সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
ছবিটি দেখতে বসেই একটু যেনো হোঁচট খেলাম। অভিনয় করছেন রনবীর কাপুর। অথচ সঞ্জয় দত্তের উপস্থিতি অনুভব করছি। পরে আসল রহস্য উন্মোচিত হলো। সঞ্জয় দত্তের ভ‚মিকায় অভিনয় করছেন রনবীর কাপুর। ছবির নাম ‘সঞ্জু’। ভারতের বিশিষ্ট অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের জীবনভিত্তিক এ ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা, সোনম কাপুর, পরেশ রাওয়াল সহ অনেকে। ছবিটি দেখতে দেখতে অনেক কথাই মনে পড়ছিলো। সঞ্চয় দত্ত বেঁচে আছেন। তাঁর জীবদ্দশায় তারই জীবন কাহিনী নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে এটা কি আদৌ সম্ভব? প্রয়াত কথাসাহিত্যিক নির্মাণের মহান কারিগর হুমায়ূন আহমেদের জীবনভিত্তিক একটি সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এব্যাপারে তাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো কিন্তু সঞ্জয় দত্তের জীবন কাহিনী নিয়ে রাজকুমার হিরানী ‘সঞ্জু’ নামে যে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তার ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি উঠেছে বলে এখনও শুনিনি। বরং ছবিটির উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করা হচ্ছে প্রচার মাধ্যমে।
এই ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খুঁজে বের করার কাজটি অনেক যতেœর সাথে পালন করেছেন পরিচালক। সঞ্জয় দত্তের মা নার্গিস দত্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনিষা কৈরালা। ছবি দেখার সময় মনীষাকেই আমার মনে হয়েছে নার্গিস দত্ত। দু’জনের চেহারার মধ্যে দারুন মিল। চোখের ভাষাও প্রায় একই রকম। আর সঞ্জয় দত্তের ভ‚মিকায় রনবীর কাপুরকে যথার্থ মনে হয়েছে। বিশেষ করে রনবীরের কণ্ঠে সঞ্জয় দত্তের ভরাটকণ্ঠ ছবিটিকে বিশ্বস্থ করে তুলেছে। সঞ্জয় দত্তের বাবা সুনীল দত্তের ভ‚মিকায় পরেশ রাওয়াল অনবদ্য অভিনয় করেছেন।
ছবিটির অন্যতম আকর্ষণ রনবীর কাপুরের সু অভিনয়। তাকে দেখে কখনই মনে হয়নি তিনি সঞ্জয় দত্ত নন। বরং কখনও কখনও মনে হয়েছে সঞ্জয় দত্তই যেনো তার নিজের জীবন চরিত্রে অভিনয় করছেন। আর মায়ের চরিত্রে মনিষা কৈরালাকে দেখে বার-বার নার্গিসের চেহারাই চোখের সামনে ভেসেছে। মনে হয়েছে নার্গিসই যেনো তার জীবন চরিত্রে পর্দায় অভিনয় করছেন।
ছবিটির ব্যাপারে অবশ্য নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন সঞ্জয় দত্ত কোনো মহান ব্যক্তি নন যে তার ওপর বায়োপিক করতে হবে। মনিষা কৈরালা এই ব্যাপারে খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব সময় মহান ব্যক্তিত্বের ওপরই যে বায়োপিক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সঞ্জয়ের জীবনের কাহিনী ভীষনই ইন্টারেস্টিং। ওর জীবন ভুলে ভরা। ওর জীবন অন্য পাঁচজনের জীবনের মতো নয়। এই ছবির মাধ্যমে কখনই তাকে মহান হিসেবে দেখানো হয়নি। ছবিটিতে বাবা-ছেলে, দুই বন্ধুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটা একটা মানুষের জীবনের গল্প। যা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
সঞ্জু’ ছবিটি দেখে মনিষা কৈরালার এই কথাগুলোই বার-বার ভেবেছি। নেশা, সর্বনাশা নেশা একজন মানুষের জীবনে কতটা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে ‘সঞ্জু’ ছবি দেখলে তা অনুভব করা যাবে। প্রিয় পাঠক, সময় করে ছবিটি দেখতে পারেন।
রণবীর যেভাবে সঞ্জয় হয়ে উঠলেন
কোনটা আসল, কোনটা নকল, দেখলে বোঝা দায়। নিজেকে ভেঙেচুড়ে যে একেবারেই অন্যের মতো করা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন রণবীর কাপুর। হাঁটা, চলা, কথা-বলা। যেভাবে তাকাচ্ছেন, সেটা যেন সঞ্জুবাবা। যেভাবে অঙ্গভঙ্গি করছেন একেবারেই সঞ্জুবাবা।
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা রণবীর কাপুরকে এভাবেই দেখা গেলো সঞ্জয় দত্তের জীবনী নির্ভর ছবি ‘সঞ্জু’তে। রণবীরের এমন রূপ দেখে হতবাক গোটা বলিউড। সবার মুখে একটাই কথা, ইনি রণবীর কাপুর নাকি, সঞ্জয় দত্ত!
রাজকুমার হিরানি পরিচালিত এই ছবিতে রণবীরের অভিনয় দুর্দান্ত বলছেন সব শ্রেণির দর্শক। প্রশংসায় ভাসছেন রণবীর। সবার মুখে যেনো একটায় কথা, কীভাবে এমন রূপ বদল করলেন তিনি?
না। এমনি এমনি সঞ্জয়ের রূপ ধারন করেননি রণবীর। এরজন্য তাকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এই যেমন ভোর তিনটায় ঘুম থেকে উঠে শুটিংয়ে যাওয়া, দিনে আটবার খাবার খাওয়া সহ অনেক নিয়ম মানতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি ‘সঞ্জু’ নির্মাতা একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। যেখানে সঞ্জয় দত্ত হিসাবে রণবীর কাপুরকে গড়ে তুলতে কত রকম লুক পরীক্ষা করা হয়েছিল তা বর্ণনা করেছেন।
‘সঞ্জু’তে রণবীরের লুক নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিওতে পেছনের গল্প বলেছেন হিরানি। তিনি বলেন, আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সঞ্জয় দত্তের ভ‚মিকায় কে অভিনয় করবে? কারণ এমন একজনকে প্রয়োজন ছিল যে সঞ্জুর মতো আচরণ করবে, সঞ্জুর মতো দেখতে হবে এবং তার মতোই অনুভব করবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে পাওয়া গেল রণবীরকে। যার ফলাফল এখন দেখছেন সকলে।
গেল ২৯ জুন মুক্তি পেয়েছে ‘সঞ্জু’। মুক্তির পর থেকেই ছবিটি বক্স অফিসেও দাপট দেখাচ্ছে।