Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সবার কপালে ইমেজ জোটেনা-অপূর্ব

মধ্যবিত্তের মানুষ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কষ্টের সংসারের হাল ধরা পরিবারের বড় ছেলে কিংবা পরিবারের কর্তা বাবার চেহারা। এই মধ্যবিত্তের জীবনে নানান চড়াই উতরাই পার করা গল্প থাকে। যে গল্পগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই থাকে কষ্ট আর না পাওয়ার বেদনা। আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ায় একসময় এই মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প ঠাঁই পেতো। সংসার কিংবা আপনজনের স্বার্থের জন্য ভালোবাসা কীভাবে হারিয়ে যায় মানুষের জীবন থেকে তেমন গল্প থাকতো সেসব নাটকে। এর পাশাপাশি থাকতো পরিবারের হাসি কান্না আর মায়া জড়ানো গল্পও। ঠিক যেমন গল্প আমাদের এখনকার সময়ে টিভি চ্যানেলে আবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে গত ঈদে ‘বড় ছেলে’ নামক নাটকটি দিয়ে আবারো মধ্যবিত্ত সংসারের পিছুটানের কাছে ভালোবাসা কীভাবে হেরে যায় তেমন গল্প নাটকটিতে ঠাঁই পায়। যেটিতে মধ্যবিত্ত সংসারের বড় ছেলের চরিত্রে অপূর্ব অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছেন। পেয়েছেন ভালোবাসাও। শুধু তাই নয়- এরপর বেশকিছু নাটকে অপূর্বকে দেখা যায় এমন মধ্যবিত্ত মানুষের চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে। ‘সংসার’, ‘টুকরো প্রেমের টান’, ‘বাসস্টপ’, ‘বেকার’সহ বেশকিছু তেমন গল্পের নাটকে অভিনয় করে এখন যেন মধ্যবিত্তের ‘নায়ক’ অপূর্ব। চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া, নিজেকে এভাবে ভাঙাসহ ক্যারিয়ারের নানান দিক নিয়ে অপূর্ব কথা বলেছেন আনন্দ আলোর সঙ্গে। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।

আনন্দ আলো: মধ্যবিত্তের চরিত্রগুলোর সাথে আপনি একদম মিশে গিয়ে অভিনয় করছেন। এই চরিত্রগুলোর সাথে কী আপনি খুব পরিচিত?

অপূর্ব: আমরা আসলে যে সমাজে বাস করি সেই সমাজে তো এই চরিত্রগুলোই সবচেয়ে বেশি। আমার পরিচিত-বন্ধ-বান্ধব এবং কাছের দূরের অনেক আত্মীয়-স্বজনদের এমন জীবন দেখি। আর আমাদের চারপাশে হরহামেশাই কিন্তু এই চরিত্রগুলো ঘোরাফেরা করে। তাই যখন কোনো একটি চরিত্র আমার কাছে আসে তখন আমি আগে চরিত্র গুলোকে বুঝবার চেষ্টা করি। বলতে পারেন- আশেপাশে দেখা কোনো চরিত্রের সাথে মিলিয়ে নেই। তখন দেখা যায়- নিজেকে সেই জায়গায় চিন্তা করে এবং সেখানে নিজেকে আবিষ্কার করে চরিত্রটি প্লে করি। আর মধ্যবিত্তের কথা যেটা সেটা হচ্ছে- কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় এমন অনেক চরিত্র আমার আশপাশে ছিল। আমি অভিনয় করতে গিয়ে সেই চরিত্রগুলোর মধ্যে কারো কারো ছায়া খুঁজে পাই।

আনন্দ আলো: এই নাটকগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কী সেই মধ্যবিত্তের প্রেরনা থাকে?

