Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সাইফুলের স্থাপত্য জগত

সাইফুল ইসলাম। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে বাংলাদেশের স্থাপত্য অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারনা তার। দেশ প্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্য শিল্পে সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন ‘কনকর্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেড’এ। সেখানে তিনি তিন বছর চাকরি করেন। ১৯৯১ সালে বন্ধু স্থপতি আনসার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘প্রণয়ন’ নামের একটি ফার্ম। এরপর ১৯৯৮ সালে ‘আর্কিটেক্টন’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। সেখানে সাত বছর কাজ করার পর ২০১৩ সালে নিজেই গড়ে তোলেন ‘ইন্টারেক্ট’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্থপতির বাইরে সাইফুলের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি একজন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী। সঙ্গীতাঙ্গনে তাকে সাইফ বলে চিনে-জানে। তার গাওয়া বেশ কিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে। তিনটি একক অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল তার। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
তিন ভাই এক বোনের মধ্যে আর্কিটেক্ট সাইফুল ইসলাম সবার বড়। তার গ্রামের বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ায়। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবার নাম আমিনুল ইসলাম। তিনি খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি একজন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিবেদিতা সংগীত নিকেতন এবং আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম দিতেন শিক্ষার্থীদের। মা সৈয়দা মুসলিমা খাতুন একজন শিক্ষিকা। স্কুল জীবন থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাইফুল। গানের প্রতিছিল তার প্রচন্ড নেশা। বাবা গানের জগতের মানুষ ছিলেন বিধায় তার রক্তেও বইছে গানের সুর। তিনি গানেও বেশ পারদর্শী। ভাই বোনরাও গানের সঙ্গে জড়িত আছেন। গানের পাশাপাশি বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই সাইফুলের ইচ্ছা ছিল সংগীত শিল্পী কিংবা আর্কিটেক্ট হওয়ার। তিনি হয়েছেনও একজন সফল স্থপতি এবং সঙ্গীত শিল্পী। তার গাওয়া ‘কখনো জানতে চেওনা কি আমার সুখ, কি আমার বেদনা’ সহ বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনটি একক অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৭৭ সালে। ১৯৭৯ সালে একই কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি সাইফুল হক, স্বনামধন্য স্থপতি আ স ম আমিনুর রহমান শামীম ও স্থপতি আনসার হোসেন। তিনি বুয়েটের প্লানিং বিভাগের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন প্রফেসর প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন প্রফেসর সামসুল ওয়ারেস। তিনি ছিলেন সকলেরই প্রিয় শিক্ষক।
সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮৬ সালে। পাশ করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন ‘কনকর্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেড’এ। সেখানে তিন বছর চাকরি করার পর বন্ধু স্থপতি আনসার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে বেইলি রোডে গড়ে তোলেন ‘প্রণয়ন’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। নিজস্ব ফার্মে সাত বছর কাজ করার পর ১৯৯৮ সালে তিনি ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন ‘আর্কিটেকটন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি বেশ কিছু বড় বড় প্রজেক্টের কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘ইন্টারেক্ট’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। বনানীতে খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে সাইফুল ইসলাম দেশের নাম করা স্কুল, কলেজ, হসপিটাল, হোটেল, গার্মেন্টস, কার্গো ভিলেজ, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, অফিস বিল্ডিং, ট্রেনিং সেন্টার, ব্যাংক সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। আর্কিটেকটন-এ থাকাকালীন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ কুর্মিটোলার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কমপ্লেক্স, গ্রীণ রোডের গ্রীণ লাইফ হসপিটাল, চট্টগ্রামের সেভেন অ্যাপারেলস গার্মেন্টস, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট-এ আর্মিদের ডিফেন্স কলেজ, সাভারের ভারতের দুইজন খ্যাতিমান স্থপতির সঙ্গে যৌথ ভাবে মাটির তৈরি সিসিডিভি হোপ ট্রেনিং সেন্টার, বনানীর তানিম স্কয়ার বিল্ডিং, রাজউকের নিজস্ব ভবন ইত্যাদি। নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের হয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় ছয় বিঘা জমির উপর অবস্থিত সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, বারিধারার জে বøকের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, বনানী ৭ নম্বর রোডে ছয় কাঠার ওপর ৯ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, উত্তরার ১ নং সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের একটি হোটেল, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাচ বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক এর ইন্টেরিয়র সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।
Saiful-projectস্থপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কাজের বৈশিষ্ট্য বলতে আমি স্থপতি হিসেবে সবচেয়ে আগে যেটা ভাবি সেটা হলো একটি ফাংশনাল বিল্ডিং করতে অর্থাৎ ভবনটি যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেটা যেন পরিপূর্ণ ভাবে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করতে পারে। এমনিতেই আমাদের স্পেস স্বল্পতা আছে তাই স্পেস ইউজ ম্যাক্সিমাইজ করার দিকে আমার বিশেষ নজর থাকে। এছাড়াও বিল্ডিংয়ের কাঠামো গত দিকটাও আমি বিশেষভাবে বিবেচনা করি। যাতে করে কাঠামোগত দিক থেকেও ভবনটি নিরাপদ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও সাশ্রয়ী হয়। আর্কিটেকচারে একটা কথা আছে যে ‘ফ্রম ফলোজ ফাংশন’ অর্থাৎ ফাংশন ঠিকমত সলিউশন করলে বিল্ডিংয়ের অবয়বের নান্দনিকতা আপনা আপনিই বেরিয়ে আসে। আর সেটাই ভবনটির আসল সৌন্দর্য। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি প্রকৃতিই একজন স্থপতির প্রধান শিক্ষক। তাই প্রকৃতিকে গভীর ভাবে অনুধাবন করে সেটাকে ভৌত কাঠামোতে রূপান্তর করতে পারাটাই একজন স্থপতির স্বার্থকতা। ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা করে বলি, যেমন ধরুন আমাদের এই মানব দেহ, এটা সৃষ্টিকর্তার একটি অনন্য ডিজাইন। আমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেটা যেখানে থাকা দরকার ঠিক সেভাবেই আছে। যতটুকু থাকা দরকার ঠিক ততটুকুই। এভাবে সবকিছুর সমন্বয়ে আমরা একটা রূপ পেয়েছি যা একান্তই ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার কাছে স্থাপত্যটা ঠিক তেমনি একটা কিছু।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি প্রজেক্টের দিকে নজর দেন তিনি। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দিন দিন এই স্থাপত্য পেশা এবং তার প্রয়োজনীয়তা এই দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে। এই পেশার প্রতি তরুণ সমাজের আগ্রহও তাই ক্রমবর্ধমান ভাবে বেড়েই চলেছে। যা কিছুদিন আগেও ছিল না। তা ছাড়া আমাদের এই দেশ এখন উন্নতির মহাসড়কে পা দিয়েছে তাই স্থপতিদের ভ‚মিকা এখানে অপরিহার্য্য। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এদেশের উন্নতিতে স্থপতিদের অনেক অবদান রাখার সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। আমি নিজেকেও সেই উদ্দেশ্যে সমর্পণ করতে চাই আমার সমস্ত নিষ্ঠা আর সততা দিয়ে।