Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দুঃখই মানুষের প্রকৃত বন্ধু -আইয়ুব বাচ্চু

আইয়ুব বাচ্চু। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এক কিংবদন্তি শিল্পী। যাদের হাত ধরে দেশীয় ব্যান্ড সংগীত একটা অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম কান্ডারী ছিলেন তিনি। আশির দশক থেকে গানে, সুরে ও কথায় তিনি মন জয় করেছেন কোটি কোটি শ্রোতার। ফেরারি মন, চলো বদলে যাই, এখন অনেক রাত, হকার, আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি এবং রূপালী গিটারসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের ¯্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু। তারকা খ্যাতির তুঙ্গে অবস্থান করলেও ছিলেন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে। তারকা নয়, ‘ভালো মানুষ’ হয়েই বাঁচতে চেয়েছেন জীবনভর। তার চাওয়ায় যেন পূর্ণতা পেল। ভালো মানুষ হয়েই আচমকা সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন উপ মহাদেশের প্রখ্যাত গিটারিস্ট। তাঁর হঠাৎ মৃত্যুতে শুধু সুরের জগত নয়, কেঁদে উঠেছে আপামর জনতা। যেন তিনি মিউজিশিয়ান নন, ছিলেন একজন ম্যাজিশিয়ান। তার না থাকার দিনে, শুন্যতার দিনে তাকে স্মরণ করে পূর্ব প্রকাশিত বেশ কিছু সাক্ষাৎকারের কোলাজ প্রকাশিত হলো আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য। লিখেছেন মিতুল আহমেদ

প্রশ্ন: সুরে-কণ্ঠে-লেখায়, গিটারিস্ট, সংগীত পরিচালক সব পরিচয়েই কৃতিত্বের সাথে সফল এবং জননন্দিত এবি। কিন্তু কোনটিতে তার স্বস্তি?
উত্তর: মানুষে। আমি মানুষ, ভালো মানুষ হতে পারলে আমার জন্য একটা স্বস্তির জায়গা তৈরি হয় এবং আমি নিজেকে মানুষ ভাবতেই ভালোবাসি। মানুষ হতে চাই। বাকী পরিচয়গুলো সব বাহ্যিক।
প্রশ্ন: ৮০ ও ৯০ দশককেই বাংলা সংগীতের স্বর্ণযুগ বলছেন অনেকে। এই সময় কি বাংলা সংগীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
উত্তর: আশি নব্বই দশকে কিন্তু বাংলাদেশে একটা সাকিব আল হাসান ছিলো না। আশি নব্বই দশকে কিন্তু এরকম আরো অনেক কিছু ছিলো না যেগুলো এখন আসছে, হচ্ছে। অনেক নাম, আমরা চিনি সবাইকে একনামে। বড় বড় কোম্পানি আসছে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান আসছে, বড় বড় কর্পোরেট আসছে। মানে আমি এক্সাম্পল দিলাম উনাদের কথা। হ্যাঁ, কিন্তু বড় তারকাও ছিলেন, রকিবুল হাসান ছিলেন, আতাহার আলী খান ছিলেন, আকরাম খান ছিলেন, সুজন ছিলেন এরকম অনেকেই ছিলেন। তারাও ভালো খেলতেন, কিন্তু সাকিব ছিলেন না। সাকিব যে বাংলার প্রাণ, তা ছিলো না। এটা এসেছে কয়েকদিন আগে। একটা যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রত্যেকটা জিনিষের কিন্তু পরিবর্তন হয়। আমরা শুধু পেছন দিকে চলে যেতে চাইছি যে, ওটা কেনো আর হচ্ছে না। ওটা হওয়ার তো কথা না। আমার যে জামাটা আজকে পরে এসেছি, এ জামাটা হয়তো সামনে আর নাও পরতে পারি। তারমানে