Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভাষার জন্য ভালোবাসা!

রেজানুর রহমান: পৃথিবীতে মাতৃভাষার মর্যাদরক্ষার জন্য আর কি কেউ লড়াই করেছে? জীবন দিয়েছে প্রিয় মাতৃভাষার জন্য? আমাদের মতো করে কেউ কি তার মাতৃভাষাকে ভালোবেসেছে? উত্তর হবে, না পৃথিবীতে আমাদের মতো করে আর কোনো জাতি মাতৃভাষার জন্য মরণপন লড়াই করেনি। আমাদের মতো করে জীবনও দেয়নি। মাতৃভাষাকে ভালোবেসে আমাদের দেশে যে গণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল তারই অনুপ্রেরনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাষা ভিত্তিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশের জন্ম হয়। কাজেই প্রথমে মাতৃ ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই তারপর তারই সূত্র ধরে ভাষা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্রের জন্ম, পৃথিবীতে একটিই ঘটনা। আর তাই একথা জোর দিয়েই বলা যায়, ভাষার জন্য ভালোবাসা ছিল বলেই আমাদের একটি দেশ হয়েছে। ভালোবাসার ক্ষেত্রে এর চেয়ে আর কোনো বড় ঘটনা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।
ভালোবাসি’ বললেই প্রথমে মনে হয় কেউ কারও প্রেমে পড়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসাই মূখ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু ভালোবাসা মানেই শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরের আকুতি নয়। ভালোবাসা’ শব্দটা আমাদের সামাজিক, পারিবারিক এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনেও বিশেষ অর্থে গুরুত্বপুর্ণ। মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা, ভাই-বোনের প্রতি ভালোবাসা, বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা, সর্বোপরি দেশের প্রতি যখন গভীর মমতা জন্মায় তখনই ভালোবাসা প্রকৃত অর্থে পূর্নতা পায়। এক অর্থে মায়া ও মমতারই প্রকৃতরূপ ভালোবাসা। কেউ যখন কারও প্রতি মায়া ছড়ায় তাহলেই বুঝতে হবে তাকে সে ভালোবাসে। অনেকে ‘ভালোবাসা’ শব্দটাকে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান। তাদের কাছে ভালোবাসার আরেক নাম প্রেম। অনেকটা গানের সেই কলির মতো-প্রেম করেছি, বেশ করেছি। কবরই তো। আর তাই আমাদের সমাজে ভালোবাসা’ শব্দটি এখনও প্রকাশ্যে বলার মতো শব্দ হয়ে ওঠেনি। একজন তরুণ অন্য একজন তরুণীকে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বললেই মহা ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যাবে। তাদের বাবা-মায়েরা হয়তো মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবেন। ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। তার মানে ওরা নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খেয়েছে। হায় আল্লাহ এখন কি হবে? অথচ ওই দুই তরুণ-তরুণী হয়তো পরস্পরকে ভাই-বোনের মতো করে নিজেদেরকে ভালোবাসে। কিন্তু আমরা অনেকেই তা মেনে নিতে চাই না। কেন চাই না তার একটা কারণও আছে। ভালোবাসা শব্দটার সাথে আমরা অনেকে অবৈধভাবে নর-নারীর শরীর বিনিময়ের আশঙ্কাকে যুক্ত করি। আর তাই পরিবারের কোনো মেয়ে সদস্য যদি পরিচিত, অপরিচিত কোনো পুরুষকে ভালোবেসে ফেলে তখনই তা বাবা-মায়ের কাছে আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে ভালোবাসা শব্দটি যতটা আনন্দের ততটাই আবার আশঙ্কারও।

কিন্তু ‘ভালোবাসা’ শব্দটির শক্তি অনেক বড়। ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এই একটি লাইনের মধ্যে অনেক সাহস, অনেক প্রেরণা, অনেক নির্ভরতা ফুটে ওঠে। আর তাই ভালোবাসার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করেন না অনেকে।
আমাদের ভাষা আন্দোলনই তার উৎকৃষ্ট প্রমান। প্রিয়
মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবীতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি ঢাকার রাজপথে জনতার মিছিল বেরিয়েছিল। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দীপ্ত শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাজপথ। পুলিশ মিছিলে গুলী করতে পারে। মারাও যেতে পারি-এমন আশংকা সত্বেও সেদিন দীপ্ত শ্লোগান তুলেছিল লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতা। তাদের মাঝে আন্দোলনের শক্তি ও প্রেরণা ছিল একটাই-ভালোবাসি মাতৃভাষা। যে কোনো মূল্যে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। রাজপথের সেই আন্দোলনে সেদিন পুলিশের গুলীতে নির্মম মৃত্যু ঘটে তভাষা প্রেমিক কয়েকজন তরুণের। ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সেদিন শহীদ হন সালাম, জব্বার, বরকত, রফিক, শফিক সহ আরও অনেকে।
ভাবা যায় ভাষার মর্যাদা রক্ষায় কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে বাঙ্গালী জাতিকে। মাতৃভাষার প্রতি মায়া মমতা আর ভালোবাসা ছিল বলেই ভাষার মর্যাদা রক্ষার ওই গণ আন্দোলন ঘিরেই পরবর্তিতে দেশে স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয়।

মহান ভাষা আন্দোলনে ঘিরে দেশে একাধিক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক তথ্যচিত্রের সংখ্যাও অনেক। টেলিভিশনেও প্রতি বছর ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার হয়। মহান ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে এবছর একটি নতুন সিনেমা নির্মাণ করেছেন গুণী নির্মাতা তৌকির আহমেদ। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর এই নতুন সিনেমাটিকে ঘিরে ইতিমধ্যে ব্যাপক জাগরণ শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটির ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। ট্রেলার দেখেই মুগ্ধ অনেকে। ছবির নাম ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ট্রেলার দেখে মনে হয়েছে অনেক যতœ করে ছবিটি নির্মাণ করেছেন তৌকীর আহমেদ। সময়টা ১৯৫২ সাল। অতীতের সেই সময় চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে ধরা বর্তমান সময়ে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অথচ তৌকীর আহমেদ বিশ্বস্ততার সাথেই কাজটি করেছেন। ছবি দেখে মনে হবে আমরা সেই ১৯৫২ সালেই ফিরে গেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম মুখর সময়টাই আমাদের চোখের সামনে ভাসছে।
১৫ ফেব্রæয়ারি ঢাকা সহ সারাদেশে ফাগুন হাওয়ায় মুক্তি পাবে। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে গুণী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, সময়ের আলোচিত চিত্র তারকা সিয়াম অভিনয় করেছেন। তাদের সাথে আরও রয়েছেন, বিশিষ্ট অভিনেতা আবুল হায়াত, আফরোজা বানু, ফজলুর রহমান বাবু, রওনক হাসান, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফারুক হোসেন, সাজু খাদেম, সহ দেশের এক ঝাক গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী। ছবিতে পাকিস্তানী মেজরের চরিত্রে অভিনয় ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা। করেছেন যশপাল শর্মা।