Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছোট ছোট ভুল অনেক হলে তখন আর করার কিছুই থাকে না! মাশরাফি বিন মর্তুজা

এটাই কি শেষ ম্যাচ? জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আমাদের ক্রিকেটের রাজপুত্র মাশরাফি বিন মর্তুজা। জাতীয় নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হলেও ক্রিকেটকে ভালোবেসে ক্রিকেট মাঠেই রয়েছেন মাশরাফি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার প্রথম দিনে রাজনীতির মাঠে না গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ক্রিকেট লড়াইয়ে নেমেছিলেন। মাশরাফির নিজের জন্য ক্রিকেটের এ লড়াই নয়। লড়াইটা দেশের জন্য। সে কারণে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনাকে গুরুত্ব না দিয়ে খেলাকেই গুরুত্ব দিলেন মাশরাফি। কারণ এই ক্রিকেট খেলাই মাশরাফিকে আজকের তারকা বানিয়েছে। তাই তারকার জন্য সবার সে কি মায়া। শুধুমাত্র মাশরাফিকে ক্রিকেট মাঠে একনজর দেখার জন্যই অনেকে শেরেবাংলা ক্রিকেট মাঠের গ্যালারীতে এসেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়েও অনেকে গ্যালারীতে বসেছিলেন। পরিবারের বয়োজ্যোষ্ঠ সদস্যরা তরুণ সদস্যদের কাছে ক্রিকেটের গল্প বিশেষ করে মাশরাফির অনেক গল্প বলেছেন। মাঠে মাশরাফির দিকে দৃষ্টি ফেলে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের বুঝিয়েছেন, ঐ যে দ্যাখ আমাদের মাশরাফি। ঐ যে…
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে প্রথম ওয়ানডেতে সহজে জিতে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এসে দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। হেরে যায় বাংলাদেশ। এই হার ক্রিকেট ভক্তদের অনেকেই মানতে পারেনি। অনেকের মন্তব্য, মাশরাফি যে খেলায় নেতৃত্ব দেয় সে খেলায় বাংলাদেশের হার মানতে পারি না। কারণ মাশরাফি মানেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে জয়ের নায়ক। মাশরাফি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করছেন। কাজেই ভবিষ্যতে তাকে কি আর ক্রিকেট মাঠের লড়াইয়ে দেখা যাবে? এমনই হাহাকার ছড়িয়ে গেছে গোটা দেশে কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পিতা স্ট্যাটাস দিয়েছেন এভাবে, “আমার স্কুল পড়–য়া একমাত্র ছেলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসে হঠাৎ সে আমাকে প্রশ্ন করলো, বাবা মাশরাফি তো এমপি হচ্ছে। কিন্তু ক্রিকেট খেলবে না”?
এই হচ্ছে আমাদের মাশরাফি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যাবার পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। চারদিকে বেশ গুঞ্জন। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলেই হয়তো ওয়ানডেকেও বিদায় জানাবেন মাশরাফি। এর মধ্যে ঢাকায় একদিনের আর কোনো ম্যাচ খেলবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তার মানে এটাই কি মীরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাশরাফির শেষ ওয়ানডে? হোম অব ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ সুখের হয়নি অধিনায়ক মাশরাফির। দল হেরেছে। তবে হাজার হাজার ভক্ত এটাকে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ ভেবে নিয়েই গ্যালারিতে এসেছিলেন।
যদিও মাশরাফি এখনও এনিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। কিন্তু তার ভক্তদের বিশ্বাস মিরপুরে এটাই বাংলাদেশ অধিনায়কের শেষ ম্যাচ! অতীতে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই গ্যালারি খালি হয়ে গেলেও মঙ্গলবার মাশরাফিকে শেষ দেখার অপেক্ষায় পুরস্কার দেওয়া পর্যন্ত অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডে এক দর্শক মাশরাফির অপেক্ষায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশি অধিনায়ক ঢোকার পথে এক ভক্ত চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘মাশরাফি ভাই এখানে আপনার শেষ ম্যাচ, তাই কোনোভাবেই মিস করতে চাইনি।’
এরকম অনেকে শহীদ মিরপুর স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে। টিকিট না পেলেও মাশরাফির ‘শেষ ম্যাচের’ উত্তেজনা মাঠের বাইরে থেকেই নেওয়ার চেষ্টা করলেন তারা। কেউ কেউ কাঁদলেন প্রিয় মাশরাফিকে আর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের চত্বরে পাওয়া যাবে না বলে।
মাশরাফি তার প্রতি দর্শক সমর্থকদের অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা ভালোই জানেন। কিন্তু এদিনের ঘটনা তাকে আরও আবেগী করে তুলেছে, ‘এই ভালোবাসা অবশ্যই হৃদয় স্পর্শ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমার সামনে ঘটলে আমি আরও বেশি অনুভব করতাম। একজন ক্রিকেটার হিসেবে এটা ভালো লাগার ব্যাপার। তবে মানুষের এত আবেগ দেখে কষ্টও লাগে। একদিন না একদিন তো সবাইকে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে হবে। এটাইতো স্বাভাবিক, যেমনটা এক-দেড় বছর আগে টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছি।’
সত্যিই কি মাশরাফি মিরপুরে শেষ ম্যাচ খেললেন? নাকি অদূর ভবিষ্যতে মিরপুরের ২২ গজে আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা যাবে তাকে! বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক কোনও কিছুর নিশ্চয়তা দেননি, ‘এখন ওয়ানডে খেলছি, আর কিছুদিন হয়তো খেলব। আসলে সঠিকভাবে বলতে পারব না, কবে শেষ করব। আমি অনেকবার আপনাদের সামনে বলেছি আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর কাজ করি না। এমনও হতে পারে, পরের ম্যাচ খেলেই অবসরে যেতে পারি! এভাবে কিছু বলা আমার জন্য কঠিন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যাওয়া প্রসঙ্গ উঠতেই মাশরাফি বললেন, ওইদিন আমরা মাঠে অনেক ছোট ছোট ভুল করেছি। আসল কথা হলো, ছোট ছোট ভুল বেশি হলে তখন আর কিছুই করার থাকেনা। বিষয়টা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।

সম্পর্কিত