এই নয় যে ওটা বাজে ছিলো। এইটা তো ক্লাসিক হয়ে যাবে, এটা ক্লাসিকের পর্যায়ে সম্মান দিতে হবে। আর আরেকটা জিনিষ হলো, এটা আমার শেয়ার করতে হবে। সম্মান বা অনারটা বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করাটা শুধু ক্ষেত্র বিশেষে, গোত্র বিশেষে বা ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়। এটা সবার জন্য। এ দেশটা প্রতিটা মানুষের, এ দেশে যে কয়টা মানুষ জন্ম নিয়েছে, এ দেশের যে কয়টা মানুষের পাসর্পোট আছে, মানে বাংলাদেশের নামে পাসর্পোট আছে যাদের কিংবা আজকে যে শিশুটা জন্ম নিলো এই বাংলাদেশটা তার। এ দেশটাকে ভালোবাসার দায়িত্ব তার, এই প্রতিটা মানুষের। কোনো ব্যক্তি বিশেষের নয়। আর যদি এভাবে বলতে চাই, তুমি যদি জানতে চাও কেন, তাহলে আমি এভাবে সিম্পলিফাই করবো যে, দেশকে ভালোবাসলেই মা’কে ভালোবাসা হবে, আর মা’কে ভালোবাসলেই দেশকে ভালোবাসা হবে। আর দেশকে ভালাবাসলেই নিজেকে ভালোবাসা হবে। মানে আমার দেশের রাস্তা ভাঙা, কিন্তু দেশটাতো আমার। আমার সামনে একটা কলার ছোগলা পড়ে আছে, এইটা যদি উঠিয়ে আমি সরিয়ে দেই এবং এইরকম প্র্যাক্টিসটা ভেতর থেকে আমাদের নিজেদের আত্মস্থ করা দরকার। আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি একটা লোক দাঁড়িয়ে রাস্তার মধ্যে প্রগ্রাব করছে, তাকে নিষেধ করার দায়িত্বটাও আমার। কারণ দেশটা যেমন আমার, তেমন তারো দেশ। সেতো আর বিদেশ থেকে এখানে এসেতো প্রগ্রাম করছে না। তাকে মনে করিয়ে দেয়া যে এ দেশের এ জায়গাটাও আপনার।
প্রশ্ন: আপনাদের পরবর্তী সময়ে প্রচুর মেধাবী ব্যান্ড দল আসছে, তাদের জার্নিটা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর: আমি সারাটা জীবন এটাই শুনতে চেয়েছি, এই বিশ্বাস এই ভালোবাসা এই জায়গাটাতো আমার ছিলো এবং এখনো আছে, সারা জীবন থাকবে। আগামী নতুন প্রজন্ম আসছে, যাদের কথা তুমি বলছো, এরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। কিন্তু সবসময় একটা অভিযোগ অন্যান্যরা করে থাকে যে ‘তরুণ প্রজন্ম কেনো আপনাদের মতোন হচ্ছে না? কেনো হচ্ছে না?’ আরে আমাদের মতো হওয়ার কথা নাতো, ও তো এ যুগের সন্তান। ওকে এ যুগের মতো করে ভাবতে দিতে হবে। এবং এ যুগে যেসব ব্যান্ড আসছে, সবাই খুব ভালো করছে। তাদের নিজস্ব স্টাইলে ভালো করছে। শুধু তাদের প্রতি আমাদের উদারতার প্রয়োজন। মানসিকতার পরিবর্তনও দরকার সবার। শোনার অভ্যাসের পরিবর্তন দরকার সবার। আমি এক টাইপের গান শুনতাম, এখন আমাকে নতুনকে বরণ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথের অনেক কথায় মিলে যাবে। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু অনেক আগেই নতুনকে বরণ করে নিতে অনেক কথায় বলে গেছেন। এটা জানতে হবে, বুঝতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার অনেক গানের কথাগুলো যেনো একেকটা গল্পের বয়ান, বিশেষ করে ‘হকার’ গানটিতো বটেই। গীতিকার আইয়ুব বাচ্চুর কথা জানতে চাই?