অপূর্ব: অনেকটা তাই। আমাদের টেলিভিশন নাটকে বেশিরভাগ দর্শক কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরানার মানুষ। যখন একটি ফিকশন কিংবা চলচ্চিত্র মানুষের জীবনের কোনো না কোনো ঘটনার সাথে মিশে যায় তখনই সেটা তাদের গল্প হয়ে ওঠে। আমার অভিনীত বড় ছেলে নাটকটি এত হিট করার পেছনে ঐ কারণটাই ছিল। এরকম গল্প আমাদের চারপাশের হাজার হাজার মানুষের জীবনে রয়েছে। প্রত্যেকটি স্ট্রাগল করা মানুষের জীবনে এই গল্প থাকার ফলে যখন নাটকটিতে সেই বিষয়টা মিলে যায় তখনই তাদের নাটকটি ভালো লাগলো। তাই আমাদের উচিত মানুষের গল্পগুলো বানানো। এই মানুষের গল্পগুলোই দর্শকদের কাছে ভালো লাগে। আমার সর্বশেষ অভিনীত বেকার, সংসার- এই নাটকগুলোরও কিন্তু রেজাল্ট অনেক ভালো। কারণ এগুলোর মধ্যে মানুষ তাদেরকে খুঁজে পেয়েছেন। আর সেজন্যই এগুলো জনপ্রিয় হয়েছে। মধ্যবিত্ত সংসারের টানাপোড়েন এবং কষ্টের জীবনটাই নাটকগুলোর মূল গল্প।

আনন্দ আলো: এই চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের জন্য আপনার প্রস্তুতি কেমন থাকে?

Apurbo-mouঅপূর্ব: শুধু এই চরিত্রগুলো-ই নয়। আমি যে চরিত্রেই অভিনয় করি না কেন? প্রত্যেকটা চরিত্রে অভিনয়ের আগে স্ক্রিপ্ট পড়া, ড্রেস নিয়ে ভাবা, চরিত্রটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া কিংবা সেই পরিস্থিতিতে আমি হলে কি করতাম- এমন ভাবনা ভেবে তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। আর আমি যখন অভিনয় করি- তখন শুধু চরিত্রটি নিয়েই ভাবি। তারপরও বলবো না যে সব কাজই আমার খুব ভালো হয়েছে। কিছু কাজ কিন্তু অনুরোধ রাখতে গিয়েও করতে হয়েছে।

আনন্দ আলো: ‘বড় ছেলে’র পর আপনার অভিনীত নাটকগুলোর গল্প ও চরিত্র একই রকমের হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয় না?

অপূর্ব: কিছুটা তো একরকম হচ্ছে। তবে আমি চেষ্টা করছি- সব নাটকের গল্প যেন একরকম না হয়- সেসব নাটকে অভিনয় করার জন্য। আর আমাদের এখনকার রীতিই এমন। একটা নাটক যখন আলোচনায় আসে, তখন ওই নাটকের আদলে গল্প ও চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে কিছুদিন একাধারে কাজ হতে থাকে। অনেক সময় এটা চ্যানেল কিংবা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা থাকে। এ জন্যই এখন আমাকে বড় ছেলের মতোই কিছু চরিত্রে কাজ করতে বলছে এবং করছিও তাই। তবে এটা সত্যি যে, কোনোটার গল্প কোনোটার সাথে মিলবে না। হয়তো মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েনের গল্পটা আছে। আর এই মধ্যবিত্ত জীবনের গল্পগুলো তো প্রায় একইরকম।

আনন্দ আলো: আপনাকে বেশি একঘণ্টার নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায়…

