সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
রেজানুর রহমান
কাজের মেয়েটি দৌঁড়ে এসে হাফাতে হাফাতে বলল, খালা আম্মা ও খালা আম্মা… জলদি আসেন। দেখেন ভাইজান কারে নিয়া আসছেন? খালা আম্মা, ও খালা আম্মা…
বিলকিস বানু ওয়াড্রোব থেকে শীতের কাপড় বের করছিলেন। লেপ, কম্বল, শীতের সোয়েটার, মাফলার সহ আরও প্রয়োজনীয় কিছু শীতের কাপড় ওয়াড্রোব থেকে বের করে মেঝেতে ফেলে রেখেছেন। সব কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে একটা দুইটা করে নেপথলিন দেওয়া ছিল। তবুও এক ধরনের দুগর্ন্ধ ভেসে আসছে কাপড় গুলো থেকে। ছাদে কাপড় গুলো রোদে দিতে হবে ভেবে কাজের মেয়েটিকেই ডাকতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ কাজের মেয়েটিই বিলকিস বানুর সামনে এসে দাঁড়ালো। এক ঘর থেকে অন্যঘরে এসেছে। অথচ এমন ভাবে হাফাচ্ছে যেন এক মাইল দূর থেকে দৌঁড়ে এসেছে। খালা আম্মা… ও খালা আম্মা… খবর শুনছেন?
খবর? কী?
জলদি আসেন।
অবাক চোখে কাজের মেয়েটির দিকে তাকালেন বিলকিস বানু। জলদি আসব মানে? কোথায় যাবো?
ভাইজানের ঘরে।
ভাইজানের ঘরে গিয়া কি করব?
চলেন, গেলেই দেখতে পাবেন।
কাজের মেয়েটিকে ধমক দিলেন বিলকিস বানু-অ্যাই, সোজা করে কথা বলতে পারিস না? এভাবে বাকা করে কথা বলছিস কেন? কি হয়েছে বল?
ভাইজান তো একটা ঘটনা ঘটাইছেন। বলেই ভীত চোখে বিলকিস বানুর দিকে তাকালো কাজের মেয়েটি। বিলকিস বানু এবার একটু অবাক হলেন। কাজের মেয়েটিকে প্রশ্ন করলেনÑ ভাইজান ঘটনা ঘটাইছে মানে কি? রহস্য করে কথা বলার অভ্যাস তোর গেল না? রহস্য না করে কি হয়েছে বল। আমার মাথা খারাপ করিস না। ভাইজান কি করেছে?
কাজের মেয়েটি ভীত কণ্ঠে বলল, ভাইজান তো বিবাহ করেছেন।
বলিস কি! আঁতকে উঠলেন বিলকিস বানু। ছেলে তাকে না বলে বিয়ে করেছে। এটা কি সত্যি ঘটনা? নাকি কাজের মেয়েটি মিথ্যা বলছে?
কাজের মেয়েটি এবার তাড়া দিলÑ খালা আম্মা জলদি আসেন… তারা ড্রয়িংরুমে আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছেন। পাত্রী দেখতে খারাপ না। মাশাআল্লাহ সুন্দর। ফর্সা চেহারা। দেখতে সিনেমার নায়িকাগো মতন… খালা আম্মা… জলদি আসেন…
বিলকিস বানুকে যেতে হলো। ছোট ছেলে কবীর একটি মেয়েকে সাথে নিয়ে হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়াল। মেয়েটি বিলকিস বানুর পায়ে সালাম করার জন্য এগিয়ে আসতেই বাঁধা দিলেন বিলকিস বানু-দাঁড়াও! ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেনÑ এসবের মানে কি? কে এই মেয়ে?
ছেলে বিনীত হয়ে মাকে বলল, আমরা বিয়ে করেছি মা!
বিয়ে? কার পারমিশন নিয়েছে! তোমার বাবা জানেন? অবাক হয়ে ছেলেকে প্রশ্ন করলেন বিলকিস বানু!
