।
কমল বলল, বাদ দাও। বিদেশ-বিভূঁইয়ে এদের সঙ্গে ঝামেলা করে লাভ নাই। এক রাতই তো থাকব। চাবি নিয়ে চলো রুমে যাই।
শায়ক কোনো কথা না বলে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম, আমি বেজমেন্টে থাকতে পারব না। আমি দেখতে চাই ওরা কী করে। একপাশে দাঁড়িয়ে ওদের কর্মকাÐ দেখছি। কমল বিরক্ত হয়ে শায়ককে নিয়ে নিচে নেমে গেল। এরমধ্যে দেখলাম পর পর দুজন চেক ইন করে চাবি হাতে নিল এবং কারও রুমই বেজমেন্টে না। সঙ্গে সঙ্গে আমি ঝাঁকি দিয়ে মাছ ধরার মতো খপ করে রিসেপশনের ছোকরাটাকে ধরলাম। বললাম, এখন তুমি কীভাবে রুম দিচ্ছ ? তুমি না বললে রুম খালি নাই! হোটেল ঋঁষষু নড়ড়শবফ.
আমার মেজাজ খুবই খারাপ হয়ে গেল। রীতিমতো হইচই ফেলে দিলাম। আমার গলার আওয়াজ শুনে কমল ও শায়ক দৌড়ে চলে এল। আমার কথা হলো রুম থাকতে কেন আমাকে দেওয়া হবে না ? এরমধ্যে মাঝবয়সী এক মহিলা এগিয়ে এসে সব শুনে রিসেপশনের ছোকড়াটার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে তৃতীয় এবং চতুর্থ তলার দুটো রুমের চাবি এনে আমার হাতে দিয়ে বলল, আমি খুব দুঃখিত। প্লিজ তুমি কোনো ব্যাখ্যা চেয়ো না। তোমার সমস্যার তো সমাধান করে দিলাম। রুমে চলে যাও। আমি তোমাদের লাগেজ পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। ঐধাব ধ হরপব বাবহরহম.
সম্ভবত এই মহিলাই হোটেলের ম্যানেজার হবে। আমিও কোনো কথা না বলে রুমের উদ্দেশ্যে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলাম। শায়ক পাশে এসে বলল, তোমার ধৈর্যের প্রশংসা না করে পারছি না।
আমি বললাম, আমরা এশিয়ান বলে আমাদের এরা পাত্তা দিচ্ছিল না। সবুজ পাসপোর্ট দেখেই ছোকরাটা আমাদের বেজমেন্টে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে এই বিড়ম্বনা বা অপমান এটাই প্রথম না। বিদেশ ভ্রমণের সময় হরহামেশাই ইমিগ্রেশনে আমাদের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, কবে আমরা পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াব যেদিন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবুজ পাসপোর্টটি হাতে নিয়ে বিদেশ যাবে, কিন্তু আমাদের মতো তাদের এই অপমান সহ্য করতে হবে না!
রুমে ঢুকে আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এইটা একটা তিন তারকা হোটেল হতে পারে! ছোট একটা রুম। লাগেজ রাখার জায়গা নাই। জানালা এতটাই ছোট যে দেখে মনে হচ্ছে পুরোনো দিনের বাড়ির ভেন্টিলেটর। রুমে চা-কফি খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থাও নাই। বাথরুমের অবস্থাও শোচনীয়। ছোট্ট একটা টেলিভিশন। এটা তো কোনো বাজেট হোটেলের পর্যায়েও পড়ে না।
কমলকে বললাম, এখন ধরতে হবে ধমড়ফধ.পড়স কে। ওদের মাধ্যমে হোটেল বুক করেছি।
কমল বলল, ধরাধরিটা পরে কোরো। অনেক সময় চলে গেছে। ক্ষুধায় আমার অবস্থা কাহিল। চলো বাইরে বের হই।
এরমধ্যে শায়ক তার রুম থেকে চলে এসেছে। চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি তারও রুম পছন্দ হয় নি। কী আর করা! হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলাম। আমাদের হোটেলটা শহরের মূল পর্যটক পরিবেষ্টিত এলাকা থেকে খানিকটা দূরে। কিছুদূর হাঁটার পর টেক্সি নিয়ে সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছকাছি পৌঁছে গেলাম। এটাই মূলত পর্যটক এলাকা। রাস্তার নাম ফুড স্ট্রিট। দুই ধারে সারি সারি বিভিন্ন দেশের খাবারের দোকান। আমরা একটা থাই রেস্টুরেন্টে ঢুকে রাতের খাবার খেলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে রাতের আমস্টারডাম দেখতে বেরিয়ে পড়লাম।
আগেরবার আমস্টারডাম যাওয়ার কথা যখন হচ্ছিল, মফিদুল ভাই বলেছিলেন, রেডলাইট ডিসট্রিক্টে যাবেন কিন্তু।
আমি বললাম, কী আছে ওখানে ?
