Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গল্পই আমার কাছে বেশি মূল্যবান-নুসরাত ইমরোজ তিশা

ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসেবে তার জনপ্রিয়তা বেশ। কখনো প্রতিবাদী নারী, কখনো বোবা মেয়ে আবার কখনোবা রোমান্টিকতায় ভরপুর একজন নারী হয়ে যান তিনি। টিভি নাটক কিংবা চলচ্চিত্র- তার উপস্থিতি মানেই ভিন্নকিছু। চোখে-মুখে যার সবসময় অভিনয়টাই খেলা করে। মনে হয় তিনি ফিরে তাকালেই কোন চরিত্র, তিনি কাধ ঘুরিয়ে একটু কথা বললেই সমাজের কোন না কোন মানুষের রূপটি ধারণ করে ফেলেন। হ্যাঁ, পাঠক এই গুণী অভিনেত্রীর নাম নুসরাত ইমরোজ তিশা। বর্তমানে টিভি নাটকের সেরা অভিনেত্রী তিনি- এ কথা এক বাক্যে স্বীকার করবেন সবাই। ছোট পর্দায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে বার বার নিজেকে ভেঙেছেন। নিজেকে আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন চরিত্রে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ভারতের ছবিতেও অভিনয় করেছেন। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘হলুদ বনি’ নামের একটি ছবির শুটিং ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। সম্প্রতি তিনি ‘বোবা রহস্য’ শিরোনামের থ্রিলার, সাসপেন্স, প্রেম ও গোয়েন্দাধর্মী গল্পের একটি ছবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই ছবিটি পরিচালনা করবেন অভিষেক বাগচি। তিশা অভিনীত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি সম্প্রতি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। খুব শিগগিরই ছবিটি মুক্তি পাবে বলে জানা যায়। এছাড়াও তিশা অভিনীত ‘ফাগুন হাওয়া’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রæয়ারি। সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে তিশা কথা বলেছেন আনন্দ আলোর সঙ্গে। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল
আনন্দ আলো: বর্তমানে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: ভ্যালেন্টাইন ডে এর দু’একটি নাটকের শুটিং এর পরিকল্পনা আছে। নাটকগুলোতে ডেট দেয়া আছে। সামনেই শুটিং করবো। এছাড়াও চলতি মাসের শেষ থেকে শুরু হওয়া কলকাতার ‘বোবা রহস্য’ সিনেমার শুটিং এর প্রিপারেশন নিতে হচ্ছে।
আনন্দ আলো: কিছুদিন আগে আপনার অভিনীত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে। এই ছবিটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: প্রত্যাশা অবশ্যই অনেক ভালো। একটা শ্বাসরুদ্ধকর সিনেমা এটি। দর্শকরা দেখলেই বুঝতে পারবেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অন্যরকম একটি গল্পের ছবি এটি। এর চেয়ে বেশিকিছু ছবিটি নিয়ে বলতে চাই না। বাকিটা ছবি মুক্তি পাওয়ার পর দর্শক হলে গেলেই দেখতে পাবেন।
আনন্দ আলো: আপনার অভিনীত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘ফাগুন হাওয়া’ ৮ ফেব্রæয়ারি মুক্তি পাচ্ছে…
নুসরাত ইমরোজ তিশা: হ্যাঁ। এটা একটা অন্যরকম কাজ। আগামী ৮ ফেব্রæয়ারি ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আসছে। ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপটে নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। তৌকীর ভাই (অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ) খুব যতœ নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছেন। ওই সময় বাংলাদেশের একটি মফস্বল শহরের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এ ছবিতে। এই ছবিতে আমার সঙ্গে সিয়ামও রয়েছে। ছবিটির গল্প এবং নির্মাণ- সবই দর্শকদের কাছে ভালো লাগবে বলে আশা করি। এটি শুধু একটি ছবি নয়। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের একটা প্রামান্য দলীলও বটে।