অপূর্ব: বেশি এক ঘণ্টার নাটকে অভিনয় করি এটা সত্যি। কিন্তু ধারাবাহিকও কিন্তু করছি। বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকের কাজ করছি। এর মধ্যে নজরুল ইসলামের ঘরে-বাইরে, শিহাব শাহীনের লিপস্টিক, সৈয়দ শাকিলের সোনার শেকল, মিজানুর রহমান আরিয়ানের গল্পগুলো আমাদের, সাখাওয়াৎ মানিকের মেঘে ঢাকা শহর সহ আরও কয়েকটি ধারাবাহিক আছে। সামনে আরো কিছু ধারাবাহিকের কাজ করা হবে। তবে আমি এক ঘণ্টার নাটকে অভিনয় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ গল্পটা একবারে শেষ হয়ে যায়। দর্শকদের কাজ থেকে প্রতিক্রিয়াটা সাথে সাথেই পাওয়া যায়। আর আমাদের এখানে ধারাবাহিক নাটকের খুব একটা জনপ্রিয়তা এই মুহূর্তে নেই। একসময় ছিল। বিটিভিতে মানুষ ধারাবাহিক নাটক দেখার জন্য তাকিয়ে থাকতো। এখন সবগুলো ধারাবাহিকের গল্প প্রায়ই একই রকম। আলাদ আলাদা বিষয় নিয়ে কাজ করলে দর্শকদের কাছে পৌঁছানো যায়।

আনন্দ আলো: এজন্যই কী এখন অনেক শিল্পী ধারাবাহিকে কাজ করতে চাইছেন না?

অপূর্ব: আমি অনেকের কথা বলতে পারবো না। আমার নিজেরটা বললাম। আমি তো বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে কাজ করছি। আবার একঘণ্টা এবং টেলিফিল্মে কাজ করছি। তবে ধারাবাহিক নাটকে আরো ভিন্ন ভিন্ন কনসেপ্ট এবং বাজেট বাড়িয়ে ভিন্ন সব গল্পে কাজ করা উচিত বলে আমি মনেকরি। এই ধারাবাহিক নাটকের কারণেই কিন্তু আমরা ‘কানকাটা রমজান’, ‘বাকের ভাই’, ‘ফুলমতী’, শিমুÑশাহেদের মতো অনেক কালজয়ী চরিত্র পেয়েছি। তখন নাটকের বিষয়বস্তু আর কনসেপ্টই ছিল অন্যরকম। আমি তেমন কনসেপ্টের কথা বলছি। এখনকার সময়ে এসে এমন কালজয়ী চরিত্র সৃষ্টি করা সম্ভব। যদি ভিন্ন ভিন্ন গল্পে কাজ করা হয়।

আনন্দ আলো: আপনি সাধারণত রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করেন, বেশভুষায় পরিপাটি একটা ব্যাপার থাকে। চ্যালেঞ্জিং বা একটু অন্য ধরনের চরিত্রগুলো করেন না কেন?

অপূর্ব: চ্যালেঞ্জিং চরিত্র অনেক করেছি, তেমন সাড়া পাইনি। দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছি এখন। আমি এক অপূর্ব যদি সব ধরনের চরিত্র করি, তাহলে কীভাবে হবে? সবার কপালে ইমেজ জোটে না। দর্শকই তার প্রিয় শিল্পীকে আলাদা করে ফেলে। ও অপূর্ব! তাকে এভাবে দেখা যাবে, এইরকম একটা ব্যাপার থাকে আমার বেলায়। আমি এটা অনেকভাবেই ট্রাই করে দেখেছি। এভাবেই আমার একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে। নির্মাতারা এসে যখন বলেন, ভাই, এই চরিত্রটা আপনি ছাড়া আর কাউকে দিয়ে হবে না, তখন আমি গর্ববোধ করি এই ভেবে যে, যাক, তাহলে আমার বিশেষত্ব তৈরি হয়েছে! আমি কি সব চরিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে স্পেশালিস্ট? নিশ্চয়ই নই! টো নিয়ে আমার আসলে কোনো মাথা ব্যথাও নেই। আমি মনেকরি- আমাকে যে ধরনের চরিত্রে মানাবে সেটাতেই আমি কাজ করবো।

আনন্দ আলো: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনাকে ‘গ্যাংস্টার রিটার্ন’ সিনেমাটির পর আর কোনো সিনেমায় কাজ করতে দেখা যায়নি কেন?