মফিদুল ভাইয়ের মুখে রহস্যময় হাসি। বললেন, যান, নিজে গিয়ে দেখুন। তবে মনে রাখবেন, শহরটাকে এককথায় বলা হয়Ñসাইকেল, ক্যানেল আর রেডলাইট ডিসট্রিক্টের শহর। তাই রেডলাইট ডিসট্রিক্টে একটা চক্কর না দিলে দেখা অপূর্ণ থেকে যাবে।
সেবার আমার আমস্টারডাম ভ্রমণ মফিদুল ভাইয়ের ভাষায় ‘অপূর্ণ’ থেকে গিয়েছিল। রেডলাইট ডিসট্রিক্ট দেখা হয় নি তখন।
এবার আমরা তিনজন মিলে এসেছি এখানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো ট্যুরিস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাস্তার দুধারে সাজানো দোকান। কাঁচের আড়ালে দোকানের ভেতরকার পণ্য আর বাইরের সাইনবোর্ড দেখে যেখানে আমাদের চোখ কপালে উঠছে, সেখানে দেখি দিব্যি স্বামী-স্ত্রী, বাচ্চাকাচ্চাসহ এসে পর্যটকেরা গভীর মনোযোগে ঘুরে দেখছে রেডলাইট ডিসট্রিক্টের অলিগলি। আসলে এগুলো যৌনতা বেচাকেনার দোকান। ওরা জানে ট্যুরিস্টদের কীভাবে আকৃষ্ট করতে হয়। তাই যৌনতা উপভোগের পসরা সাজিয়ে বসেছে বেনিয়ারা।
এখানকার অলিগলিতে আছে হাজারো পর্দাঘেরা ছোট ছোট কাঁচের জানালা। জানালার পেছনে দাঁড়িয়ে স্বল্পবসনা ললনারা। দরে বনলে খদ্দের নিয়ে ভেতরে চলে যায় তারা। এখানকার দেহজীবী মেয়েদের বেশির ভাগ এসেছে রাশিয়া, হাঙ্গেরী, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভারত থেকে।
পথের পাশে দেখলাম এক প্রৌঢ়া বাজনা বাজিয়ে ভিক্ষা করছে। পর্যটকেরা কেউ কেউ দু’-এক ইউরো রাখছে তার ভিক্ষাপাত্রে। আমার শুধু মনে হলোÑসময় বড় নিষ্ঠুর। কত কিছু কেড়ে নেয় আমাদের কাছ থেকে। যেমনটি নিয়েছে এই প্রৌঢ়ার কাছ থেকেও। কে জানে একসময় ইনিও হয়তো ছিলেন রেডলাইট ডিসট্রিক্টের কোনো এক জানালায় দাঁড়ানো লাস্যময়ী। সময় তাকে নিঃস্ব করেছে। তাই হাতে ভিক্ষাপাত্র।
এই এলাকাতে আছে কয়েকটি অপূর্ব স্থাপত্যের প্রাচীন গির্জা। হায়, ঈশ্বরবন্দনা আর আদিম পেশা এখানে চলছে পাশাপাশি! মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। তিনজনে ঠিক করলাম হোটেলে ফিরে যাব।
