Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নতুন পরিচয়ে আসছেন মাশরাফি!

আমাদের ক্রিকেটের রাজপুত্র মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান ক্রিকেটের রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে রাজনীতির মাঠে নামছেন বলে প্রচার মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ নিয়ে সারাদেশে ক্রিকেট ভক্ত ও সাধারন মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মাশরাফি ও সাকিব রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন অর্থাৎ আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এই সংবাদ শুনে অনেকেই খুশি হয়েছেন। ফেসবুকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে এখনই মাশরাফি ও সাকিবকে রাজনীতির মাঠে না নামার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি। ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের সাথে ৩ ম্যাচের টি-২০ খেলতে যাবেন। ঢাকায় মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রাকটিস করছিলেন মাশরাফি। সেখানেই কথা হলো তাঁর সাথে।

আনন্দ আলো: কেমন আছেন?
মাশরাফি: (মৃদু হেসে) এই তো আছি একরকম…
আনন্দ আলো: ভারতের মাটিতে আফগানিস্তানের সাথে ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছেন কেমন মনে হচ্ছে?
মাশরাফি: ভালোই তো…। আশাকরি খেলা জমবে।
আনন্দ আলো: এই খেলায় ফেবারিট দল কে? বাংলাদেশ নাকি আফগানিস্তান?
মাশরাফি: আমি তো মনে করি বাংলাদেশ…
আনন্দ আলো: তবে যে সাকিব আল হাসান বলেছেন আফগানিস্তানই ফেবারিট…
মাশরাফি: সাকিবের কথায় যুক্তি আছে। টি-২০ ক্রিকেটের র‌্যাংকিং এ আফগানিস্তানের অবস্থান এখনও বাংলাদেশের উপরে। কাজেই তারা তো আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। তাছাড়া টি-২০ ম্যাচে আগাম কিছু বলা যায় না। যে কোনো ছোট দলও জেগে উঠতে পারে। যে কোনো বড় দলও খারাপ খেলতে পারে।
আনন্দ আলো: সাকিব আল হাসানের আগাম মন্তব্য অনেকের পছন্দ হয়নি… এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
মাশরাফি: (মৃদু হেসে) দেখুন, আমরা যারা মাঠে খেলি তারা আসলে বুঝি বাস্তবতাটা কতটা কঠিন। যারা সমালোচনা করেন তারা তো আর মাঠে খেলেন না। কাজেই তারা সমালোচনা করতেই পারেন।
আনন্দ আলো: তাই বলে বাংলাদেশের সাথে আফগানিস্তানের খেলায় আপনি আফগানিস্তানকেই ফেবারিট বলবেন?
মাশরাফি: আবারও আপনাকে বাস্তবতার কথা ভাবতে বলছি। আমরা টি-২০ তে এখনও পিছিয়ে আছি। তবে আফগানিস্তানের সাথে ভালো করার একটা সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।
আনন্দ আলো: কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের অভাব কেমন বোধ করছেন?