উত্তর: আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি এমনি গান লিখতে পারি না। আমি ঠিক তোমার সাথে যেরকমভাবে কথা বলছি, আমার গানগুলিও প্রায় অনেকটা এরকম। আমি জীবনে বাস্তবে দেখা কিছু গল্প নিয়ে গান লিখি। আমি প্রায়ই বলি, যেটা তোমার সাথেও শেয়ার করতে পারি। ‘ফেরারি এ মনটা আমার’ লেখা গানটা কেনো? আসলে এটা অ্যাবসুলেটলি লেখা এ কারণে, আমার স্ত্রীকে যখন মানে এখন যে আমার স্ত্রী, সে একসময় আমার প্রেমিকা ছিলো। তাকে অনেকদিন দেখতে দেয়নি। আমার সাথে সাক্ষাৎ বন্ধ ছিলো। ওর পরিবার থেকে আঁকে রাখা হতো। ওই দুঃখ থেকে গানটা লেখা আরকি! তো ওই গানটা যে এতো বিখ্যাত হয়ে যাবে, এটা আমি কখনোই চিন্তা করিনি।
প্রশ্ন: ভাবির বাড়িও কি চট্টগ্রাম ছিলো?
AB-FAMILYউত্তর: না না, ওর বাড়ি ঢাকাতেই। আর যে গান জীবনের কথা বলবে না, সে গান কিসের কথা বলবে তা আমি জানি না। আর যারা গান লিখে তারাতো জানেই। কিন্তু যারা লিখে না, শুধু অনুভব করে তাদের জন্য এই মেসেজটা যেটা হচ্ছে, সুখটা খুবই ক্ষণিকের। এই আছেতো এই নেই। সুখ, যেটার আশায় মানুষ মরে যায়। সুখ সুখ সুখ করতে করতে মানুষ একদম শেষ, কিন্তু দুঃখটা অবধারিত। জন্মলগ্নে কান্না, বিদায়লগ্নে কান্না। এর মাঝখানের বাকী জীবনটাও পুরোটা কান্না। দুঃখ অবধারিত, এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। সুখটা কদাচিৎ আসতেও পারে, নাও আসতে পারে। একটা আম খেয়েও সুখী হতে পারো, একটা আইসক্রিম খেয়েও সুখী হতে পারো, একটা ঘুড়ি উড়িয়েও সুখী হতে পারো, একটা সাইকেল চালিয়েও সুখী হতে পারো, একটা মোটর সাইকেল চালিয়েও পারো, কিংবা একটা বিশাল নদী সাঁতরিয়েও সুখী হতে পারো। কিন্তু দুঃখ তোমার সাথে সাথে আছে। পদে পদে মানুষের জীবনে দুঃখ, ছায়ার মতো। দুঃখই একমাত্র মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তাই মানুষ সুখের আশায় পাগল থাকে। ঘুম থেকে উঠেই পাগলামি করে, সবসময় আমার হয়নি, ব্রেকফাস্টটা ঠিকমতো জমলো না, এই যে দুঃখ। আসলে ব্রেকফাস্ট জমেছে, উনি বুঝতে পারে নাই। আসলে দুঃখতো তার সাথে বসে আছে, ফলে তারতো সুখী হওয়ার সুযোগ নেই। অথবা গুলশানে কারো একটা বাড়ি আছে পাঁচ তলা, আবার তারই বন্ধুর বারিধারায় দেখা গেলো ১০তলা একটা বাড়ি। এটা দেখে পাঁচ তলার মালিক বন্ধুটির কি দুঃখবোধ! তার বন্ধুর মতো বারিধারায় তার একটা বাড়ি নেই! স্ট্রেঞ্জ! আহ দুঃখ! এই দুঃখবোধ মানুষের অবধারিত। এটা থেকেই যাবে।
প্রশ্ন: গত দশকেও গ্রাম-গঞ্জের অলিগলিতে হরহামেশায় বেজে উঠতো বাংলা ব্যান্ডের অসাধারণ সব গান, অথচ সেগুলো এখন ভিনদেশি গানের দখলে। এই অচেনা পরিবর্তনে কি হতাশ লাগে?