টেক্সির জন্য অপেক্ষা না করে হাঁটা শুরু করলাম। মনেই হচ্ছে না এখন মধ্যরাত। হাজার হাজার পর্যটক রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। নাইট ক্লাব, পাব ও ডিস্কোতে হাই ভলিউমে মিউজিক বাজছে। ফাস্টফুড ও রেস্তোরাঁগুলো সরগরম। ঝিরঝিরে হিমেল বাতাস। অক্টোবর মাসে যতটা ঠান্ডা লাগার কথা ততটা লাগছে না। তারপরও ওভারকোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য হোটেলের কাছেই একটা আইরিশ রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। আমেরিকান ও ইংলিশ ব্রেকফাস্টের মতোই এলাহি কাÐকারখানা। ডাবল এগ ফ্রাই, বড় সাইজের দুটি সসেজ, গ্রিল্ড টমাটো, বয়েল্ড পটাটো, অ্যাপল পুডিং, জ্যাম জেলি বাটার ও দুই পিস ব্রাউন ব্রেড। সেইসঙ্গে এক মগ ফ্রেস অরেঞ্জ জুস। আমরা কেউই পুরোটা খেতে পারলাম না। যা খেলাম তাতেই আমাদের আজ আর লাঞ্চ না করলেও চলবে। রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে ক্যানেল ক্রুজ নেওয়ার জন্য হাঁটতে শুরু করলাম। অল্প কিছুদূর হাঁটতেই ক্যানেল ক্রুজ শুরুর জেটিতে পৌঁছে গেলাম। টিকিট করে উঠে পড়লাম ওয়াটার বাসে।
শুরু হলো আমাদের ক্যানেল-ক্রুজ।
অ্যামস্টেল নদীর মোহনায় এই শহর। নর্থ সি ক্যানেলের মাধ্যমে উত্তর সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত।
এক ঘণ্টার ক্যানেল ক্রুজ শহরের ভেতর দিয়ে ঘুরে ঘুরে আবার একই জায়গায় এসে থামবে। প্রত্যেক সিটের সঙ্গে একটা করে হেডফোন দেওয়া আছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে ইংরেজি ও ডাচ ভাষায় আমস্টারডামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে ক্যানেলের দুইধারের প্রাসাদ, মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলী ও রাস্তা সম্পর্কে ধারাবিবরণী দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চতুর্দশ শতকে নির্মিত গির্জার পাশ দিয়ে যাচ্ছে আমাদের জলযান। প্রায় ছয় শত বছরের পুরোনো গির্জাটি আমস্টারডামে আসা পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। গির্জার ইতিহাস শুনতে শুনতে কানে এল কমলের নাসিকা গর্জনের শব্দ। তার পাশের সিটে বসা এক বৃদ্ধা কপাল কুঁচকে বারবার তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন।
আমি কমলকে বললাম, কী করছ এটা! মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। তা ছাড়া চারদিকের এত সুন্দর দৃশ্য না দেখে তুমি ঘুমাচ্ছ?
সে বলল, ঘুম এলে আমি কী করব!
