Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সহজ ভাবে গল্পটি বলার চেষ্টা করেছি! : তৌকীর আহমেদ

ক্যামেরার ভাষায় জীবনের অনবদ্য ছবি আঁকেন তৌকীর আহমেদ। যে ছবি কথা বলে মানুষের সাথে। মানুষেরই গল্প বলে পরম মমতায়, বিশ্বস্ততার সাথে। সে কারণে তৌকীর আহমেদের সিনেমার একটি নতুন ভাষা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যারা তৌকীরের ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘হালদা’ ছবি দুটি দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন তার ছবির ভাষা কতটা আধুনিক। তিনি তার ছবিতে সাধারন মানুষেরই গল্প বলেন অসাধারন ভাবে, পরম মমতায় এবং পরম আন্তরিকতায়…
তৌকীর আহমেদের নতুন ছবির নাম ফাগুন হাওয়ায়। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবিটির কাহিনী আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কালকে ঘিরে। কে না জানে ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই পরবর্তিতে দেশে স্বাধীকার আন্দোলনের সূচনা হয়। কাজেই ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায়। মহান ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে ইতিপূর্বে অনেক সিনেমা, টিভি নাটক নির্মিত হয়েছে। গল্প, উপন্যাস ও কবিতাও রচিত হয়েছে। সিনেমার ক্ষেত্রে খান আতাউর রহমানের ‘জীবন থেকে নেয়া’র কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। মহান ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে ‘জীবন থেকে নেয়ার’ মতো আর কোনো সিনেমা অথবা টিভি নাটক সেই ভাবে আলোচনায় আসেনি। কিন্তু এবার বোধকরি সেই অচলায়তন ভাঙ্গতে চলেছেন দেশের গুণী নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কালকে উপজীব্য করে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘ফাগুন হাওয়ায়’ নামের নতুন ছবি। ১৫ ফেব্রæয়ারি ঢাকা সহ সারাদেশে ছবিটি মুক্তিপাবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। আনন্দের সংবাদ হলো ফাগুন হাওয়ায়’ এর ট্রেলার প্রকাশের পর-পরই ছবিটি সম্পর্কে দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে।
একথা সত্য, বর্তমান সময়ে ইতিহাস ভিত্তিক ছবি নির্মাণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বদলে গেছে বাংলাদেশের গ্রাম, শহর, এমনকি মানুষের চেহারাও। এমন বাস্তবতায় ভাষা আন্দোলন অথবা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালকে গুরুত্ব দিয়ে ছবি নির্মাণ করা খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। সিনেমাটির নাম উল্লেখ করতে চাই না। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামের পথে মিলেটারীর জ্বীপ যাচ্ছে। পথে দেখা গেল বিদ্যুতের খুটি। সাথে সাথে হলের দর্শক সারী থেকে কেউ একজন চিৎকার দিয়ে বললেন, অয় ব্যাটা ডাইরেক্টর গাজা খাইছস নাকি? ১৯৭১ সালে গ্রামের রাস্তায় বিদ্যুতের লাইন পাইলি কেমনে?

সত্যি তো ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের দেশের গ্রাম তো দূরের কথা অনেক শহরেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু ছিল না। সেখানে প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তায় বিদ্যুতের খুটি দেখানো রাস্তায় মিলেটারীর জ্বীপ দেখালে তা বিশ্বস্ততা পাবে না নিশ্চয়ই?
ভাবুন তো তাহলে মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কালকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে ছবি বানানো কি খুবই সহজ? না মোটেই সহজ নয়। অনেক কঠিন। কিন্তু কঠিন কাজটি বিশ্বস্ততার সাথে সহজ করে ক্যামেরার ভাষায় এঁকেছেন তৌকীর আহমেদ। দেখে সহজেই মনে হবে আরে, ১৯৫২ তে আমাদের দেশটা তো এমনই ছিল। মানুষগুলো ছিল অতি সাধারন। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তারা ছিল অবিচল। হ্যা, ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিতে তৌকীর আহমেদ ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সেই সময়টাকে পরম মমতা ও বিশ্বাসের সাথে তুলে ধরেছেন। তৌকীর আহমেদের ভাষায় “ইতিহাস ভিত্তিক সিনেমার কথা উঠলেই অনেকেই ভেবে বসেন ছবিটি হয়তো গুরু গম্ভীর ভারী গল্পের হবে। ফাগুন হাওয়ায়, মোটেও ভারী গল্পের ছবি নয়। দেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপুর্ণ সময়কে ছবিটিতে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
তার মাইে এই নয় যে এটি ভাষা আন্দোলনে গল্প নিয়ে বানানো ছবি। ১৯৫২ সালকে উপজীব্য করেই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ছবিতে ভারী কোনো গল্প নাই। গল্পটি ভীষণভাবে হিউমারাস, অনেক প্লে ফুলি আমরা গল্পটা বলেছি। একদল তরুণ ছেলে মেয়ে তাদের অনেক দস্যিপনা আছে, অনেক বাদরামো আছে, পাগল এক পুলিশ অফিসারের অনেক পাগলামী আছে। দর্শক যেন এটি মনে না করেন যে এটি ভাষা আন্দোলনের ছবি অথবা দেশের ছবি… অবশ্যই দেশের ছবি। কিন্তু গল্পটি বলা হয়েছে খুবই ইন্টারয়েস্টিং ওয়েতে, অনেক হিউমারাস ভাবে। প্রিয় মাতৃভাষার জন্য আকুলতা আছে। যেখানে প্রিয় মাতৃভ‚মিকেই গভীর মমতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে।