Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আরেফিন ইব্রাহিমের স্থাপত্য ভুবন

মোহাম্মদ আরেফিন ইব্রাহিম। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি মাস্টার্স কমপ্লিট করেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশে ফিরে এসে বন্ধু স্থপতি সোহরাব হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘আর্কিওয়ার্কস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। বর্তমানে এই স্থপতি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (অওটই) এর স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চাও করে যাচ্ছেন নিয়মিত। তার আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশ স্থপতি ইনসটিটিউট এর এডুকেশন সেক্রেটারি। এবার শাহ মিসেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
নান্দনিক ও আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন স্থপতি আরেফিন ইব্রাহিম। এই স্থপতি সব সময় চিন্তা করেন তার কাজটা যেন পরিবেশ বান্ধব হয়। সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি পরিবেশ সহনীয় স্থাপত্যচর্চাই তার অন্যতম লক্ষ্য। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় আরেফিন ইব্রাহিম। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আরেফিনের বাবার নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ফেরদৌস ইব্রাহিম একজন শিক্ষিকা। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তার প্রচÐ নেশা। টেবিল টেনিস ভালো খেলতেন। কার্টুন আঁকা, ছবি আঁকা ছিল আরেফিনের পছন্দের বিষয়। তবে কার্টুন আঁকাআঁকির ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। ছোটবেলা থেকেই আর্কিটেকচারের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। সেই আগ্রহ থেকেই আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। মোহাম্মদপুর সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯১ সালে। ১৯৯৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০১ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন মোহাম্মদ আরেফিন ইব্রাহিম। স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পান গোল্ড মেডেল। পাস করে বের হওয়ার পর পরই আরেফিন ইব্রাহিম যোগ দেন ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। সেখানে তিনি দুই বছর কাজ করেন। ২০০৩ সালে আরেফিন মাস্টার্স করতে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। মাস্টার্স কমপ্লিট করে দেশে এসেই গড়ে তোলেন ‘আর্কিওয়ার্কস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। স্থপতি আরেফিন ইব্রাহিম এই ফার্মের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর পার্টনার হিসেবে আছেন তার স্ত্রী।
২০০৬ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (অওটই) এর স্থাপত্য বিভাগে। বর্তমানে মোহাম্মদ আরেফিন ইব্রাহিম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানান বিষয় নিয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি দেশের নামকরা মেডিকেল কলেজ, ক্লিনিক, ভ্যাকেশন হাউস, কনভেনশন সেন্টার, ক্লাব, অফিস বিল্ডিং, রিসোর্ট, শোরুম সহ বিভিন্ন ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ সাভারে কনভেনশন সেন্টার, মিরপুর-১ দারুস সালাম রোডে বাংলাদেশ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, চাঁদপুরে রাজিব ভ্যাকেশন হাউস, গাজীপুর শ্রীপুরে রিসোর্ট, উত্তরায় ১১ নম্বরে তারেক রেসিডেন্স, উত্তরা ১৩ নম্বরে সিলভার লেক অ্যাপার্টমেন্ট, নোয়াখালিতে অরফাহনেজ, বগুড়ায় সিনজেন্টা এল এন্ড ডি সেন্টার, উত্তরায় সিগনেচার স্যূটস, গাজীপুরে সিভিল গার্ডেন, লালমাটিয়ায় সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিমিটেড হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, ধানমন্ডিতে অ্যাপার্টমেন্ট ইন্টেরিয়র, মোহাম্মদপুরে অফিসের ইন্টেরিয়র, বাবর রোডে সমীরণ অ্যাপার্টমেন্ট, উত্তরায় মরিয়ম অ্যাপার্টমেন্ট, গুলশানে কিডস ক্লাব, বারিধারা ডিওএইচএস-এ এইচ আর এম অ্যাপার্টমেন্ট, গুলবাগে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মিরপুর-১০ এ বেলাল আহমেদ কলেজ, এস আর টাওয়ার কমার্শিয়াল বিল্ডিং, বনানীতে এইচআর এম অফিসের ইন্টেরিয়র, ধানমন্ডিতে মিঃ মোক্তার রেসিডেন্স, উত্তরায় মিসেস বীথি রেসিডেন্স, মাদারীপুরে ভ্যাকেশন হাউস, বনানীতে এইচআরএম অফিসের ইন্টেরিয়র, ইউডিপিএস অফিসের ইন্টেরিয়র, উত্তরায় চন্দ্রমল্লিকা অ্যাপার্টমেন্ট, ঝালকাঠিতে গ্রামীন রাবেয়া ক্লিনিক সহ অনেক ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।

২০০৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আফরোজন নাহার। তিনি একজন আর্কিটেক্ট। এই দম্পতি এক মেয়ে আর এক ছেলে সন্তানের জনক-জননী। সুয়োগ হলেই দেশ-বিদেশের প্রকৃতি আর স্থাপত্য দেখা ভীষন পছন্দের এই দম্পতির। স্থপতি মোহাম্মদ আরেফিন ইব্রাহিম বলেন, ক্লায়েন্টের চাহিদাকে মাথায় রেখে ফাংশন এবং কনটেক্সট বিচার করে নান্দনিক আধুনিক স্থাপত্য শৈলী উপহার দেয়ার চেষ্টা করে চলেছি। কনট্রেক্সট এর মধ্যে বিবেচনায় আসে প্রকল্প এলাকার জলবায়ু এবং পারিপার্শ্বিক বৈশিষ্ট্য টেকসই নির্মাণে উপযুক্ত নির্মাণ সামগ্রী ও পদ্ধতি চয়ন ইত্যাদি। স্থাপত্য মূলত ক্লায়েন্টের উপর নির্ভরশীল বলে ক্লায়েন্টের চাহিদা সঠিক ভাবে বুঝতে পারা এবং প্রয়োজনে উভয়ের সমন্বিত একান্তিক প্রয়াসের মাধ্যমে যে স্থাপত্য রচিত হয় তা হবে গুণগত মানসমৃদ্ধ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে ঠিক রেখে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনের দিকে নজর দেন স্থপতি আরেফিন ইব্রাহিম। এই স্থপতি নিজের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চান।
স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি আরেফিন ইব্রাহিম বলেন, আমাদের স্থাপত্যের ঐশ্বর্যমন্ডিত ঐতিহ্য যেমন অনস্বীকার্য তেমনি বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক নির্মাণ শৈলীর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের স্থাপত্য রচনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।