মাশরাফি: ও দলে থাকলে ভালো হতো। প্রতিপক্ষ দলের মানসিক শক্তিকে দুর্বল করতে পারতো। যেমন আফগানিস্তানের আব্দুর রশিদকে নিয়ে আমাদের দলে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কোনো কারণে ওদের দলে রশিদ খান না থাকলে আমরা হয়তো একটু নির্ভার থাকতাম। তেমনি মোস্তাফিজ না থাকায় ওরা হয়তো কিছুটা নির্ভার থাকবে। তবে আমি প্রসঙ্গ ক্রমে একটা কথা বলতে চাই… দলে মোস্তাফিজুর নাই এর ফলে তরুণ অন্য খেলোয়াড়দের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার দলে কিছু তরুণ সদস্য আছে। তাদের উচিত হবে নিজেদেরকে সঠিক ভাবে মেলে ধরার। আমাদের দেশের বিশিষ্ট অভিনেতা বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রী আমার অনেক শ্রদ্ধার মানুষ আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় জীবনের একটা মজার ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ঘটনাটা পত্রিকায় পড়েছিলাম। তাদের দলের নতুন মঞ্চ নাটকের মহড়া চলছে। আসাদুজ্জামান নূর ওই নাটকে কোনো ক্যারেকটার পাননি। কিন্তু প্রতিদিনই সময়মতো মহড়ায় আসেন। একদিন দলের একজন সিনিয়র অভিনেতা মহড়ায় এলেন না। মহড়া চালিয়ে যাবার জন নির্দেশক হঠাৎ করে আসাদুজ্জামান নূরকে ওই অভিনেতার হয়ে প্রক্সি দিতে বললেন। আসাদুজ্জামান নূর মহড়ায় দাঁড়ালেন। বিশেষ কোনো কারণে দলের সেই সিনিয়র অভিনেতা প্রায় ৭দিন মহড়ায় আসতে পারলেন না। একদিন মহড়ায় এসে দেখলেন আসাদুজ্জামান নূর পুরো নাটক মুখস্থ করে ফেলেছেন এবং তার চেয়ে ভালো অভিনয় করছেন। সাথে সাথেই সিনিয়র অভিনেতা নাটকের নির্দেশকের কাছে প্রস্তাব দিলেন, আমাকে বাদ দিন। নূর আমার চেয়ে অনেক ভালো অভিনয় করছে। কাজেই ওই অভিনয় করুক। আমার ধারণা আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা বাস্তব এই গল্প থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।
আনন্দ আলো: নাটক সিনেমার কথা যখন উঠলো তখন একটা প্রশ্ন করি মঞ্চে নাটক দেখেন…
মাশরাফি: (মৃদু হেসে) এখন কি ভাই এইসব প্রশ্নের উত্তর দেবার সময়… আপনি অন্য প্রশ্ন করেন। সময় খুব কম…
আনন্দ আলো: অনেক কষ্টে আপনার দেখা পাওয়া গেল। তাই… প্রশ্নটা করলাম। আপনি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভালোই অভিনয় করেন…
মাশরাফি: খেলার বাইরে প্রশ্ন করবেন না।
আনন্দ আলো: কিন্তু ভাই আমাদের তো আরও অনেক প্রশ্ন করার ছিল…
মাশরাফি: (আশে পাশে দেখে নিয়ে) এখন আর কথা বলা সম্ভব নয়। আপনি অন্য সময় যোগাযোগ করেন… দলের সাথে প্রাকটিস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমাদের মাশরাফি। পরের দিন সকালে হোটেলের সামনে একটু হাঁটতে বেড়িয়েছেন মাশরাফি। হাঁটতে হাঁটতেই আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
আনন্দ আলো: ভাই আপনি নাটক সিনেমা দেখার সুযোগ পান?
মাশরাফি: না। সময় কোথায়?
আনন্দ আলো: আপনার হাসিটা এত সুন্দর কেন?
মাশরাফি: আমি সেটা কি করে বলব? তবে ছোটবেলা থেকেই আমি সব সময় পজিটিভ চিন্তা করতাম। সে কারণে হয়তো আমি মুখ গোমড়া করে থাকতে পারি না। সারাক্ষণ হাসি মুখে থাকতে চাই।
Shakib-Mashআনন্দ আলো: আপনাকে দেখলেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। কেন?
মাশরাফি: বেশি প্রশংসা হয়ে গেল না। অন্য প্রশ্ন করেন।
আনন্দ আলো: আপনার কাছে জীবনে সাফল্য লাভের মূল মন্ত্র কী?
মাশরাফি: জীবনে সাফল্য লাভের মূল মন্ত্র হলো অধ্যবসায় এবং সততা। অন্যেরটা ভাববেন না। আপনি নিজে কি হতে পারেন সেটাই ভাবুন। সততার সাথে অধ্যবসায় করুন। দেখবেন একদিন না একদিন সাফল্য আসবেই।
আনন্দ আলো: দেশ আপনার কাছে কি?