উত্তর: এটাই মুক্ত বাজার অর্থনীতি। এটার একটাই শব্দ ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতি’ এবং এটার ভালো, খারাপ দুটি দিকই আছে। খারাপ দিক হচ্ছে যারা আগের মতো অবস্থাটায় থাকতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য দুঃখ লাগছে। আবার আরেক দিকে ভালো লাগছে, যে গান আগে শুনতো না, সে গান শুনছে। খারাপ কি, মন্দ কি!
প্রশ্ন: বড়সর কোনো অনুষ্ঠান হলে বাংলায় ভিনদেশী শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়, এই চর্চাটাকে কীভাবে দেখছেন? অনেকে বলে থাকেন যে, এতে দেশীয় শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন?
উত্তর: যারা ভিনদেশি শিল্পীদের নিয়ে আসেন তারাই এব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। তারা এগুলো কেনো করছেন, কীভাবে করছেন! কিন্তু আমাদেরকেও মনে রাখতে হবে, ভিনদেশি শিল্পীরাও নিজেদের যেভাবে চমৎকার করে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারে, আমাদেরকেও এভাবে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিতে হবে সবাইকে। কম্পিটিশন থাকতে হবে, নাহলে মিউজিক ভালো হবে না। আর ভিনদেশি শিল্পী আসলেই তার বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করবো, এটার দরকার নাই। আমি ভিনদেশে যেতে পারলেই ভালো, আর অন্য কেউ এদেশে আসলেই খারাপ? ব্যাপারটা এরকম নাকি? যদি এরকম হয়, তাহলে সংগীতের আর দরকার নেই। সেটা শিল্পীর রূপ নয়। শিল্পীর রূপ হচ্ছে, আপনি আমার জন্য এই গানটি গেয়েছেন, এই রাগটি গেয়েছেন আমি আরো চমৎকতার একটি গান গেয়ে আপনার মন জয় করবো। এটা হচ্ছে শিল্পীর কাজ। আপনি কেনো আমার শহরে আসছেন এটা নিয়ে তর্কাতর্কি করার এখানে কোনো প্রয়োজন নেই। এটা আয়োজকদের ব্যাপার, ওরা লোকাল আর্টিস্টদের কীভাবে উপস্থাপন করবে। আয়োজকরা জানেন ভিনদেশি শিল্পীর সাথে লোকাল আর্টিস্ট কাদের কীভাবে সম্মান করবে। আয়োজকরা চিন্তা ভাবনা করে যে লোকাল কোনো শিল্পী নেবে না, সে নাও নিতে পারে; আমার টাকা আমি যাকে খুশি তাকে দিয়ে শো করবো। তাই নয় কি! কিন্তু এইজন্য আমরা শিল্পীরা যদি মনে করি অমুক-কে কেনো আনা হলো, এটাতো আয়োজকদের একদম উচিত হয়নি; তাহলে এটা হয়তো আমার বোঝার ভুল আছে কিংবা আমি আমার কথা বলতে পারি, আমি মূর্খ-সূর্খ মানুষ আমি তাই একটু ভিন্নভাবে দেখি বিষয়টা, আমি মনে করি ‘শিল্পীদের একটু উদারতারও প্রয়োজন আছে। শুধু গান গাইলেই হবে না, একটু মানুষও হতে হবে।
প্রশ্ন: ‘সোলস’-এর গিটার বাদক ছিলেন টানা দশ বছর, তারপর কেনো আপনার মনে হলো নিজেই একটা দল গড়া উচিত?