এরপর রাগ করে এয়ারফোন খুলে রেখে ডেকের বাইরের খোলা জায়গায় গিয়ে বসল। যাওয়ার সময় বলল, তোমরা মন দিয়ে ইতিহাস শোনো। আমি ইন্টারনেটে দেখে নিব। একটু পর শায়কও বাইরে গিয়ে বসল।
আমস্টারডাম শহরের হৃদয় দিয়ে রক্তনালির মতো প্রবাহিত ক্যানেলগুলো। ক্যানেলের ভেতর ভেসে যাচ্ছে নৌকা, স্টিমার। স্পিডবোটও রয়েছে। রয়েছে ওয়াটার বাস। ক্যানেলের দুই ধারে মধ্যযুগীয় গির্জা, রাজপ্রাসাদ।
আমস্টারডামের অনেকগুলো ভবন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকায় রয়েছে। শহরের প্রাচীন চেহারাটি যেন বদলে না যায় সেজন্য আমস্টারডামের অনেক এলাকাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই শহরে এমন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না যা প্রাচীন চেহারাকে পাল্টে দেয়।
কিছুক্ষণ পরই চোখে পড়ল ক্যানেলের তীর ঘেঁষে সারিসারি সেন্ট্রাল আমস্টারডামের বাড়িগুলো। দৃষ্টিনন্দন উজ্জ্বল রঙের বাড়িগুলো দেখে মনে হয় কোনো গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি দেখছি।
ভাসমান জলযানে শহর দেখা শেষ করে আমি রিজস্ক মিউজিয়াম দেখতে চলে গেলাম। কমল ও শায়ক যাবে না। তারা চলে গেল ক্যাসিনোতে।
আমস্টারডামকে বলা হয় ‘সিটি অফ মিউজিয়াম’। অসংখ্য মিউজিয়াম এই শহরে। এর মধ্যে রাজকীয় রিজস্ক মিউজিয়াম, ভ্যান গঘ মিউজিয়াম, আনা ফ্রাঙ্ক মিউজিয়াম, মাদাম তুঁশো মিউজিয়াম, হার্মিটেজ এবং আমস্টারডাম মিউজিয়াম বেশি বিখ্যাত। শিশুদের জন্য চমৎকার একটি সায়েন্স মিউজিয়ামও রয়েছে। বিখ্যাত মিউজিয়ামগুলো বেশির ভাগই মিউজিয়াম প্লেইন বা মিউজিয়াম স্কোয়ারের আশপাশে অবস্থিত।
১৯৯৮ সালে যখন আমস্টারডাম এসেছিলাম তখন ভ্যান গঘ মিউজিয়াম দেখেছি। বেশির ভাগ পর্যটক এই মিউজিয়ামটি দেখতে আসেন। এখানে ভ্যান গঘের সানফ্লাওয়ার ও পটেটো ইটারসের মতো বিখ্যাত চিত্রকর্ম রয়েছে। ইমপ্রেশনিস্ট, মডার্ন ও পোস্ট মডার্ন যুগের খ্যাতনামা শিল্পীদের শিল্পকর্ম রয়েছে এই জাদুঘরে।
পৃথক দুটো সিরিজে সানফ্লাওয়ার বা ‘সূর্যমুখী’ নিয়ে কাজ করেছেন ডাচশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। ১৮৮৭ সালে প্যারিসে আঁকা প্রথম সিরিজের ছবিগুলোতে সূর্যমুখীগুলোকে দেখা যায় মাটিতে পড়ে আছে। এক বছর পরবর্তী আর্ল শহরে আঁকা সিরিজে দেখা যায় সানফ্লাওয়ার শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুলদানিতে। এই সিরিজের একটি ছবি আছে এই মিউজিয়ামে। অন্যটি আছে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ লন্ডনে। ২০১৫-তে লন্ডনে ছবিটি দেখার সুযোগ হয়েছিল। দুটো সিরিজের সঙ্গেই গভীরভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর সবচাইতে অন্তরঙ্গ শিল্পীবন্ধু পল গঁগার নাম। এ শহরের ‘ইয়েলো হাউস’-এ তাঁর সঙ্গে থাকতে আসা বন্ধু গঁগাকে মুগ্ধ করতে চেয়েছিলেন তিনি এসব ছবি দিয়ে। ১৮৮৯ সালেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ‘আত্মপ্রতিকৃতি’র বাইরে ‘সানফ্লাওয়ার’ সিরিজের ছবিগুলোর মধ্যেই সবচাইতে বিপুলভাবে প্রকাশিত হয়েছেন তিনি।


ভ্যান গঘ মিউজিয়াম আর রিজস্ক মিউজিয়াম কাছাকাছি। গতবার সময়ের অভাবে রিজস্ক মিউজিয়াম দেখা হয় নি। এবার তা দেখব আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম।
