সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
সৈয়দ ইকবাল
প্রথমেই সিয়াম ও পুজা চেরির কথা বলি। প্রায় সকলেই মানবেন আমাদের চলচ্চিত্রে এই তরুণ জুটিই এখন ব্যাপক আলোচিত। পুজা চেরি ভবিষ্যতে কতদূর যাবেন তা এখনই বলা যাচ্ছেনা। কিন্তু সিয়াম তার মেধার দ্যূতি ছড়িয়ে একথা প্রমাণ করেছে যে, চলচ্চিত্রের বিশাল আঙিনায় টিকে থাকতেই এসেছে। পুজা চেরি অভিনেত্রী হিসাবে সাফল্য দেখিয়েছেন। কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না তিনি ভবিষ্যতে কতটা আলো ছড়াবেন। তবে চলচ্চিত্রের এই তরুণ জুটির প্রতি নাটক, সিনেমার দর্শকেরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন একথা বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। সিয়ামের কথা একটু আলাদা করে বলতেই হয়। টিভি মাধ্যমের জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা সিয়াম সিনেমায় পা রেখেই সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেন। পরিশ্রম আর প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি থাকলে যে নিজেকে সাফল্যের চ‚ড়ায় তুলে ধরা যায় একথা প্রমাণ করেছেন সিয়াম।
মুঠোফোন সংযোগ দাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেলের একটি বিজ্ঞাপনে প্রথম আলোচনায় আসেন সিয়াম। তরুণ নির্মাতা আদনান আল রাজিব ভ‚য়শী প্রশংসা করলেন সিয়ামের। তিনি বলেন, নির্মাতা হিসেবে আমাদের সব সময় ইচ্ছে আর স্বপ্ন দুটোই থাকে বড় কিছু করার। সিয়ামের সঙ্গে কাজ করার সময়ই অনেকবার ভেবেছি যে আরও বড় কিছুতে, গল্পে তাকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তার মধ্যে যে অভিনয় সত্তাটা আছে সেটা বড় একটা প্লাটফরম আর গল্প দাবী করে। অনেকেই মনে করেন সিয়াম সেই পথেই হাঁটছেন। মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কাল নিয়ে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কর্তৃক নির্মিত তৌকীর আহমেদের ছবি ফাগুন হাওয়ায়Ñ এ সিয়ামের সুঅভিনয় ভবিষ্যতের জন্য অনেক আশার সঞ্চার করেছে।

চলচ্চিত্রে আলো ছড়াচ্ছে সিয়াম আর পুজা চেরির মতো তারুণ্য। টিভি নাটকের বিশাল আঙিনা জুড়েও দাপট দেখাচ্ছে তরুণ-তরুণীরাই। আনন্দ আলোর চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদ মুখ হয়েছেন তৌসিফ ও তানজিন তিশা। দু’জনই তুখোড় অভিনেতা অভিনেত্রী। টিভি মাধ্যমে অভিনয়ের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদেরই বয়সী শবনম ফারিয়া, জোভান, মনোজ, এলেন শুভ, সাব্বির, সিনথিয়া, মিথিল, শাহেদ সহ একঝাঁক তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রী বর্তমান সময়ে আমাদের টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে আলো ছড়াচ্ছেন। জোভান, শবনম ফারিয়াও অভিনয়ের প্রতি দারুন কমিটেড। একই কথা মনোজ, এলেন শুভ্র, সাব্বির, সিনথিয়া, মিতিল, শাহনাজ সুমী ও শাহেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তারুণ্যের প্রতিনিধি শবনম ফারিয়া সম্পর্কে জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেছেন, ফারিয়ার যে দিকটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তাহলো ওর সাহস। বর্তমান সময়ে তারকাদের অনেকের ভিতরে এমন পজিটিভ সাহস চোখে পড়ে না। ফারিয়া বেশ সংবেদনশীল মানুষ। যা একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সব চেয়ে ভালো