উত্তর: সোলস অবশ্যই এখনো জনপ্রিয়। সোলসে আমি দশ বছর ছিলাম, কিন্তু শুধু মাত্র একজন গিটারিস্ট হিসেবে নয়। একজন সুরকার, কম্পোজার হিসেবেও। এখনো কিছু সুর করা গান আমার রয়ে গেছে সোলসে। এবং ওরা গাইছেও হয়তোবা। আর আমি গানগুলোর সুর কম্পোজিশন করতাম নকীব ভাই যাওয়ার পরে। দশ বছর আমরা একসাথে কাটিয়েছি। কেনো চলে আসছি? চলে এসছি, হয়তো বা ভিন্ন কোনো স্বাদের আশায়। হয়তো বা নিজের সাথে প্রতারণা করতে চাইনি। হয়তো বা তেমনটি হচ্ছিলো না যেটা আমার মন চাইছিলো। কিংবা আমার ভাগ্যেই ছিলো না একসাথে থাকার। এর যে কোনো একটা কিছু।
প্রশ্ন: আপনার কথার রেশ ধরেই বলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
উত্তর: সম্ভাবনা দুইশত ভাগ। কারণ, এখন অনেকেই ইন্টারন্যাশনাললি মুভ করছে। সব জায়গায় বাংলা গান মানুষ শুনছে, আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এই যেমন গত মার্চে আমরা দিল্লীতে গিয়ে গান গেয়ে এসেছি। সেখানে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ কম, কিন্তু অনেকেই যারা বাংলা ভাষা জানে না তারাও বাংলা গানের প্রতি এক ধরনের আগ্রহ দেখিয়েছে, শুনেছে। তো এগুলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা গানের দ্বার খুলে দেয়ার জন্য সহায়ক। এছাড়া এখন বাংলা গান নিয়ে বিশ্বে অনেকেই খুব ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। এসব আমাদের বাংলা গানের জন্য সত্যিই সম্ভাবনার দুয়ার খোলে দেয়ার মত ঘটনা।
প্রশ্ন: ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ থেকে ‘লাভ রানস বøাইন্ড’ কেনো রাখা হলো, পেছনের গল্প থাকলে জানতে চাই।
উত্তর: নট রিয়েলি, আমাদের আসলে কখনোই নাম নিয়েও টেনশন ছিলো না। নাম নিয়ে টেনশন ছিলো না এই কারণে, কারণ আমরা এইটা চিন্তাও করেনি। আর নাম পাল্টে যে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে চলার জন্য আমার নামটা নিজস্ব ঢঙ করে নিতে হবে এটা খুব একটা বড় চিন্তাভাবনা থেকে, গভীর গবেষণার মাধ্যমে কিছু করেনি। মন চেয়েছে তখন আমরা রেখেছিলাম ‘ওয়াইআরবি’, তারপর কিছুদিন পরে গিয়ে দেখলাম এটা হয়ে গেলো এলআরবি। কেউ যেনো ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ ডাকা শুরু করলো, তারপর আসলেই হয়ে গেলো ‘এলআরবি’। কিন্তু আমরা ‘এলআরবি’ নামটা চাইনি। কারণ আমরা রেখেছিলাম ‘ওয়াইআরবি’। মানে ‘ইলো রিভার ব্যান্ড’, একটা গান থেকে নেয়া নাম। তারপর আমি চিন্তা করলাম আন্তর্জাতিকভাবে যদি আমাদের মুভ করতে হয়, তাহলে ‘উই নিড অ্যা আওয়ার ওউন নেইম’। তারপর আমরা ডাকতে শুরু করলাম ‘লাভ রানস বøাইন্ড’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ভালোবাসার কোনো চোখ নাই।
প্রশ্ন: এলআরবি ছাড়াও আপনার গড়া ‘এবি বøুজ ক্লাব’ বেশ সুনাম কুড়িয়েছে!
উত্তর: এবি বøুজের বয়স প্রায় দশ বছর হল। আর এই আঁট বছরে ‘জ্যাজ এন্ড বøুজ ফেস্টিভাল ঢাকা ২০১৫’-এর আসরে বাজানোটাই ছিল আমাদের জন্য বড় অর্জন। যেখানে একই মঞ্চে জ্যাজ ও বøুজ নিয়ে বাজিয়েছে বিশ্বের বড় বড় ব্যান্ড দলগুলো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে বøুজ চর্চা কি আগে থেকেই ছিল, নাকি কেবল শুরু?