রিজস্ক মিউজিয়াম হলো এদের ন্যাশনাল মিউজিয়াম এবং একই সঙ্গে এটি হল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে ডাচ স্বর্ণযুগের শিল্পীদের ২ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম রয়েছে। বিশাল একটি প্রাসাদে এর অবস্থান। ১৮৮৫ সালে জাদুঘর হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। শিল্পকলা ও ইতিহাসের বিপুল প্রদর্শন সামগ্রীর জন্য রিজস্ক মিউজিয়ামের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। রিজস্ক মিউজিয়ামে রয়েছে বিশ্বখ্যাত ডাচশিল্পীদের চিত্রকর্মের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ। এই মিউজিয়ামের সবচেয়ে মূল্যবান ও বিখ্যাত শিল্পকর্মটি রেমব্রান্ট ভ্যান রিন-এর আঁকা ‘নাইট ওয়াচ’। বিশাল একটি ছবি। একটি ঘরে শুধু এই ছবিটিই রয়েছে। দেয়ালজোড়া ছবিটির সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়। বিশ্বাস হচ্ছিল না আমি নিজের চোখে অরিজিনাল পেইন্টিংটি দেখছি। রেমব্রান্ট-এর ‘নাইট ওয়াচ’কে বলা হয় ডাচ স্বর্ণযুগের সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি। প্রায় চার শ’ বছর আগের আঁকা ছবিটি রিজস্ক মিউজিয়ামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। বিশাল পেইন্টিংটির আলোছায়ার খেলা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। ছবিটির আকৃতিও একটা আলোচিত বিষয়। ১১.৯১ ফুট বাই ১৪.৩৪ ফুট আকৃতির বিশাল এই ছবিটি অন্য কোনো ছবির সঙ্গে না রেখে আলাদা একটি কক্ষে রাখা হয়েছে।
রেমব্রান্টের ‘নাইট ওয়াচ’-এর পাশাপাশি এখানে আছে তাঁর ‘দ্য জুইশ ব্রাইড’ (১৬৬৭)।
রেমব্রান্ট ছাড়াও জোহানেস ভারমির ও ফ্রান্স হালস-এর মতো কিংবদন্তি শিল্পীর মাস্টারপিস চিত্রকর্ম আছে এই মিউজিয়ামে। জোহানেস ভারমিরের ‘দ্য মিল্কমেইড’ (১৬৫৭-৫৮), ফ্রান্স হালস-এর ‘পোট্রেইট অফ এ ইয়াং কাপল’ (১৬২২) সমৃদ্ধ করেছে এই মিউজিয়ামকে। এছাড়াও আছে ভ্যান ডার হেস্ট, ফার্ডিনান্দ বল, অ্যালবার্ট সুপ, জ্যাকব ভ্যান রুইসডেল, পাউলুস পটারের মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের চিত্রকর্ম। আরও রয়েছে মধ্যযুগের বিভিন্ন শিল্পসামগ্রী। সব মিলিয়ে বিশাল সংগ্রহ। রিজস্ক মিউজিয়ামে শুধু শিল্পকর্ম নয় ডাচ ইতিহাসের অসাধারণ সব নিদর্শনগুলো চমৎকারভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। ডাচ বণিকদের ব্যবহৃত অস্ত্র, পোশাক, ডাচ রাজারানীদের পোশাক, অলংকার, ব্যবহৃত আসবাবপত্র সবকিছুই নজর কেড়ে নেয়।
এই বিশাল মিউজিয়াম দেখার জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় যথেষ্ট নয়, এর জন্য দরকার আস্ত একটা দিন। এদিকে ঘড়ির কাটা বিকেল তিনটার ঘরে। কমল ও শায়ক মিউজিয়ামের বাইরে অপেক্ষা করছে। বিকেল পাঁচটার ট্রেনে আমরা প্যারিসের উদ্দেশ্যে রওনা হব। হোটেল থেকে লাগেজ নিয়ে স্টেশনে ছুটতে হবে। দুইবার আমস্টারডাম এলাম, কিন্তু প্রায় কিছুই দেখা হলো না। এখানকার আনা ফ্রাঙ্ক মিউজিয়াম, ডায়মন্ড ফ্যাক্টরি, টিউলিপের বাগান দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত। খুব কম পর্যটকই এগুলো না দেখে ফিরে যান। নানা রঙের টিউলিপের দেখা পেতে হলে আসতে হবে সামারে। তাই মনে মনে বললাম, বিদায় আমস্টারডাম। দ্বিতীয়বার এসেছি এই শহরে, কিন্তু শেষবার নয়।