Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ফয়সলের স্থাপত্য ভাবনা

ফয়সল আহমেদ। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড-এ প্রিন্সিপ্যাল আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ বিল্ডিংয়ের ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
পরিবরের একমাত্র সন্তান আর্কিটেক্ট ফয়সল আহমেদ। তার বাবার নাম আরিফুল ইসলাম। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা নাইমুন নাহার একজন অডিও লজিস্ট। স্কুল জীবন থেকেই ফয়সল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গিটার বাজানোর প্রতি ছিল তার প্রচন্ড নেশা। বাবা-চাচারা মিউজিকের সাথে জড়িত ছিলেন। বাড়িতে সপ্তাহে কোনো না কোনো দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। সেখানে বড় চাচারা গান করতেন, গিটার বাজাতেন। মূলত তাদের কাছ থেকেই গিটার বাজানো শেখা ফয়সলের। ছোটবেলা থেকেই আর্কিটেকচারের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। সেই আগ্রহ থেকেই আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি।
খুলনা জেলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালে খুলনা সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৫ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার এক বছর পর তিনি যোগ দেন ‘প্রফাইল লিমিটেড-এ’। সেখানে দুই বছর চাকরি করার পর সিনিয়র এসোসিয়েট আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘বে ডেভলপমেন্ট’এ যোগ দেন। সেখানে তিন বছর চাকরি করেন। ২০১১ সালে তিনি প্রিন্সিপ্যাল আর্কিটেক্ট হিসেবে যোগ দেন ‘ভেনচ‚ড়া লিমিটেডে’ সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে চার বছর চাকরি করেন। ভেনচ‚ড়ায় থাকাকালিন স্থপতি ফয়সল পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সেখান থেকে গø্যান মার্কাট কোর্স কমপ্লিট করেন এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের উপর পিজিডি কোর্সে অংশ গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসেই তিনি যোগ দেন তার কর্মস্থলে।
২০১৫ সালে স্থপতি ফয়সল আহমেদ যোগ দেন ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড-এ। সেখানে তিনি প্রিন্সিপ্যাল আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ বিল্ডিংয়ের ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। ইতোমধ্যে স্থপতি ফয়সল আহমেদ দেশের নামকরা কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিং, কর্পোরেট অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য আবাসিক ভবনের ডিজাইন করেছেন।

‘বে ডেভলপমেন্ট লিমিটেডে থাকাকালিন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ গুলশান-২ এ ৫৫ রোডের লেকউড ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, গুলমান-১ এর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ২৩ গুলশান এভিনিউ ইত্যাদি। ভেনচ‚ড়া ডেভলপমেন্ট লিমিটেড এ থাকাকালীন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ বারিধারার পার্ক রোডে অবস্থিত রেবেকা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ভেরনা অ্যাপার্টমেন্ট, বনানী ১১ নম্বর রোডের আইকনিয়া ১০ তলা কমার্শিয়াল, গুলশানের ভেনচ‚ড়া ওয়েস্টেরিয়া অ্যাপার্টমেন্ট, ধানমন্ডি-৪ এর ভেনচ‚ড়া চিত্রক ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট, ধানমন্ডি-৩২ এর ভেনচ‚ড়া ক্যাসিওপিয়া অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরার হেনা মিক্সড ইউজ বিল্ডিং ইত্যাদি। ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ দক্ষিণ খানের ৩০০ ইউনিট বিশিষ্ট মুডিউলার হাউজিং, উত্তরার স্কয়ার টয়লেট্রিজের কর্পোরেট অফিস ইত্যাদি। নিজের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ বসুন্ধরার কাকলি আবাসিক ভবন, টেন স্টোরিড অ্যাপার্টমেন্ট, গুলশান নিকেতনের টেন স্টোরিড বিল্ডিং, সিঙ্গেল ফ্যামিলি হাউজ সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। এ ছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু প্রজেক্টের কাজ করছেন। ফয়সল আহমেদ তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ২০০৫ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সানজিদা আহমেদ সিনথিয়া। তিনি একজন আর্কিটেক্ট। অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা করছেন আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। এই দম্পতি এক সন্তানের জনক-জননী।
স্থপতি ফয়সল আহমেদ বলেন, প্রতিটি কাজই যাতে মানুষের চিন্তার খোরাক হতে পারে এবং যেটা তাদের চিন্তাকে সমৃদ্ধ্য করতে পারে সেই ভাবনা থেকে দায়িত্ব পালন করি। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী নকশা ও নির্মাণ তদারকি করা, যাতে নিজেদের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও দেশজ মালামাল ইত্যাদির সমন্বয় থাকে। আমাদের কাজের অবিচ্চেদ্য অংশ হল লেন্ডস্কেপ। আমি মনে করি প্রতিটি স্পেসের সাথে যদি লেন্ডস্কেপ এর সমন্বয় করা যায়, তবে সেই স্থাপত্য মানুষের চিন্তাকে নাড়া দিতে পারে। প্রতিটি মেটিরিয়ালের যে নিজস্বতা, সেটা আমার নকশাগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং প্রতিনিয়ত নকশায় নিরন্তর মাত্রা যোগ করা। যে কোন প্রকল্পের ক্ষেত্রেই ভাল স্পেস তৈরি করতে পারলে বিভিন্ন এলিমেন্ট গুলো নিজেই এক সাথে হতে থাকে, ফলে স্থাপত্যকলাটির বৈশিষ্ট্য অন্য ধাপে পৌছে যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি ফয়সল আহমেদ। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।
স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি ফয়সল আহমেদ বলেন, কিছু বড় প্রকল্পের নকশার সাথে সম্পৃক্ত থাকা যায়, জাতীয় পরিসরে অবদান রাখতে পারে। কিছু আধুনিক প্রকল্প নকশা ও নির্মানের মাধ্যমে একটি প্রগতিশীল টিম তৈরি করা, যারা পরের ধাপ গুলোতে এগিয়ে নিতে পারে। দেশের পেক্ষাপটে স্থাপত্যশৈলীকে কিভাবে সাধারন মানুষের কাছে পৌছানো যায় সেটা নিয়ে কাজ করা।