AB-1-(345)উত্তর: বাংলাদেশে বøুজের চর্চা টুকটাক আগে থেকেই হচ্ছে। জেনে কিংবা না জেনে বøুজটা আমাদের অনেকের গানেই ঢুকে যাচ্ছে। হয়তো তা কেউ স্বীকার করছে, হয়তো কেউ স্বীকার করছে না। কেউ জেনে বাজাচ্ছে, কেউ না জেনে বাজাচ্ছি; অনেক আগে থেকেই। কিন্তু, বøুজটা এ কারণে হচ্ছে মানে গিটার যারা বাজাচ্ছে বা বাজায় তাদের কিন্তু দুটো স্কেল কমন, প্যান্টাটনিক মাইনর, প্যান্টাটনিক মেজর। এই দিয়ে কিন্তু পুরো জীবন কাটিয়ে ফেলা যায়। হেভি মেটাল, জ্যাজ, বøুজ, রক যাই বলো না কেন, সবারই জানতে হয় গিটারের এই স্কেলগুলো। এই দুটোকে সাথে নিয়েই সাড়া জীবন কাঁটাতে হবে। অন্তত আমার মত একজন অখ্যাত গিটারিস্ট পুরোজীবন কাটিয়ে দিতে পেরেছি এই প্যান্টাটনিক মেজর, প্যান্টাটনিক মাইনর বøুজ দিয়ে। আসলে এটার বাইরে কিছু নাইও, আর যা আছে তা টেকনিক, মানে বাকিসব টেকনিক। টেকনিক যতোটা ব্যবহার করা যায় আরকি! তবে মেজর-মাইনরের এই খেলাটা খুবই ইন্টারেস্টিং।
প্রশ্ন: ২০১৩-তে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গান করেছেন আপনি, রাষ্ট্রপতির আপ্যায়নে মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘সংগীত জীবনের অপ্রাপ্তিটুকু ঘুচে গেছে’। সেই মধুর স্মৃতি আপনার মুখ থেকে ফের শুনতে চাই?
উত্তর: এখানে সত্যি ইন্টারেস্টিং হচ্ছে আমরা শুধু যে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভবনে বাজিয়েছি তা নয়। ওই বারই প্রথম কোনো রক কনসার্ট রাষ্ট্রপতি ভবনে হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে আমরা, আর ভারত থেকে আদ্রিয়েতা, এবং স্ট্রিংস ছিলো পাকিস্তান থেকে। তাছাড়া বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির জন্যও আমরা বাজিয়েছি, যিনি এখন প্রয়াত মহামান্য জিল্লুর রহমান। উনার থাকা অবস্থায় আমরা বঙ্গ ভবনে বাজিয়েছি। সো আমরা এদিক দিয়ে বলতে পারি যে আমরা খুব ভাগ্যবান ব্যান্ড যে দুই দুইটা রাষ্ট্রপতি ভবনে আমরা বাজিয়েছি। আর আমরা সেই সৌভাগ্যবান ব্যান্ডদের একটি, যারা লন্ডনে বাজিয়েছে, যারা অ্যালেন গার্ডেনে আশি হাজার সাদা গান পাগল মানুষের জন্য বাজিয়েছে, যারা বাংলা গান বুঝে না, ভাষা বোঝে না কিন্তু আমার মিউজিক এরা বুঝেছে। আমরা নিউইয়র্কে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাজিয়েছি। বাংলা ব্যান্ড হিসেবে একমাত্র বোধহয় আমরাই যারা ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাজিয়েছি। আমরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বাজিয়েছি। মানে আমি বলতে চাইছি, কিছু কিছু স্মৃতি কখনো কোনো অবস্থায় ভোলার নয়। এই স্টেজগুলো হয়তো তাদেরই একটি।
প্রশ্ন: বহুদিন আগে আপনার কোনো টিভি ইন্টারভিউতে আপনাকে বলতে শুনেছিলাম যে আপনি একটি মিউজিক্যাল একাডেমি করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন, ওটার কী খবর?
