Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা—রিয়াজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স¤প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে ছয়দিনের সরকারি সফরে নিউ ইয়র্ক গিয়েছিলেন। এই রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হয়েছিলেন নন্দিত দুই চিত্রনায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস। সফল সফর শেষে নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন তারা। আমেরিকা সফরের অভিজ্ঞতা ও রাজনীতিতে আসার গুঞ্জন নিয়ে আলাপচারিতায় অংশ নিলেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ।
আনন্দ আলো: প্রথম যখন শুনলেন আপনি এই সফরে আমন্ত্রিত তখন অনুভ‚তিটা কেমন ছিলো?
রিয়াজ: যখন আমাকে জানানো হলো এই সফরের জন্য আমি ও ফেরদৌসকে নির্বাচিত করা হয়েছে তখন একটু অবাক হয়েছিলাম। আবার আনন্দও পেয়েছি। রাষ্ট্র যখন আপনাকে কোনো আমন্ত্রণ করে সেটা কিন্তু আদেশের মধ্যে পড়ে। এই আদেশ পালন একজন নাগরিকের কাছে স্বপ্নের মতো। ‘সুপারস্টার’ খ্যাতি চিরকাল থাকে না। মানুষ ও রাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতিগুলো থেকে যায়। আর সেটা পেতে হলে নিজেকে আদর্শ করে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। মনে হচ্ছিলো জীবনে হয় তো কিছুটা হলেও তা করতে পেরেছি। এটা একজন মানুষ হিসেবে, দেশের নাগরিক হিসেবে অনেক তৃপ্তির।
আনন্দ আলো: রাষ্ট্রীয় সফরের অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
রিয়াজ: এক কথায় অসাধারণ। দারুণ এক অভিজ্ঞতা দিলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সফর। রাষ্ট্রীয় সফর একদিকে অনেক দায়িত্ব পালনের অন্যদিকে উপভোগ্যও। অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি। বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। একজন রাষ্ট্র প্রধান কতো কষ্ট করে দেশ পরিচালনা করে যান সেটাও উপলব্দি করেছি। সারা জীবন এই অভিজ্ঞতা সোনালী সঞ্চয় হয়ে থাকবে।
আনন্দ আলো: তারমধ্যে সেরা অভিজ্ঞতা?
রিয়াজ: দেখুন, পুরো ব্যাপারটাই আমার জন্য সেরা ছিলো। ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তিও বলতে পারেন। রাষ্ট্র যখন আপনাকে গুরুত্ব দেবে তখন আপনার মধ্যে একটা প্রশান্তি কাজ করবে। সেটাই আমি উপভোগ করেছি। তবে জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় দেয়া ভাষণ নিজের চোখে দেখতে পারাটা আমি খুব উপভোগ করেছি। বলা যেতে পারে দারুণ এক অভিজ্ঞতা দিলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সফর। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসেও আমি অন্যরকম আবেগে ভেসেছিলাম। এই আবেগ একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধের।
আনন্দ আলো: কী কী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন?
রিয়াজ: ছয়দিনের সফর ছিলো প্রধানমন্ত্রীর। আমরা তার সঙ্গে কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। এরমধ্যে কিছু সংবর্ধণা অনুষ্ঠান ছিলো। জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়েছি। বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক ও আলোচনা করেছেন। তার কিছুতে আমরাও ছিলাম। পাশাপাশি আমেরিকায় বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন হয়েছে স¤প্রতি। তাদের আয়োজনে একটি আলোচনা সভা ছিলো, সেখানে অংশ নিয়েছি আমরা।
আনন্দ আলো: এই সফরে আপনাদের দুজনকে নিয়ে গর্ব প্রকাশ করছেন অনেকে তেমনি প্রত্যাশাও করছেন আপনাদের এই সফর আমাদের চলচ্চিত্রের এই মহামন্দা অবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আপনি কী ভাবছেন?
রিয়াজ: আমি প্রথমেই বলতে চাই, আমরা কোনো রাজনৈতিক বা নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যে নয়, এই সফরে অংশ হয়েছি চলচ্চিত্র তথা শিল্পী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে। আর সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংস্কৃতি-শিল্প ও শিল্পী বান্ধব বলেই সম্ভব হয়েছে। এর আগে অনেক শিল্পী-সাহিত্যিককে তিনি সফর সঙ্গী করেছেন। এবার আমরা যুক্ত হয়েছি তিনি আমাদের সিনেমা নিয়ে খুবই আন্তরিক বলে। তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এদেশে এফডিসির গোড়াপত্তন। এই বিষয়টিই প্রধানমন্ত্রীকে সিনেমার জন্য আবেগতাড়িত করে।
আনন্দ আলো: একেবারে হুট করে জানা গেল আপনারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। কোনো পূর্বাভাসও মেলেনি। এমনটি কেন?
রিয়াজ: রাষ্ট্রীয় সফরের কিছু নিয়ম-রীতি থাকে। এরমধ্যে গোপনীয়তাও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অনেক নিরাপত্তার ব্যাপার জড়িয়ে থাকে। তাই ভিসাসহ সবকিছু ফাইনাল হবার পর শিল্পী সমিতিতে ব্যাপারটা জানিয়েছি। সমিতির সাধারন সম্পাদকের মাধ্যমে পরে সবাই জেনেছেন।
আনন্দ আলো: এই সফরের সূত্র ধরে উড়ে বেড়াচ্ছে আপনার ও ফেরদৌসের নির্বাচনে আসার খবর। সত্যিটা কী?
রিয়াজ: এটা সম্পূর্ণই গুজব। এরকম কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না এই সফরে। ¯্রফে সিনেমা ও সামগ্রিক শিল্পীদের প্রতিনিধি হিসেবেই যাওয়া। রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা আমারও নেই, প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর কোনো প্রতিনিধি বলেনওনি। আমাদের যুক্ত হওয়াকে কেবলমাত্র চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা হিসেবে দেখার অনুরোধ করবো আমি। আমাদের সমস্যা হলো আমরা সবকিছুকেই রাজনীতিকরণ করি। অনেকে আবার বঞ্চিত হয়েও নানা কথা ছড়িয়ে ফেলেন। আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক। পাবলিক ফিগার হলেও আমার একটা আদর্শ আছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। সেদিক থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে আমি বেড়ে উঠেছি। যদি কেউ মনে করেন আমাকে দিয়ে দেশের এতটুকু উপকার হবে তবে আমি সেই উপকারটুকু দেয়ার চেষ্টা অবশ্যই করবো। দেশের জন্য যে কোনো ভালো কাজকেই আমি আদেশ ও দায়িত্ব মনে করি।