Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কর্পোরেট অর্থনীতি

দেশের তথ্য প্রযুক্তি, ব্যবসা বাণিজ্য, বিজ্ঞাপন এবং বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত নাম আব্দুল্লাহ এইচ কাফি। সাবেক চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিও, বেসিস এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জে.এ.এন এসোসিয়েস এবং ডিস্ট্রিবিউটর, ক্যানন বাংলাদেশ, ফারুক মঈনউদ্দীন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন, ম্যানেজিং পার্টনার ও কান্ট্রি হেড, গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং বাংলাদেশ। সম্প্রতি দেশের বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজু আলীম।

সময়টাই সবাই মিলে এক কথা বলার

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন, ম্যানেজিং পার্টনার ও কান্ট্রি হেড, গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং বাংলাদেশ

আনন্দ আলো: বাংলাদেশের বিনোদন এবং বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি একটু একটু করে বেড়ে চলেছে। নতুন মেকারদের ফাইন্যান্সিয়েং এর জন্যে কেউ থাকে না- এক্ষেত্রে অন্তরায়গুলো কি?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: গেল ৪৫ বছরে আমাদের ভ্যালুর অবনমন হয়েছে। আমরা পুঁজিবাজারে যাব নাকি মানুষকে ঠকাবো কি ঠকাবো না? আমি সৎ থেকে ব্যবসা করবো নাকি অন্যায় করবো? এই মরাল দিকে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের টাকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের যদি মরালি ক্ষতি হয়, কালচারাল জিডিপি যদি ম্যানেজ করতে না পারি- কারণ তা আমাদেরকে একটা এলাইনমেন্টে আনে যে, জাতি হিসেবে আমরা কি চাই? আমরা কোথায় পৌঁছাতে চাই। সেইখানে জাতি হিসেবে সবাই একসাথে এগিয়ে যেতে না পারলে হবে না। একবার আগাবো আরেকবার পিছাবো এইরকম করতে পারি তাহলে তো হবে না? একই দেশের ভেতরে সবাই ছোট ছোট সবাই নানা রকম মত নিয়ে ঘোরা ফেরা করছি।

আনন্দ আলো: আমাদের পাশের দেশগুলোতে কিন্তু এই দেশ প্রেমের জায়গায়  এক সবাই?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: দেশপ্রেম একটা ভেক টার্ম। আমাদের এলাইনমেন্ট এবং ভ্যালুজ এর ক্ষেত্রে ছোট জায়গা আছে। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশ গরিব সবাইকে বড় হতে হবে। এই জন্যে আমাদের মরাল জায়গা থেকে কিছুটা সরে এসেছি আমরা। যার কারণে সংস্কৃতি অশিক্ষিত মানুষের কাছে চলে গেছে।

আনন্দ আলো: মেধাবীরা বিনিয়োগের অভাবে ভালো কাজ করতে পারছে না। আরেক দিকে টাকা ওয়ালারা যাদের অনেকের মেধা নাই তারা ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্বে আছেন?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: এটি ভালোভাবে দেখার কিছু নাই। এইরকম হওয়ার কথা না। সবকিছুরই নিজস্ব একটা চালচলন থাকে সেভাবেই সবকিছু করতে হয়। তাই আমাদের চ্যানেল বলেন আর সিনেমা ব্যবসা বলেন কিংবা সিনেমা হল মালিক বা টোটাল নেটওয়ার্ক সব জায়গাতেই যা হয়েছে তা হলো ভুল লোক ভুল ব্যবসায় ঢুকে পড়েছে। আমরা কি করে এখন ঠিক জায়গায় ফেরত যাব এটিই বড় সমস্যা এখন? কিন্তু আমার মনে হয় এটি খুব কঠিন কাজ না। শুধু সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমাদেরকে এলাইনমেন্টে পৌঁছতে হবে- একটি উদাহরণ দিতে চাই। যখন হলি আর্টিজন ঘটলো তখন কোন চ্যানেলের কাছে দেখিনি একটি সোশ্যাল ম্যাসেজ। তাদের উচিত ছিল সবাই একসাথে বলা যে, আসলে আমরা এইরকম না। এখন দেখেন রাস্তায় শিশু বা মেয়েরা অ্যাবইউজ হচ্ছে কিন্তু এটি নিয়ে আমরা সবাই মিলে কি কিছু করছি? উত্তর- না। এখন কিন্তু সবাই মিলে করার দারুণ সুযোগ। এতগুলো চ্যানেল এত এত নিউজ মাধ্যম। সবাই মিলে এক সাথে দারুণ কিছু করা সম্ভব। সবাই মিলে এক কথা বলা। তাহলে যাদের যে দুরভিসন্ধি আছে তারা কিন্তু ঘাবড়ে যাবে- যদি সবাই মিলে আমরা এক কথা বলি। কিন্তু এক সাথে কোন কিছু হচ্ছে না। আমাদের আরও গুছিয়ে কাজ করা উচিত। আমরা যদি মনে করি এই সব করে ব্যবসা হবে না। তা কিন্তু ভুল হবে। শুরু করলে সবকিছু থেকেই ব্যবসা হয়। আমরা যখন আয়নাবাজি করি, তখন আমাকে অনেকেই বলেছিল- এই দেশে সিনেমা করে এখন আর ব্যবসা হয় না। কিন্তু ঠিকই এই সিনেমা ব্যবসা করেছে। আবার বানানোর পরে যখন লোকেদের দেখিয়েছি অনেকেই বলেছেন, এই ছবি কেউ দেখবে না। কারণ এই সিনেমায় পরিচিত কোনো হিরো নাই। রগরগে কোনো দৃশ্য নাই। কিন্তু তারপরেও আয়নাবাজি হিট হয়েছে। বিজ্ঞাপন করতে গিয়ে কনজ্যুমার এবং মানুষদের আমাদের বুঝতে হয়। এতে কিন্তু আমাদের সুবিধা হয়েছে। বিজ্ঞাপনে ডেমেগ্রাফিক সাইকোগ্রাফিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং লাগে। যারা বলছে এই ছবি চলবে না। তাদের কাছে পরিসংখ্যানই নাই কত পারসেন্ট লোক ইন্টারনেট ইউজ করে যারা বেশিরভাগই তরুণ। এরাই কিন্তু ছবিকে হিট বানানোর জন্যে যথেষ্ট।

