Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

না, বাংলাদেশ হারেনি!

মামুনুর রহমান

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি সেদিন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সঙ্গে হেরেও যেতো তাহলেও বোধকরি দেশের ক্রিকেট প্রেমী মানুষ কষ্ট পেতো না। হ্যাঁ, আফসোস হতো হারের জন্য। কিন্তু সাহস জন্মাতো এই ভেবে যে লড়াই করে হেরেছি। এখন আর কেউ বলতে পারবে না বাংলাদেশ মাঠের খেলায় হারার আগেই হেরে যায়।

সম্পর্কিত

না, বাংলাদেশ হারেনি। বরং জিতে যাওয়ার তালিকায় রেকর্ড করেছে। টি-২০ ফরমেটে ২১৪ রান ধাওয়া করে জিতে যাওয়া ‘যেই সেই’ ব্যাপার নয়। তাও আবার স্বাগতিক দেশকে হারানো… আবার দেশটি যদি হয় শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিধর ক্রিকেট দল তাকে হারানো তো আরও সহজ নয়। কিছুদিন আগেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল বাংলাদেশে এসে স্বাগতিকদের নাস্তানাবুদ করে গেছে। সেই শ্রীলঙ্কা দেশের মাটিতে আরও কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। শ্রীলঙ্কায় ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার প্রথম খেলায় ভারত হেরে যাবার পর ধরেই নেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার টি-২০ লড়াইয়ে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কার এবং ব্যাটিং তাÐব দেখিয়ে ২১৪ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে এই খেলায় জেতা অসম্ভব ব্যাপার হবে। শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও এমনটাই প্রকাশ পাচ্ছিল। ভাবটা এমন আমরা তো জিতেই গেছি…

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ব্যাটিং করতে নেমেই সবার ধারণা পাল্টে দিল। তামিমের সঙ্গে লিটন দাস জুটি গড়ে দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রানের ক্ষেত্রে একটি সম্মানজনক ভিত্তি। মুশফিকুর রহীম ও অন্যদের সহায়তায় এই ভিত্তির ওপর জয়ের পতাকা উড়ালেন আমাদের ক্রিকেটের যুবরাজ মুশফিকুর রহীম। তখন মাঠে মুশফিকের সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক যুবরাজ মেহেদী হাসান মিরাজ। জয়ের পতাকা উড়িয়ে মুশফিকুর রহীম এতটাই আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন যে, তার ‘উদযাপন’ ভঙ্গিটাই ছিল অন্যরকম। সাপের ফনা তোলার ভঙ্গিতে সাফল্য উদযাপন করতে মুশফিককে ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি। দেশি-বিদেশি প্রচার মাধ্যমে মুশফিকুর রহীমের ভ‚য়সী প্রশংসা সূচক খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় মুশফিকুর রহীমের একটি বড় ছবি হয়েছে। শিরোনাম ছাপা হয়েছে ‘রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ। রূপকথার নায়ক মুশফিক’। ছবিতে জিতে যাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করছেন মুশফিকুর রহীম। ছবির নিচে লেখা রয়েছে “¯œায়ুচাপ জয় করে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন, জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে। এমন উচ্ছ¡াস তো মুশফিকুর রহীমকেই মানায়। কালের কণ্ঠ শিরোনাম করেছে ‘রাতের প্রেমাদাসা স্তব্দ করে দিলেন মুশফিক’।

আসলেই তাই। শ্রীলঙ্কায় রাতের প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামকে সত্যি সত্যি স্তব্দ করে দিয়েছিলেন আমাদের মুশফিকুর রহীম। শুধু কি শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম? গোটা বাংলাদেশও যে খানিকটা স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল। কী সেই রুদ্ধশ্বাস পূর্ণ প্রতীক্ষা। তামিম আউট হলেন। মুশফিকুর রহীমের সাথী হলেন মাহমুদুল্লাহ। তিনিও আউট হলেন। নতুন সাথী সাব্বির। তিনিও এক সময় মাঠ ছাড়লেন। এবার মুশফিকুর রহীমের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের অফিস, আদালত, রেস্তোরাঁসহ অধিকাংশ বাসাবাড়ির মানুষজন টিভি সেটের সামনে বসে আছে। এই খেলায় বাংলাদেশের জয় চাই। সময় যতই গড়ায় টেনশন ততই বাড়ে। মুশফিকুর রহীম আউট হলেই পÐ হয়ে যাবে জয়ের স্বপ্ন।

না, মুশফিকুর রহীম আউট হননি। শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। এবার বেশ কিছুদিন হয়তো মুশফিক বন্দনা চলবে দেশের প্রচার মাধ্যমে। কিন্তু ক্রিকেটের বাস্তবতার কথা তেমন আলোচিত হবে না। যে যাই বলুক, ক্রিকেট একমাত্র ক্রিকেটই আমাদের দেশে একমাত্র খেলা যা দেশের মানুষের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট হাসলে বাংলাদেশ হাসে। ক্রিকেট কাঁদলে বাংলাদেশও কাঁদে। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের অনেক ভাবনা চিন্তা। তবে দুঃখের দিনে আমরা অনেকেই ক্রিকেটারদের পক্ষে দাঁড়াই না। খেলা মানেই জয়-পরাজয়। জয়ে আনন্দ করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরাজয়েও ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমরা সবাই বন্ধুর মতো ভ‚মিকা পালন করবো এটাই তো হওয়া উচিত। জয় হোক বাংলাদেশের ক্রিকেটের।