Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সুন্দরী প্রতিযোগিতা এবারও বিতর্ক এড়ানো গেল না

মামুন রহমান
এবার দেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে অন্যরকম কিছু ঘটনা ঘটে গেল। যা বেশ কৌতুকপ্রদ বটে। কৌতুকের সূত্রপাত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণকারীদের জ্ঞানের বহর দেখে। একজন প্রতিযোগিনীকে ঐ২০ কি? এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আমতা আমতা করে এদিক-ওদিক তাকালেন। মৃদু হাসলেন। বোঝা যাচ্ছিলো তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না। প্রশ্নকর্তা আকারে ইঙ্গিতে প্রশ্নের উত্তরও বলে দিলেন। তবুও তার হুস হচ্ছিলো না। বরং বোকার মতো মুখে কৃত্রিম হাসি ছড়িয়ে প্রশ্নের উত্তর দিলেন এভাবে… ঐ২০ মানে… ঐ২০ মানে… ঢাকায় এই নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে… প্রশ্নকর্তা তখন কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। প্রতিযোগিনীর চেয়ে তাকেই বেশী অসহায় দেখাচ্ছিল!
আরেক প্রতিযোগিনীকে প্রশ্ন করা হলোÑ তোমার জীবনের উইস কি? প্রশ্ন শুনে প্রতিযোগিনী আমতা আমতা করে বলল, আমার জীবনের উইশ… আমাদের দেশে সুন্দরবন আছে… সীবীচ কক্সবাজার আছে… আমি এগুলোকেউ উইশ করতে চাই।
প্রশ্নকর্তা অবাক হয়ে বললেন, তুমি আমার প্রশ্নটা আবার মনযোগ দিয়ে শোনো… তুমি একটা উইশ করো। যেমন আমি একজন শিল্পী হতে চাই… তুমি কি হতে চাও? তোমার উইশ কি?
এবারও প্রতিযোগিনী কিছুই বুঝলেন না। বরং বোকার মতো উত্তর দিলেনÑ আমি পারব না ম্যাম…
এই হলো আমাদের সুন্দরীদের অবস্থা। এই হলো তাদের মেধার বহর। মজার ব্যাপার হলো যে মেয়েটি ঐ২০ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে নাই, প্রশ্নের উত্তরে পানি না বলে একটি রেস্টুরেন্টের নাম বলেছে সেই রেস্টুরেন্টটি ওই সুন্দরীকে স্বসম্মানে ডেকে নেয় তাদের ঠিকানায়। তাকে বানিয়েছে রেস্টুরেন্টটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। ভাবা যায় আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি? ভুল করলে যেখানে তিরস্কার পাওয়ার কথা। সেখানে জুটলো পুরস্কার। এখানে বানিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। ধানমন্ডির ঐ২০ রেস্টুরেন্টের নাম আগে অনেকেই জানতো না। মেয়েটির ভুল উত্তরের কারণে লাভবান হয়েছে রেস্টুরেন্ট ঐ২০। লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েও যে কাজটি করা যেতো না একজন তথাকথিত সুন্দরীর কথায় সেই কাজটিই সম্ভব হয়েছে। রেস্টুরেন্ট হিসেবে ঐ২০’র নাম এখন অনেকে জানে। কাজেই ওই সুন্দরী ভুল করলেও ঐ২০’র মালিক ভুল করেননি। প্রচারেই প্রসারের কথা ভেবে ‘ভুলভাল’ সুন্দরীকে ডেকে এনে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়েছে। ভুল উত্তর দেওয়া ওই সুন্দরীও দারুণ খুশি। প্রশ্নের ভুল উত্তর দিয়েও যে এতো সম্মান পাওয়া যায় তা ভেবেই সে আনন্দিত। এই ঘটনার মোরাল স্টোরি কি দাড়াল? প্রশ্ন করতেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিনেত্রী বললেন, এখন সময় ভুল শেখার। ভুল শিখুন অ্যাম্বাসেডর হতে পারবেন। এবারের সুন্দরী প্রতিযোগিতার মূল অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিনীদের এই মধুর ভুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিযোগিনীদের ‘ভুল’ উত্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফলে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আদর্শ উদ্দেশ্য নিয়ে আবারও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আনন্দ আলোর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। গাজীপুর থেকে শাহীনারা বেগম লিখেছেন, সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে অনেকে বিতর্ক ছড়াতে চান। আমি তাদের সাথে একমত নই। আমি চাই এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের দেশের মেয়েরা আরও বেশি এগিয়ে যাক। কিন্তু এবারের প্রতিযোগিতায় এসব কি ঘটলো? সহজ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারল না অনেক প্রতিযোগিনী? কেন এই অবস্থা? শুনেছি হাজার হাজার মেয়ের থেকে এদেরকে বাছাই করা হয়েছে। তার মানে আমি ভাবতেই পারি এরাই দেশ সেরা প্রতিযোগিনী। অথচ এই তাদের জ্ঞানের বহর? আমি এদেরকে যোগ্য ভাবতে পারছিনা। আমার ধারনা প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে প্রতিযোগিনীদের মেধার বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তার মানে একটি মেয়ের নাক, মুখ, চোখ আর শরীর দেখতে সুন্দর হলেই কি সে সুন্দরী? কে দিবে এর উত্তর?
ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে মুরাদ হাসান লিখেছেন, সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে এবার যা হলো তা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রকৃত মেধাবী মেয়েদেরকে খাটো করা হয়েছে। চেহারা সুন্দর হলেই কি সে সুন্দরী? তার কি মেধার প্রয়োজন নাই। যে মেয়ে ঐ২০ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না সে কি ভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে? এরা দেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে কিভাবে সম্মানিত করবে আমার বুঝে আসে না। আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে আমাদেরও একই প্রশ্ন চেহারা সুন্দর হলেই কি সে সুন্দরী? পাঠকের মন্তব্য আশা করছি।
ঐশীর কথা
সম্পন্ন হলো ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮’র আয়োজন। এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট উঠেছে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর মাথায়। বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির রাজদর্শন হলে আয়োজিত জমকালো গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিচারকরা চ‚ড়ান্ত বিজয়ীকে নির্বাচন করেন। সেখানে সেরা দশজন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ঐশীর নাম। চীনে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে অংশ নেবেন তিনি। নাম ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসেন ঐশী। অনেকেই জানতে চাইছেন কে এই ঐশী? সেরা বিজয়ী নির্বাচিত হবার পর ঐশী জানালেন তার পরিচয় বৃত্তান্ত। কাকতালীয়ভাবেই এসেছেন এই প্রতিযোগিতায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ঐশী এইচএসসি শেষ করে জুলাই মাসে ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার জন্য। স্বপ্ন, ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শুরু করেছিলেন আইইএলটিএস কোচিংও। আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন ঐশী। সাদামাটা একটা জীবন। হঠাৎ-ই শুনলেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৮-এর আবেদন চলছে। ছেলেবেলা থেকেই নিজের সৌন্দর্যের জন্য অনেক প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। সেই আত্মবিশ্বাসে কৌত‚হল মেটাতেই নাম লিখিয়েছিলেন এ প্রতিযোগিতায়। সময়ের ¯্রােতে বরিশালের পিরোজপুরের মাটিভাঙা এলাকার ঐশী এখন বিশ্ব সুন্দরীর আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
ঐশী বললেন, আমি বাকরুদ্ধ। যারা সেরা দশে ছিলেন সবাই যোগ্য। তাদের মধ্য থেকে সেরা হিসেবে নিজের নাম শুনতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। সবার কাছে দোয়া চাই, যেন মূল প্রতিযোগিতাতেও চমক দেখাতে পারি। আবেগতাড়িত ঐশী আরও বলেন, ‘বরিশালের একটি মফস্বলের মেয়ে হিসেবে এই সাফল্য আমার কাছে অনেক বড় স্বপ্নজয়ের। অনেক বড় দায়িত্বও আমার কাঁধে এসেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সৌন্দর্য তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি আমি, এটা ভাবতে ভালো লাগছে। আশা করছি, দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে মর্যাদার সঙ্গেই বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারবো।’