Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আবার এলো খুশির ঈদ

রেজানুর রহমান
একটা সময় ছিল ঈদ উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক আনন্দ হতো। ব্যাপক বলতে এটা বুঝাতে চাচ্ছি যে যার কোনো সীমা-পরিসীমা নাই। সীমাহীন আনন্দ। এখনকার ছেলে-মেয়েরা হয়তো প্রশ্ন করতে পারে সীমাহীন আনন্দ তো এখনও হয়। তা ঠিক। ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে কত কিছুই তো হয়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের এই ঈদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় পবিত্র রমজান মাস শুরুর সাথে সাথে। নতুন জামা কাপড় কেনাকাটার পাশাপাশি ভালো খাবারের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন গৃহিণীরা। তাদের এই ব্যস্ততা অতীতকালেও ছিল। তবে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সময় পাল্টানোর মতো ঈদ উৎসবের আঙ্গিকগত পরিবর্তনও হয়েছে।
পিছন ফিরে বেশি দূর যেতে হবে না। ৮০’র দশকের কথাই যদি ধরি তাহলে কেমন ছিল সে সময়ের ঈদ উৎসব? ওই সময়েও ঈদকে কেন্দ্র করে নাড়ীর টানে গ্রামে ফিরতো শহরের অধিকাংশ মানুষ। বর্তমান সময়ের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দৌরাত্ম্য ছিল না সে সময়। টিভিই ছিল ঈদ বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। নতুন মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমাও ছিল ঈদ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। শহর থেকে যারা গ্রামে যেতেন তারা সময় বের করে ঈদের দিনে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যেতেন। অন্যেরা বেড়াতে আসতো। আর এখন আমরা যাকে নাড়ির টান বলি সেই টানেই শহর ছাড়ে লোকজন। কিন্তু তাতেও কি অবসর পাবার জো আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে নাড়ীর টানে গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষগুলো অতীতকালের মতো গ্রাম দেখতে বের হয় না। বরং গ্রাম দেখার চেয়ে অথবা আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করার পরিবর্তে ড্রয়িং রুমে টিভি সেটের সামনে বসে সময় কাটাতে ভালোবাসে। টিভিতে অনুষ্ঠান দেখে ঠিকই। কিন্তু অনেকেরই টিভির প্রতি মনোযোগ থাকে না। বরং যত মনোযোগ মোবাইল ফোনের প্রতি। দুই হাতের মাধ্যমে মোবাইলে চালাচালি হয় জরুরি, অজরুরি নানান কথাবার্তা।
গত বছর পবিত্র রমজানের ঈদে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক ভদ্রলোক। বেসরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা পদে চাকরি করেন। গ্রামে যাবে বলে তার ছেলে-মেয়েরা বেজায় খুশি। সড়ক পথে রওয়ানা দিলেন। পথের যানজট সবার মেজাজ বিগড়ে দিল। ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার পথ পেরুতে সময় লাগলো পাক্কা ১২ ঘণ্টা। ছেলে-মেয়েদের অবস্থা কাহিল। গ্রামে গিয়ে ওই যে ওরা ঘরের ভেতর ঢুকলো আর বের হয় না। এলাকার লোকজন দেখা করতে এসে ফিরে যায়। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের কোনো বিকার নাই। বরং তারা বিরক্ত। এভাবে দেখা করতে আসার কি আছে? ঈদের দিনও তাদেরকে বাড়ির বাইরে নেয়া গেল না। খায় দায়, টিভি দেখে আর ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। ভদ্রলোকের মা বেঁচে আছেন। তাই এবারও তিনি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন। ছেলে-মেয়েদেরকে অনেক বুঝিয়েছেন, গ্রামে গিয়ে যেন একেবারেই ঘরের মধ্যে পড়ে না থাকে। আশে-পাশের বাড়ির লোকজন দেখা করতে এলে যেন দেখা করে। ছেলে-মেয়েরা এবার কথা দিয়েছে গতবারের মতো ভুল হবে না। কিন্তু ভদ্রলোক বেশ সন্দিহান, এবারও গত বছরের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। প্রসঙ্গ তুলে তিনি নিজেই এর ব্যাখ্যা দিলেন, ছেলে-মেয়েদেরকেই বা দোষ দেই করে। তাদের হাতে কাছে আনন্দ বিনোদনের অফুরান সুযোগ সুবিধা। তাই ডাইনিং টেবিলে ভাত খেতে বসেও কেউ কেউ মোবাইল টিপে। গান শুনে, সিনেমা দেখে আর ভাত খায়।
এ এক আজব সময় পার করছি আমরা। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী সত্যিকার অর্থে এসেছে হাতের মুঠোয়। অস্ট্রেলিয়ার রাত আর বাংলাদেশের দিন একাকার হয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। মোবাইল ফোনে কথা বলা খুবই সহজ। আমেরিকার বাসায় বসে কেউ করেছে টেলিফোন। ঢাকায় ভার্সিটিতে যেতে যেতে তার সাথে কথা হচ্ছে। অথবা ফেসবুকে কথা চালাচালি হচ্ছে। আনন্দের প্রকাশ ভঙ্গি বদলে গেছে। ঈদ উৎসবেও এর রেশ পড়েছে। মোবাইল ফোন আমাদেরকে ব্যক্তি কেন্দ্রিক করে গড়ে তুলছে। আমরা কোনো উৎসবে গেলেও মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তৃতা না শুনে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকি।
অনেকে বলেন, যুগটাই এমন। কাজেই যুগের সাথে তো তাল মিলাতেই হবে। এখানেই আমাদের আপত্তি। যুগ তৈরি করে কে? মানুষই তো। তাহলে যুগ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে নাকি মানুষই যুগকে নিয়ন্ত্রণ করবে?
ঈদ মানে খুশি আর অনাবিল আনন্দের দিন। ঈদের এই মওসুমে মন খুলে আনন্দ করুন। পবিত্র রমজান মানেই সিয়াম সাধনার মাস। নিজেকে শুদ্ধ করার পবিত্র মাস। নিজেকে শুদ্ধ করা মানে সৎ ও ত্যাগী মানুষে নিজেকে তৈরি করা। এই রমজানে দুস্থ প্রতিবেশীকে সহায়তা করার মাধ্যমে ত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে দিতে পারেন। সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।