আনন্দ আলো: সম্প্রতি আপনি কোলকাতার ‘বোবা রহস্য’ নামের একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই বিষয়ে কিছু বলবেন?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: ভাল কিছু কাজের সঙ্গে থাকতে চাই। ভাল কাজ করতে চাই। সবসময় সে চেষ্টাই করেছি। এ ছবির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটছে না। ছবির গল্প আমি পড়েছি। আমার কাছে ভাল লেগেছে। ওপার বাংলায় কাজ করছি এটাও ভালো লাগার ব্যাপার। ‘বোবা রহস্য’ নাম দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, এটা যে একটা থ্রিলার ছবি। এই ছবির অন্যরকম একটি চরিত্রে আমি কাজ করবো। ভাল একটা গল্পের ছবি হবে এটি। আশা করছি সব কিছু মিলিয়ে একটা ভাল কাজ হবে এবং সবাই কাজটি পছন্দ করবেন। এ ছবির মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত পরিচালক হিসেবে পথচলা শুরু করবেন নির্মাতা অভিষেক বাগচি। পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি তার চিন্তা-ভাবনা খুবই আধুনিক এবং অন্যরকম। ছবিতে আমি ছাড়াও আরো অভিনয় করবেন কলকাতার সব্যসাচী চক্রবর্তী, খরাজ মুখার্জি, সুদীপ্ত চক্রবর্তী, দর্শনা বণিক, রাহুল ব্যানার্জি, বাংলাদেশের আমান রেজা ও অরিন্দম বসুর মতো অভিনেতারা। আগামী মাস থেকে ছবিটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আনন্দ আলো: যৌথ প্রযোজনার ‘হলুদ বনি’ ছবিটি নিয়ে একটু বলবেন?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: ‘হলুদ বনি’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের নির্মাতা তাহের শিপন ও কলকাতার মুকুল রায় চৌধুরী। এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি। ছবিতে আমাকে অন্যরকম একটি চরিত্রে দেখা যাবে। ছবিটির শুটিং শেষ। বর্তমানে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। ছবিতে আমার সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন পরমব্রত ও কলকাতার অভিনেত্রী পাওলি দাম। ভিন্ন ধারার গল্পের এই ছবিটি দর্শকদের ভালো লাগবে বলে আশা করছি।
আনন্দ আলো: কোলকাতার অরিন্দম শীলের ছবিটি ছেড়ে দিলেন কেন?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: আসলে ছবিটি যে সময়ে শুটিং হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়নি। যেহেতু যৌথ প্রযোজনার ছবি, তাই অনেক ধরনের ফরমালিটিস আছে। তাই তো শুটিং এর ডেট পেছানো হয়। কিন্তু ঐ সময়টাতে আবার আমার অন্য জায়গায় সিডিউল দেয়া ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ছবিটিতে অভিনয় করা হয়নি। তবে ছবিটির জন্য অনেক শুভ কামনা জানাচ্ছি।
আনন্দ আলো: গত বছরে আপনার কাজের মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: দেখুন, আমি সব সময়ই গল্পের চরিত্রকে গুরুত্ব দেই। কখনও নায়িকা হতে চাইনি। একজন শিল্পী হতে চেয়েছি, একজন ভাল অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। ছবির গল্পই আমার কাছে মূল্যবান মনে হয়। ক্যারয়িারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি যে ধরনের কাজ করেছি এবং যা করছি তা আমার কাছে বেশ তৃপ্তিদায়ক। ক্যারিয়ারে নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে যখন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভালো হয়েছে বৈকি খারাপ হয়নি। এই দিক থেকে বলতে গেলে আমি লাকী। আমি আসলে সব সময় প্রতিটি কাজেই হ্যাপি থাকি। বরাবরই বেছে বেছে কাজ করছি। গত বছরের মতো চলতি বছরও বেছে বেছে ভাল কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে।
আনন্দ আলো: চলতি বছরের পরিকল্পনাগুলো কেমন?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: আমি কখনও পরিকল্পনা করে কাজ করি না। তাই নতুন বছরে নির্দিষ্ট কোনো ভাবনার কথা বলা যাবে না। আমার কাছে যখন যে কাজের প্রস্তাব আসে সেটা আমার জন্য কতটুকু প্রযোজ্য এবং সেই টিমটা কেমন সেটা নিয়ে আগে চিন্তা করি। এরপর গল্প সহ নিজের চরিত্র নিয়েও ভেবে থাকি। তারপরই আসলে আমি সিডিউল দেই। একজন অভিনয়শিল্পীর চরিত্রের ক্ষুধা মিটবে এমন সব কাজই আমি করতে চাই। সেটা যেকোন সময়েই হতে পারে। এ বছরের শুরু থেকেই বেশকিছু নতুন কাজের প্রস্তাব এসেছে। কিছু কাজের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নাই।
আনন্দ আলো: এই যে আপনি নানান ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন, তার জন্য আপনার প্রস্তুতিটা কেমন থাকে?
