সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে শ্যাহলা করিম কবির, মিনহাজ বিন গফফার, শুভ্র শোভন চৌধুরী, সায়কা ইকবাল ও নাজমুল আহসান অন্যতম। ১৯৮৫ সালে শ্যাহলা করিম কবির অস্ট্রেলিয়ার সিডনী ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। আর বাকী চারজনই পাস করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে। ২০১১ সালে সায়কা ইকবাল মাস্টার্স করেন স্পেনের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড আর্কিটেকচার অফ ক্যাটালনিয়া (আইএএসি) থেকে। আর শুভ্র শোভন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে মাস্টার্স করেন। ২০১৪ সালে পাঁচজন মিলে গড়ে তুলেছেন ‘ষ্টুডিও মরফ জেনেসিস লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। স্বনামধন্য স্থপতি শ্যাহলা করিম কবির এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করে অনেকের নজর কেড়েছে। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে এই পাঁচজন স্থপতিকে নিয়ে প্রকাশ করা হলো প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।
দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট আর্কিটেক্ট শ্যাহলা করিম কবির। তার গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলায়। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা বিভিন্ন দেশে বাবা-মার সাথে। বিদেশেই তিনি ‘এ’ লেভেল- ‘ও’ লেভেলে পাস করেন। তার স্কুল জীবন কাটে আমেরিকায়। ১৯৮৫ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ¯œাতক পাস করেন। বাবার নাম এনায়েত করিম। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন। মা হোসনে আরা করিম। তার মা-বাবা, বড় বোন কেউ বেঁচে নেই। স্বামীর নাম এলদেন কবির। তিনি সোসাইটি ফর প্রমোশন অব বাংলাদেশ আর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থপতি মিনহাজ বিন গফফার এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। মিনহাজের বাবা মো: আব্দুল গফফার ব্যবসায়ী ছিলেন। মা আফরোজা গফফার গৃহিণী। দুই ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট আর্কিটেক্ট মিনহাজ বিন গফফার। ছোটবেলা থেকেই আঁকা আঁকির প্রতি ছিল তার প্রচÐ নেশা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে ছবি আঁকা শিখতেন। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রোগ্রামের সাথে জড়িত ছিলেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরটরী স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৯ সালে। ২০০১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে।
২০০৮ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই মিনহাজ যোগ দেন ‘ভেনচুড়া প্রপার্টিজ লিমিটেড-এ’। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে পাঁচ বছর কাজ করেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সোনিয়া শাহনাজ। পেশায় তিনিও একজন আর্কিটেক্ট।
স্থপতি শুভ্র শোভন চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের দোহাজারীতে। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার বাবার নাম সুব্রত চৌধুরী। তিনি একজন স্বনামধন্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট। মাতা সিপ্রা চৌধুরী গৃহিনী। উদয়ন স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৯ সালে। ২০০১ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৪-২০১৫ সালে শুভ্র শোভন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
স্থপতি সায়কা ইকবাল মেঘনার বাড়ি ঢাকায়। সায়কার বাবার নাম মৃত ইকবাল উদ্দিন। তিনি পেশায় একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। মা সেলিনা আহমেদ গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে মেঝ আর্কিটেক্ট সায়কা ইকবাল। তার ছোট বোন সারওয়াত ইকবালও একজন আর্কিটেক্ট। মোহাম্মদপুর প্রিপ্রারেটরী স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৯ সালে। ২০০১ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১১ সালে সায়কা ইকবাল মেঘনা স্পেনের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড আর্কিটেকচার অফ ক্যাটালনিয়া থেকে উরমরঃধষ ঞবপঃড়হরপং এ মাস্টার্স করেন। মাস্টার্স শেষ করার পর দেশে ফিরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্থপতি হিসেবে ২০১৫ সালে গø্যান মারকাট ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ক্লাস এ অংশ গ্রহণ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে স্কলারশিপ অর্জন করেন।
স্থপতি নাজমুল আহসানের বাড়ি পুরান ঢাকার লালবাগে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। নাজমুলের বাবার নাম মৃত আব্দুস সালাম। মা মৃত নাজিরা খাতুন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সেঝ আর্কিটৈক্ট নাজমুল আহসান। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৭৯ সালে। ১৯৮১ সালে একই কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ১৯৮৯ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন।
২০১৪ সালে শ্যাহলা করিম কবির স্থপতি মিনহাজ বিন গফফার, স্থপতি শুভ্র শোভন চৌধুরী, স্থপতি সায়কা ইকবাল মেঘনা ও স্থপতি নাজমুল আহসানকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘স্টুডিও মরফজেনেসিস লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। গুলশান-১ এ তারা খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন। একই রুমে পাঁচজন পাশাপাশি বসে অফিস করেন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, অফিস বিল্ডিং সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ গুলশানের ইষ্টার্ন হাউজিং লিমিটেড এর দশতলা আবাসিক ভবনের ডিজাইন, সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং সামিয়া হকের আবাসিক ভবনের ডিজাইন, নাসির মোহাম্মদ খানের আবাসিক ভবনের ডিজাইন, আশুলিয়ার আই.ডি.এস গ্রæপের ওয়াশিং হাব ভবনের ডিজাইন, বারিধারার ফাহমি মুরসালিনের দশ তলা আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, গুলশানের এসিআই লিমিটেড এর কার্যালয়ের ইন্টেরিয়র, বনানীর স্কয়ার কুনজ্যুমার ফুডস লিমিটেড করপোরেট অফিসের ইন্টেরিয়র, মেঘনা গ্রæপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর ডিরেক্টর তানজিমা মোস্তফার ডুপলেক্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, আইডিএস অ্যাডড্রেস মেকার এর চেয়ারম্যান মি: ইদ্রিস শাকুরের আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, গুলশানের সোসাইটি ফর প্রমোশন অফ বাংলাদেশ আর্ট অফিসের ইন্টেরিয়র, এস এফ আর রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র, ইসলাম গ্রæপের হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, বনানীর ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড করপোরেট অফিসের ইন্টেরিয়র, আশুলিয়ার আরকরপ ডেনিম লিমিটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল অফিসের ইন্টেরিয়র, গুলশানের সোসাইটি ফর প্রমোশন অফ বাংলাদেশ আর্ট গ্যালারীর ইন্টেরিয়র, এডিসন গ্রæপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া শহিদের আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের ইন্টেরিয়র, এসিআই লিমিটেড হেড অফিসের ইন্টেরিয়র সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা। এই প্রতিষ্ঠানের স্থপতিরা বলেন, গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের স্থাপত্য চর্চা প্রকৃত অথবা তথা কথিত অপ্রকৃত প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়ে আসছে যা অনেকাংশে এ দেশের স্থাপত্যের চরিত্র প্রকাশে ভ‚মিকা রেখেছে। বড় পরিসরে বললে আমরা এমন একটি রূপান্তরের মধ্যে আছি। যেখানে আমাদের আন্তরিক চেষ্টাই পারে এ অঞ্চল তথা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্থাপতিক চরিত্র প্রতিষ্ঠিত করতে।
স্টুডিও মরফজেনেসিস প্রতিষ্ঠানের স্থপতিরা বিচক্ষণতা এবং দক্ষতার সাথে সমসাময়িক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সাপেক্ষে নিজেদেরকে একটি সদা পরিবর্তনশীল বিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থার অংশ বলে বিবেচনা করে।