ইন্ডাস্ট্রিতে মূল্যবোধ এবং নীতি নৈতিকতা নিয়ে ভাববার সময় হয়েছে

Kafiআব্দুল্লাহ এইচ কাফি, সাবেক চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিও, বেসিস

ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জে.এ.এন এসোসিয়েস এবং ডিস্ট্রিবিউটর।

আনন্দ আলো: বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি এবং বিনিয়োগের সুযোগ সব মিলিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি: এক কথায় বলা যায় অবশ্যই ইনভেস্টমেন্টে ফ্রেন্ডলি এনভায়রনমেন্ট বিরাজ করছে কিন্তু আমরা যদি গেøাবাল কম্পিটিভিনেস নিয়ে চিন্তা করি এখানে আরও অনেক কাজ করার আছে। বিনিয়োগের জন্যে শুধু ওই টুকুই না আরও অনেক কিছু প্রয়োজন। বর্তমানে সারা পৃথিবী ছোট্ট একটি দেশ হয়ে গেছে তাই এখানে আরও অনেক কাজ করার আছে। আমাদের পাশের দেশ বা সারা পৃথিবীর কর্ণারগুলো থেকে বিনিয়োগের জন্যে অনেক অফার বা ইনসেনটিভ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে এ আমরা পিছিয়ে আছি। যদিও আমরা চেষ্টা করছি। আমরা হয়তো হাঁটছি না, দৌড়াচ্ছি কিন্তু অনেক দেশই কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। ম্যারাথনের মতো স্পিডে যাচ্ছে। এই সব চিন্তা করতে হবে। আমাদের এখানে আগের থেকে ১০ শতাংশ বা ২০ শতাংশ ইনভেস্টমেন্ট বাড়ছে কিন্তু অন্যদেশগুলো আরও বেশি ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছে। এইটা চিন্তা করতে হবে। ইকোনমি অনেক গ্রো করেছে। স্বাধীনতার পরে মাত্র কয়েক শত কোটি টাকার বাজেট ছিল। সেখানে এখন লক্ষ কোটি টাকার বাজেট হয়ে গেছে। সব মিলিয়েই কিন্তু এগিয়েছে। পারচেজিং ক্যাপাসিটি বাংলাদেশে অনেক বেড়েছে। শুধু সরকারের না, পাবলিকেরও বেড়েছে। আমার মনে হয় রিস্ক একটাই। আমরা যদি দ্রæত যেতে চাই। অন্য দেশের সাথে যদি আমরা কমপিট করতে চাই- তাহলে আমাদের আরও অনেক সুযোগ তৈরি করতে হবে।

আনন্দ আলো: এখন এক ক্লিকেই ব্যবসা হচ্ছে কিন্তু এথিক্যাল জায়গার জন্যে মনিংটরিয়ে কি করণীয় আছে?

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি: আমাদের ভ্যালু সিস্টেমটা টোটালি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই জন্যে আমরা সবাই টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছি। ৭১ সালের পরে ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড যখন বলতে থাকলো  এটি একটি ফেইল স্টেট হতে যাচ্ছে- সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। বটল লেস বাস্কেট বলা হতো আমাদের। যত নেগেটিভ অ্যাড্রেস আছে আমাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। তাই যার যেদিকে ছোটার কথা না সে সেই দিকে ছুটেছেন। সবাই ইকনোমিক্যালি ভায়াবেল হওয়ার জন্যে পাশের দেশের কাছে নিজেদেও প্রমাণ করতে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমরা পারি।

আনন্দ আলো: গার্মেন্টসসহ অনেকক্ষেত্রেই আমরা সেরা অবস্থানে আছি?