গুণ। জয়া আহসান প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দেবী’তে একটি গুরুত্বপুর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শবনম ফারিয়া। সেই প্রসঙ্গ তুলে জয়া আহসান বললেন, দেবীর কাজ করতে দিয়ে প্রথমে ওর মাঝে একটু জড়তা পেয়েছিলাম। পরে জড়তা কাটিয়ে ও বেশ সহজ হয়। মেকআপ নিতে নিতে গল্প করতে করতে বা খেতে খেতে আমাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হয়ে যায়। অবশ্য মেকআপ বললে ভুল হবে। হুমায়ূন আহমেদের নীলু তো কালো, দেখতে ততোটা ভালো না। একেবারে পাশের বাড়ির মেয়েটা। আর ফারিয়া এত মিষ্টি সুন্দর যে ছবিতে সময় নিয়ে ওর ‘মেক ডাউন’ করে মিষ্টতা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়া আনা হয়। ফারিয়ার ভেতরে আমি একটা দারুন সম্ভাবনা দেখেছি। এই অনন্য প্রতিভা যেন বৃথা না যায়।
সিনথিয়া, মিতিল, শাহনাজ সুমি আর শাহেদ। টিভি নাটকে ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছেন। চ্যানেল আইয়ের বহুল জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো সেরা নাচিয়ে থেকেই তারা প্রতিভার দ্যূতি ছড়ান মিডিয়ায়। নাচে তো আছেনই। কিন্তু অভিনয়ে আলোচিত হয়েছেন বেশি। বিশিষ্ট নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু ‘প্রিয়দিন প্রিয়রাত’ শীর্ষক টিভি সিরিয়ালে তাদেরকে অভিনয় করান। চ্যানেল আইতে প্রচারিত এই ধারাবাহিক নাটকে সিনথিয়া, মিতিল, শাহেদ ও শাহানাজ সুমি এতটাই সাবলীল অভিনয় করেন যে তাদের ব্যাপারে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় দর্শকের মাঝে। এদের ব্যাপারে দারুন আশাবাদ ব্যক্ত করলেন সালাহউদ্দিন লাভলু। তার মন্তব্য, ওরা অভিনয়ে লেগে থাকলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে।
জোভান, মনোজ, এলেন শুভ্র, সাব্বির সহ আরও বেশ কয়েকজন মধাবী তরুণ-তরুণী আমাদের টিভি মিডিয়ায় তাদের অভিনয় প্রতিভা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এলেন শুভ্র ও জোভানের ব্যাপারে দর্শকের মাঝে ইতিমধ্যে প্রত্যাশার ডালপালা বড় হতে শুরু করেছে। একজন জনপ্রিয় নির্মাতা বললেন, বর্তমান সময়ে তৌসিফ, তানজিন তিশা, জোভান, শবনম ফারিয়া, এলেন শুভ্র, সাব্বিরদের মতো অনেক প্রতিভাবান তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রী টিভি নাটকে ভালো করছেন। কিন্তু আমার ধারনা তাদের অনেকেই কিছুটা অস্থির প্রকৃতির। ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে অস্থিরতা পরিহার করতে হবে।
ক্রীড়া, চলচ্চিত্র, অভিনয়, মঞ্চ নাটক, সঙ্গীত, কার্টুন, আলোকচিত্র সহ নানা শাখায় বিস্তৃত আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন প্রতিটি শাখায় আলো ছড়াচ্ছে তরুণেরাই। কার্টুন সিরিজে প্রতিভা ছড়িয়ে গত বছর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মোরশেদ। ফুটবলে আলো ছড়িয়েয়েছন মাহবুবুর রহমান। পাঠাও এর মাধ্যমে নগর পরিবহনের নতুন সমাধান খুঁজে সম্ভাবনার আলো ফেলেছেন দুই তরুণ সিফাত আদনান ও হুসেইন মো: ইলিয়াস। সঙ্গীতে আলো ছড়িয়েছেন আরমীন মুসা, মঞ্চে প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন সায়িক সিদ্দিকী, মুক্তা সহ আরও কয়েকজন তরুণ অভিনেতা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সৃজনশীল ব্যক্তিবর্গ এদের পাশে একটু দাঁড়ালেই আলোর ঝর্না ধারা বয়ে যাবে সারাদেশে।
