Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ওয়াহিদ আসিফের স্থাপত্য ভাবনা

স্থাপত্যশিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ অন্যতম। ২০০০ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা শেষে করেই প্রথমে যোগ দেন স্থপতি রাশিদুল হাসানের অধীনে পরে খুরশিদ সারওয়ার এর অধীনে ‘পুরালয় প্রকৌশল লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন। ২০০৭ সালে বন্ধু স্থপতি আহমেদ ইমতিয়াজ খানকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ফোরওয়ালস ইনসাইড আউটসাইড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
স্থাপত্য নক্সা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রধানত প্রাধান্য পায় ব্যবহারকারী, তাদের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারের উদ্দেশ্য, ব্যবহারকারীর আবেগ, অনুভ‚তি, তাদের গল্প। নক্সা তৈরীর ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা, পরিবেশের প্রতি যতœবান হওয়া কিংবা পারিপার্শ্বিকের প্রতি সহমর্মী থাকা এসব কিছুকে মাথায় রেখেই সর্বদা স্থাপত্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছিÑ কথাগুলো বললেন স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ। তিন ভাই বোনের মধ্যে ওয়াহিদ আসিফ সবার বড়। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলায়। সেখানেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ওয়াহিদের বাবার নাম আখতার মোকারম। তিনি পেশায় চাকরিজীবী ছিলেন। মা আফরোজা আখতার গৃহিনী।
স্কুলে পড়াকালীন ওয়াহিদের ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচন্ড নেশা। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকার ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। বাবার কাছ থেকেই ছবি আঁকা শেখা তার। ছোটবেলা থেকেই আর্কিটেকচারের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ তিনি হয়েছে সফল একজন স্থপতি। পাবনা আর এম একাডেমী স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯০ সালে। ১৯৯২ সালে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছে স্থপতি আশিক, স্থপতি সুমন, স্থপতি আকসিন ও স্থপতি মামুন। তার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন স্থপতি আলী নকী, স্থপতি গালিব মহিবুল খান ও স্থপতি মাহবুবুল মালিক প্রিন্স।
স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০০ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর প্রথমে দুই বছর স্থপতি রাশিদুল হাসানের অধীনে কাজ করেন। এরপর সেখানে আরো তিন বছর পুরালয় প্রকৌশল লিমিটেড-এ পূর্ণ সময় দেন এবং আরো তিন বছর খন্ডকালীন স্থপতি হিসেবে কাজ করেন। স্থাপত্য চর্চার ক্ষেত্রে স্থপতি রাশিদুল হাসান এবং ‘পুরালয় প্রকৌশল লিমিটেড’ এর প্রধান স্থপতি খুরশিদ সারওয়ারের পথ প্রদর্শনা ওয়াহিদ আসিফের কাজে বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে।

২০০৭ সালে বন্ধু স্থপতি আহমেদ ইমতিয়াজ খানকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ফোর ওয়ালস ইনসাইড আউট সাইড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে আছেন স্থপতি আহমেদ ইমতিয়াজ খান। ইতিমধ্যে তিনি দেশের নামকরা হোটেল, ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, হাসপাতাল, ট্রেনিং সেন্টার রিসোর্ট কমার্শিয়াল বিল্ডিং, অফিস বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। পুরালয় প্রকৌশল লিমিটেডে থাকাকালিন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ রমনায় হলি ফ্যামেলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ, শ্যামলীতে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ইত্যাদি। নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের হয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ কক্সবাজারে হোটেল রেডিসন, উত্তরায় দুসিত প্রিন্সেস, গুলশান-২ এ রেডিসন রেড, নেপালে হোটেল প্লাটিনাম, ইস্কাটনের এবিসি ক্রিসেন্ট কোর্ট, মিরপুরে স্কয়ার রেসিডেন্স, রাজশাহীতে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স বিল্ডিং, বাংলা মটরে পদ্মা লাইফ টাওয়ার, রাঙামাটিতে আরণ্যক রিসোর্ট, উত্তরায় স্বপ্ননীড়, বসুন্ধরায় ইকোভাস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের এমইএস ট্রেনিং কমপ্লেক্স, পাবনার ঈশ্বরদীতে কামেনী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, মানিকগঞ্জে গ্রীন ফ্যাক্টরী এসপায়ার গার্মেন্টস, ময়মনসিংহ ভালকুায় গ্রীন ফ্যাক্টরী এইচ আর টেক্সটাইলস লিমিটেড, কুমিল্লা ইপিজেড এ কাদেনা স্পোর্টস ওয়ার, সাভার ইপিজেড এ লেডি ফ্যাশন ও হোপলুন ফ্যাক্টরী সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা।
২০০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সৈয়দা কুরসিয়া জেবিন। তিনি বিএফ শাহীন কলেজের একজন শিক্ষিকা। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ বলেন, ফোরওয়ালস ইন সাইড আউটসাইডের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আমি ধীরে ধীরে নিজস্ব একটা ধারনা খোঁজার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছি। এই পথ খোঁজার চেষ্টার ধারনা আমার স্থাপত্য নক্সায় প্রকাশ পায়। আমি বিশ্বাস করি স্থাপত্য বাস্তব জীবনের গল্প, ইট, সিমেন্ট আর বালির মাঝে দিয়ে সে গল্প বলার চেষ্টা করি। আমি চেষ্টা করে চলেছি স্থাপত্য নক্সায় চার দেয়ালের ভেতর আর বাইরের সমন্বয়ে কিছু ছোট গল্প লেখার। গল্প যার জন্য লেখা, তার কথাই যেন প্রতিফলিত হয় চার দেয়ালের গল্পগাঁথা। যেন বদলে না যায় গল্পের মানে। ব্যবহারকারীর আবেগ, অনুভ‚তি যেন প্রকাশিত হয় চার দেয়ালের ভেতরে বাইরে। ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম, যে ব্যবহারের উদ্দেশ্য চার দেয়ালের স্থাপনার গাঁথুনি দেয়া হলো, সেই ব্যবহারই যেন প্রতিফলিত হতে থাকে স্থাপত্য নক্সায়।
ঘর যেন বদলে না যায় খাবারের দোকানে, খাবারের দোকান যেন বদলেনা যায় অফিসের ঠিকানায়। যে গল্প বলা হয়েছিল তা যেন বদলে না যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন ওয়াহিদ আসিফ। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।