ছেলে বলল, এতে জানাজানির কি আছে মা! আজ না হোক কাল তোমরা তো আমাকে বিয়ে দিতেই… কি দিতে না? আমি নিজেই সেটা সেরে ফেললাম। আমাদেরকে আশির্বাদ করো…
ছেলের কথা শুনে বিলকিস বানু তো অবাক। ছেলে এসব কি বলছে? আর মেয়েটিই বা কেমন? নিশ্চয়ই সেও তার বাবা-মাকে বিয়ের কথা জানায়নি। নিজেদের পছন্দমতো বিয়ে করেছে। এটাই কি যুগের দাবী? হঠাৎ করে অতীতে ফিরে গেলেন বিলকিস বানু। তাদের সময়ে এভাবে বিয়ে করা ছিল কল্পনারও অতীত। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে দেখা সাক্ষাৎও ছিল অসম্ভব ব্যাপার। নিজের বিয়ের আগে পাত্রের ছবি পর্যন্ত দেখার সুযোগ পাননি বিলকিস বানু। সুযোগ পাবেন কি করে? তখনকার দিনে তো মুহূর্তের মধ্যে নিজের ছবি নিজে তোলার এমন সুযোগ ছিল না। গ্রামের মানুষকে ছবি তুলতে হলে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে শহরের স্টুডিওতে যেতে হতো। ছবি তোলা ছিল তখনকার দিনে উৎসবের মতো। ছবি তোলার দিনেই ছবি পাওয়া যেতো না। কখনও কখনও ৩/৪ দিন এমনকি একসপ্তাহ লাগতো ছবি পেতে। সে কারণে অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করতো।
বিলকিস বানুর এখনও মনে পড়ে সেই সব দিনের ঘটনা। বিয়ের পর বাসর রাতে প্রথম দেখেন স্বামীকে। তার আগে এই বিয়ে হবে কি হবে না তাই নিয়ে কি যে ঘটনা ঘটেছিল। পাত্র পক্ষ পাত্রীকে দেখতে এলেন। পাত্রীর সবই পছন্দ হলো। কিন্তু মাথার চুল নিয়ে সমস্যা আছে। তাদের লম্বা চুলের মেয়ে চাই। পাত্রীর গায়ের রঙও ততটা পরিস্কার নয়। তারপর অনেক বাদানুবাদ, কথা চালাচালির পর বিলকিস বানুর বিয়ে হয়েছিল। অথচ আজ তার ছোট ছেলে কাউকে কিছু না বলেই বিয়ে করে বাড়িতে হাজির!

প্রিয় পাঠক, বিয়ের একাল আর সেকাল এর পার্থক্য যদি খুঁজতে চান তাহলে উপরের গল্পটিই যথেষ্ট। বিয়ে মানে কি? বিয়ে মানে একজন নারী ও পুরুষ এক সাথে বসবাস করা অর্থাৎ যৌথ জীবন যাপনের সামাজিক স্বীকৃতি। পৃথিবীতে বিয়ে প্রথা চালু হয়েছিল বলেই না পৃথিবী আজ এত সুন্দর। তবে কালের বিবর্তনে বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তনও এসেছে। আগের দিনে বিয়ের ঘটক ছিল বেশ গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তি। বিবাহ যোগ্য ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে ঘটককেই ডেকে পাঠাতেন বাবা-মায়েরা। ঘটক খুঁজতো বিয়ের পাত্রী। ছবি আদান প্রদান হতো ঘটকের মাধ্যমেই। আর বর্তমান সময়ে বিয়ের পাত্র-পাত্রীর ছবি আদান-প্রদান হয় মুহূর্তের মধ্যে। দুই দেশে থেকেও বিয়ে হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায়। মোবাইল ফোনে একে অপরের ছবি দেখেও ‘কবুল’ বলছেন কেউ কেউ।
সেই ‘বিয়ে’ নিয়েই আনন্দ আলো প্রকাশ করলো বিশেষ সংখ্যা বিয়ে অ্যালবাম-২০১৮। এজন্য সকল বিজ্ঞাপন দাতা ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। সেই সাথে বিয়ে অ্যালবামে যারা মডেল হয়েছেন তাদের প্রতিও রইল কৃতজ্ঞতা।
আসলে বিয়ে মানে শুধুমাত্র দুজন নর-নারীর এক সাথে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি নয়। বিয়ে মানে একটি বিশ্বাসেরও জন্ম। নতুন বিশ্বাস। যার নাম সংসার। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সংসারে সুখ বেশি সেই সংসারেই মেধাবী মানুষের উপস্থিতিও বেশি। আগে বলা হতো সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে। এখন বলা হচ্ছে সংসারে সুখ আসে তখনই যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা সুন্দর বোঝাপড়ার জগৎ সৃষ্টি হয়। যে জগতে ভালোবাসার পাশাপাশি থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর মায়া ও মমতা। এই মওসুমে যারা বিবাহ করছেন তাদের জন্য রইল আনন্দ আলো পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ভালো থাকবেন সবাই।