Apurbo-Natokঅপূর্ব: গ্যাংস্টার রিটার্ন-এর জন্য প্রচুর শ্রম দিয়েছিলাম। ছবিটি মুক্তির আগে বাজে অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। সেটা নিয়ে আসলে কথা না বলাই ভালো। তবে আমি এই মুহূর্তে টিভি মিডিয়াতেই বেশি কাজ করতে চাই। কারণ এই জায়গায় দর্শকের যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি আর এখনো পাচ্ছি, এ অবস্থায় বড় পর্দায় কাজ করতে ভয়ই লাগে। তার এখন টিভি নাটক নিয়েই থাকতে চাই।

আনন্দ আলো: ভয়টা কিসের? ছবি যদি হিট না হয়- সেটার?

অপূর্ব: এটা তো আছেই। তবে সবকিছুর আগে আমি একেবারেই বড় কিছু ছাড়া মানে বড় আয়োজন ছাড়া চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছা করছি না। যেনতেন একটি চলচ্চিত্রে কাজ করলে অনেক আগেই আরো অনেকগুলো ছবিতে কাজ করতে পারতাম। একেবারেই ভিন্ন কোনো কনসেপ্ট কিংবা বড় হাউজের বড় ছবি ছাড়া চলচ্চিত্রে নিজেকে জড়াবো না। তবে এই মুহূর্তে তো না-ই। এখানে পারিশ্রমিকের বিষয়টা গুরুতপূর্ণ। কারণ একটি সিনেমায় যে পরিমাণ সময় এবং পরিশ্রম যাবে সেই তুলনায় পারিশ্রমিক না হলে কাজ করবো না। আর দর্শকরা যেভাবে অপূর্বকে দেখে এসেছে, সে জায়গা থেকে যদি নতুন কিছু না হয়- সেই কাজটি করেও তো লাভ নেই। টিভি মিডিয়ায় যে অপূর্বকে দেখা গেছে, সেটা যদি বড়পর্দাতে গিয়ে দর্শক দেখে তাহলে তো আমি ব্যর্থ। সবকিছু হিসেব-নিকেশ মিলে যদি কিছু হয় তাহলেই আমাকে বড়পর্দায় দেখা যাবে।

আনন্দ আলো: নিজস্ব সময়ের কথা বলবেন-

অপূর্ব: আমি খুব আড্ডাপ্রিয় একজন মানুষ। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সময় পেলেই আড্ডা দেই। তবে এখনকার আড্ডাটা হয়তো কাজ কেন্দ্রিক বেশি হয়। তারপরও আমি একটু সময় পেলে পরিবার আর আমার সন্তানের সাথে আড্ডা দেই। আমি খুব মুভি দেখি। একসময় রাত জেগে প্রচুর মুভি দেখতাম। বইও পড়তাম। তবে এখনকার সময়ে এসে সেই সময়টা একেবারেই কম পাই। তারপরও সুযোগ পেলেই বই পড়ি আর মুভি দেখি। তবে আমার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: আপনার গল্পে বেশকিছু নাটকের কাজ হয়েছে। আপনি নিজে পরিচ লনাও করেছেন। সেই বিষয়ে ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে কী?

অপূর্ব: চলতে-ফিরতে বেশকিছু গল্প ভর করে আমার মাথায়। যখন কোনো কাছের ডিরেক্টর কিংবা মানুষ পাই- তার সাথে সেটা শেয়ার করি। তখন দেখা গেছে- সেই ডিরেক্টর বলল- সেটা সে বানাবে। আসলে সেভাবেই কাজগুলো হয়েছে। আর ডিরেকশন এর ব্যাপারটা হচ্ছে- একেবারেই নিজস্ব একটা ভালো লাগা থেকে তৈরি হয়েছে। একটি গল্প আমি চিন্তা করার পর মনে হয়েছে এটা আসলে আমি যেভাবে চিন্তা করেছি সেভাবেই বানাতে হবে এবং সেটা আমি-ই পারবো। অন্যকে দিলে সেটা হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। সেই চিন্তা থেকেই ‘ব্যাকডেটেড’ নামে একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করি। এটা আসলে নেহায়েত ভালো লাগা থেকেই দিয়েছি। এখন ভবিষ্যতের কথা বলতে পারি না।