উত্তর: আসলে এই জীবনে অনেক স্বপ্নই শুকনো বালুচরের মত শুকিয়ে গেছে। তো আমারও হয়তো এরকম স্বপ্ন ছিল, এখনো আছে একটা মিউজিক্যাল স্কুল কিংবা গীটার স্কুল দেয়ার কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণের লোকবল এবং সার্পোট আর ফিন্যানসিয়াল সার্পোট ছাড়া তা হয়ে উঠে না। আর আমার কাছে আমার যেটা স্বপ্ন ছিল তা হচ্ছে বাইরের কোনো একটা স্কুলের সাথে অ্যাফলিয়েশন করে সুন্দর একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। একটু গুছিয়ে উঠতে পারলে হয়তো বা এটা নিয়ে আবার ভাববো। তবে আগাম কোনো প্রতিশ্রæতি দেয়া আমার জন্য ঠিক হবে না।
প্রশ্ন: সোশ্যাল সাইটে প্রথমবারের মত জেমস ভাই ও আপনাকে একসঙ্গে দেখা গেল। এক ফ্রেমে গানের দুই কিংবদন্তি! দর্শক-ভক্ত যাতে আপ্লুত
উত্তর: আমরাতো বরাবরই একসঙ্গে ছিলাম।
প্রশ্ন: না, তাতো ছিলেনই! কিন্তু সোশ্যাল সাইটে আপনাদের দুজনকে কখনোই এভাবে কেউ দেখে অভ্যস্ত না?
উত্তর: হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে দুজনই খুব ব্যস্ততার জন্য সাক্ষাৎ হয়ে উঠে না। আমি যেমন ব্যস্ত, সেও তার কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত থাকে। ফলে একত্রিত হওয়া বা দুজনের একটু কোথাও অলস সময় কাটানো হয়ে উঠে না। তো দুজনের অনেক দিন পর দেখা হল, একটু পাগলামি হল। এইতো! আসলে আমরা এরকমই ছিলাম। সেই ১৯৯১ থেকে বা তারও আগে থেকেই!
প্রশ্ন: অতীতে দুজন একসঙ্গে বহু কাজ করেছেন, ক্যাসেটের এপিঠ-ওপিঠে ছিলো আপনাদের গান। আপনাদের একাধিক মিশ্র অ্যালবাম তুমুল হিটও হয়েছে একসময়। ভবিষ্যতে কী তেমন কোনো পরিকল্পনা আছে আপনাদের?
উত্তর: অ্যালবাম যেহেতু বের হচ্ছে না, ফিতা নষ্ট হয়ে গেছে, সিডি নষ্ট হয়ে গেছে তাই সেই ভাবনায় আর কী হবে বলো। এখন ডিজিটাল যুগ চলছে, এ যুগে কেউ যদি আমাদের একত্রিত করে কিছু করতে চায় নিশ্চয় আমরা করবো। আসলে সময়ই বলে দিবে, আগ বাড়িয়ে বলা কিছু ঠিক না।
প্রশ্ন: আপনার ছেলে আহনাফ তাজোয়ারকে এলআরবির সঙ্গে বাজাতে দেখা যায়। পেশা হিসেবে কি তাহলে ছেলেও সংগীতকেই বেছে নিবে?
উত্তর: মোটও না। আমার মনে হয় ও সংগীতকে পেশা হিসেবে নিবে না। জন্মের পর থেকেই সে তার বাবার পথচলা দেখেছে। আমি চাইবো পড়াশোনা শেষ করে যদি ইচ্ছে করে মিউজিক করবে, কোনো আপত্তি নেই। যদিও ওর মন চায়। শখে কিছুদিন এলআরবির সঙ্গে বাজাচ্ছিল, কিন্তু এখন সে খুব ব্যস্ত লেখাপড়া নিয়ে।