Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আজি হতে ৫০ বছর পরে

ভাবুন তো একবার। আজ থেকে ৫৩ বছর পর ২০৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার শত বছরপূর্তির দিনে তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ খুঁড়ে একটি স্টিলের ট্রাঙ্ক বের করা হলো। সবার মাঝে উদ্বেগের পাশাপাশি আনন্দও খেলে যাচ্ছে। কী আছে ওই ট্রাঙ্কের ভেতর? ট্রাঙ্কের তালা খোলা হলো। সবার মাঝে রুদ্ধশ্বাসময় অপেক্ষা। যেন কারোই তর সইছে না। প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার চোখ ট্রাঙ্কটিকে ফলো করছে। সরাসরি প্রচার কার্যক্রমেও ব্যস্ত কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। কী আছে ওই ট্রাঙ্কের ভেতর…

অবশেষে রহস্য উন্মোচিত হলো। ট্রাঙ্কের তালা খুলতেই প্রথমে পাওয়া গেল প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশের পতাকা। সেই সঙ্গে ট্রাঙ্ক ভর্তি হরেক রকমের খেলনা। আনন্দ আর বিস্ময় ছড়িয়ে যেতেই থাকলো। খেলনার সঙ্গে একজন বৃদ্ধকে হাজির করা হলো মঞ্চে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ তিনি। কিন্তু কণ্ঠ যেন বয়সকে পাত্তাই দিচ্ছে না। তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি একটি প্রেরণাদায়ক গল্প বলতে শুরু করলেন। আজ থেকে ৫৩ বছর আগের ঘটনা। তখন আমি এই স্কুলের শিশু শ্রেণিতে পড়তাম। একদিন হলো কি, আমাদের স্কুলে সাজসাজ রব পড়ে গেল! ঘটনা কী? ঘটনা হলো, একদল বড় ভাই এসেছেন অনেকগুলো খেলনা নিয়ে। এই খেলনাগুলো একটি বাক্সের ভেতর রাখা হবে। তারপর বাক্সের মুখে তালা দিয়ে বাক্সটি মাটির একটি গর্তে পুঁতে রাখা হবে। তারপর আমাদের মহান স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তির দিনে বাক্সটি খোলা হবে। সেদিন আমিও এই বাক্সের ভেতর একটি খেলনা রেখেছিলাম। আমার অনেক সৌভাগ্য যে, স্বাধীনতার ১০০ বছরপূর্তির দিনে ইতিহাসের এই মায়াময় ঘটনাটি বলার সুযোগ পেলাম। খেলনা ব্যাংক আজ থেকে ৫৩ বছর আগে এই উদ্যোগটি নিয়েছিল। আসুন আমরা সকলে মিলে খেলনা ব্যাংককে কৃতজ্ঞতা জানাই… সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনাবিল এক আনন্দ রাজ্যে মুখরিত হয়ে উঠলো।

প্রিয় পাঠক এটি স্বপ্ন নয়, আজ থেকে ৫৩ বছর পর আমাদের মহান স্বাধীনতার শত বছরপূর্তির দিনে তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এমন বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটবে বলে আমরা নিশ্চিত। কারণ এমন একটা আনন্দময় দিনপঞ্জি ঠিক করে দিয়েছে বিল্ড বাংলাদেশ এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান খেলনা ব্যাংক। সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খেলনা ব্যাংক তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এক কোণায় শিশুদের প্রিয় বিষয় হরেক রকমের খেলনা একটি ট্রাঙ্ক ভরে ট্রাঙ্কটি শান বাঁধানো মাটির গর্তে রেখে গর্তটি সিমেন্ট বালু দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। উদ্যোক্তারা আশা প্রকাশ করেছেন আজ থেকে ৫৩ বছর পর মহান স্বাধীনতার শত বছরপূর্তির দিনে যেন এই গর্তটি খুঁড়ে বাক্সটি বের করা হয় এবং তখনকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বাক্সে রাখা খেলনাগুলো উপস্থাপন করা হয়। উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস এবং ফলে শিশু-কিশোরদের মাঝে খেলনার বিবর্তন সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মাবে। বিষয়টি তখনকার শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে অনেক আনন্দদায়কও হবে।

কয়েকদিন আগে খেলনা ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের এক কোণায় খেলনাভর্তি এই ট্রাঙ্কটি মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। এ উপলক্ষে ওই স্কুলে দিনভর আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিল্ড বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফরহাদুর রেজা প্রবাল, ভাইস প্রেসিডেন্ট মীর সাজেদুল বাশার, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহরিন খান রূপাসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ বক্তৃতা করেন। খেলনা ব্যাংকের পক্ষে তরুণ কণ্ঠশিল্পী মেহেদী হাসান, তরুণ সাহিত্যকর্মী রিফাত কামাল সাইফ এবং কাজী সাদিয়া নূর সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

উল্লেখ্য, খেলনা ব্যাংকের মূল ¯েøাগান হলোÑ পড়বো, খেলবো, গড়বো বাংলাদেশ। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মাঝে খেলনা বিতরণ করার মধ্য দিয়ে আনন্দময় শৈশব গড়তে কাজ করছে সংগঠনটি। আনন্দ আলো পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক শুভ কামনা তাদের জন্য।