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি: শুধু আরএমজি না।  অনেকক্ষেত্রেই আমরা এগিয়েছি। যারা ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে উপযুক্ত তারা তাদের অবস্থানে থাকুক। যারা একাডেমিশিয়ান তারা ফিরে যান তাদের শিক্ষার কাছে। স্পেশালিস্ট হতে হবে আমাদের। আমাদের সোশ্যাল ভ্যালুজ পোরিবারিক বন্ডেজ এই জায়গায় আমাদের ফিরে যেতে হবে। আমাদের দেশে একটা সময় সবাই সবকিছু করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদেরকে স্পেশালাইজেশনের দিকে যেতে হবে। আমি আইটি সেক্টরের কথাই বলি- এই সেক্টরে ২০ হাজার কোম্পানি হয়ে গেছে কিন্তু স্পেশালিস্ট কর্মীর তৈরি হচ্ছে না? ভিয়েতনামের আইটি এসোেিয়শন ভিনাসার সদস্য মাত্র ১৩২টা। কিন্তু তাদের টোটাল এক্সপোর্ট ওয়ান থ্রি বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার আইটি এসোসিয়েশনের  অ্যাসেট হলো ৪ দশমিক ওয়ান বিলিয়ন রিংগিত।

বানিজ্যিক ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে

Farukফারুক মঈনউদ্দীন

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড

আনন্দ আলো: ব্যবসা বাণিজ্য মানেই ব্যাংকিং। ব্যাংক ছাড়া উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব না। তাই জানতে চাই বর্তমানে বিনিয়োগের জন্যে পরিবেশ কতটা উপযোগী?

ফারুক মঈনউদ্দীন: ব্যবসা, বিনিয়োগ বা শিল্প উন্নয়নে ব্যাংকের একটি বিশাল ভ‚মিকা আছে। কিন্তু বর্তমানে শিল্পায়নের যে ট্রেন্ড দেখতে পাচ্ছি- যেভাবে দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে- তাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপরে এই নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। আপনি দেখেন, একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে শিল্প ব্যাংক ছিল। শিল্প ঋণ সংস্থা ছিল- এই সব প্রতিষ্ঠান তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারেনি। তাই এদের ভ‚মিকা নেই। এই দায়িত্ব তাই এসে পড়েছে কমার্শিয়াল ব্যাংকের উপরে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ম্যাক্সিমাম এসএমই সাপোর্ট দিতে পারে। কিন্তু ভারি শিল্পের পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে বাজার থেকে। কিন্তু আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা বাজারে যেতে চান না। তারা ব্যাংকের উপরে নির্ভর করে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে চান। কিন্তু এখানে ব্যাংকের সীমাবদ্ধতা আছে। তারা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে পারে না।

আনন্দ আলো: রিস্কও তো আছে?

ফারুক মঈনউদ্দীন: মূল সমস্যা হলো উদ্যোক্তারা মার্কেট থেকে পুঁজি তোলেন না। কারণ মার্কেট থেকে পুঁজি তুললে ২০/২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ট দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক থেকে ১০/১২ পারসেন্ট ইন্টারেস্ট্রে ঋণ নেয়া যায়। পরিবারের বাইরে শেয়ারহোল্ডার না নেয়া- শিল্পায়নের জন্যে বড় বাধা।

আনন্দ আলো: শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা নিতে হবে?

ফারুক মঈনউদ্দীন: তাহলে পুঁজিবাজারও আরও স্ট্রং হতো। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে তারা শুধুমাত্র ব্যাংক নির্ভর- এরা পুঁজিবাজারে যায় না।

আনন্দ আলো: ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইন্যান্সিংয়ে ব্যাংক ইন্টারেস্টেড না কেন?

ফারুক মঈনউদ্দীন: ব্যাংক লগ্নি করার আগে দেখে যে, এই খাত থেকে আয় করে ঋণ শোধ দেয়া সম্ভব কিনা? ব্যাংক কারো জমি বিক্রি করে টাকা আদায় করতে আগ্রহী না। ব্যাংক আগ্রহী সেই ব্যবসা থেকে টাকা ফেরত আসবে কিনা। ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির কাজ-এর ভ্যালু জাজ করা খুব কঠিন তাই এই ক্ষেত্রে ব্যাংকের টাকা লগ্নি করা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই কাজের মূল্যায়ন করা ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব হয় না।