মাশরাফি: দেশই তো আমার কাছে সবকিছু। এই যে দেরাদুনে খেলতে যাচ্ছি সেটাতো দেশের জন্যই। খেলায় জিতলে দেশ খুশি হয় সেজন্য সারাক্ষণ জেতার চেষ্টা থাকে আমাদের। বিশ্বাস করুন ক্রিকেটে জিতলেই গোটা দেশকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করে। দেশের পতাকাটা যখন বুকে জড়িয়ে নেই তখন কি যে শান্তি লাগে।
আনন্দ আলো: দেশের জন্য নতুন পরিচয়ে কাজ করার কথা ভাবছেন কি?
মাশরাফি: আপনার প্রশ্নটা বুঝলাম না।
আনন্দ আলো: প্রচার মাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে আপনি এবং সাকিব আল হাসান দু’জনই নাকি আগামীতে জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়াবেন…
মাশরাফি: (ভেবে নিয়ে) প্রচার মাধ্যমে খবর শুনেছেন… কিন্তু আমরা কি একবারও বলেছি নির্বাচনে দাঁড়াব…?
আনন্দ আলো: না মানে এই কথাটা জানার জন্যই মূলত আপনার কাছে ছুটে আসা।
মাশরাফি: আপনাদের কি মনে হয় জাতীয় নির্বাচনে আমরা কি প্রার্থী হতে পারি না?
আনন্দ আলো: অবশ্যই পারেন। আপনারা নির্বাচনে দাঁড়ালে দেশের মানুষ অনেক খুশি হবে। প্রশ্নটা অন্যখানে…
মাশরাফি: প্রশ্নটা অন্যখানে মানে…
আনন্দ আলো: আপনি এবং সাকিব আল হাসান আমাদের ক্রিকেটের দুই শক্তিশালী স্তম্ভ। আপনারা জাতীয় নির্বাচন করলে তো আর ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দল কি সেজন্য প্রস্তুত। একজন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ আপাতত দলে নাই। তাতেই দুশ্চিন্তা বেড়েছে… আর আপনারা না থাকলে দলের কি হবে?
মাশরাফি: (ভেবে নিয়ে) দেখুন সাকিবের কথা বলতে পারবো না। আমার নিজের কথা বলি। দেশের প্রয়োজনে যা-যা করা দরকার আমি করতে রাজি আছি। তবে সে ক্ষেত্রে সব সময় ক্রিকেটই এগিয়ে থাকবে। খেলোয়াড়দের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে এখনই নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে চাই না। আমাদের এই উপমহাদেশে ক্রিকেটারদের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনেক নজীর আছে। ভারতের সচীন টেন্ডুলকার, আজহার উদ্দিন সহ অনেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। পাকিস্তানের ইমরান খানতো একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শ্রীলঙ্কায় একাধিক ক্রিকেটার জাতয়ী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মন্ত্রীও হয়েছেন। আমাদের দেশেও এর নজীর রয়েছে। কাজেই দেশের প্রয়োজনে আমি যে কোনো দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত।
আনন্দ আলো: তার মানে আপনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন?
মাশরাফি: এখনই সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না। সময় সেটা প্রমাণ করবে।
আনন্দ আলো: আপনি জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান এটা তো সত্য? একথাতো লিখতে পারি।
মাশরাফি: (মৃদু হেসে) দেশের প্রয়োজনে যে কোনো দায়িত্ব পালন করতে চাই…
হঠাৎ আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি সকাল হয়েছে। তাহলে কি এটা স্বপ্ন ছিল? প্রচার মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। এর সত্যতা যাচাই করার জন্য সাকিব আর মাশরাফির সাথে যোগাযোগ করা দরকার। সম্পাদক বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। তাকে যতই বলি দু’জনকে এখন পাওয়া যাবে না। দেরাদুনে টি-২০ খেলতে গেছেন… তিনি ততই আমাকে তাড়া দিচ্ছিলেন। রাতে মনে মনে ভাবছিলাম, আচ্ছা হঠাৎ যদি মাশরাফির সাথে দেখা হয়েই যায় তাহলে তাকে কি কি প্রশ্ন করবো… অতঃপর স্বপ্নে দেখাই হলো মাশরাফির সাথে…