সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
আটপৌরে জীবন আর বুঝি ভালো লাগছে না। দশ হাত শাড়িতে শরীর ঢাকার দিন বুঝি শেষ। আমি ঢাকলেও অন্যরাতো ঢাকছে না। আর তাই শোবিজে পিছিয়ে যাবার ভয়। আর তাই ভয়কে জয় করতেই বুঝি আমাদের শোবিজে শরীর খোলার এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অনেকে নিজ উদ্যোগে ফটোসেশন করে নিজের খোলামেলা ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছেন। এসব ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনাও হচ্ছে। যাদের ছবি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে তারা বেশ খুশি। বরং যতই সমালোচনা হচ্ছে ততই খোলামেলা ছবির সংখ্যা বাড়ছে। একটি সূত্রের মতে, অনেকে নিজের সম্পর্কে আলোচনা সৃষ্টির জন্যও ফটো সেশনের নামে খোলামেলা ছবি তুলছেন এবং তা গর্বের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নিজেরাই তা সরবরাহ করছেন। তারা ধরেই নিয়েছেন প্রচারেই প্রসার। কাজেই নানান কায়দায় নিজের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন অনেক তারকা শিল্পী।
সাম্প্রতিক সময়ে খোলামেলা পোশাক পরে ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন নুসরাত ফারিয়া। যৌথ প্রযোজনার একাধিক ছবিতে তাকে বেশ খোলামেলা পোশাকে দেখা গেছে। বিদ্যা সিনহা মীম, আশনা হাবিব ভাবনাসহ আরও অনেক অভিনেত্রী খোলামেলা পোশাকে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। আলোচিত অভিনেত্রী সোহানা সাবা তো সব সময়ে প্রকাশ্যে বলেন, ‘আমার খোলামেলা পোশাকই পছন্দ’। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ খোলামেলা ছবি আপলোড করেছেন সু-অভিনেত্রী লাক্স চ্যানেল আই তারকা আজমেরী হক বাঁধন। তার এই সব ছবি দেখে অনেকেই অবাক। কারও কারও প্রশ্নÑ হঠাৎ আবার বাঁধনের কি হলো? এই প্রশ্নেরও জবাব পাওয়া গেছে। একটি সূত্রের মতে, আজমেরী হক বাঁধন এবার সিনেমার পর্দায় বোধকরি নিজেকে যোগ্য করে তুলতে চান। তাই নিজেকে বদলে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
খোলামেলা শরীরই কি সিনেমায় নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলার মূল অস্ত্র? বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আইরিনের একটি ছবি দেখে এই প্রশ্নটিই উঠে এসেছে বারবার। তার বুকে খোলা ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চষে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ কি এমন ঘটনা ঘটলো যে, আমাদের প্রিয় অভিনেত্রীদের অনেকেই খোলামেলা ছবি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেন? এই প্রশ্নের জবাবে চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশীয় ছবি দর্শকের মাঝে খুব একটা সাড়া ফেলছে না। যৌথ প্রযোজনার নামে যে সব ছবি নির্মিত হচ্ছে সে সব ছবিতে নায়িকারা অভিনয়ের চেয়ে খোলামেলা শরীর দেখাতেই ব্যস্ত। তাদের ব্যাপারে প্রচার মাধ্যমে বেশ আলোচনাও হয়। সে কারণে উঠতি অভিনেত্রীদের অনেকে নিজেকে বদলানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আলোচনায় আসার জন্য অনেকে নিজের খোলামেলা ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার, প্রকাশ করছেন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সাংবাদিক চিন্ময় মুৎসুদ্দী বলেন, আটপৌরে শাড়ি পরে অভিনয়ের দিন এখন আর নাই। সময়টাই অচলায়তন ভাঙ্গার। তাই বলে অভিনয়ের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কেউ যদি শরীর খোলার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে তাহলে সে বেশি দূর এগুতে পারবে না।
একথা সত্য সময় পাল্টেছে। সিনেমার শরীরও পাল্টেছে। সাদাকালো থেকে সিনেমা যেদিন রঙিন হয়েছে সেদিনই সিনেমার গল্পেও পালা বদলের হাওয়া লেগেছে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রভাবে সিনেমার বদল সহজেই চোখে পড়ে। হিন্দীর কথা না হয় বাদই দিলাম। কলকাতার বাংলা ছবিতেও ওদের অভিনেত্রীরা যে ধরনের খোলামেলা পোশাক পরে ছবিতে অভিনয় করেন তা আমাদের দেশে, আমাদের সমাজে এখনও অনেকটাই বেমানান। অথচ টিভি পর্দায় সেই ছবিগুলোই আমরা অহরহ দেখছি। কলকাতার কোনো অভিনেত্রীর বুক খোলা চেহারায় অভিনয় দেখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বলছিÑ কী সাহসী অভিনয়। কিন্তু ওই জায়গায় আমাদের কাউকে বসানোর সাহস করছি না। দেশের যারা এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছে তাদেরকে মেনে নিতেও পারছি না। এটা এক ধরনের স্ব-বিরোধিতা। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাই বলে শরীর দেখানোর প্রতিযোগিতায় যারা নামবে তাদেরকে সাপোর্ট করাও যায় না। শরীর নয় অভিনয় সৌকর্যই হউক শিল্পীর মূল শক্তি।