নুসরাত ইমরোজ তিশা: আমি সবকিছুর আগে স্ক্রিপ্টটাকে প্রাধান্য দেই। কোন গল্প বা স্ক্রিপ্ট যখন আমার কাছে আসে তখন প্রথমে ভাবি চরিত্রটা আমার সাথে যায় কিনা। অভিনয়ের অফার পেলেই যে আমি সেটা করে ফেলি বিষয়টা কিন্তু তা নয়। অবশ্যই ভেবে সিদ্ধান্ত নেই। সবকিছু যখন মিলে এবং আমি কাজটা করবো বলে সিদ্ধান্ত নেই তখনই প্রিপারেশনের ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়। ড্রেসআপ থেকে শুরু করে কথাবার্তা বলার স্টাইল সব রপ্ত করি। সবকিছুর পর যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই তখন ঐ চরিত্রটাকে ভেবেই দাঁড়াই। আমি জানি না কতটুকু সফল হই, তবে আমার চেষ্টাটা থাকে। যেকোন চরিত্রে একজন অভিনয়শিল্পী দাঁড়ানোর আগে তার একটা প্রস্তুতি অবশ্যই দরকার। আমি শতভাগ সেই প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করি।
আনন্দ আলো: এবার টিভি নাটকের প্রসঙ্গে আসি। ইদানিং আপনাকে বিশেষ দিন ছাড়া টিভি নাটকে দেখা যায় না…
নুসরাত ইমরোজ তিশা: হ্যাঁ। ছোট পর্দায় কাজ একটু কম করছি। বেছে বেছে কাজ করছি। নরমাল ডেতে কাজ করি না। বিশেষ দিবসে ভাল গল্প পেলে কাজ করি। এজন্য আমাকে টিভি নাটকে কম দেখা যায়।
আনন্দ আলো: এর পেছনে কী কোন কারন আছে?

নুসরাত ইমরোজ তিশা: আমি আসলে দর্শকদের কাছে একটু ভিন্নভাবে উপস্থিত হতে চাই। বর্তমানে নাটকের বাজেট অনেক কমে গেছে। সেজন্য সারাবছর নিয়মিত কাজ করলে অ্যাভারেজ কাজ করা হয় বেশি। আমি গত তিন-চার বছর ধরেই বিশেষ দিবস ছাড়া টিভি নাটকে কাজ করছি না। অনেক নির্মাতাই চাইলে ভালো গল্পের কাজ বাজেটের জন্য সারাবছর করতে পারেন না। ঈদ বা বিভিন্ন বিশেষ দিবসে নাটকের বাজেটটা একটু বেশি থাকে। তাই ঐ কাজগুলো করে তৃপ্তি পাই। যেমন- সামনে ভ্যালেন্টাইনস ডে পহেলা বৈশাখ আসছে- এই দিবসগুলোতে দর্শকরা আমাকে কয়েকটি নাটকে ভিন্নভাবেই দেখতে পাবেন। এরপর রয়েছে ঈদ। সেটার জন্যও আমার আলাদা প্রিপারেশন রয়েছে।
আনন্দ আলো: আপনি তো ওয়েব সিরিজও করেছেন…
নুসরাত ইমরোজ তিশা: হ্যাঁ। এটা একটা সময়ের চাহিদা বলতে পারেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু নতুন কাজের মাধ্যম। যদিও আমি আসলে কাজটা কোন মাধ্যমের সেটা নিয়ে কম চিন্তা করি। আমি আসলে দেখি যে কাজটা কতোটা ভালো। আমার চরিত্রটা কতো ভালো। আমি সেখানে কতোটা পারফেক্ট। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি আসলে সেটাই চিন্তা করি। ভালো কাজ হলে দর্শকরা সেটা দেখবেই তা যে মাধ্যমেই হোক না কেন। আমি ওয়েব সিরিজ করলাম ‘ইন্দুবালা’। বিগ বাজেটে নির্মাণ হয়েছে এই ওয়েবসিরিজটি। এটি নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুন। আমাকে এখানে বøগারের চরিত্রে দেখা যাবে। ১০ পর্বে নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ ইন্দুবালা।
আনন্দ আলো: একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজের কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলবেন-
নুসরাত ইমরোজ তিশা: আমি খুব বেশি পরিকল্পনা করে চলি না। কোন কাজটা নিজের জন্য ভালো আর কোন কাজটা আমার সাথে যায় না সেটা বুঝে আমি এই পর্যন্ত এসেছি। তাই ভবিষ্যতেও আমি সেভাবে পথ চলতে চাই। ভালো ভালো কাজ দর্শকদের উপহার দিতে চাই সবসময়। অভিনয় নিয়েই আমার সকল পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা বলতে পারি না।