মঞ্চের প্রতি অনেকেরই অনীহা দেখা যায় আজকাল। অথচ মঞ্চই আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় ক্ষেত্র। সম্ভাবনাময় অনেক তরুণ-তরুণী নিজের পয়সা খরচ করে মঞ্চে কাজ করে চলেছেন। তাদেরই একজন সায়িক সিদ্দিকী। মঞ্চে পালা গানের ভাষা ফিরিয়ে এনেছেন এই তরুণ। তার সম্পর্কে বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্য সংগঠক মান্নান হীরা লিখেছেন, বর্তমান সময়ের আধুনিক যুবক সায়িক সিদ্দিকীর শিল্প ভাবনা অনেকটাই বিস্মিত করার মতো। মঞ্চে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখছি নাট্যরচনা, আঙ্গিক প্রয়োগ, কোরিওগ্রাফির প্রবল অত্যাচার। প্রযুক্তির অযথা ব্যবহার অথবা তথ্য উপস্থাপনার ঢঙে ক্রমেই জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাটক যখন ক্রমেই হয়ে উঠছে সার্কাস, অ্যাক্রোবোটিক অথবা রচনায় যুক্তাঙ্গর সংবলিত বাক্স্যের প্রভাবে কপি মাইকেলকেও ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা তখন এই প্রজন্মের পালাকার মনে করেন ‘আমাদের মঞ্চ নাটকের দর্শক সরল ঢঙে গল্প বলাকেই পছন্দ করে’। সায়িক সিদ্দিকীর উল্লেখযোগ্য পালা গুলোর মধ্যে আছে রূপচান সুন্দরীর পালা, ভানু সুন্দরীর পালা, নোলকজানের পালা, গুণজন বিবির পালা, কইন্যা শশীর পালা, জয়তুন বিবির পালা ইত্যাদি। আমরা অনেকেই সায়িক সিদ্দিকীর একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির খবর জানিনা। সেটাই একটু বলি। ২০১৭ সালে স্পেনে আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনসটিটিউটের বিশ্ব কংগ্রেসে সায়িকের রূপচান সুন্দরীর পালা নাটকের ১০ মিনিট প্রদর্শনের সুযোগ মেলে। সেই অনুযায়ী পালাটির মাত্র ১০ মিনিটের অভিনয় প্রদর্শন করা হয়। ১০ মিনিটের অভিনয় অংশ দেখে অভিভ‚ত বিশ্ব কংগ্রেসের কর্মকর্তাবৃন্দ সায়িককে ডেকে নিয়ে পুরো নাটকটি মঞ্চায়নের সুযোগ করে দেন। সায়িক সিদ্দিকীর জন্য আমার প্রাণ ঢালা অভিনন্দন রইল।
শুধু সায়িক সিদ্দিকী নয়, আমাদের নাটক সিনেমার মেধাবী তরুণ অভিনেত্রীদের প্রতি রইল আনন্দ আলো পরিবারের অনেক শুভেচ্ছা। কথায় বলে আজকের তরুণেরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। কথাতো ঠিকই। টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রে আজ যারা প্রতিভার দ্যূটি ছড়িয়েছেন তারাই ভবিষ্যতে এই মাধ্যমের নেতৃত্ব দিবেন। কাজেই সকলের উচিৎ সুনির্দিষ্ট একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কিন্তু অনেকেই ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির না করে পথ বলার চেষ্টা করেন। বর্তমান বাস্তবতায় এটা মোটেই ঠিক নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচন্ড প্রতাপের এই সময়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা খুবই কঠিন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিনোদনের সুযোগটাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন কিছুর খোঁজে ছুটছে দর্শক। আর তাই মঞ্চ, টিভি অথবা চলচ্চিত্র যে মাধ্যমেই হোক প্রতিনিয়ত নতুন ভাবে দর্শকের সামনে হাজির হতে হয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। যারা ব্যাপারটা বুঝে এগুচ্ছেন তারাই নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে টিকে যাবেন।
জয় হোক তারুণ্যের। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।