Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ফরীদির অবাক দৃষ্টান্ত

পাঠক, হুমায়ূন ফরীদির মতো একজন জনপ্রিয় তারকা মাত্র এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের বিনিময়ে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন একথা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে আপনাদের? কিন্তু এটাই সত্যি! ‘ফিরে এসো বেহুলা’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করে মাত্র এক প্যাকেট বেনসন লাইট উপহার নিয়েছিলেন। ছবির পরিচালকের নাম তামিম নূর। ২০০৮ সালের কথা। তামিম তখন মাস্টার্সের ছাত্র। ‘ফিরে এসো বেহুলা’ নামে একটি সিনেমা বানাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। একটি চরিত্রে প্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদিকে দরকার। গেলেন তার বাসায়। তারপর কি ঘটলো? শুনুন তামিম নূরের কাছে সেই ঘটনার আদ্যপান্ত।
এটা ২০০৮ সালের কথা। মাস্টার্সে পড়ছি তখনো। কিন্তু এরমধ্যেই আমি সিদ্ধান্ত নেই ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমাটি যেভাবেই হোক করবো। তো একটি চরিত্রের জন্য ফরীদি ভাইকে(হুমায়ুন ফরীদি) সিলেক্ট করলাম। কিন্তু উনার সঙ্গে কীভাবে সাক্ষাৎ করি! এ নিয়ে যখন ভাবছি তখন আমার এক বন্ধু জানালো ফরীদি ভাইয়ের মেয়ে দেবযানী তার ক্লাসমেট! এভাবেই লিঙ্ক ধরে সেই বন্ধুটিকে নিয়ে আমি ফরীদি ভাইয়ের ধানমন্ডির বাসায় দেখা করতে গেলাম। বয়স কম থাকায় তিনি ভেবেছেন আমি হয়তো এই ছবিতে সহকারি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি। তিনি আমাকে বললেন, তুমিই পরিচালক নাকি সাথে আরো কেউ আছে? নিজেকে পরিচালক পরিচয় দেয়ায় তিনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন! সেই প্রথম তার সামনে দাঁড়ানো।
প্রথম দিন সাক্ষাৎ করে ছবি নিয়ে আলাপ জুড়ে দেই। তাকে বলি ‘ফিরে এসো বেহুলা’ ছবিতে আপনার ক্যারেক্টারটি কিন্তু বড় নয়। ছোট একটি ক্যারেক্টার। স্ক্রিনে বড়জোর সাত থেকে আট মিনিটের উপস্থিতি! তিনি বললেন, সমস্যা নেই। তুমি আমাকে স্ক্রিপ্ট দাও। স্ক্রিপ্ট পড়ে তোমাকে জানাচ্ছি। স্ক্রিপ্ট দিয়ে আমি চলে আসি। তার ক’দিন পর আমাকে জানালেন, তিনি ছোট চরিত্রটিই করবেন। ক্যারেক্টারটি তার পছন্দ হয়েছে। আমি জানি না কেন, তিনি ছোট ক্যারেক্টারটিই খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তার কস্টিউমগুলো তিনি শুটিংয়ের সাত দিন আগে নিজের কাছে নিয়ে নেন। যেন ক্যারেক্টারের মধ্যে ঢুকে যেতে পারেন!
ফরীদি ভাই খুব রসিক মানুষ ছিলেন। এতো হিউমার উনার! সব কিছু নিয়ে মজা করার সহজাত অভ্যাস ছিলো। তো শুটিং যখন করতাম তিনি মজা করে আমাকে বলতেন, কি মিয়া! টাকা পয়সা দিবা না! প্রায় প্রতিদিন তিনি এমনটা করতেন। আমিও বলতাম, ফরীদি ভাই, এইতো দিয়ে দিবো। শুটিং শেষ হওয়ার আগেই দিয়ে দিবো! কিন্তু যেদিন শুটিংয়ের শেষ দিন, সেদিন তিনি আমাকে বললেন, কি মিয়া, শুটিংতো শেষ। পয়সাতো দিলানা? আমি বললাম, দিচ্ছি ফরীদি ভাই, পয়সা রেডি করে রাখছি। তিনি আমাকে বললেন, নাহ! তুমি আমাকে এক প্যাকেট বেনসন লাইট দাও।
এটা একটা অদ্ভ‚ত ঘটনা। তিনি যে সময় আমার ছবিতে অভিনয় করলেন সেসময়ে তিনি সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিয়ে কাজ করতেন। অভিনয় ক্যারিয়ারে সব সময় তার রমরমা অবস্থা ছিলো। অথচ আমার সিনেমায় অভিনয় করে তিনি কোনো কারণে রেমুনারেশন নেননি। প্রফেশনাল আর্টিস্ট, অল্প হলেওতো নিবে। তাই তিনি এক প্যাকেট বেনসন লাইট চেয়েছিলেন শুধু।
ফরীদি ভাইয়ের সাথে ছবিটি করার পর আমার ব্যক্তিগত ভাবে তার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। উনি সাহিত্য আর স্পোর্টস খুব পছন্দ করতেন। আমারও এই দুটি বিষয় পছন্দের। ফলে আমরা সাহিত্য ও খেলাধুলা নিয়ে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি। আমাদের সম্পর্ক গাঢ় হয়েছিলো। এমনকি ফরীদি ভাই আমাকে বলেছিলেন, তুমি ভবিষ্যতে যতো কাজ করবা আমাকে বললেই হবে। ‘ফিরে এসো বেহুলা’ করার পর আমাদের বেশ ভালো যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ছবিটি তিনি দেখে যেতে পারেননি। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়। কিন্তু তিনি দেখতে আসতে পারেননি। আমাকে বলেছিলেন ডিভিডি পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু এরপরেতো তিনি অসুস্থই হয়ে যান। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি তিনি মারা যান।
‘ফিরে এসো বেহুলা’ ছবিতে হুমায়ূন ফরীদি ছাড়াও অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, মামুনুর রশিদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তৌকীর আহমেদ, শতাব্দী ওয়াদুদ, ইন্তেখাব দিনারসহ অনেকে।
ঈদের পঞ্চম দিন সকাল সোয়া ১০টায় চ্যানেল আইতে ছবিটির ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে।